কৃষিপণ্য ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রেনের লাগেজ ভ্যান কেনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকা ‘ক্ষতি’ করার অভিযোগে রেলের সাবেক মহাপরিচালকসহ ছয়জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান সংস্থার ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। পরে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অভিযুক্তরা ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন, আর্থিক অনিয়ম এবং অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি করেছেন।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘রোলিং স্টক অপারেশনস ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’-এর অধীনে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাবে ৭৫টি মিটার গেজ লাগেজ ভ্যান কেনায় ব্যয় ধরা হয় ১৭৬ কোটি টাকা এবং ৫০টি ব্রড গেজ লাগেজ ভ্যান কেনায় ব্যয় ধরা হয় ১৫২.৬ কোটি টাকা—মোট ৩২৮.৬ কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য আয় দেখিয়ে প্রকল্পটিকে ‘অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল।
গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর দেড় দশকের শাসনামলে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তারই ধারাবাহিকতায় রেলওয়ের এ কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে প্রথমেই নাম রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ মাহবুব চৌধুরী এবং রেলওয়ের পরিচালক মৃণাল কান্তি বণিকের। দুজনই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-সংক্রান্ত প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া আসামির তালিকায় আছেন আব্দুল মতিন চৌধুরী, যিনি প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব পালন করা রেলওয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. হারুন-অর-রশীদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান এবং সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, প্রকল্প অনুমোদন থেকে শুরু করে ক্রয়-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন ধাপে তারা ‘অনিয়ম, অবহেলা এবং উদ্দেশ্যমূলক’ পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, তারা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গুরুতর অসদাচরণে জড়িত ছিলেন।
লাগেজ ভ্যান ক্রয়ের জন্য ‘প্রকিউরমেন্ট অব ফিফটি বিডি অ্যান্ড সেভেন্টি-ফাইভ এমজি লাগেজ ভ্যানস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। প্রকল্প প্রস্তাবে কৃষকদের শাকসবজি, ফলমূল, খাদ্যশস্য, দুধ, মাংস ও মৌসুমি ফল পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে লাগেজ ভ্যান কেনার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩২.৪৬ কোটি টাকার মুনাফা দেখানো হলেও ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে প্রকৃত আয় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা। পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে দুদকের মন্তব্য—প্রকল্প অনুমোদনের সময় আয়-ব্যয়ের যে হিসাব উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা ছিল ‘অবাস্তব ও বিকৃত’।
দুদক জানায়, বাজার সমীক্ষা, কৃষক বা ব্যবসায়ীদের প্রকৃত চাহিদা যাচাই, স্টেশন পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা মূল্যায়ন—এসব মৌলিক বিষয় যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয়নি। বরং প্রকৃত প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ লাগেজ ভ্যান কেনার বিষয়টি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ফলে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনার সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকার ‘ক্ষতি’ হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৭৭ক/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭–এর ৫(২) ধারায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
কৃষিপণ্য ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রেনের লাগেজ ভ্যান কেনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকা ‘ক্ষতি’ করার অভিযোগে রেলের সাবেক মহাপরিচালকসহ ছয়জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান সংস্থার ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। পরে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অভিযুক্তরা ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন, আর্থিক অনিয়ম এবং অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি করেছেন।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘রোলিং স্টক অপারেশনস ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’-এর অধীনে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাবে ৭৫টি মিটার গেজ লাগেজ ভ্যান কেনায় ব্যয় ধরা হয় ১৭৬ কোটি টাকা এবং ৫০টি ব্রড গেজ লাগেজ ভ্যান কেনায় ব্যয় ধরা হয় ১৫২.৬ কোটি টাকা—মোট ৩২৮.৬ কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য আয় দেখিয়ে প্রকল্পটিকে ‘অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল।
গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর দেড় দশকের শাসনামলে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তারই ধারাবাহিকতায় রেলওয়ের এ কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে প্রথমেই নাম রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ মাহবুব চৌধুরী এবং রেলওয়ের পরিচালক মৃণাল কান্তি বণিকের। দুজনই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-সংক্রান্ত প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া আসামির তালিকায় আছেন আব্দুল মতিন চৌধুরী, যিনি প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব পালন করা রেলওয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. হারুন-অর-রশীদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান এবং সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, প্রকল্প অনুমোদন থেকে শুরু করে ক্রয়-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন ধাপে তারা ‘অনিয়ম, অবহেলা এবং উদ্দেশ্যমূলক’ পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, তারা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গুরুতর অসদাচরণে জড়িত ছিলেন।
লাগেজ ভ্যান ক্রয়ের জন্য ‘প্রকিউরমেন্ট অব ফিফটি বিডি অ্যান্ড সেভেন্টি-ফাইভ এমজি লাগেজ ভ্যানস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। প্রকল্প প্রস্তাবে কৃষকদের শাকসবজি, ফলমূল, খাদ্যশস্য, দুধ, মাংস ও মৌসুমি ফল পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে লাগেজ ভ্যান কেনার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩২.৪৬ কোটি টাকার মুনাফা দেখানো হলেও ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে প্রকৃত আয় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা। পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে দুদকের মন্তব্য—প্রকল্প অনুমোদনের সময় আয়-ব্যয়ের যে হিসাব উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা ছিল ‘অবাস্তব ও বিকৃত’।
দুদক জানায়, বাজার সমীক্ষা, কৃষক বা ব্যবসায়ীদের প্রকৃত চাহিদা যাচাই, স্টেশন পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা মূল্যায়ন—এসব মৌলিক বিষয় যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয়নি। বরং প্রকৃত প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ লাগেজ ভ্যান কেনার বিষয়টি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ফলে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনার সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকার ‘ক্ষতি’ হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৭৭ক/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭–এর ৫(২) ধারায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।