alt

পীরগাছায় প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণ

প্রতিনিধি, পীরগাছা (রংপুর) : বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

রংপুরের পীরগাছায় ১২ বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা দেড় লাখ টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও ‘গ্রাম্য সালিশের’ নামে ভুক্তভোগী পরিবারকে জিম্মি করে রাখায় থানায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। ধর্ষণের ‘জরিমানা’ হিসেবে ধার্য করা দেড় লাখ টাকার পুরোটাই এখন মাতব্বরদের পকেটে। এদিকে বিচার না পেয়ে এবং প্রভাবশালীদের হুমকিতে আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া হয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব গ্রামের রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁদের ১২ বছর বয়সী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটি উপজেলার রহমত চর গ্রামে নানার বাড়িতে থাকত। গত ৫ নভেম্বর বিকেলে ওই বাড়িতে একা পেয়ে প্রতিবেশী সফু মিয়ার বখাটে ছেলে সাজ্জাদ (১৪) শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এতে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ জানান, ঘটনার পর শিশুটির রক্তক্ষরণ শুরু হলে তিনি চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেন। কিন্তু স্থানীয় মাতব্বররা বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৭ নভেম্বর তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরদিন ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) পাঠানো হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে পীরগাছা থানায় মামলা করতে যাওয়ার পথে তাঁদের আটকে দেন স্থানীয় মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক শুটকু। তিনি জোরপূর্বক তাঁদের সালিশের কথা বলে গ্রামে ফিরিয়ে আনেন। পরবর্তীতে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ও স্কুলশিক্ষক সৈয়দ মো. শামসুদ্দোহা চঞ্চল, এমদাদুল, রইচ, মানিক ও বাবলুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী সালিশ বৈঠক বসান। সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত সাজ্জাদের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ভুক্তভোগী শিশুটির দাদি রোকেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। নাতনিটার সর্বনাশ হলো, অথচ মাতব্বররা বিচারের নামে প্রহসন করল। জরিমানার দেড় লাখ টাকা চঞ্চল মাস্টারের কাছে জমা আছে। আমরা চিকিৎসার খরচটুকুও পাইনি। উল্টো চঞ্চল মাস্টার পরামর্শ দিয়েছেন, এই টাকা সুদে খাটিয়ে পরে নাতনিকে বিয়ে দিতে। আমরা টাকা চাই না, বিচার চাই।’ এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালিশি এবং নেকমামুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈয়দ মো. শামসুদ্দোহা চঞ্চল জরিমানার টাকা নিজের কাছে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, উভয়পক্ষ আপস-মীমাংসা করেছে। টাকা আমার কাছেই আছে, দেখা করলে বিস্তারিত বলব। তবে শিশু ধর্ষণের মতো ফৌজদারি অপরাধ গ্রাম্য সালিশে মীমাংসাযোগ্য কিনা—এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। আরেক মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক শুটকু বলেন, ওরা থানায় যাচ্ছিল, আমিই ফিরিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সমাধান করতে পারিনি।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলেও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ফরমান আলী বলেন, ‘আমি বিষয়টি তাম্বুলপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশ অফিসার এসআই ফিরোজ স্যারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।’ এ বিষয়ে এসআই ফিরোজ বলেন, ‘ফোনে অনেকে অনেক কিছুই বলে। ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া জঘন্য অপরাধ। অভিযুক্ত ধর্ষক এবং অবৈধ সালিশকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্ত সাজ্জাদ ও তার বাবা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ছবি

গজারিয়ায় বিরোধের জের ধরে যুবককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ

ছবি

দামুড়হুদার পল্লীতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের হিড়িক

ছবি

সিরাজগঞ্জে অতিথি পাখিতে মুখরিত বিভিন্ন জলাশয়

ছবি

সোনারগাঁয়ে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক

ছবি

কেন্দুয়ায় ঋণের ফাঁদে পড়ে কারাগারে মা মানবেতর দিন কাটছে প্রতিবন্ধী সন্তানদের

ছবি

আদমদীঘিতে ৫ মাদক কারবারীর জেল জরিমানা, জব্দ করা মাদক ধংস

ছবি

জলাশয় দখল নিয়ে সহিংসতা, আতঙ্কে ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী

ছবি

রাণীনগরে মৎস্যজীবীর বাড়িতে আগুন

ছবি

সন্ধান নেই লালমোহনের ১৩ জেলের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পরিবার

ছবি

ডিমলায় সারের জন্য কৃষকদের বিক্ষোভ

ছবি

বাঁশের সাঁকো পাল্টে পাকা সেতু পেল ১৬ পরিবার

ছবি

বেগমগঞ্জে লাইসেন্সবিহিন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান, অর্থদন্ড

চান্দিনায় অস্ত্রসহ আটক ১০

ছবি

আক্কেলপুরে লাইনে দাঁড়িয়েও সার না পেয়ে হতাশ কৃষকরা

ছবি

কলারোয়ায় বিষ দিয়ে দু’শ বক্স মৌমাছি হত্যা!

