চকরিয়া (কক্সবাজার) : কোটি টাকা মূল্যের অধিগ্রহণকৃত জমি জবরদখলে নিয়ে সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে -সংবাদ
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে সড়ক বিভাগের ডাকবাংলোর পাশে সওজ বিভাগের মালিকানাধীন কোটি টাকা মূল্যের অধিগ্রহণকৃত জমি জবরদখলে নিয়ে সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই জবরদখল চেষ্টায় জড়িত মোহাম্মদ এহেছান প্রকাশ দুবাই এহেছান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সড়ক বিভাগ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছেন। এরপরও সড়ক বিভাগের ওই আইনী নোটিশ উপেক্ষা করে এখনো সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে জড়িত দখলবাজরা।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৭-৫৮ সালে ৩৯ নম্বর এলএ মামলা মুলে চকরিয়া পৌরশহরের মাতামূহুরী ব্রিজের এপ্রোচ, স্টক ইয়ার্ড ও সওজ ডাকবাংলো নির্মাণের জন্য সড়ক বিভাগ চিরিঙ্গা মৌজার আর এস ১৪১ নম্বর খতিয়ানের ৫৬৫ দাগের ১.৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। সেসময় জমির মালিক আমিনুল ইসলাম ও বদর মিয়া গং নিজেদের অনুকুলে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করে। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে বিএস রেকর্ড এর সময় উল্লেখিত জমি নীচু শ্রেনির হওয়ার কারণে ব্যবহার করেনি সওজ অধিদপ্তর। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুলক্রমে অধিগ্রহনকৃত কিন্তু ব্যবহার না করা জমি চিরিঙ্গা মৌজার বিএস ৩৩ খতিয়ানের বিএস ৭৩৬, ৭৫৪ দাগের জমি হিসাবে স্থানীয় আমিনুল ইসলাম ও মফিজা খাতুনের নামে বিএস রেকর্ড ভুক্ত হয়।
সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মুলত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে উল্লেখিত জমির কিছু অংশ কথিত বিএস মালিকদের কাছ থেকে পরস্পর যোগসাজশে দুবাই এহেছান ও সোলতান আহমদ সিরাজী নামের দুই ব্যক্তি মিলেমিশে দলিল সৃজন করে মালিক বনে যান। পরে তাঁরা ওই জমি জবরদখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করেছে। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন, সওজের অধিগ্রহণকৃত জমি কুটকৌশলে ক্রয় করে দুবাই এহেছান মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নামজারি খতিয়ান সৃজন করলেও গেল বারবছর ধরে অপর ক্রেতা সোলতান আহমদ সিরাজী এখনো খতিয়ান সৃজন করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সওজের ওই জায়গার পশ্চিম পাশে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জমজম হাসপাতাল গড়ে তোলা হলে মুহুর্তে ওই এলাকার জমির মূল্য বহুগুণ বেড়ে যায়। এরমধ্যে ২০১৮ সালে জায়গা লাগোয়া চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলে ফের জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এ সুযোগে অবৈধ দখলদার দুবাই এহেছান ও সোলতান সিরাজী কৌশলে অধিগ্রহনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে হাত করে সড়ক বিভাগের দখলে রাখা নিজেদের দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে সড়ক বিভাগের ৭৩৬ দাগের জমি থেকে ১৫ শতক এবং ৭৫৪ দাগের ৯ শতক জমি পুনরায় অধিগ্রহণের আওতায় ঢুকিয়ে দিয়ে দুবাই এহেছান ৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬৮ টাকা এবং সোলতান আহমদ সিরাজী ৩ কোটি ৬২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৯ টাকা লোপাট করার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করে। জালিয়াতির মাধ্যমে অধিগ্রহণের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি আচ করতে পেরে পাশের জায়গা মালিক চকরিয়ার জমজম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত দুবাই এহেছান ও সোলতান সিরাজীর অংশের ভেতরে জমজম হাসপাতালের রাস্তা, কালভার্ট, ড্রেইন দোকানের ১৪ শতক জমি রয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখায় আপত্তি দেন।
একইসঙ্গে উল্লেখিত বিষয়ে জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (বর্তমান এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান) মো. গোলাম কবির বাদি হয়ে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (নং ৮৮৭৮/১৯) দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সেসময় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং অভিযুক্ত দুবাই এহেছান গং এর বিরুদ্ধে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেন। জমজম হাসপাতালের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান গোলাম কবির বলেন, আমার রিট মামলায় মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে দুবাই এহেছান ও সোলতান আহমদ সিরাজীর অনুকুলে বরাদ্দ দেওয়া অধিগ্রহণের ৮ কোটি ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৫৭ টাকা আর উত্তোলন করতে পারেনি। