alt

সাধারণ বাংলাদেশিদের উচ্ছেদ করা হবে জেনেভা ক্যাম্প থেকে : পুলিশ

জেনেভা ক্যাম্পের ১৫ একরে লক্ষাধিক লোকের বাস: ডিএনসিসি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০২ নভেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানিয়েছেন, জেনেভা ক্যাম্পে সাধারণ বাংলাদেশিদের থাকার আইনগত সুযোগ নেই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদের উচ্ছেদ করা হবে। রোববার,(০২ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে জেনেভা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে এডিসি জুয়েল এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘জেনেভা ক্যাম্প এরই মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছে। অর্থাৎ বসবাসের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এর ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাইরের মানে সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিক। আমাদের হিসাব মতে ২০-২৫ হাজার বাংলাদেশি ভাড়াটিয়া বিভিন্নভাবে এখানে বসবাস করছে। এতে পরিবেশ আরও কয়েকগুণ নষ্ট হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাদক আনা-নেয়ার সঙ্গে এই বহিরাগত ভাড়াটিয়ারা যুক্ত।’

‘জেনেভা ক্যাম্পের মালিক তো সরকার। কিন্তু আমরা পেয়েছি যে নোয়াখালীর মানুষ মালিক হয়েছে। অবৈধভাবে আরেকজনের থেকে রুম ক্রয় করে, বিল্ডিং ক্রয় করে। এখানে যারা বহিরাগত আছে, যাদের এখানে থাকার আইনগত সুযোগ নাই, তাদের আমরা উচ্ছেদ করবো। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়ায়, সবার সঙ্গে আলোচনা করে উচ্ছেদ করবো। যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা চাপ কমানো যায়,’ যোগ করেন এডিসি জুয়েল।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, ক্যাম্পের রাস্তাগুলো এমনিতেই দখল হয়ে গেছে। এরপর আবার নতুন করে যানবাহন- রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল চলাচল করছে। যেগুলো মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই পুলিশ ক্যাম্পের ভেতরে এ যানবহনগুলোর চলাচল একটু নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। যাতে মানুষজন সহজে চলাফেরা করতে পারে।

এ সময় ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আঞ্চল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ সাদিকুর রহমানের কথার প্রসঙ্গে এডিসি জুয়েল বলেন, এখানে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মানবিক কিছু কাজ করতে হবে। এখানে একটি স্কুল আছে। সমাজের বিত্তবান বা এনজিওদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি- আপনারা আসুন, পরিদর্শন করুন। স্কুলটি খুবই পুরনো অবস্থায়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। যদি কেউ সাহায্য দিতে চান, আমরা সহযোগিতা করবো। স্কুল আর চিকিৎসা ব্যবস্থার একেবারে ভয়াবহ অবস্থা। এক লাখ লোকের জন্য নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। নির্ধারিত স্কুল-কলেজ নেই।

এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে অপরাধটা আসলে বেশি। আমি অপরাধীকে ধরতে পারি, মারতে পারি, কাটতে পারি, জেলে পাঠাতে পারি। কিন্তু তাকে যদি আমি একটা সুন্দর জীবনের ব্যবস্থা না করতে পারি, মৌলিক অধিকার যেটা আছে সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত, সেগুলো যদি দিতে না পারি, তাহলে আমি কোন মুখ নিয়ে তাদের বলবো যে অপরাধ করবেন না?’

প্রকাশ্যে মাদক কারবার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে সকালে অভিযান করলে বিকেলে মাদক বিক্রি করে। বিকেলে করলে সন্ধ্যায়, সন্ধ্যায় করলে রাতে মাদক বিক্রি করে। এখানকার হাজার হাজার মানুষ কোনো জীবিকার উপায় না পেয়ে এসব করছে। এই দায়টাও আমাদের। আমরা জীবিকা দিতে পারি নাই। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমরা তাদের নতুন কোনো জীবিকার সন্ধান দিতে পারি নাই। ফলে তারা বাধ্য হয়ে পরিবেশের কারণে মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’‘তাদের আমরা এই জাহান্নামী জীবন থেকে বের করে আনতে চাই। এরপরে এখানে আর মাদক বিক্রি হবে না। তারা নতুন নতুন জীবিকার সন্ধান পাবে। এখন যে জনসংখ্যার সমস্যা আছে জেনেভা ক্যাম্পে, এটা ইনশআল্লাহ এক সময় বাংলাদেশের জনসম্পদে পরিণত হবে। আমি আশা করি একদিন এই জেনেভা ক্যাম্পের একটা বাচ্চা আমার মতো এডিসি হিসেবে এখানে দায়িত্ব পাবে’।

