রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস বিভাগটি দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে কিডনি জটিলতার কারণে ডায়ালাইসিস করতে পারছেন না শত শত রোগী। ইতোমধ্যে গত ১৯ দিনে ডায়ালাইসিস না করতে পারায় ১৮ জন রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।
দায়িত্বরত নার্স, আয়া আর টেকনিশিয়ানরা বলছেন ডায়ালাইসিস করতে যে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট রয়েছে সেটি বিকল হয়ে যাওয়ায় এবং ডায়ালাইসিস মেশিন বেশ কয়েকটি বিকল হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র ৬ লাখ টাকা খরচ করলে দুটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট বসানো সম্ভব অথচ এটাই কেনা হচ্ছে না অথচ ডায়ালাইসিস বিভাগ থেকে প্রতিমাসে আয় হয় তিন লাখ টাকারও বেশি।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগের ডায়ালাইসিস বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, সব বেড রোগীশূন্য পড়ে আছে। ৪/৫ জন দায়িত্বরত নার্স, আয়া টেকনিশিয়ান অলস সময় পার করছেন। অন্য সময় ৪০ থেকে ৫০ জন কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনদের পদভাবে মুখরিত থাকত। এখন সেখানে সুনসান নীরবতা।
বিভাগের বাইরেও স্বজনদের কোন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।
কর্তব্যরত ডায়ালাইসিস ইউনিটের টেকনিশিয়ান মাসুদ জানান, চলতি মাসের ৮ এপ্রিল থেকে ডায়ালাইসিস ইউনিটটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, ডায়ালাইসিসের প্রধান উপাদান হলো পিউরোফাইড পানি। যা মেশিনের সাহায্যে পরিশোধন করা হয়। সেই মেশিন দুটি পুরোপুরি বিকল হয়ে গেছে। এর আগেও কয়েকবার মেশিন দুটি বিকল হয়েছিল কোন রকমে মেরামত করা হয়। এবার ঢাকা থেকে আসা টেকনিশিয়ানরা জানিয়ে দিয়েছেন এই মেশিন আর সচল করা সম্ভব নয়। নতুন মেশিন স্থাপন করতে হবে। তিনি আরও জানান, একজন কিডনি রোগীকে ৪ ঘণ্টাব্যাপী ডায়ালাইসিস করতে হয়।
ডায়ালাইসিস করতে একেক রোগীর জন্য ১শ’ ৮০ লিটার পিউরোফাইড পানির প্রয়োজন হয়। এটা ছাড়া ডায়ালাইসিস করা যাবে না। সেই মেশিন যদি নষ্ট থাকে তাহলে ডায়ালাইসিস করা কোনভাবেই যাবে না।
কর্তব্যরত নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে ছয় মাসের প্যাকেজ মাত্র ২০ হাজার টাকা লাগে। প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে খরচ পড়ে মাত্র ৪শ’ টাকা আর বাইরে করলে প্রতিবার তিন হাজার টাকা লাগে। ফলে সহায়-সম্বলহীন আর গরিব মানুষরা বাইরে ডায়ালাইসিস করতে পারে না।
ফলে গত ১৯ দিনে ১৮ রোগী মারা গেছেন। এরা সবাই এখানকার তালিকাভুক্ত রোগী। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে অনেকেই মারা যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ডায়ালাইসিস ইউনিট ইনচার্জ মোখলেসুর রহমান জানান, ডায়ালাইসিস মেশিন আগে ছিল ৩০টি এখন ১৮টিতে দাঁড়িয়েছে। বাকিগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে। তার পরেও রোগীদের সেবা দেয়া চলছিল কিন্তু দুটো মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ডায়ালাইসিস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি বিভাগীয়প্রধানের মাধ্যমে হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়েছে।
এদিকে নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে গিয়ে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেল আর পুরো ওয়ার্ডে কোন রোগী নেই, ফাঁকা পড়ে আছে অর্ধশতাধিক বেড। কুড়িগ্রাম থেকে আসা কিডনি রোগে আক্রান্ত ১৬ বছরের কিশোর সালাম জানাল, হাসপাতালের বাইরে বেসরকারি ৩/৪টি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করা যায়। প্রথমে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা এরপর প্রতিবারের জন্য দিতে তিন হাজার টাকা। সালামের মা মনোয়ারা বেগম জানান, আমরা গরিব মানুষ। প্রতিবার তিন হাজার টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করা কোনভাবে সম্ভব নয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়ালাইসিস করতে লাগে মাত্র ৪শ’ টাকা অথচ কর্তৃপক্ষ বলছে ১৯ দিন ধরে মেশিন নষ্ট। এ ব্যাপারে তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাইরে থেকে ডায়ালাইসিস করিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি করে অন্যান্য চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।
এদিকে নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আনিসুজ্জামান জানান, মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ডায়ালাইসিস করা যাচ্ছে না। রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি বলেন, সব কিছু জানতে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
সার্বিক বিষয় জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেয়াজুল করিমের সঙ্গে দেখা করার জন্য তার চেম্বারে গেলে এক কর্মচারী জানান, উনি মিটিং করছেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর জানা গেল, পরিচালক কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে খোশ গল্প করছেন। ফলে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১
রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস বিভাগটি দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে কিডনি জটিলতার কারণে ডায়ালাইসিস করতে পারছেন না শত শত রোগী। ইতোমধ্যে গত ১৯ দিনে ডায়ালাইসিস না করতে পারায় ১৮ জন রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।
দায়িত্বরত নার্স, আয়া আর টেকনিশিয়ানরা বলছেন ডায়ালাইসিস করতে যে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট রয়েছে সেটি বিকল হয়ে যাওয়ায় এবং ডায়ালাইসিস মেশিন বেশ কয়েকটি বিকল হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র ৬ লাখ টাকা খরচ করলে দুটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট বসানো সম্ভব অথচ এটাই কেনা হচ্ছে না অথচ ডায়ালাইসিস বিভাগ থেকে প্রতিমাসে আয় হয় তিন লাখ টাকারও বেশি।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগের ডায়ালাইসিস বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, সব বেড রোগীশূন্য পড়ে আছে। ৪/৫ জন দায়িত্বরত নার্স, আয়া টেকনিশিয়ান অলস সময় পার করছেন। অন্য সময় ৪০ থেকে ৫০ জন কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনদের পদভাবে মুখরিত থাকত। এখন সেখানে সুনসান নীরবতা।
বিভাগের বাইরেও স্বজনদের কোন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।
কর্তব্যরত ডায়ালাইসিস ইউনিটের টেকনিশিয়ান মাসুদ জানান, চলতি মাসের ৮ এপ্রিল থেকে ডায়ালাইসিস ইউনিটটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, ডায়ালাইসিসের প্রধান উপাদান হলো পিউরোফাইড পানি। যা মেশিনের সাহায্যে পরিশোধন করা হয়। সেই মেশিন দুটি পুরোপুরি বিকল হয়ে গেছে। এর আগেও কয়েকবার মেশিন দুটি বিকল হয়েছিল কোন রকমে মেরামত করা হয়। এবার ঢাকা থেকে আসা টেকনিশিয়ানরা জানিয়ে দিয়েছেন এই মেশিন আর সচল করা সম্ভব নয়। নতুন মেশিন স্থাপন করতে হবে। তিনি আরও জানান, একজন কিডনি রোগীকে ৪ ঘণ্টাব্যাপী ডায়ালাইসিস করতে হয়।
ডায়ালাইসিস করতে একেক রোগীর জন্য ১শ’ ৮০ লিটার পিউরোফাইড পানির প্রয়োজন হয়। এটা ছাড়া ডায়ালাইসিস করা যাবে না। সেই মেশিন যদি নষ্ট থাকে তাহলে ডায়ালাইসিস করা কোনভাবেই যাবে না।
কর্তব্যরত নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে ছয় মাসের প্যাকেজ মাত্র ২০ হাজার টাকা লাগে। প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে খরচ পড়ে মাত্র ৪শ’ টাকা আর বাইরে করলে প্রতিবার তিন হাজার টাকা লাগে। ফলে সহায়-সম্বলহীন আর গরিব মানুষরা বাইরে ডায়ালাইসিস করতে পারে না।
ফলে গত ১৯ দিনে ১৮ রোগী মারা গেছেন। এরা সবাই এখানকার তালিকাভুক্ত রোগী। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে অনেকেই মারা যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ডায়ালাইসিস ইউনিট ইনচার্জ মোখলেসুর রহমান জানান, ডায়ালাইসিস মেশিন আগে ছিল ৩০টি এখন ১৮টিতে দাঁড়িয়েছে। বাকিগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে। তার পরেও রোগীদের সেবা দেয়া চলছিল কিন্তু দুটো মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ডায়ালাইসিস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি বিভাগীয়প্রধানের মাধ্যমে হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়েছে।
এদিকে নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে গিয়ে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেল আর পুরো ওয়ার্ডে কোন রোগী নেই, ফাঁকা পড়ে আছে অর্ধশতাধিক বেড। কুড়িগ্রাম থেকে আসা কিডনি রোগে আক্রান্ত ১৬ বছরের কিশোর সালাম জানাল, হাসপাতালের বাইরে বেসরকারি ৩/৪টি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করা যায়। প্রথমে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা এরপর প্রতিবারের জন্য দিতে তিন হাজার টাকা। সালামের মা মনোয়ারা বেগম জানান, আমরা গরিব মানুষ। প্রতিবার তিন হাজার টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করা কোনভাবে সম্ভব নয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়ালাইসিস করতে লাগে মাত্র ৪শ’ টাকা অথচ কর্তৃপক্ষ বলছে ১৯ দিন ধরে মেশিন নষ্ট। এ ব্যাপারে তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাইরে থেকে ডায়ালাইসিস করিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি করে অন্যান্য চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।
এদিকে নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আনিসুজ্জামান জানান, মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ডায়ালাইসিস করা যাচ্ছে না। রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি বলেন, সব কিছু জানতে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
সার্বিক বিষয় জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেয়াজুল করিমের সঙ্গে দেখা করার জন্য তার চেম্বারে গেলে এক কর্মচারী জানান, উনি মিটিং করছেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর জানা গেল, পরিচালক কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে খোশ গল্প করছেন। ফলে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।