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালের জায়গা দখলে রাখার বিষয়ে বাধা-বিপত্তি দেওয়ার জেরে দুবাই এহেছান কক্সবাজারের দ্বিতীয় যুগ্ম জজ আদালতে জমজম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ওই মামলায় জমজম হাসপাতালের পক্ষে এবং বাদি দুবাই এহেছানের বিপক্ষে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। এছাড়া সড়ক বিভাগের জায়গা জবরদখলের ঘটনায় দুবাই এহেছানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে তৎকালীন কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বাদী হয়ে কক্সবাজার দ্বিতীয় যুগ্ম জজ আদালতে একটি অপর (নং ৩৬/২০০৮) মামলা রুজু করা হয়। দীর্ঘ শুনানির পর ওই মামলায় সড়ক বিভাগের স্বপক্ষে রায়ডিগ্রি দিয়েছেন আদালত। এতকিছুর পরও সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমিতে দুবাই এহছান কর্তৃক বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের কাজ এখনো কীভাবে অব্যহত থাকে?
স্থানীয় বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন ওসমানী জানান, দুবাই এহেছান ও সোলতান সিরাজীর অংশের জমিতে আমার পরিবারের মালিকানা আছে। তাঁরা সড়ক বিভাগকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে সরকারি জমিতে বহুতল ভবন বানাচ্ছে। আমরা এব্যাপারে সওজ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাই।
চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান বলেন, কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে উপজেলা সদরে জমির দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক বিভাগের জমি দখলের অসম প্রতিযোগিতা। জনবল সংকটের পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী না থাকায় চকরিয়া পৌরশহরে দিনদিন বেহাত হয়ে পড়া অন্তত ২০০ কোটি টাকার মুল্যের সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার ও রক্ষায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সওজ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, জাতীয় মহাসড়কের অধীনে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরি সেতু থেকে থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত চকরিয়া পৌর শহরের এক কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কের জন্য ১৯৫৫ সালে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল ৩২ দশমিক ৫১ একর। সেই জমি থেকে ২০ একরের বেশি এখন বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় দাপুটে দখলবাজরা মূল্যবান এসব জমিতে বাণিজ্যিক মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে। এই এক কিলোমিটার সড়কের জমির মূল্য আকাশচুম্বী। প্রতি গন্ডা জমির দাম কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। এ হিসাবে ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ একরের বেশি সওজের জমি প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছে। এখানে কাউকে দখল থেকে উচ্ছেদ করলেই হুমকি-বাধা আসে। উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পরই ফের স্থাপনা নির্মাণ করে ওই জায়গা দখলে নেয় দখলবাজরা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সওজ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে জমি অধিগ্রহণের পর থেকেই টাকা গ্রহীতা জমির মালিক বা অন্য কেউ পর্যায়ক্রমে সড়ক বিভাগের জমি দখল করেছে। চকরিয়া পৌরশহর এলাকায় জমির দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় এলাকাভিত্তিক দাপটশালী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সড়কের জমি দখল করে মার্কেটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এখনও সেই দখল-নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রোকনউদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, চকরিয়া পৌরশহরের সড়ক বিভাগের ডাকবাংলো লাগোয়া সওজের অধিগ্রহণকৃত সামনের অংশের জমিতে দুবাই এহেছান নামের এক ব্যক্তি অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। গত ১৪/১৫ দিন আগে অভিযুক্ত দুবাই এহেছানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমাদের জমিতে কোনধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। যদি করে থাকেন নিজ উদ্যোগে সরিয়ে ফেলবেন। তিনি বলেন, নোটিশে নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে তিনি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নিলে সড়ক বিভাগ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ওই স্থাপনা উচ্ছেদ করে সওজের জায়গা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
