alt

সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম দেড়শ’ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব পেট্রোবাংলার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষ, কারো কোনো মতামত থাকলে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত লিখিত আকারে কমিশন কার্যালয়ে জমা দেয়া যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

ভর্তুকি চূড়ান্ত না করে দাম বাড়ালে সংকটের আশঙ্কা করছে বিসিআইসি

দাম বাড়ানোর বিষয়ে সবদিক বিবেচনা করে ভারসাম্য রক্ষা করবে কমিশন: গণশুনানিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান

পেট্রোবাংলা প্রতি ইউনিট গ্যাস ১৬ টাকা থেকে দাম বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব তুলে ধরেছে। তবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বলেছে ভর্তুকি চূড়ান্ত না করে গ্যাসের দাম বাড়লে সংকট তৈরি হবে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সোমবার,(০৬ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে শুনানির সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘গ্যাসের দাম প্রশ্নে সবদিক বিবেচনা করে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। দাম বেড়ে গেলে সারের উৎপাদন খরচের বিষয়ে আপনারা চিন্তিত! অবশ্যই কৃষিকে বিবেচনায় নিতে হবে।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘জিডিপিতে কৃষির অবদান কম হলেও খাদ্যের নিরাপত্তা এবং বিশাল কর্মসংস্থানের বিষয়টি অবশ্যই ভাবনার রাখতে হবে। আবার এলএনজি আমদানির খরচের বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনতে হবে।’

এর আগে সকালে দিনব্যাপী গণশুনানির উদ্বোধনী বক্তৃতায় জালাল আহমেদ বলেন, ‘গণশুনানি একটি আইনি প্রক্রিয়া এর ন্যায্যতা প্রমাণের দায়িত্ব প্রস্তাবকারীর। আবার কেউ ভিন্ন প্রস্তাব করলে সেটির যৌক্তিকতা প্রমাণের দায়িত্ব ভিন্নমত পোষণকারীর। কমিশন যুক্তির যথার্থতা যাচাই করে আদেশ চূড়ান্ত করবে।’

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দাম বাড়ানো হলে বাড়তি ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ করা হবে। আগামী ৬ মাস (অক্টোবর-মার্চ) পুরো মাত্রায় (২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস সরবরাহ দেয়া হবে। অবশিষ্ট ৬ মাসের মধ্যে এপ্রিল-মে ১৬৫ মিলিয়ন হারে, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৩০ মিলিয়ন হারে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হবে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সার উৎপাদনে ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়েছে।

বিসিআইসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘২০২২ সালে একইভাবে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়, কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায়নি বরং অনেকখানি কমেছে সরবরাহ। তবে যদি পুরো মাত্রায় গ্যাস দেয়া হয় তাহলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন করা সম্ভব। আর ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা গেলে গ্যাসের ৩০ টাকা হলেও আমদানির তুলনায় কম দাম পড়বে।’

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের দাম যদি ৩০ টাকা হয়, আর যদি ২০ লাখ টন উৎপাদন করতে পারি, তাহলে কেজিপ্রতি সারের উৎপাদন খরচ পড়বে ৪৬ টাকার মতো। সেখানে আমদানিতে ৬১ টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেড গ্যাপ (ভর্তুকি) সুরাহা না করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সার কারখানাগুলো তীব্র আর্থিক সংকটে পড়বে। গ্যাস বিল পরিশোধে বিলম্বসহ সারের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়তে পারে।’ গ্যাসের মিশ্রিত দর ২৮ টাকার নিচে হওয়ার উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভোক্তাদের পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করা হয়। শুনানিতে অংশ নিয়ে বক্তব্যে তারা বলেন, ‘এতে সারের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। আর সারের দাম বেড়ে গেলে কৃষির ওপর চাপ বাড়বে। তাদের উৎপাদন ব্যহত হতে পারে।’

সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইলে স্ল্যাব পদ্ধতির প্রস্তাব করেন একজন ভোক্তা। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য স্ল্যাব করা যেতে পারে। বেশি গ্যাস সরবরাহ হলে বেশি দাম পাবে। না হলে ২০২২ সালের মতো শুধু শুধুই দাম বাড়িয়ে নিয়ে যাবে।’

বিসিআইসি জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৮ টাকার মতো। বিসিআইসি ডিলারের কাছে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করে, আর ডিলার বিক্রি করেন ২৭ টাকা দরে। ট্রেড গ্যাপ (উৎপাদন ও বিক্রয়মূল্যে ঘাটতি) ১৩ টাকা ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করছে সরকার। গ্যাসের দাম বেড়ে গেলে সারের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে। সেই ট্রেড গ্যাপের (ভর্তুকি) আগে সুরাহা হওয়ার দরকার।

বিসিআইসির রিপোর্ট বলেছে, আগের সরবরাহ বাড়নোর কথা বলে গ্যাস দাম বাড়িয়ে নিয়েছে পেট্রোবাংলা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুধুমাত্র ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসি প্রায় পুরো মাত্রায় উৎপাদন করেছে। যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি গ্যাস অভাবে ৩৬১ দিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি বন্ধ ছিল ২৭৩ দিন, ঘোড়াশাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি ১৯৮ দিন বন্ধ ছিল। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি মাত্র ৩.৭৫ শতাংশ সময় উৎপাদনে ছিল। প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আগের বছরের তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে।

ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির দৈনিক চাহিদা ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের চাহিদা ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি, যে কারণে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এছাড়া বিদেশি কোম্পানির মালিকানায় কাফকো সারকারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কাফকোকে চুক্তির আওতায় নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দরে ডলারে সার কিনে নেয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি কোম্পানিটির সঙ্গে ৩০ টাকা দরে চুক্তির নবায়ন করা হয়েছে।

বিসিআইসি দাবি করেছে, বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার যোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬ থেকে ২১ লাখ টন যোগান দিতে হয়। গ্যাস অভাবে বন্ধ থাকায় কারখানাগুলো কুলিং টাওয়ার, ইলেকট্রিক্যাল বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে অপারেশনাল খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, সারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা নেই। সে কারণে কৃষকের ওপর কোন চাপ পড়বে না। তবে সারের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে সেই ঘাটতির পূরণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া দরকার।

দিনের শুরুতে পেট্রোবাংলার ও বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

আলোচনা ও বিভিন্ন প্রশ্নত্তোর পর্বে অংশ নেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) মিজানুর রহমান, পরিচালক (অপরেশন) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, জেনারেল ম্যানেজার মেহেরুল ইসলাম, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ পারভেজ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলে আলম, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা রেজাবুদ্দৌলা, সাংবাদিক লুৎফর রহমান কাকন প্রমুখ।

ছবি

স্বর্ণের ভরি ছাড়ালো ২ লাখ টাকা

ছবি

পাচারকৃত অর্থ আনতে আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পরামর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের

ছবি

বাজারে সেলসফোর্স এর ‘মিউলসফট এজেন্ট ফেব্রিক’

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে ভিভো’র নতুন স্মার্টফোন ভি৬০ লাইট উন্মোচন

ছবি

মুদ্রাস্ফীতি : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়

ছবি

সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ৫.৬৬ শতাংশ

ছবি

আইএমএফের প্রতিনিধিদল আসছে এ মাসে, রাজস্ব আয়ের শর্ত পূরণ হয়নি.

ছবি

ইসলামী ব্যাংকে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণে আল্টিমেটাম ও মানববন্ধন

ছবি

পোশাক শিল্পে ডিএফপি চালু করতে চায় বিজিএমইএ ও ডিবিপি

ছবি

গার্ডিয়ান লাইফ ও ক্লিনিকলের চুক্তি

ছবি

বিদেশে খরচ চালাতে বছরে ৩ হাজার ডলার পাঠাতে পারবে এসএমই প্রতিষ্ঠান

ছবি

উত্তরা ফাইন্যান্সে মূলধন ঘাটতি ৭১২ কোটি টাকা

ছবি

সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এলো ২.৬৮ বিলিয়ন ডলার

ছবি

বাংলাদেশি কসমেটিকস শিল্পে বৈশ্বিক আগ্রহ

ছবি

ট্রাম্পের প্রতিকৃতি সংবলিত ১ ডলারের মুদ্রা ছাড়ার পরিকল্পনা

ছবি

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিউট ও হাসপাতালে এবি ব্যাংকের কালেকশন বুথ উদ্বোধন

ছবি

ভালো শেয়ারেও বাজার মন্দা, কাটছে না খরা

ছবি

বাংলাদেশ-সৌদি আরব বিজনেস সামিট শুরু হচ্ছে সোমবার

ছবি

স্বর্ণের দামে রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ৯৭ হাজার

ছবি

রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করছে এমজেএল বাংলাদেশ

ছবি

রেমিট্যান্স সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ভারত থেকে আমদানি বাড়াবে রাশিয়া, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ফল

ছবি

মাকে ৩৬ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিলেন মির্জা আব্বাসের ছেলে

ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক ১৯ কর্মকর্তার বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে দুদক

ছবি

প্রাইম ব্যাংকের নারী গ্রাহকদের জন্য গো গার্লস ভ্রমণ প্যাকেজে ছাড়

ছবি

এবার ‘অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের’ চাকরি বাতিল চেয়ে ইসলামী ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন

ছবি

মুনাফা কমলেও রেকর্ড লভ্যাংশ দেবে ইবনে সিনা ফার্মা

ছবি

ফাঁকি রোধে মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়াচ্ছে এনবিআর

ছবি

কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী বিদেশিরা, প্রয়োজন আরো প্লট

ছবি

সোনালী ব্যাংকের ৯০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি

ছবি

বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে: এফএও

ছবি

শাটডাউন সত্ত্বেও ওয়াল স্ট্রিটে নতুন রেকর্ড

ছবি

সমান শ্রম-সময় দিয়েও মজুরি-মর্যাদায় পিছিয়ে নারীরা

ছবি

উদ্ধারের ৪ ঘণ্টা পর ফের হ্যাকড ইসলামী ব্যাংকের ফেসবুক পেজ

ছবি

বৃষ্টি ও আমদানি বন্ধ থাকায় কাঁচা মরিচের কেজি ৪৫০ টাকা

ছবি

প্রযুক্তি খাতের উত্থানে চাঙ্গা এশিয়ার বাজার

tab

সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম দেড়শ’ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব পেট্রোবাংলার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষ, কারো কোনো মতামত থাকলে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত লিখিত আকারে কমিশন কার্যালয়ে জমা দেয়া যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

ভর্তুকি চূড়ান্ত না করে দাম বাড়ালে সংকটের আশঙ্কা করছে বিসিআইসি

দাম বাড়ানোর বিষয়ে সবদিক বিবেচনা করে ভারসাম্য রক্ষা করবে কমিশন: গণশুনানিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান

পেট্রোবাংলা প্রতি ইউনিট গ্যাস ১৬ টাকা থেকে দাম বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব তুলে ধরেছে। তবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বলেছে ভর্তুকি চূড়ান্ত না করে গ্যাসের দাম বাড়লে সংকট তৈরি হবে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সোমবার,(০৬ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে শুনানির সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘গ্যাসের দাম প্রশ্নে সবদিক বিবেচনা করে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। দাম বেড়ে গেলে সারের উৎপাদন খরচের বিষয়ে আপনারা চিন্তিত! অবশ্যই কৃষিকে বিবেচনায় নিতে হবে।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘জিডিপিতে কৃষির অবদান কম হলেও খাদ্যের নিরাপত্তা এবং বিশাল কর্মসংস্থানের বিষয়টি অবশ্যই ভাবনার রাখতে হবে। আবার এলএনজি আমদানির খরচের বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনতে হবে।’

এর আগে সকালে দিনব্যাপী গণশুনানির উদ্বোধনী বক্তৃতায় জালাল আহমেদ বলেন, ‘গণশুনানি একটি আইনি প্রক্রিয়া এর ন্যায্যতা প্রমাণের দায়িত্ব প্রস্তাবকারীর। আবার কেউ ভিন্ন প্রস্তাব করলে সেটির যৌক্তিকতা প্রমাণের দায়িত্ব ভিন্নমত পোষণকারীর। কমিশন যুক্তির যথার্থতা যাচাই করে আদেশ চূড়ান্ত করবে।’

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দাম বাড়ানো হলে বাড়তি ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ করা হবে। আগামী ৬ মাস (অক্টোবর-মার্চ) পুরো মাত্রায় (২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস সরবরাহ দেয়া হবে। অবশিষ্ট ৬ মাসের মধ্যে এপ্রিল-মে ১৬৫ মিলিয়ন হারে, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৩০ মিলিয়ন হারে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হবে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সার উৎপাদনে ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়েছে।

বিসিআইসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘২০২২ সালে একইভাবে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়, কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায়নি বরং অনেকখানি কমেছে সরবরাহ। তবে যদি পুরো মাত্রায় গ্যাস দেয়া হয় তাহলে ২০ লাখ টনের ওপরে সার উৎপাদন করা সম্ভব। আর ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা গেলে গ্যাসের ৩০ টাকা হলেও আমদানির তুলনায় কম দাম পড়বে।’

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের দাম যদি ৩০ টাকা হয়, আর যদি ২০ লাখ টন উৎপাদন করতে পারি, তাহলে কেজিপ্রতি সারের উৎপাদন খরচ পড়বে ৪৬ টাকার মতো। সেখানে আমদানিতে ৬১ টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেড গ্যাপ (ভর্তুকি) সুরাহা না করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সার কারখানাগুলো তীব্র আর্থিক সংকটে পড়বে। গ্যাস বিল পরিশোধে বিলম্বসহ সারের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়তে পারে।’ গ্যাসের মিশ্রিত দর ২৮ টাকার নিচে হওয়ার উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভোক্তাদের পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করা হয়। শুনানিতে অংশ নিয়ে বক্তব্যে তারা বলেন, ‘এতে সারের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। আর সারের দাম বেড়ে গেলে কৃষির ওপর চাপ বাড়বে। তাদের উৎপাদন ব্যহত হতে পারে।’

সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইলে স্ল্যাব পদ্ধতির প্রস্তাব করেন একজন ভোক্তা। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য স্ল্যাব করা যেতে পারে। বেশি গ্যাস সরবরাহ হলে বেশি দাম পাবে। না হলে ২০২২ সালের মতো শুধু শুধুই দাম বাড়িয়ে নিয়ে যাবে।’

বিসিআইসি জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৮ টাকার মতো। বিসিআইসি ডিলারের কাছে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করে, আর ডিলার বিক্রি করেন ২৭ টাকা দরে। ট্রেড গ্যাপ (উৎপাদন ও বিক্রয়মূল্যে ঘাটতি) ১৩ টাকা ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করছে সরকার। গ্যাসের দাম বেড়ে গেলে সারের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে। সেই ট্রেড গ্যাপের (ভর্তুকি) আগে সুরাহা হওয়ার দরকার।

বিসিআইসির রিপোর্ট বলেছে, আগের সরবরাহ বাড়নোর কথা বলে গ্যাস দাম বাড়িয়ে নিয়েছে পেট্রোবাংলা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুধুমাত্র ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসি প্রায় পুরো মাত্রায় উৎপাদন করেছে। যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি গ্যাস অভাবে ৩৬১ দিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি বন্ধ ছিল ২৭৩ দিন, ঘোড়াশাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি ১৯৮ দিন বন্ধ ছিল। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি মাত্র ৩.৭৫ শতাংশ সময় উৎপাদনে ছিল। প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আগের বছরের তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে।

ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির দৈনিক চাহিদা ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের চাহিদা ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি, যে কারণে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এছাড়া বিদেশি কোম্পানির মালিকানায় কাফকো সারকারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কাফকোকে চুক্তির আওতায় নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দরে ডলারে সার কিনে নেয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি কোম্পানিটির সঙ্গে ৩০ টাকা দরে চুক্তির নবায়ন করা হয়েছে।

বিসিআইসি দাবি করেছে, বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার যোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬ থেকে ২১ লাখ টন যোগান দিতে হয়। গ্যাস অভাবে বন্ধ থাকায় কারখানাগুলো কুলিং টাওয়ার, ইলেকট্রিক্যাল বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে অপারেশনাল খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, সারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা নেই। সে কারণে কৃষকের ওপর কোন চাপ পড়বে না। তবে সারের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে সেই ঘাটতির পূরণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া দরকার।

দিনের শুরুতে পেট্রোবাংলার ও বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

আলোচনা ও বিভিন্ন প্রশ্নত্তোর পর্বে অংশ নেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) মিজানুর রহমান, পরিচালক (অপরেশন) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, জেনারেল ম্যানেজার মেহেরুল ইসলাম, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ পারভেজ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলে আলম, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা রেজাবুদ্দৌলা, সাংবাদিক লুৎফর রহমান কাকন প্রমুখ।

back to top