অপরাধ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ এলাকা হচ্ছে মোহাম্মদপুর। যুগের পর যুগ এটা হচ্ছে যে মাফিয়া, সন্ত্রাসী, খুনি, সিরিয়াল কিলার, মাদক কারবারিদের আতুরঘর মোহাম্মদপুর। অতীতকালে এখানে মানুষজনের বসতি কম ছিল। গরিব মানুষ, অশিক্ষিত টোকাই শ্রেণীর লোকজন বসবাস করতো। তারাই ধীরে ধীরে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতো এবং সারা ঢাকা শহরে অপরাধ করতো। এখন একদিনে সব সমাধান করতে পারবো না। তবে আপনাদেরও স্বীকার করতে হবে যে বিগত যে কোনো দিনের তুলনায় আমরা কিন্তু ব্যাপক পরিশ্রম করছি। আইনশৃঙ্খলা আগের যেকোনো সময়ের থেকে নিরাপদ।’

পুলিশের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে এডিসি জুয়েল বলেন, তারা জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকটি জায়গায় চেকপোস্ট করছেন। পাশাপাশি মোড়ে মোড়ে স্থায়ীভাবে পুলিশ থাকার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে এখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন যাতে এ এলাকায় সুষ্ঠুভাবে নিরাপদ পরিবেশে হয় এটি পুলিশের অন্যতম অগ্রাধিকার।

জেনেভা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ডিএনসিসির আঞ্চল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, জেনেভা ক্যাম্প একটি স্পর্শকাতর স্থান। এখানে মোট ১৫ একর জায়গা আছে। এই জায়গার ভেতরে লক্ষাধিক লোক বাস করে। ভেতরে খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং খুব মানবেতর জীবনযাপন করে। আমরা এখানে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যদি সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যায়।

এ কর্মকর্তা জানান, ক্যাম্পের ভেতর কিছু যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং এখানে সুযোগ-সুবিধা ভালোভাবে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা তারা ভাবছেন। এখানে চিকিৎসার একটি ব্যবস্থা থাকলেও সেটি অত্যন্ত নাজুক। একে পুনর্বাসন করে ভালো পর্যায়ে নিয়ে আসা ও চিকিৎসক দেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। এছাড়া এখানের অনেক বাচ্চা এখন লেখাপড়া করে। তবে তাদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। সব বাচ্চা ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারে না। এখানে একটি স্কুল আছে এবং এর ভবনটি আরও একটু যুগোপযোগী করা যায় কিনা সেই ব্যবস্থা তারা নেবেন।

সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সেক্টরভিত্তিক প্রধানদের নিয়ে একটা সভা করেছি। সভার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এই পরিদর্শন। পরিদর্শনের পর আমরা তাদের সঙ্গে আবার বসবো। বসে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করা যায় কিনা দেখবো।’ এই ঘনবসতিতে দুর্ঘটনা মোকাবিলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এখানে একটি কারিগরি কমিটি করে এ বিষয়টি দেখবেন। তারা এটি পর্যালোচনা করে দেখবেন। এই ব্যাপক লোকজনকে সরকার যদি অন্য কোথাও পুনর্বাসন না করে তাহলে দিন দিন আরও খারাপ অবস্থা হবে।

বাড্ডায় ফ্যাক্টরি থেকে দারোয়ান ও বুয়ার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

ছবি

সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন: যানজটে জনভোগান্তি মানুষের

ছবি

পাঁচ দফা দাবিতে সড়ক ছেড়েছেন এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা

ছবি

বাড্ডায় বাড়ির গুদাম থেকে যুবক-নারীর গলিত লাশ উদ্ধার

রাজধানীতে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার ১৩ জন

ছবি

মেট্রোরেলে যাতায়াতে অপেক্ষার সময় পাঁচ মিনিটে আনা হবে

ছবি

ইবতেদায়ী শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড

ছবি

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে মৃত্যু: ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আইনি নোটিশ

ছবি

জামায়াতের আইনজীবীর হাতে তিন সাংবাদিক ‘হেনস্তা’, কারাগারে পাঠাতে চাইলেন বিচারক

ছবি

মহম্মদপুরে জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১৫

ছবি

গাজীপুরে খতিব অপহরণ: পুলিশ বলছে ‘নাটক’

ছবি

যাত্রাবাড়ীতে ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ একজনের মৃত্যু

ছবি

মেট্রোরেল আবারও উত্তরা থেকে মতিঝিল চালু: তবে ফার্মগেট স্টেশনের কাছ দিয়ে ধীরগতিতে চলছে

ছবি

মেট্রো লাইনের বিয়ারিং প্যাড পড়ে যুবকের মৃত্যু: পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

বিয়ারিং প্যাড দুর্ঘটনায় স্থগিত আগারগাঁও–মতিঝিল মেট্রোরেল চলাচল

ছবি

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র-অ্যামুনিশন ও বিস্ফোরক উদ্ধার

