ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রংপুরের পীরগাছায় ১২ বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা দেড় লাখ টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও ‘গ্রাম্য সালিশের’ নামে ভুক্তভোগী পরিবারকে জিম্মি করে রাখায় থানায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। ধর্ষণের ‘জরিমানা’ হিসেবে ধার্য করা দেড় লাখ টাকার পুরোটাই এখন মাতব্বরদের পকেটে। এদিকে বিচার না পেয়ে এবং প্রভাবশালীদের হুমকিতে আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া হয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব গ্রামের রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁদের ১২ বছর বয়সী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটি উপজেলার রহমত চর গ্রামে নানার বাড়িতে থাকত। গত ৫ নভেম্বর বিকেলে ওই বাড়িতে একা পেয়ে প্রতিবেশী সফু মিয়ার বখাটে ছেলে সাজ্জাদ (১৪) শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এতে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ জানান, ঘটনার পর শিশুটির রক্তক্ষরণ শুরু হলে তিনি চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেন। কিন্তু স্থানীয় মাতব্বররা বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৭ নভেম্বর তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরদিন ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) পাঠানো হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে পীরগাছা থানায় মামলা করতে যাওয়ার পথে তাঁদের আটকে দেন স্থানীয় মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক শুটকু। তিনি জোরপূর্বক তাঁদের সালিশের কথা বলে গ্রামে ফিরিয়ে আনেন। পরবর্তীতে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ও স্কুলশিক্ষক সৈয়দ মো. শামসুদ্দোহা চঞ্চল, এমদাদুল, রইচ, মানিক ও বাবলুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী সালিশ বৈঠক বসান। সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত সাজ্জাদের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ভুক্তভোগী শিশুটির দাদি রোকেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। নাতনিটার সর্বনাশ হলো, অথচ মাতব্বররা বিচারের নামে প্রহসন করল। জরিমানার দেড় লাখ টাকা চঞ্চল মাস্টারের কাছে জমা আছে। আমরা চিকিৎসার খরচটুকুও পাইনি। উল্টো চঞ্চল মাস্টার পরামর্শ দিয়েছেন, এই টাকা সুদে খাটিয়ে পরে নাতনিকে বিয়ে দিতে। আমরা টাকা চাই না, বিচার চাই।’ এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালিশি এবং নেকমামুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈয়দ মো. শামসুদ্দোহা চঞ্চল জরিমানার টাকা নিজের কাছে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, উভয়পক্ষ আপস-মীমাংসা করেছে। টাকা আমার কাছেই আছে, দেখা করলে বিস্তারিত বলব। তবে শিশু ধর্ষণের মতো ফৌজদারি অপরাধ গ্রাম্য সালিশে মীমাংসাযোগ্য কিনা—এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। আরেক মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক শুটকু বলেন, ওরা থানায় যাচ্ছিল, আমিই ফিরিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সমাধান করতে পারিনি।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলেও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ফরমান আলী বলেন, ‘আমি বিষয়টি তাম্বুলপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশ অফিসার এসআই ফিরোজ স্যারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।’ এ বিষয়ে এসআই ফিরোজ বলেন, ‘ফোনে অনেকে অনেক কিছুই বলে। ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া জঘন্য অপরাধ। অভিযুক্ত ধর্ষক এবং অবৈধ সালিশকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্ত সাজ্জাদ ও তার বাবা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
রংপুরের পীরগাছায় ১২ বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা দেড় লাখ টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও ‘গ্রাম্য সালিশের’ নামে ভুক্তভোগী পরিবারকে জিম্মি করে রাখায় থানায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। ধর্ষণের ‘জরিমানা’ হিসেবে ধার্য করা দেড় লাখ টাকার পুরোটাই এখন মাতব্বরদের পকেটে। এদিকে বিচার না পেয়ে এবং প্রভাবশালীদের হুমকিতে আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া হয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব গ্রামের রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁদের ১২ বছর বয়সী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটি উপজেলার রহমত চর গ্রামে নানার বাড়িতে থাকত। গত ৫ নভেম্বর বিকেলে ওই বাড়িতে একা পেয়ে প্রতিবেশী সফু মিয়ার বখাটে ছেলে সাজ্জাদ (১৪) শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এতে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ জানান, ঘটনার পর শিশুটির রক্তক্ষরণ শুরু হলে তিনি চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেন। কিন্তু স্থানীয় মাতব্বররা বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৭ নভেম্বর তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরদিন ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) পাঠানো হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে পীরগাছা থানায় মামলা করতে যাওয়ার পথে তাঁদের আটকে দেন স্থানীয় মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক শুটকু। তিনি জোরপূর্বক তাঁদের সালিশের কথা বলে গ্রামে ফিরিয়ে আনেন। পরবর্তীতে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ও স্কুলশিক্ষক সৈয়দ মো. শামসুদ্দোহা চঞ্চল, এমদাদুল, রইচ, মানিক ও বাবলুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী সালিশ বৈঠক বসান। সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত সাজ্জাদের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ভুক্তভোগী শিশুটির দাদি রোকেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। নাতনিটার সর্বনাশ হলো, অথচ মাতব্বররা বিচারের নামে প্রহসন করল। জরিমানার দেড় লাখ টাকা চঞ্চল মাস্টারের কাছে জমা আছে। আমরা চিকিৎসার খরচটুকুও পাইনি। উল্টো চঞ্চল মাস্টার পরামর্শ দিয়েছেন, এই টাকা সুদে খাটিয়ে পরে নাতনিকে বিয়ে দিতে। আমরা টাকা চাই না, বিচার চাই।’ এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালিশি এবং নেকমামুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈয়দ মো. শামসুদ্দোহা চঞ্চল জরিমানার টাকা নিজের কাছে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, উভয়পক্ষ আপস-মীমাংসা করেছে। টাকা আমার কাছেই আছে, দেখা করলে বিস্তারিত বলব। তবে শিশু ধর্ষণের মতো ফৌজদারি অপরাধ গ্রাম্য সালিশে মীমাংসাযোগ্য কিনা—এমন প্রশ্নের সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। আরেক মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিক শুটকু বলেন, ওরা থানায় যাচ্ছিল, আমিই ফিরিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সমাধান করতে পারিনি।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলেও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ফরমান আলী বলেন, ‘আমি বিষয়টি তাম্বুলপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশ অফিসার এসআই ফিরোজ স্যারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।’ এ বিষয়ে এসআই ফিরোজ বলেন, ‘ফোনে অনেকে অনেক কিছুই বলে। ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত অভিযোগ না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া জঘন্য অপরাধ। অভিযুক্ত ধর্ষক এবং অবৈধ সালিশকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্ত সাজ্জাদ ও তার বাবা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।