বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে নদীর পনি বিপৎসীমার উপরে
সিলেট : বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়ে নিমজ্জিত নগর। দুর্ভোগে মানুষ -সংবাদ
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে নদ-নদীর পানি। আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সে অনুযায়ী আশপাশের নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ৩০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটিকে চলতি মৌসুমের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। সুনামগঞ্জ শহরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সুরমা নদীর পানি জেলার প্রতিটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কোন আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কিছু এলাকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে সোমেশ্বরী, সুরমা আর পুরাতন সুরমা নদীর কিছু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে উঠে গেছে। এতে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল ডুবে গিয়ে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বাপাউবো-এর তথ্যমতে, সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ১৬ মিটার ওপর দিয়ে বইছে। একই ভাবে নেত্রকোনার কমলাকান্দার সোমেশ্বরী নদীর পানি ২৪ মিটার এবং সুনামগঞ্জের দিরাই স্টেশনের পুরাতন সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার তিন মিটার উপর দিয়ে বইছে। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কোন আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
বাপাউবোর তথ্যমতে, সোমবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া একই সময়ে নদীটি সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার এবং দিরাই উপজেলা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার যাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, কুশিয়ারা, চলতি, পাটলাই, নলজুর, খাসিয়ামারা ও কালনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতির কবলে পড়েছে। ভারতের চেরাপুঞ্জির পাদদেশে অবস্থিত ছাতক উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উপজেলার নিচু এলাকা ছাড়াও সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর থাকায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের অনেক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বাপাউবো সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত প্রায় থেমে গেছে। এরকম থাকলে দ্রুতই পানি নেমে যাবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। তবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার জন্য সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম বড়ুয়া বলেন, আমরা যে পূর্বাভাস দিয়েছি তাতে আর বৃষ্টি যদি না বাড়ে তাহলে এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি ঘটবে। তবে বৃষ্টি বাড়লে আরও কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়তে পারে।
কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ওই নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা, মনু-খোয়াই ছাড়া প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও আশপাশের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসায় পরবর্তীতে চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
ভারতের উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি উঠা-নামা করছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে ও তিস্তা ব্যারাজের আশপাশের বাসিন্দারা বন্যার আশঙ্কা করছে।
সোমবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক আট সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদ্দৌলা বলেন, তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তিতে পরেছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে পারে। ফলে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষজনের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে পারে।
সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, তাদের পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশন আছে ১০৯টি। এর মধ্যে পানি বেড়েছে ৭৩টি স্টেশনের, কমেছে ৩৫টির, আর অপরিবর্তিত আছে একটির। এদিকে বিপৎসীমার উপরে উঠেছে তিনটি স্টেশনের পানি, এতে বন্যাকবলিত হয়েছে দুই জেলা।
২৩ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে ৩১৫ মিলিমিটার। এছাড়া জাফলংয়ে ২৪৫, পঞ্চগড়ে ২৩০, ছাতকে ২১৮, জারিয়াজাঞ্জাইলে ১৭৫, সুনামগঞ্জে ১৭০, লালাখালে ১৫১, দুর্গাপুরে ১০৯, গাইবান্ধায় ১০২, রোহানপুরে ৯২, মহেশখালীতে ৯০, কানাইঘাটে ৭৮, সিরাজগঞ্জ ও দিনাজপুরে ৬০ এবং ডালিয়া পয়েন্টে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট প্রতিনিধি জানায়, ঈদের আগের দিন থেকে সিলেটে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার পঞ্চম দিনের মতো এ বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে পানিতে। সড়ক উপচে পানি ঢুকেছে অনেকের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। অনেক সড়কে কোমর পর্যন্ত পানি দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবিরাম বৃষ্টির ফলে মহানগরের মদিনামার্কেট, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হজরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, ছড়ারপাড়, কামালগড়, তালতলা ও দাড়িয়াপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকার সড়ক তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় সড়কে কোমর সমান পানি দেখা গেছে। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসা-বাড়িতে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়েছে পানি। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত পানিও ঢুকে পড়েছে অনেকের বাসা-বাড়ি- দোকানপাটে।
মহানগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘এ ভোগান্তি আর সহ্য হয় না। হালকা বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। আর আজ ৫ দিন ধরে তো অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের বাসার নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। আমরা থাকি দোতলায়।’
সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চলাচলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। ঈদের ছুটির পরে সোমবার সিলেটে খুলেছে অফিস-আদালত। সকালে কর্মজীবী মানুষদের কর্মস্থলে যেতে পোহাতে হয়েছে অনেক ভোগান্তি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, প্রবল বৃষ্টির কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নামতে সময় লাগছে। সিটি করপোরেশনের টিম কাজ করছে। কোথাও ময়লা-আবর্জনার জন্য পানি আটকে গেলে তা পরিষ্কার করে দেয়া হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টি বেড়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহ তা একই রকম থাকতে পারে। ফলে আগামী প্রায় এক সপ্তাহ একইভাবে সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে।
তিনি জানান, গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১১ মিলিমিটার। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত খুব একটা হয়নি, তবে হলেও হালকা থেমে থেমে। সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত রয়েছে। তাই নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সামসুদদোহা জানান ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার ছিল। বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর।
তিনি আরও জানান ভারতের চেরা পূজ্ঞিতে বৃষ্টিপাত হয়নি তাই পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে। সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কিছু সড়ক ও ঘর বাড়ির আঙ্গিনায় পানি জমে আছে।
বিশ্বম্ভরপুর তাহিরপুর সড়কের দুর্গাপুরের ২০০মিটার ডুবন্ত সড়কে পানি থাকার কারণে আজও বিকল্প হিসেবে নৌকায় চলাচল করছে মানুষ। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদিদ জানান, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কিন্ত আমরা সার্বক্ষণিক সতর্ক আছি। জেলা প্রশাসন পর্যাপ্ত ত্রান ও বরাদ্দ দিয়েছেন। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, বন্যার কোন আশঙ্কা নেই, এটি স্বাভাবিক বর্ষা।
গত কয়দিনের অব্যাহত বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও ঘর বাড়ির আঙ্গিনায় পানি জমে খুব খারাপ অবস্থা। কোন কোন এলাকার ঘরের ভেতর ও এখনও পানি আছে। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার নবীনগর, ধোপাখালী, ষোলঘর, কাজির পয়েন্ট, উকিল পাড়া, পুরাতন জেল রোড, মাছ বাজার, সবজি বাজার, পশ্চিম বাজার, উত্তর আরপিন নগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, জামতলা, সুলতানপুর, কালীপুরসহ অন্যান্য এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত।
পূর্ব সুলতানপুর এলাকার অন্তত ৫০টি পরিবারের অন্তত ২০০ মানুষ গত রোববার দুপুরে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে আশ্রয় নেয়া শাহ আলম ও শামীম আহমেদ জানান সোমবার বিকেল পর্যন্ত তাদের কেউ কিছুই দেননি। তবে রাতে জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার মেয়র এসে দেখে গেছেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জানান, তারা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী ও মজুদ আছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রীতদের তালিকা করে ত্রাণ দেয়া হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে নদীর পনি বিপৎসীমার উপরে
সিলেট : বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়ে নিমজ্জিত নগর। দুর্ভোগে মানুষ -সংবাদ
সোমবার, ০৩ জুলাই ২০২৩
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে নদ-নদীর পানি। আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সে অনুযায়ী আশপাশের নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ৩০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটিকে চলতি মৌসুমের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। সুনামগঞ্জ শহরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সুরমা নদীর পানি জেলার প্রতিটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কোন আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কিছু এলাকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে সোমেশ্বরী, সুরমা আর পুরাতন সুরমা নদীর কিছু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে উঠে গেছে। এতে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল ডুবে গিয়ে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বাপাউবো-এর তথ্যমতে, সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ১৬ মিটার ওপর দিয়ে বইছে। একই ভাবে নেত্রকোনার কমলাকান্দার সোমেশ্বরী নদীর পানি ২৪ মিটার এবং সুনামগঞ্জের দিরাই স্টেশনের পুরাতন সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার তিন মিটার উপর দিয়ে বইছে। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কোন আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
বাপাউবোর তথ্যমতে, সোমবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া একই সময়ে নদীটি সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার এবং দিরাই উপজেলা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার যাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, কুশিয়ারা, চলতি, পাটলাই, নলজুর, খাসিয়ামারা ও কালনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতির কবলে পড়েছে। ভারতের চেরাপুঞ্জির পাদদেশে অবস্থিত ছাতক উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। উপজেলার নিচু এলাকা ছাড়াও সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর থাকায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের অনেক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বাপাউবো সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত প্রায় থেমে গেছে। এরকম থাকলে দ্রুতই পানি নেমে যাবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। তবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার জন্য সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম বড়ুয়া বলেন, আমরা যে পূর্বাভাস দিয়েছি তাতে আর বৃষ্টি যদি না বাড়ে তাহলে এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি ঘটবে। তবে বৃষ্টি বাড়লে আরও কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়তে পারে।
কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ওই নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা, মনু-খোয়াই ছাড়া প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও আশপাশের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসায় পরবর্তীতে চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
ভারতের উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি উঠা-নামা করছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে ও তিস্তা ব্যারাজের আশপাশের বাসিন্দারা বন্যার আশঙ্কা করছে।
সোমবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক আট সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদ্দৌলা বলেন, তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তিতে পরেছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে পারে। ফলে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষজনের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে পারে।
সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, তাদের পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশন আছে ১০৯টি। এর মধ্যে পানি বেড়েছে ৭৩টি স্টেশনের, কমেছে ৩৫টির, আর অপরিবর্তিত আছে একটির। এদিকে বিপৎসীমার উপরে উঠেছে তিনটি স্টেশনের পানি, এতে বন্যাকবলিত হয়েছে দুই জেলা।
২৩ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে ৩১৫ মিলিমিটার। এছাড়া জাফলংয়ে ২৪৫, পঞ্চগড়ে ২৩০, ছাতকে ২১৮, জারিয়াজাঞ্জাইলে ১৭৫, সুনামগঞ্জে ১৭০, লালাখালে ১৫১, দুর্গাপুরে ১০৯, গাইবান্ধায় ১০২, রোহানপুরে ৯২, মহেশখালীতে ৯০, কানাইঘাটে ৭৮, সিরাজগঞ্জ ও দিনাজপুরে ৬০ এবং ডালিয়া পয়েন্টে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট প্রতিনিধি জানায়, ঈদের আগের দিন থেকে সিলেটে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার পঞ্চম দিনের মতো এ বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে পানিতে। সড়ক উপচে পানি ঢুকেছে অনেকের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। অনেক সড়কে কোমর পর্যন্ত পানি দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবিরাম বৃষ্টির ফলে মহানগরের মদিনামার্কেট, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হজরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, ছড়ারপাড়, কামালগড়, তালতলা ও দাড়িয়াপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকার সড়ক তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় সড়কে কোমর সমান পানি দেখা গেছে। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসা-বাড়িতে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়েছে পানি। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত পানিও ঢুকে পড়েছে অনেকের বাসা-বাড়ি- দোকানপাটে।
মহানগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘এ ভোগান্তি আর সহ্য হয় না। হালকা বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। আর আজ ৫ দিন ধরে তো অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের বাসার নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। আমরা থাকি দোতলায়।’
সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চলাচলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। ঈদের ছুটির পরে সোমবার সিলেটে খুলেছে অফিস-আদালত। সকালে কর্মজীবী মানুষদের কর্মস্থলে যেতে পোহাতে হয়েছে অনেক ভোগান্তি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, প্রবল বৃষ্টির কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নামতে সময় লাগছে। সিটি করপোরেশনের টিম কাজ করছে। কোথাও ময়লা-আবর্জনার জন্য পানি আটকে গেলে তা পরিষ্কার করে দেয়া হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টি বেড়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহ তা একই রকম থাকতে পারে। ফলে আগামী প্রায় এক সপ্তাহ একইভাবে সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে।
তিনি জানান, গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১১ মিলিমিটার। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত খুব একটা হয়নি, তবে হলেও হালকা থেমে থেমে। সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত রয়েছে। তাই নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সামসুদদোহা জানান ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার ছিল। বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর।
তিনি আরও জানান ভারতের চেরা পূজ্ঞিতে বৃষ্টিপাত হয়নি তাই পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে। সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কিছু সড়ক ও ঘর বাড়ির আঙ্গিনায় পানি জমে আছে।
বিশ্বম্ভরপুর তাহিরপুর সড়কের দুর্গাপুরের ২০০মিটার ডুবন্ত সড়কে পানি থাকার কারণে আজও বিকল্প হিসেবে নৌকায় চলাচল করছে মানুষ। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদিদ জানান, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কিন্ত আমরা সার্বক্ষণিক সতর্ক আছি। জেলা প্রশাসন পর্যাপ্ত ত্রান ও বরাদ্দ দিয়েছেন। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, বন্যার কোন আশঙ্কা নেই, এটি স্বাভাবিক বর্ষা।
গত কয়দিনের অব্যাহত বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও ঘর বাড়ির আঙ্গিনায় পানি জমে খুব খারাপ অবস্থা। কোন কোন এলাকার ঘরের ভেতর ও এখনও পানি আছে। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার নবীনগর, ধোপাখালী, ষোলঘর, কাজির পয়েন্ট, উকিল পাড়া, পুরাতন জেল রোড, মাছ বাজার, সবজি বাজার, পশ্চিম বাজার, উত্তর আরপিন নগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, জামতলা, সুলতানপুর, কালীপুরসহ অন্যান্য এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত।
পূর্ব সুলতানপুর এলাকার অন্তত ৫০টি পরিবারের অন্তত ২০০ মানুষ গত রোববার দুপুরে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে আশ্রয় নেয়া শাহ আলম ও শামীম আহমেদ জানান সোমবার বিকেল পর্যন্ত তাদের কেউ কিছুই দেননি। তবে রাতে জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার মেয়র এসে দেখে গেছেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জানান, তারা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী ও মজুদ আছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রীতদের তালিকা করে ত্রাণ দেয়া হবে।