ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী নির্দেশ দিয়েছেন—যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপ করতে এলে গুলি চালাতে হবে। রোববার বিকেলে বেতার বার্তায় বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী সদস্যদের উদ্দেশ্যে এ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানান ডিএমপির অপরাধ বিভাগের একজন উপকমিশনারসহ তিনজন কর্মকর্তা। তবে তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
ডিএমপি কমিশনারকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,“আমি ওয়্যারলেসে বলেছি যে কেউ বাসে আগুন দিলে, ককটেল মেরে জীবনহানির চেষ্টা করলে তাকে গুলি করতে। এটা আমাদের আইনেই বলা আছে।”
এর পাঁচ দিন আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার একই ধরনের নির্দেশ দেন, যা নিয়ে তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের রায় ঘনিয়ে আসায় আওয়ামী লীগ ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর বিক্ষোভ ও ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই সময়টিতে সারা দেশে বাস–ট্রেনে আগুন দেওয়া এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
রায়ের দিন ধার্য রয়েছে সোমবার। এই দিনটিকে ঘিরে দলটি অনলাইনে রোববার থেকে দুই দিনের ‘কমপ্লিট সাটডাউন’ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে শনিবার রাত থেকেই ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
একজন উপকমিশনার জানান, “স্যারের মেসেজটা ছিল—যদি কেউ পুলিশের ওপর ককটেল মেরে মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টা করে, তাহলে যেন গুলি করে হলেও তাকে থামানো যায়।”
তার ব্যাখ্যায় তিনি আরও বলেন,“যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে মাঠে কাজ করা পুলিশেরও নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে। অতীতেও রাজনৈতিক জ্বালাও-পোড়াওয়ের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখতেই স্যার এমন নির্দেশনা দিয়ে থাকতে পারেন।”
বিকেলে ডিএমপি সদর দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়—কর্মকর্তাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারাগুলো খুলে দেখান, যেখানে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ৯৬ ধারায় বলা আছে: “ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগকালে কৃত কোনো কিছুই অপরাধ নয়।”
গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে কয়েকটি ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ পর নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। ১১ নভেম্বর বেতার বার্তা দিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন। পরদিন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ নিয়ে উদ্বেগ জানায়।
তাদের মতে, সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং আইনের আশ্রয় পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। সন্দেহভাজন অপরাধীকেও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হত্যা বা গুলি চালানোর নির্দেশ—‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী নির্দেশ দিয়েছেন—যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপ করতে এলে গুলি চালাতে হবে। রোববার বিকেলে বেতার বার্তায় বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী সদস্যদের উদ্দেশ্যে এ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানান ডিএমপির অপরাধ বিভাগের একজন উপকমিশনারসহ তিনজন কর্মকর্তা। তবে তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
ডিএমপি কমিশনারকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,“আমি ওয়্যারলেসে বলেছি যে কেউ বাসে আগুন দিলে, ককটেল মেরে জীবনহানির চেষ্টা করলে তাকে গুলি করতে। এটা আমাদের আইনেই বলা আছে।”
এর পাঁচ দিন আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার একই ধরনের নির্দেশ দেন, যা নিয়ে তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের রায় ঘনিয়ে আসায় আওয়ামী লীগ ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর বিক্ষোভ ও ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই সময়টিতে সারা দেশে বাস–ট্রেনে আগুন দেওয়া এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
রায়ের দিন ধার্য রয়েছে সোমবার। এই দিনটিকে ঘিরে দলটি অনলাইনে রোববার থেকে দুই দিনের ‘কমপ্লিট সাটডাউন’ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে শনিবার রাত থেকেই ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
একজন উপকমিশনার জানান, “স্যারের মেসেজটা ছিল—যদি কেউ পুলিশের ওপর ককটেল মেরে মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টা করে, তাহলে যেন গুলি করে হলেও তাকে থামানো যায়।”
তার ব্যাখ্যায় তিনি আরও বলেন,“যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে মাঠে কাজ করা পুলিশেরও নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে। অতীতেও রাজনৈতিক জ্বালাও-পোড়াওয়ের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখতেই স্যার এমন নির্দেশনা দিয়ে থাকতে পারেন।”
বিকেলে ডিএমপি সদর দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়—কর্মকর্তাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারাগুলো খুলে দেখান, যেখানে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ৯৬ ধারায় বলা আছে: “ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগকালে কৃত কোনো কিছুই অপরাধ নয়।”
গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে কয়েকটি ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ পর নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। ১১ নভেম্বর বেতার বার্তা দিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন। পরদিন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ নিয়ে উদ্বেগ জানায়।
তাদের মতে, সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং আইনের আশ্রয় পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। সন্দেহভাজন অপরাধীকেও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হত্যা বা গুলি চালানোর নির্দেশ—‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’।