alt

রোজ গার্ডেন কেনায় রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কেনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রায় ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে—এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্মস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনটি কেনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বুধবার এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে দুদক অভিযান চালায় এবং প্রাপ্ত তথ্য-নথির ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, “গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে রোজ গার্ডেন কেনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দুদকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই কমিশন ব্যবস্থা নেবে।”

রোজ গার্ডেন কেনা ও সরকারি প্রক্রিয়া

২০১৮ সালে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রোজ গার্ডেন ভবনটি কিনে নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ জন্য ব্যয় হয় ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৯০০ টাকা।

ওই বছরের ৮ আগস্ট সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ভবনটি অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এরপর সরকার ব্যক্তিমালিকানাধীন এ পুরাকীর্তি কিনে নেয়।

রাজনৈতিক ইতিহাসে রোজ গার্ডেন

রোজ গার্ডেন শুধু স্থাপত্য নিদর্শন নয়; এটি রাজনৈতিক ইতিহাসেরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ভবনটিতে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী সম্মেলন থেকেই আত্মপ্রকাশ করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নামে পরিচিতি পায়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দলই পরবর্তীতে স্বাধিকার আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়।

রোজ গার্ডেনের স্থাপত্য ও নির্মাণ ইতিহাস

১৯৩১ সালে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস পুরান ঢাকায় ২২ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়িটি নির্মাণ করেন। পশ্চিমমুখী দোতলা এই ভবনটি করিন্থীয়–গ্রীক শৈলীতে তৈরি, যার আয়তন প্রায় সাত হাজার বর্গফুট।

এর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি বৃহৎ জলসা ঘর, যার মেঝেতে সাদা পাথর এবং সিলিংয়ে সবুজ কাচের ফুলের নকশা ব্যবহৃত হয়েছে। ঋষিকেশ দাস দেশ–বিদেশ থেকে আনা বিরল প্রজাতির গোলাপের বাগান, পাথরের ভাস্কর্য, সুদৃশ্য ফোয়ারা ও সামনের পুকুর দিয়ে ভবনটিকে অলংকৃত করেন। সে সময় রোজ গার্ডেন ছিল ঢাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

তবে নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই ঋষিকেশ দেউলিয়া হয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তিনি বাড়িটি ঢাকার বই ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশিদের কাছে বিক্রি করেন।

মালিকানা পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা

রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় বিখ্যাত প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি, যার মালিক ছিলেন কাজী আবদুর রশিদ।

১৯৬৬ সালে ভবনের মালিকানা পান তার ভাই কাজী হুমায়ূন। তার নামেই এটি তখন ‘হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি’ নামে পরিচিতি পায়।

১৯৭০ সালে কাজী হুমায়ূন ভবনটি মোশন পিকচার্স লিমিটেডের কাছে ভাড়া দেন, যা পরে বেঙ্গল স্টুডিও নামে জনপ্রিয় হয়।

১৯৯৩ সালে বেঙ্গল স্টুডিও চলে যাওয়ার পর ভবনটি আবার কাজী হুমায়ূন পরিবারের কাছে ফিরে আসে।

তিনি মারা যাওয়ার পর মালিকানা পান তার বংশধর কাজী রকিব।

১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করলেও পরে মালিকানা ফেরত দেওয়া হয় মূল মালিকদের।

এরপর ভবনটির দেখভাল চলছিল কাজী রকিব পরিবারের তত্ত্বাবধানে। লায়লা রকিব ও তার সন্তানদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন দলিলমূলে ভবনটি কিনে নেয় সরকার।

ছবি

পল্লবীতে যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যায় ‘বড় অর্থ লেনদেন’ : র‌্যাবের দাবি

ছবি

স্ত্রী-সন্তানসহ কাজী জাফর উল্যাহর আয়কর নথি সিআইডিকে দিতে নির্দেশ

ছবি

ধানমন্ডি ৩২ এর নিরাপত্তায় সেনা-পুলিশ-বিজিবি

ছবি

নজরুল ইসলাম মজুমদারের পূর্বাচলের জমি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ

ছবি

চলতি বছরে ঢাকায় ১৯৮ খুন, রহস্য উদঘাটনে আশাবাদী ডিএমপি

ছবি

৩২ নম্বরে এক্সকেভেটর, পুলিশ-সেনার লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড

ছবি

স্বজনরা সন্তুষ্ট তবে পুরোপুরি নয়

ছবি

পল্লবীতে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা

ছবি

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সংলগ্ন মিরপুর সড়কে পুলিশের পিকআপে হামলা, উত্তেজনা রোধে সেনা মোতায়েন

ছবি

উত্তরায় নাদিম হাসানের মাইক্রোবাসে আগুন

ছবি

২১ নভেম্বর সেনানিবাসে যান চলাচল সীমিত থাকবে

ছবি

আগুন-ককটেল: হামলাকারীকে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের

ছবি

রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে ককটেল বিস্ফোরণ: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের বাসার সামনে হামলা

ছবি

লাগেজ ভ্যান কেনায় ৩৫৮ কোটি টাকার ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষতি’: রেলের সাবেক ডিজিসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

যানবাহনে আগুন ও ককটেল হামলায় গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের

ছবি

স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

এমপিওভুক্তির দাবিতে ননএমপিও শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচির ১৪তম দিন

ছবি

দুপুরে গ্রেপ্তার, বিকেলে হিরো আলমের জামিন

ছবি

ঢাকার হাই কোর্টের সামনে ড্রামে মিলল ব্যবসায়ী আশরাফুলের খণ্ডিত লাশ: ত্রিভুজ প্রেম, প্রতারণা ও হত্যা : জানাল ডিবি