ছবি

পল্লবীতে আগুনে পুড়লো পোশাক কারখানা

ছবি

গ্রেপ্তার বাবাকে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে চর, খতিয়ে দেখছে পুলিশ

ছবি

জেনেভো ক্যাম্পে সংঘর্ষে প্রাণহানি: গ্রেপ্তার চারজন কারাগারে

ছবি

সব জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে ‘রেইনবো নেশন’ গড়ে তোলা হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

ঝটিকা মিছিল করে প্রচার সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

রাজধানীর যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নতুনরূপে ফিরিয়ে আনা হলো সিগন্যাল বাতি

ছবি

রাজধানীতে একরাতে তিন যুবক খুন

ছবি

সাভারে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

জেনিভা ক্যাম্পে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, যুবক নিহত

ছবি

কার্গো ভিলেজে আগুন: শুক্রবার ও শনিবার খোলা ঢাকা কাস্টমস

ছবি

জাতীয়করণের ঘোষণার বাস্তবায়নে পল্টনে সড়ক অবরোধে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা

ছবি

বাড়িভাড়া ও ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শাহবাগে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

ছবি

পর্ন ভিডিও তৈরি ও প্রচারের অভিযোগে বান্দরবান থেকে যুগল গ্রেপ্তার

ছবি

সালমান শাহ হত্যার ২৯ বছর পর হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ

সাভারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধর্ষণ: প্রধান আসামিসহ দুইজন গ্রেপ্তার

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ‘ভুখা মিছিল’ আটকে দিল পুলিশ

বিইউপি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ, ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনে ফ্লাইট বাতিল, কয়েকটি ফ্লাইটের গন্তব্য পরিবর্তন

ছবি

শাহজালালে আগুন লাগে কুরিয়ার গুদামে

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন, ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ

tab

সাধারণ বাংলাদেশিদের উচ্ছেদ করা হবে জেনেভা ক্যাম্প থেকে : পুলিশ

জেনেভা ক্যাম্পের ১৫ একরে লক্ষাধিক লোকের বাস: ডিএনসিসি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

রোববার, ০২ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানিয়েছেন, জেনেভা ক্যাম্পে সাধারণ বাংলাদেশিদের থাকার আইনগত সুযোগ নেই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদের উচ্ছেদ করা হবে। রোববার,(০২ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে জেনেভা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে এডিসি জুয়েল এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘জেনেভা ক্যাম্প এরই মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছে। অর্থাৎ বসবাসের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এর ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাইরের মানে সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিক। আমাদের হিসাব মতে ২০-২৫ হাজার বাংলাদেশি ভাড়াটিয়া বিভিন্নভাবে এখানে বসবাস করছে। এতে পরিবেশ আরও কয়েকগুণ নষ্ট হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাদক আনা-নেয়ার সঙ্গে এই বহিরাগত ভাড়াটিয়ারা যুক্ত।’

‘জেনেভা ক্যাম্পের মালিক তো সরকার। কিন্তু আমরা পেয়েছি যে নোয়াখালীর মানুষ মালিক হয়েছে। অবৈধভাবে আরেকজনের থেকে রুম ক্রয় করে, বিল্ডিং ক্রয় করে। এখানে যারা বহিরাগত আছে, যাদের এখানে থাকার আইনগত সুযোগ নাই, তাদের আমরা উচ্ছেদ করবো। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আইনগত প্রক্রিয়ায়, সবার সঙ্গে আলোচনা করে উচ্ছেদ করবো। যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা চাপ কমানো যায়,’ যোগ করেন এডিসি জুয়েল।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, ক্যাম্পের রাস্তাগুলো এমনিতেই দখল হয়ে গেছে। এরপর আবার নতুন করে যানবাহন- রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল চলাচল করছে। যেগুলো মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই পুলিশ ক্যাম্পের ভেতরে এ যানবহনগুলোর চলাচল একটু নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। যাতে মানুষজন সহজে চলাফেরা করতে পারে।

এ সময় ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আঞ্চল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ সাদিকুর রহমানের কথার প্রসঙ্গে এডিসি জুয়েল বলেন, এখানে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মানবিক কিছু কাজ করতে হবে। এখানে একটি স্কুল আছে। সমাজের বিত্তবান বা এনজিওদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি- আপনারা আসুন, পরিদর্শন করুন। স্কুলটি খুবই পুরনো অবস্থায়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। যদি কেউ সাহায্য দিতে চান, আমরা সহযোগিতা করবো। স্কুল আর চিকিৎসা ব্যবস্থার একেবারে ভয়াবহ অবস্থা। এক লাখ লোকের জন্য নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। নির্ধারিত স্কুল-কলেজ নেই।

এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে অপরাধটা আসলে বেশি। আমি অপরাধীকে ধরতে পারি, মারতে পারি, কাটতে পারি, জেলে পাঠাতে পারি। কিন্তু তাকে যদি আমি একটা সুন্দর জীবনের ব্যবস্থা না করতে পারি, মৌলিক অধিকার যেটা আছে সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত, সেগুলো যদি দিতে না পারি, তাহলে আমি কোন মুখ নিয়ে তাদের বলবো যে অপরাধ করবেন না?’

