বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ তিন বছর পিছিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে উত্তরণের পথে স্থিতিশীল রাখতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই নীতিসহায়তা প্রয়োজন। সফররত জাতিসংঘের মিশনকে এ অনুরোধ করেছেন তারা।’
রাজধানীর গুলশানে ইউএন হাউসে গতকাল সোমবার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কৌশলগত পরামর্শ সভা করে জাতিসংঘ মিশন। এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন, তা জানতে জাতিসংঘের এলডিসি-বিষয়ক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুসের নেতৃত্বাধীন এই মিশন চার দিনের সফরে এখন ঢাকায়। জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে আলোচনায় তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। বিজিএমইএর বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয় ও অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার মুখে। বিশেষ করে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ক্যাপটিভ ও শিল্প খাতে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৪০ ও ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ফলে উৎপাদন সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া ২৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংক সুদের হার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে ক্রয়াদেশ হ্রাসের প্রবণতা এবং এলডিসির উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘দেশের শিল্পে তেমন বৈচিত্র্য নেই। সেই সঙ্গে কাঁচামালের আমদানিনির্ভরতা আছে, এসব কিছু দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটি-এলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ, বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ, সাবেক পরিচালক শরীফ জহির প্রমুখ।
এলডিসি উত্তরণ কীভাবে স্থিতিশীল করা যায়, সে লক্ষ্যে সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করেন ব্যবসায়ী নেতারা। স্বল্প মেয়াদে আছে ডব্লিউটিওর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিকল্প প্রণোদনা চালু, ব্যাংক সুদের হার হ্রাস ও ইডিএফ পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমান। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত ও লজিস্টিকস অদক্ষতা (বন্দর ও শুল্ক) দূর করা। মধ্যমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে আছে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, খেলাপি ঋণ হ্রাস, দ্রুত গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পের কাঠামোগত ভিত্তি মজবুত করা।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ব্যাংক লুটপাট, উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের শিল্পকারখানা বর্তমানে আইসিউতে আছে। এ অবস্থায় রোগীকে (শিল্প) সুস্থ অবস্থায় আনতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে; তা না হলে রোগীকে (শিল্প) বাঁচানো যাবে না। এমন উদাহরণ দিয়ে এলডিসি উত্তরণ পেছানোর অনুরোধ করেছি আমরা।’
সফল এলডিসি উত্তরণের পর সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বাজারে কমপক্ষে তিন বছরের জন্য মসৃণ উত্তরণকাল নিশ্চিত করা দরকার বলে মত দেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখা এবং পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের জন্য স্বল্প সুদের মিশ্র অর্থায়ন দরকার। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা নিতে হবে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ তিন বছর পিছিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে উত্তরণের পথে স্থিতিশীল রাখতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই নীতিসহায়তা প্রয়োজন। সফররত জাতিসংঘের মিশনকে এ অনুরোধ করেছেন তারা।’
রাজধানীর গুলশানে ইউএন হাউসে গতকাল সোমবার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কৌশলগত পরামর্শ সভা করে জাতিসংঘ মিশন। এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন, তা জানতে জাতিসংঘের এলডিসি-বিষয়ক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুসের নেতৃত্বাধীন এই মিশন চার দিনের সফরে এখন ঢাকায়। জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে আলোচনায় তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। বিজিএমইএর বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয় ও অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার মুখে। বিশেষ করে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ক্যাপটিভ ও শিল্প খাতে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৪০ ও ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ফলে উৎপাদন সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া ২৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংক সুদের হার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে ক্রয়াদেশ হ্রাসের প্রবণতা এবং এলডিসির উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘দেশের শিল্পে তেমন বৈচিত্র্য নেই। সেই সঙ্গে কাঁচামালের আমদানিনির্ভরতা আছে, এসব কিছু দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটি-এলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ, বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ, সাবেক পরিচালক শরীফ জহির প্রমুখ।
এলডিসি উত্তরণ কীভাবে স্থিতিশীল করা যায়, সে লক্ষ্যে সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করেন ব্যবসায়ী নেতারা। স্বল্প মেয়াদে আছে ডব্লিউটিওর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিকল্প প্রণোদনা চালু, ব্যাংক সুদের হার হ্রাস ও ইডিএফ পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমান। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত ও লজিস্টিকস অদক্ষতা (বন্দর ও শুল্ক) দূর করা। মধ্যমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে আছে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, খেলাপি ঋণ হ্রাস, দ্রুত গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পের কাঠামোগত ভিত্তি মজবুত করা।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ব্যাংক লুটপাট, উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের শিল্পকারখানা বর্তমানে আইসিউতে আছে। এ অবস্থায় রোগীকে (শিল্প) সুস্থ অবস্থায় আনতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে; তা না হলে রোগীকে (শিল্প) বাঁচানো যাবে না। এমন উদাহরণ দিয়ে এলডিসি উত্তরণ পেছানোর অনুরোধ করেছি আমরা।’
সফল এলডিসি উত্তরণের পর সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বাজারে কমপক্ষে তিন বছরের জন্য মসৃণ উত্তরণকাল নিশ্চিত করা দরকার বলে মত দেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখা এবং পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের জন্য স্বল্প সুদের মিশ্র অর্থায়ন দরকার। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা নিতে হবে।’