কোল্ড চেইন পলিসির সমন্বিত নীতির বাস্তবায়ন চান শিল্প উদ্যোক্তারা
দেশের পচনশীল পণ্যের সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে সরবরাহ ঠিক রাখতে কোল্ড চেইন ব্যাবস্থার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। সমন্বিত কোল্ড চেইন নীতি নির্ধারন ও কোল্ড স্টোরেজ ব্যাবসায়িদের জন্য স্বল্প সুদে লোনের ব্যাবস্থা করে এই খাতের উন্নয়নের জন্যে আহবান জানিয়েছেন তারা। এছাড়া চলতি বছর বেশী দাম দিয়ে আলু কিনতে হবেও বলে জানায় তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ও সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, দেশে বর্তমানে ৪ শতাধিক কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। যেগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোক্তারা চান পেঁয়াজ, টমেটো, গাজর, মাংস, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ তৈরিতে নতুন বিনিয়োগ করতে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদ ১৩-১৪শতাংশ। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে আমরা প্রজেক্ট করলে সেটা লাভজনক করা মুশকিল হয়ে পড়বে। এ কারণে সরকার আমাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে, বা বিদেশ থেকে ফান্ড নিয়ে আমাদেরকে ৩-৪শতাংশ সুদে ঋণ দেয় তাহলে আমরা এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে ৪টি করে চেম্বার রয়েছে। যেগুলো দুর্বলভাবে ব্যবসা করছে, সেগুলোর একটি বা দুটি চেম্বারকে বিশেষভাবে পেঁয়াজ বা অন্য পেরিশেবল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য দরকার বিনিয়োগ, যে সহায়তাটুকু সরকারের কাজ থেকে আমরা চাই।’
সাপ্লাইচেইনে কোল্ড স্টোরেজ আমাদের কি ভুমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ও সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড তিন দিন ব্যাপি বসুন্ধরার আইসিসিবিতে প্রদর্শনীর আয়োজনের কথাও জানায়। মেলাটি আগামী ১৬ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দেয় তারা। এতে কোল্ড স্টোরেজের নানা প্রযুক্তির প্রদর্শনী থাকবে।
মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনিং এবং কোল্ড চেইন পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশন (ব্রামা) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পুরো একটি কোল্ড স্টোরেজ আমদানি করতে আমাদের ১শতাংশ এর মত শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু যখন এর একটা পার্টস আমদানি করতে হয় তখন আমাদের এই শুল্ক ১৩০শতাংশ হয়ে যায়। বিনিয়োগের জন্য এটা একটা বড় সংকট। এটা ৩-৫শতাংশের এর মধ্যে হলে ভালো হয়।
বক্তারা বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেই সংকট হয়, অথচ আমাদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এর জন্য স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ দরকার। তরমুজ, আম, টমেটে, গাজরের জন্য কোল্ড স্টোরেজ দরকার। কারণ হাজার হাজার টন এসব খাদ্য পণ্য উৎপাদন করলেও তা একটা সময় মাঠেই নষ্ট হয়। এখানে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্টোরেজ গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজ শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, নিরাপদ খাদ্যের জন্যও দরকার। কারণ অনেক খাবারে প্রিজারভেটিভ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়, যেটা কোল্ড স্টোরেজে রাখতে হলে দরকার হবে না।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফয়জুল আলম চৌধুরী। এক প্রশ্নের উত্তরে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর কেজিতে ৫০ টাকার বেশি দাম দিয়ে ভোক্তাদের আলু কিনে খেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর কোল্ড স্টোরেজে যেসব আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল সেগুলোর দাম ছিল ৮ থেকে ১২ টাকা কেজি। এবারে যেগুলো রাখা হচ্ছে সেগুলোর দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কৃষকরা এবার এই দামে আলু বিক্রি করেছেন। কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে এসব আলু যখন বাজারে আসবে, তখন এর দামও বেশি হবে।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের কারণে এ বছর অন্তত ২০শতাংশ আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। একই সঙ্গে সংকট ও বাজার অস্থিরতার কারণে ভালো দাম পেয়ে কৃষক অন্তত ৩০শতাংশ আলু তুলে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। মুন্সিগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এ বছর ৩০শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ হয়েছে, ঠা্কুরগাও, রংপুরের মত জায়গাগুলোতে ১০-২০শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। যে কারণে এ বছর বেশি দাম দিয়ে আলু খেতে হবে।’
কোল্ড চেইন পলিসির সমন্বিত নীতির বাস্তবায়ন চান শিল্প উদ্যোক্তারা