প্রকাশ্যে মাদক কারবার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে সকালে অভিযান করলে বিকেলে মাদক বিক্রি করে। বিকেলে করলে সন্ধ্যায়, সন্ধ্যায় করলে রাতে মাদক বিক্রি করে। এখানকার হাজার হাজার মানুষ কোনো জীবিকার উপায় না পেয়ে এসব করছে। এই দায়টাও আমাদের। আমরা জীবিকা দিতে পারি নাই। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমরা তাদের নতুন কোনো জীবিকার সন্ধান দিতে পারি নাই। ফলে তারা বাধ্য হয়ে পরিবেশের কারণে মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’‘তাদের আমরা এই জাহান্নামী জীবন থেকে বের করে আনতে চাই। এরপরে এখানে আর মাদক বিক্রি হবে না। তারা নতুন নতুন জীবিকার সন্ধান পাবে। এখন যে জনসংখ্যার সমস্যা আছে জেনেভা ক্যাম্পে, এটা ইনশআল্লাহ এক সময় বাংলাদেশের জনসম্পদে পরিণত হবে। আমি আশা করি একদিন এই জেনেভা ক্যাম্পের একটা বাচ্চা আমার মতো এডিসি হিসেবে এখানে দায়িত্ব পাবে’।

অপরাধ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ এলাকা হচ্ছে মোহাম্মদপুর। যুগের পর যুগ এটা হচ্ছে যে মাফিয়া, সন্ত্রাসী, খুনি, সিরিয়াল কিলার, মাদক কারবারিদের আতুরঘর মোহাম্মদপুর। অতীতকালে এখানে মানুষজনের বসতি কম ছিল। গরিব মানুষ, অশিক্ষিত টোকাই শ্রেণীর লোকজন বসবাস করতো। তারাই ধীরে ধীরে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতো এবং সারা ঢাকা শহরে অপরাধ করতো। এখন একদিনে সব সমাধান করতে পারবো না। তবে আপনাদেরও স্বীকার করতে হবে যে বিগত যে কোনো দিনের তুলনায় আমরা কিন্তু ব্যাপক পরিশ্রম করছি। আইনশৃঙ্খলা আগের যেকোনো সময়ের থেকে নিরাপদ।’

পুলিশের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে এডিসি জুয়েল বলেন, তারা জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকটি জায়গায় চেকপোস্ট করছেন। পাশাপাশি মোড়ে মোড়ে স্থায়ীভাবে পুলিশ থাকার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে এখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন যাতে এ এলাকায় সুষ্ঠুভাবে নিরাপদ পরিবেশে হয় এটি পুলিশের অন্যতম অগ্রাধিকার।

জেনেভা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ডিএনসিসির আঞ্চল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, জেনেভা ক্যাম্প একটি স্পর্শকাতর স্থান। এখানে মোট ১৫ একর জায়গা আছে। এই জায়গার ভেতরে লক্ষাধিক লোক বাস করে। ভেতরে খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং খুব মানবেতর জীবনযাপন করে। আমরা এখানে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যদি সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যায়।

এ কর্মকর্তা জানান, ক্যাম্পের ভেতর কিছু যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং এখানে সুযোগ-সুবিধা ভালোভাবে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা তারা ভাবছেন। এখানে চিকিৎসার একটি ব্যবস্থা থাকলেও সেটি অত্যন্ত নাজুক। একে পুনর্বাসন করে ভালো পর্যায়ে নিয়ে আসা ও চিকিৎসক দেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। এছাড়া এখানের অনেক বাচ্চা এখন লেখাপড়া করে। তবে তাদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। সব বাচ্চা ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারে না। এখানে একটি স্কুল আছে এবং এর ভবনটি আরও একটু যুগোপযোগী করা যায় কিনা সেই ব্যবস্থা তারা নেবেন।

সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সেক্টরভিত্তিক প্রধানদের নিয়ে একটা সভা করেছি। সভার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এই পরিদর্শন। পরিদর্শনের পর আমরা তাদের সঙ্গে আবার বসবো। বসে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করা যায় কিনা দেখবো।’ এই ঘনবসতিতে দুর্ঘটনা মোকাবিলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এখানে একটি কারিগরি কমিটি করে এ বিষয়টি দেখবেন। তারা এটি পর্যালোচনা করে দেখবেন। এই ব্যাপক লোকজনকে সরকার যদি অন্য কোথাও পুনর্বাসন না করে তাহলে দিন দিন আরও খারাপ অবস্থা হবে।

back to top