অবশেষে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি বৃহস্পতিবার,(০৬ নভেম্বর ২০২৫) এসব ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহস্পতিবার সকালে লেনদেন শুরুর আগেই এ সিদ্ধান্তের কথা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসই সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের ফলে আজ থেকে শেয়ারবাজারে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে। ব্যাংক পাঁচটি হলো, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
গতকাল বুধবার এই পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে তাদের দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরপরই ব্যাংকগুলোয় প্রশাসকও নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্য শূন্য ঘোষণা করেন। তিনি এও জানান, ব্যাংকগুলোর বর্তমান যে আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে শেয়ারধারীরা অর্থ পাবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই ঘোষণার পর গতকাল বুধবার বিকেল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর আগেই এই ব্যাংক পাঁচটির লেনদেন স্থগিতের কথা জানায় বিএসইসি। যদিও শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসি বেশ বিলম্ব করেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যখন এসব ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তখন বিএসইসি ব্যাংকগুলোর লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলে নতুন করে কোনো বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না।
পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীরা যেভাবে টাকা ফেরত পাবেন
পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক (ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক) ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসিসহ সব ধরনের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।
ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ ‘নেগেটিভ ইকুইটি’ অবস্থায় চলে গেছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন শূন্যের নিচে। ফলে শেয়ারগুলোর ভ্যালু জিরো হিসেবে বিবেচিত হবে। কাউকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে পাঁচটি দুর্বল শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে। আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখতে এবং ফেরত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত: যেসব আমানতকারীর মোট জমার পরিমাণ ২ লাখ টাকা বা তার কম, তারা প্রথম ধাপে সম্পূর্ণ টাকা একবারে তোলার সুযোগ পাবেন। সরকারি তহবিল বা ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’ থেকে এই অর্থ জোগান দেওয়া হবে এবং ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগের পর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২ লাখ টাকার বেশি আমানত: যাদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার বেশি, তাদের বাকি টাকা ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে। এই ধাপে ধাপে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা (সম্ভাব্য ৬ মাস থেকে ৫ বছর) চূড়ান্ত করা হতে পারে, যদিও এটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
আমানত ফেরতের সময়সীমা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, আমানতকারীরা চলতি নভেম্বর মাস থেকেই টাকা তোলা শুরু করতে পারবেন।
আমানতকারীরা তাদের নিজ নিজ ব্যাংক শাখার মাধ্যমে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসকদের নির্দেশিত উপায়ে তাদের আমানতের অর্থ ফেরতের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পাশাপাশি গভর্নর জানান, আমানতকারীদের জমা রাখা অর্থ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থ সুরক্ষিত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
অবশেষে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি বৃহস্পতিবার,(০৬ নভেম্বর ২০২৫) এসব ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহস্পতিবার সকালে লেনদেন শুরুর আগেই এ সিদ্ধান্তের কথা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসই সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের ফলে আজ থেকে শেয়ারবাজারে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে। ব্যাংক পাঁচটি হলো, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
গতকাল বুধবার এই পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে তাদের দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরপরই ব্যাংকগুলোয় প্রশাসকও নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্য শূন্য ঘোষণা করেন। তিনি এও জানান, ব্যাংকগুলোর বর্তমান যে আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে শেয়ারধারীরা অর্থ পাবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই ঘোষণার পর গতকাল বুধবার বিকেল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর আগেই এই ব্যাংক পাঁচটির লেনদেন স্থগিতের কথা জানায় বিএসইসি। যদিও শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসি বেশ বিলম্ব করেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যখন এসব ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তখন বিএসইসি ব্যাংকগুলোর লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলে নতুন করে কোনো বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না।
পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীরা যেভাবে টাকা ফেরত পাবেন
পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক (ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক) ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসিসহ সব ধরনের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।
ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ ‘নেগেটিভ ইকুইটি’ অবস্থায় চলে গেছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন শূন্যের নিচে। ফলে শেয়ারগুলোর ভ্যালু জিরো হিসেবে বিবেচিত হবে। কাউকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে পাঁচটি দুর্বল শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে। আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখতে এবং ফেরত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত: যেসব আমানতকারীর মোট জমার পরিমাণ ২ লাখ টাকা বা তার কম, তারা প্রথম ধাপে সম্পূর্ণ টাকা একবারে তোলার সুযোগ পাবেন। সরকারি তহবিল বা ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’ থেকে এই অর্থ জোগান দেওয়া হবে এবং ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগের পর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২ লাখ টাকার বেশি আমানত: যাদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার বেশি, তাদের বাকি টাকা ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে। এই ধাপে ধাপে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা (সম্ভাব্য ৬ মাস থেকে ৫ বছর) চূড়ান্ত করা হতে পারে, যদিও এটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
আমানত ফেরতের সময়সীমা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, আমানতকারীরা চলতি নভেম্বর মাস থেকেই টাকা তোলা শুরু করতে পারবেন।
আমানতকারীরা তাদের নিজ নিজ ব্যাংক শাখার মাধ্যমে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসকদের নির্দেশিত উপায়ে তাদের আমানতের অর্থ ফেরতের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পাশাপাশি গভর্নর জানান, আমানতকারীদের জমা রাখা অর্থ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থ সুরক্ষিত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।