চকরিয়া (কক্সবাজার) : কোটি টাকা মূল্যের অধিগ্রহণকৃত জমি জবরদখলে নিয়ে সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে -সংবাদ
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে সড়ক বিভাগের ডাকবাংলোর পাশে সওজ বিভাগের মালিকানাধীন কোটি টাকা মূল্যের অধিগ্রহণকৃত জমি জবরদখলে নিয়ে সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই জবরদখল চেষ্টায় জড়িত মোহাম্মদ এহেছান প্রকাশ দুবাই এহেছান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সড়ক বিভাগ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছেন। এরপরও সড়ক বিভাগের ওই আইনী নোটিশ উপেক্ষা করে এখনো সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে জড়িত দখলবাজরা।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৭-৫৮ সালে ৩৯ নম্বর এলএ মামলা মুলে চকরিয়া পৌরশহরের মাতামূহুরী ব্রিজের এপ্রোচ, স্টক ইয়ার্ড ও সওজ ডাকবাংলো নির্মাণের জন্য সড়ক বিভাগ চিরিঙ্গা মৌজার আর এস ১৪১ নম্বর খতিয়ানের ৫৬৫ দাগের ১.৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। সেসময় জমির মালিক আমিনুল ইসলাম ও বদর মিয়া গং নিজেদের অনুকুলে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করে। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে বিএস রেকর্ড এর সময় উল্লেখিত জমি নীচু শ্রেনির হওয়ার কারণে ব্যবহার করেনি সওজ অধিদপ্তর। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুলক্রমে অধিগ্রহনকৃত কিন্তু ব্যবহার না করা জমি চিরিঙ্গা মৌজার বিএস ৩৩ খতিয়ানের বিএস ৭৩৬, ৭৫৪ দাগের জমি হিসাবে স্থানীয় আমিনুল ইসলাম ও মফিজা খাতুনের নামে বিএস রেকর্ড ভুক্ত হয়।
সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মুলত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে উল্লেখিত জমির কিছু অংশ কথিত বিএস মালিকদের কাছ থেকে পরস্পর যোগসাজশে দুবাই এহেছান ও সোলতান আহমদ সিরাজী নামের দুই ব্যক্তি মিলেমিশে দলিল সৃজন করে মালিক বনে যান। পরে তাঁরা ওই জমি জবরদখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করেছে। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন, সওজের অধিগ্রহণকৃত জমি কুটকৌশলে ক্রয় করে দুবাই এহেছান মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নামজারি খতিয়ান সৃজন করলেও গেল বারবছর ধরে অপর ক্রেতা সোলতান আহমদ সিরাজী এখনো খতিয়ান সৃজন করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সওজের ওই জায়গার পশ্চিম পাশে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জমজম হাসপাতাল গড়ে তোলা হলে মুহুর্তে ওই এলাকার জমির মূল্য বহুগুণ বেড়ে যায়। এরমধ্যে ২০১৮ সালে জায়গা লাগোয়া চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলে ফের জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এ সুযোগে অবৈধ দখলদার দুবাই এহেছান ও সোলতান সিরাজী কৌশলে অধিগ্রহনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে হাত করে সড়ক বিভাগের দখলে রাখা নিজেদের দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে সড়ক বিভাগের ৭৩৬ দাগের জমি থেকে ১৫ শতক এবং ৭৫৪ দাগের ৯ শতক জমি পুনরায় অধিগ্রহণের আওতায় ঢুকিয়ে দিয়ে দুবাই এহেছান ৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬৮ টাকা এবং সোলতান আহমদ সিরাজী ৩ কোটি ৬২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৯ টাকা লোপাট করার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করে। জালিয়াতির মাধ্যমে অধিগ্রহণের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি আচ করতে পেরে পাশের জায়গা মালিক চকরিয়ার জমজম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত দুবাই এহেছান ও সোলতান সিরাজীর অংশের ভেতরে জমজম হাসপাতালের রাস্তা, কালভার্ট, ড্রেইন দোকানের ১৪ শতক জমি রয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখায় আপত্তি দেন।
একইসঙ্গে উল্লেখিত বিষয়ে জমজম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (বর্তমান এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান) মো. গোলাম কবির বাদি হয়ে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (নং ৮৮৭৮/১৯) দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সেসময় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং অভিযুক্ত দুবাই এহেছান গং এর বিরুদ্ধে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেন। জমজম হাসপাতালের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান গোলাম কবির বলেন, আমার রিট মামলায় মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে দুবাই এহেছান ও সোলতান আহমদ সিরাজীর অনুকুলে বরাদ্দ দেওয়া অধিগ্রহণের ৮ কোটি ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৫৭ টাকা আর উত্তোলন করতে পারেনি। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালের জায়গা দখলে রাখার বিষয়ে বাধা-বিপত্তি দেওয়ার জেরে দুবাই এহেছান কক্সবাজারের দ্বিতীয় যুগ্ম জজ আদালতে জমজম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ওই মামলায় জমজম হাসপাতালের পক্ষে এবং বাদি দুবাই এহেছানের বিপক্ষে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। এছাড়া সড়ক বিভাগের জায়গা জবরদখলের ঘটনায় দুবাই এহেছানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে তৎকালীন কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বাদী হয়ে কক্সবাজার দ্বিতীয় যুগ্ম জজ আদালতে একটি অপর (নং ৩৬/২০০৮) মামলা রুজু করা হয়। দীর্ঘ শুনানির পর ওই মামলায় সড়ক বিভাগের স্বপক্ষে রায়ডিগ্রি দিয়েছেন আদালত। এতকিছুর পরও সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমিতে দুবাই এহছান কর্তৃক বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের কাজ এখনো কীভাবে অব্যহত থাকে?
স্থানীয় বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন ওসমানী জানান, দুবাই এহেছান ও সোলতান সিরাজীর অংশের জমিতে আমার পরিবারের মালিকানা আছে। তাঁরা সড়ক বিভাগকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে সরকারি জমিতে বহুতল ভবন বানাচ্ছে। আমরা এব্যাপারে সওজ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাই।
চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান বলেন, কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে উপজেলা সদরে জমির দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক বিভাগের জমি দখলের অসম প্রতিযোগিতা। জনবল সংকটের পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী না থাকায় চকরিয়া পৌরশহরে দিনদিন বেহাত হয়ে পড়া অন্তত ২০০ কোটি টাকার মুল্যের সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার ও রক্ষায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সওজ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, জাতীয় মহাসড়কের অধীনে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরি সেতু থেকে থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত চকরিয়া পৌর শহরের এক কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কের জন্য ১৯৫৫ সালে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল ৩২ দশমিক ৫১ একর। সেই জমি থেকে ২০ একরের বেশি এখন বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় দাপুটে দখলবাজরা মূল্যবান এসব জমিতে বাণিজ্যিক মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে। এই এক কিলোমিটার সড়কের জমির মূল্য আকাশচুম্বী। প্রতি গন্ডা জমির দাম কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। এ হিসাবে ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ একরের বেশি সওজের জমি প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছে। এখানে কাউকে দখল থেকে উচ্ছেদ করলেই হুমকি-বাধা আসে। উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পরই ফের স্থাপনা নির্মাণ করে ওই জায়গা দখলে নেয় দখলবাজরা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সওজ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে জমি অধিগ্রহণের পর থেকেই টাকা গ্রহীতা জমির মালিক বা অন্য কেউ পর্যায়ক্রমে সড়ক বিভাগের জমি দখল করেছে। চকরিয়া পৌরশহর এলাকায় জমির দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় এলাকাভিত্তিক দাপটশালী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সড়কের জমি দখল করে মার্কেটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এখনও সেই দখল-নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রোকনউদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, চকরিয়া পৌরশহরের সড়ক বিভাগের ডাকবাংলো লাগোয়া সওজের অধিগ্রহণকৃত সামনের অংশের জমিতে দুবাই এহেছান নামের এক ব্যক্তি অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। গত ১৪/১৫ দিন আগে অভিযুক্ত দুবাই এহেছানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমাদের জমিতে কোনধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। যদি করে থাকেন নিজ উদ্যোগে সরিয়ে ফেলবেন। তিনি বলেন, নোটিশে নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে তিনি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নিলে সড়ক বিভাগ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ওই স্থাপনা উচ্ছেদ করে সওজের জায়গা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে।