হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।
সোমবার, (২০ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী এ তথ্য জানান।
ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কার্গো ভিলেজের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কার্যকর ফায়ার ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কার্গো ভিলেজের প্রধান ব্যবহারকারীদের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। তারা সাধারণত হালকা যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক পণ্য, তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, অ্যাক্সেসরিজ এবং নমুনা আমদানি ও রপ্তানির জন্য এই স্থান ব্যবহার করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও তাদের গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র ও পার্সেল আদান-প্রদানের জন্য কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির জন্য এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই স্থান ব্যবহার করেন। এছাড়া হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, শাকসবজি, ফলমূল এবং অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানিকারকরাও কার্গো ভিলেজের ওপর নির্ভরশীল। এই ধরনের পণ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল-সময়মতো বিদেশে না পৌঁছালে তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে, কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড বা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে আমাদের রপ্তানি শিল্প ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।’
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা কঠিন। সরাসরি ক্ষতি হয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া পণ্যে, তবে এটি কেবল সরাসরি ক্ষতি নয়-পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি না হওয়ায় আরও বড় ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে সামনের কয়েকদিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত থাকবে, বাজারে অবস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে, ক্রেতাদের আস্থা কমবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের সদস্যদের কাছে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা করছি, তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়নি। একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে সামগ্রিক ক্ষতির সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে। তবুও প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা-সব মিলিয়ে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, ‘আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, বিদেশি ক্রেতারা এই অগ্নিকাণ্ডের খবরে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই ঝুঁকি নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার দায় কেউ যেন এড়াতে না পারে-সেজন্য দায়িত্ব অবহেলার শাস্তি হবে কি?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত শুরু করা জরুরি। গত কয়েক দিনে আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং সর্বশেষ ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ধারাবাহিকতা উদ্যোক্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে।
ওষধ শিল্পের ‘২০০ কোটি টাকার’ কাঁচামাল ভষ্মীভূত
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা ৩২ কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছিলাম, কার কী ক্ষতি হয়েছে জানতে। দেখলাম, তাদের ২০০ কোটি মূল্যের কাঁচামাল ‘ভষ্মীভূত’ হয়েছে।”
তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ছুটির দিনগুলোতে কাস্টম হাউজের শুল্কায়ন বন্ধ রাখার সমালোচনা করেন। জাকির বলেন, ‘২৪ ঘণ্টাই চালু রাখতে হবে। স্বল্প পরিসরে হলেও। আমরা এর জন্য বাড়তি টাকা দিতে হলে তাও দিতে প্রস্তুত।’
নয়ত ফের ভয়াবহ এমন আগুনে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা যেতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।
নিজের কোম্পানির ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘আমার একটা নারকোটিক আইটেম পুড়ে গেছে। এখন আবার এটার আমদানির অনুমতি নেওয়া, নারকোটিক্স অ্যান্ড ড্রাগস থেকে পাস করাইয়া বিদেশ থেকে আনা তিন থেকে চার মাস সময়ের ব্যাপার। অনেক লম্বা সময়। সাপ্লাই চেইনে ইমেডিয়েট ঘাটতি হবে না। তবে আগামী তিন থেকে ছয় মাসে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার ফিনিশড গুডস তৈরি ও সাপ্লাইয়ে সংকট দেখা যেতে পারে।’
সরকারি দপ্তরগুলো দায় এড়াতে পারে না।
ইএবি সভাপতি হাতেম বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ডের দায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি), কাস্টম হাউস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-কেউই এড়াতে পারে না। কারণ, সিএএবি এই কার্গো ভিলেজের মালিক, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত পণ্যের তত্ত্বাবধায়ক, আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস হলো হ্যান্ডলিং এজেন্ট।’
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কেউ ‘যথাযথ মনোযোগ দেয়নি’ বলে অভিযোগ করেন হাতেম।
তার ভাষ্য, ‘বর্তমান গুদাম ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল এবং এখনো ম্যানুয়ালি পরিচালিত হয়। এছাড়া কাস্টমস ছাড়পত্র প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রচুর পণ্য জমে থাকে, ফলে সীমিত স্থানের সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। কেমিকেল ও ওষুধের কাঁচামালের মত স্পর্শকাতর পণ্যের গুদাম আলাদা, অধিক সুরক্ষিত এবং নিরাপদ দূরত্বে স্থাপন করা উচিত ছিল। এই ঘটনায় শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়নি; দেশের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
ইএবির ৬ দাবি
ইএবি সভাপতি বলেন, ‘এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও ক্ষতির নিরূপণ শেষে দ্রুত ছয়টি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
দাবিগুলো হলো, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে করা বীমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া। যেসব পণ্যের বীমা করা ছিল না, সেগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দেওয়া। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ। ঔষধ শিল্পের জন্য আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আলাদা গুদামের ব্যবস্থা করা। নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম স্থাপন। কার্গো ভিলেজের গুদাম ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করা।
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।
সোমবার, (২০ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী এ তথ্য জানান।
ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কার্গো ভিলেজের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কার্যকর ফায়ার ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কার্গো ভিলেজের প্রধান ব্যবহারকারীদের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। তারা সাধারণত হালকা যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক পণ্য, তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, অ্যাক্সেসরিজ এবং নমুনা আমদানি ও রপ্তানির জন্য এই স্থান ব্যবহার করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও তাদের গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র ও পার্সেল আদান-প্রদানের জন্য কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির জন্য এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই স্থান ব্যবহার করেন। এছাড়া হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, শাকসবজি, ফলমূল এবং অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানিকারকরাও কার্গো ভিলেজের ওপর নির্ভরশীল। এই ধরনের পণ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল-সময়মতো বিদেশে না পৌঁছালে তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে, কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড বা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে আমাদের রপ্তানি শিল্প ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।’
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা কঠিন। সরাসরি ক্ষতি হয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া পণ্যে, তবে এটি কেবল সরাসরি ক্ষতি নয়-পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি না হওয়ায় আরও বড় ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে সামনের কয়েকদিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত থাকবে, বাজারে অবস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে, ক্রেতাদের আস্থা কমবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের সদস্যদের কাছে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা করছি, তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়নি। একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে সামগ্রিক ক্ষতির সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে। তবুও প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা-সব মিলিয়ে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, ‘আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, বিদেশি ক্রেতারা এই অগ্নিকাণ্ডের খবরে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই ঝুঁকি নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার দায় কেউ যেন এড়াতে না পারে-সেজন্য দায়িত্ব অবহেলার শাস্তি হবে কি?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত শুরু করা জরুরি। গত কয়েক দিনে আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং সর্বশেষ ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ধারাবাহিকতা উদ্যোক্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে।
ওষধ শিল্পের ‘২০০ কোটি টাকার’ কাঁচামাল ভষ্মীভূত
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা ৩২ কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছিলাম, কার কী ক্ষতি হয়েছে জানতে। দেখলাম, তাদের ২০০ কোটি মূল্যের কাঁচামাল ‘ভষ্মীভূত’ হয়েছে।”
তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ছুটির দিনগুলোতে কাস্টম হাউজের শুল্কায়ন বন্ধ রাখার সমালোচনা করেন। জাকির বলেন, ‘২৪ ঘণ্টাই চালু রাখতে হবে। স্বল্প পরিসরে হলেও। আমরা এর জন্য বাড়তি টাকা দিতে হলে তাও দিতে প্রস্তুত।’
নয়ত ফের ভয়াবহ এমন আগুনে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা যেতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।
নিজের কোম্পানির ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘আমার একটা নারকোটিক আইটেম পুড়ে গেছে। এখন আবার এটার আমদানির অনুমতি নেওয়া, নারকোটিক্স অ্যান্ড ড্রাগস থেকে পাস করাইয়া বিদেশ থেকে আনা তিন থেকে চার মাস সময়ের ব্যাপার। অনেক লম্বা সময়। সাপ্লাই চেইনে ইমেডিয়েট ঘাটতি হবে না। তবে আগামী তিন থেকে ছয় মাসে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার ফিনিশড গুডস তৈরি ও সাপ্লাইয়ে সংকট দেখা যেতে পারে।’
সরকারি দপ্তরগুলো দায় এড়াতে পারে না।
ইএবি সভাপতি হাতেম বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ডের দায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি), কাস্টম হাউস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-কেউই এড়াতে পারে না। কারণ, সিএএবি এই কার্গো ভিলেজের মালিক, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত পণ্যের তত্ত্বাবধায়ক, আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস হলো হ্যান্ডলিং এজেন্ট।’
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কেউ ‘যথাযথ মনোযোগ দেয়নি’ বলে অভিযোগ করেন হাতেম।
তার ভাষ্য, ‘বর্তমান গুদাম ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল এবং এখনো ম্যানুয়ালি পরিচালিত হয়। এছাড়া কাস্টমস ছাড়পত্র প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রচুর পণ্য জমে থাকে, ফলে সীমিত স্থানের সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। কেমিকেল ও ওষুধের কাঁচামালের মত স্পর্শকাতর পণ্যের গুদাম আলাদা, অধিক সুরক্ষিত এবং নিরাপদ দূরত্বে স্থাপন করা উচিত ছিল। এই ঘটনায় শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়নি; দেশের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
ইএবির ৬ দাবি
ইএবি সভাপতি বলেন, ‘এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও ক্ষতির নিরূপণ শেষে দ্রুত ছয়টি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
দাবিগুলো হলো, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে করা বীমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া। যেসব পণ্যের বীমা করা ছিল না, সেগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দেওয়া। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ। ঔষধ শিল্পের জন্য আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আলাদা গুদামের ব্যবস্থা করা। নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম স্থাপন। কার্গো ভিলেজের গুদাম ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করা।