ছবি

সাবেক স্ত্রীর মামলায় গ্রেপ্তার হিরো আলম

ছবি

শুক্রবার ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস ছিল মারাত্মক দূষিত

ছবি

ধানমন্ডিতে ‘মারধরের শিকার’ নারী জুলাই আন্দোলনের মামলায় কারাগারে

ছবি

ছাত্রের ‘যৌন নিপীড়নের’ মামলায় ঢাবি শিক্ষক কারাগারে

ছবি

হাইকোর্টের সামনে লাশ: শাহবাগ থানায় মামলা, ‘সন্দেহভাজন বন্ধুকে’ খুঁজছে পুলিশ

ছবি

হাই কোর্ট এলাকায় ড্রামে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার 

ছবি

ধানমন্ডি ৩২ থেকে আটক কিশোরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

ছবি

রাজশাহীতে বিচারকের ঘরে ঢুকে ছেলেকে হত্যা, স্ত্রীকে জখম

ছবি

বৃহস্পতিবার রাজধানী ছিল ফাঁকা, রাস্তায় তেমন গাড়ি চলেনি

ছবি

বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ‘ইট সংগ্রহে’ এসে পুলিশ হেফাজতে কিশোর

ছবি

হাইকোর্টের কাছে ড্রামে মিললো খণ্ডিত লাশ

ছবি

বিটিআরসির তহবিল আত্মসাৎ মামলা: ১২ আসামির জামিন বাতিল

ছবি

দুটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে

ছবি

অন্তর্কোন্দলে ‘দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি’ দিয়ে মামুনকে হত্যা: ডিবি

ছবি

রাজধানীর চার স্থানে বাস ও যানে অগ্নিকাণ্ড

ছবি

মিরপুরে বাসে আগুন, গাজীপুর-সাভারেও বাসে অগ্নিসংযোগ

ছবি

মামুন হত্যা: আদালত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি

tab

রোজ গার্ডেন কেনায় রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কেনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রায় ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে—এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্মস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনটি কেনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বুধবার এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে দুদক অভিযান চালায় এবং প্রাপ্ত তথ্য-নথির ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, “গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে রোজ গার্ডেন কেনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দুদকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই কমিশন ব্যবস্থা নেবে।”

রোজ গার্ডেন কেনা ও সরকারি প্রক্রিয়া

২০১৮ সালে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রোজ গার্ডেন ভবনটি কিনে নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ জন্য ব্যয় হয় ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৯০০ টাকা।

ওই বছরের ৮ আগস্ট সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ভবনটি অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এরপর সরকার ব্যক্তিমালিকানাধীন এ পুরাকীর্তি কিনে নেয়।

রাজনৈতিক ইতিহাসে রোজ গার্ডেন

রোজ গার্ডেন শুধু স্থাপত্য নিদর্শন নয়; এটি রাজনৈতিক ইতিহাসেরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ভবনটিতে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী সম্মেলন থেকেই আত্মপ্রকাশ করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নামে পরিচিতি পায়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দলই পরবর্তীতে স্বাধিকার আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়।

রোজ গার্ডেনের স্থাপত্য ও নির্মাণ ইতিহাস

১৯৩১ সালে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস পুরান ঢাকায় ২২ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়িটি নির্মাণ করেন। পশ্চিমমুখী দোতলা এই ভবনটি করিন্থীয়–গ্রীক শৈলীতে তৈরি, যার আয়তন প্রায় সাত হাজার বর্গফুট।

এর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি বৃহৎ জলসা ঘর, যার মেঝেতে সাদা পাথর এবং সিলিংয়ে সবুজ কাচের ফুলের নকশা ব্যবহৃত হয়েছে। ঋষিকেশ দাস দেশ–বিদেশ থেকে আনা বিরল প্রজাতির গোলাপের বাগান, পাথরের ভাস্কর্য, সুদৃশ্য ফোয়ারা ও সামনের পুকুর দিয়ে ভবনটিকে অলংকৃত করেন। সে সময় রোজ গার্ডেন ছিল ঢাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

তবে নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই ঋষিকেশ দেউলিয়া হয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তিনি বাড়িটি ঢাকার বই ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশিদের কাছে বিক্রি করেন।

মালিকানা পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা

রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় বিখ্যাত প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি, যার মালিক ছিলেন কাজী আবদুর রশিদ।

১৯৬৬ সালে ভবনের মালিকানা পান তার ভাই কাজী হুমায়ূন। তার নামেই এটি তখন ‘হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি’ নামে পরিচিতি পায়।

১৯৭০ সালে কাজী হুমায়ূন ভবনটি মোশন পিকচার্স লিমিটেডের কাছে ভাড়া দেন, যা পরে বেঙ্গল স্টুডিও নামে জনপ্রিয় হয়।

১৯৯৩ সালে বেঙ্গল স্টুডিও চলে যাওয়ার পর ভবনটি আবার কাজী হুমায়ূন পরিবারের কাছে ফিরে আসে।

তিনি মারা যাওয়ার পর মালিকানা পান তার বংশধর কাজী রকিব।

১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করলেও পরে মালিকানা ফেরত দেওয়া হয় মূল মালিকদের।

এরপর ভবনটির দেখভাল চলছিল কাজী রকিব পরিবারের তত্ত্বাবধানে। লায়লা রকিব ও তার সন্তানদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন দলিলমূলে ভবনটি কিনে নেয় সরকার।

back to top