ছবি

হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

ছবি

ডিমলায় বন্যপাখি খাঁচায় বন্দি করে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ পালন

ছবি

মহেশপুরে দুই ডাকাত আটক

ছবি

কলারোয়া সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভা

ছবি

চিলিং সেন্টারের আড়ালে নকল দুধের বাণিজ্য

ছবি

কলারোয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের উদ্বোধন

ছবি

রাজশাহীতে রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে খেজুরের ভেজাল গুড়

ছবি

যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহানকে শরীয়তপুরে বদলি

ছবি

দুধকুমার নদ থেকে বালু উত্তোলন ভাঙন বাড়ার আশংকা

ছবি

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় জয় সরকার নামের যুবক নিহত

ছবি

বেতাগী বাজারে ইলিশ মিলছে কম, দাম চড়া

ছবি

সাপাহারে পানিসঙ্কট ও জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে, সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান শুভসংঘের সভায়

ছবি

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলনের ঘুরছে ভাগ্যের চাকা

ছবি

পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

ছবি

ডিমলায় বিজিবির হাতে ভারতীয় গরুসহ আটক ১ জন

ছবি

ভেড়ামারায় কলাকেটে মুখ পুড়িয়ে ও বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার

ছবি

যশোর সার্কিট হাউজ থেকে ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আটক

ছবি

মদনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৩ দোকান পুড়ে ছাই

ছবি

টেকনাফের অপহৃত ব্যবসায়ী মুক্তিপণে ফিরেছে

ছবি

নারায়ণগঞ্জে মুক্তিপণ দাবি, পরদিন মিলল লাশ

ছবি

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা: নামে আছেন, কাজে নেই!

tab

পীরগাছায় প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণ

প্রতিনিধি, পীরগাছা (রংপুর)

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

রংপুরের পীরগাছায় ১২ বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা দেড় লাখ টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও ‘গ্রাম্য সালিশের’ নামে ভুক্তভোগী পরিবারকে জিম্মি করে রাখায় থানায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। ধর্ষণের ‘জরিমানা’ হিসেবে ধার্য করা দেড় লাখ টাকার পুরোটাই এখন মাতব্বরদের পকেটে। এদিকে বিচার না পেয়ে এবং প্রভাবশালীদের হুমকিতে আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া হয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব গ্রামের রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁদের ১২ বছর বয়সী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটি উপজেলার রহমত চর গ্রামে নানার বাড়িতে থাকত। গত ৫ নভেম্বর বিকেলে ওই বাড়িতে একা পেয়ে প্রতিবেশী সফু মিয়ার বখাটে ছেলে সাজ্জাদ (১৪) শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এতে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ জানান, ঘটনার পর শিশুটির রক্তক্ষরণ শুরু হলে তিনি চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেন। কিন্তু স্থানীয় মাতব্বররা বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৭ নভেম্বর তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরদিন ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) পাঠানো হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে পীরগাছা থানায় মামলা করতে যাওয়ার পথে তাঁদের আটকে দেন স্থানীয় মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক শুটকু। তিনি জোরপূর্বক তাঁদের সালিশের কথা বলে গ্রামে ফিরিয়ে আনেন। পরবর্তীতে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ও স্কুলশিক্ষক সৈয়দ মো. শামসুদ্দোহা চঞ্চল, এমদাদুল, রইচ, মানিক ও বাবলুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী সালিশ বৈঠক বসান। সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত সাজ্জাদের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ভুক্তভোগী শিশুটির দাদি রোকেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। নাতনিটার সর্বনাশ হলো, অথচ মাতব্বররা বিচারের নামে প্রহসন করল। জরিমানার দেড় লাখ টাকা চঞ্চল মাস্টারের কাছে জমা আছে। আমরা চিকিৎসার খরচটুকুও পাইনি। উল্টো চঞ্চল মাস্টার পরামর্শ দিয়েছেন, এই টাকা সুদে খাটিয়ে পরে নাতনিকে বিয়ে দিতে। আমরা টাকা চাই না, বিচার চাই।’ এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালিশি এবং নেকমামুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈয়দ মো. শামসুদ্দোহা চঞ্চল জরিমানার টাকা নিজের কাছে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, উভয়পক্ষ আপস-মীমাংসা করেছে। টাকা আমার কাছেই আছে, দেখা করলে বিস্তারিত বলব। তবে শিশু ধর্ষণের মতো ফৌজদারি অপরাধ গ্রাম্য সালিশে মীমাংসাযোগ্য কিনা—এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। আরেক মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক শুটকু বলেন, ওরা থানায় যাচ্ছিল, আমিই ফিরিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সমাধান করতে পারিনি।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলেও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ফরমান আলী বলেন, ‘আমি বিষয়টি তাম্বুলপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশ অফিসার এসআই ফিরোজ স্যারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।’ এ বিষয়ে এসআই ফিরোজ বলেন, ‘ফোনে অনেকে অনেক কিছুই বলে। ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া জঘন্য অপরাধ। অভিযুক্ত ধর্ষক এবং অবৈধ সালিশকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্ত সাজ্জাদ ও তার বাবা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

back to top