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
দেশের পচনশীল পণ্যের সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে সরবরাহ ঠিক রাখতে কোল্ড চেইন ব্যাবস্থার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। সমন্বিত কোল্ড চেইন নীতি নির্ধারন ও কোল্ড স্টোরেজ ব্যাবসায়িদের জন্য স্বল্প সুদে লোনের ব্যাবস্থা করে এই খাতের উন্নয়নের জন্যে আহবান জানিয়েছেন তারা। এছাড়া চলতি বছর বেশী দাম দিয়ে আলু কিনতে হবেও বলে জানায় তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ও সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, দেশে বর্তমানে ৪ শতাধিক কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। যেগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোক্তারা চান পেঁয়াজ, টমেটো, গাজর, মাংস, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ তৈরিতে নতুন বিনিয়োগ করতে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদ ১৩-১৪শতাংশ। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে আমরা প্রজেক্ট করলে সেটা লাভজনক করা মুশকিল হয়ে পড়বে। এ কারণে সরকার আমাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে, বা বিদেশ থেকে ফান্ড নিয়ে আমাদেরকে ৩-৪শতাংশ সুদে ঋণ দেয় তাহলে আমরা এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে ৪টি করে চেম্বার রয়েছে। যেগুলো দুর্বলভাবে ব্যবসা করছে, সেগুলোর একটি বা দুটি চেম্বারকে বিশেষভাবে পেঁয়াজ বা অন্য পেরিশেবল কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য দরকার বিনিয়োগ, যে সহায়তাটুকু সরকারের কাজ থেকে আমরা চাই।’
সাপ্লাইচেইনে কোল্ড স্টোরেজ আমাদের কি ভুমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ও সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড তিন দিন ব্যাপি বসুন্ধরার আইসিসিবিতে প্রদর্শনীর আয়োজনের কথাও জানায়। মেলাটি আগামী ১৬ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দেয় তারা। এতে কোল্ড স্টোরেজের নানা প্রযুক্তির প্রদর্শনী থাকবে।
মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনিং এবং কোল্ড চেইন পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশন (ব্রামা) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পুরো একটি কোল্ড স্টোরেজ আমদানি করতে আমাদের ১শতাংশ এর মত শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু যখন এর একটা পার্টস আমদানি করতে হয় তখন আমাদের এই শুল্ক ১৩০শতাংশ হয়ে যায়। বিনিয়োগের জন্য এটা একটা বড় সংকট। এটা ৩-৫শতাংশের এর মধ্যে হলে ভালো হয়।
বক্তারা বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেই সংকট হয়, অথচ আমাদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এর জন্য স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ দরকার। তরমুজ, আম, টমেটে, গাজরের জন্য কোল্ড স্টোরেজ দরকার। কারণ হাজার হাজার টন এসব খাদ্য পণ্য উৎপাদন করলেও তা একটা সময় মাঠেই নষ্ট হয়। এখানে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্টোরেজ গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজ শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, নিরাপদ খাদ্যের জন্যও দরকার। কারণ অনেক খাবারে প্রিজারভেটিভ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়, যেটা কোল্ড স্টোরেজে রাখতে হলে দরকার হবে না।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেভার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফয়জুল আলম চৌধুরী। এক প্রশ্নের উত্তরে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর কেজিতে ৫০ টাকার বেশি দাম দিয়ে ভোক্তাদের আলু কিনে খেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর কোল্ড স্টোরেজে যেসব আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল সেগুলোর দাম ছিল ৮ থেকে ১২ টাকা কেজি। এবারে যেগুলো রাখা হচ্ছে সেগুলোর দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কৃষকরা এবার এই দামে আলু বিক্রি করেছেন। কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে এসব আলু যখন বাজারে আসবে, তখন এর দামও বেশি হবে।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের কারণে এ বছর অন্তত ২০শতাংশ আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। একই সঙ্গে সংকট ও বাজার অস্থিরতার কারণে ভালো দাম পেয়ে কৃষক অন্তত ৩০শতাংশ আলু তুলে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। মুন্সিগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এ বছর ৩০শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ হয়েছে, ঠা্কুরগাও, রংপুরের মত জায়গাগুলোতে ১০-২০শতাংশ কম আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। যে কারণে এ বছর বেশি দাম দিয়ে আলু খেতে হবে।’