বাসচাপায় নিহত পুলিশ সদস্য কোরবান
দুর্ঘটনার পর চালক জাকির পালানোর চেষ্টা করে সীমান্তপথে
রাজধানীর বাংলামটরে পুলিশ সদস্য কোরবান আলীকে চাপা দেয়া বাসটি ছিল ফিটনেসবিহীন ও দুর্ঘটনার সময় বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। জানা যায়, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক বাসটি চালিয়ে আসা জাকির হোসেন বেপরোয়া গতিতে বাংলামটরের দিকে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্যকে চাপা দেন। আগে লেগুনা চালানো ও হেলপারি করে আসা জাকির ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত বাস চালানো শুরু করেন। শুক্রবার (১০ জুন) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এলাকা থেকে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসচালক জাকির হোসেন (৪০) ও ঢাকার সাভার এলাকা থেকে বাসটির মালিক মো. আলম ওরফে খোকাকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২)।
র্যাব জানায়, দুর্ঘটনার ২০ দিন আগে চুক্তিতে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসটি চালানো শুরু করেন জাকির। ঘটনার পর প্রথমে আত্মগোপন করতে চট্টগ্রাম যান চালক। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া যান, সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হন। সেখান থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা হয়ে পাশের দেশে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বাসচালক জাকির। শনিবার (১১ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৬ জুন সকালে বাংলামটর সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যাওয়ার পথে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসচাপায় পুলিশ কনস্টেবল কোরবান আলী নিহত হন। এ ঘটনায় করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় চালক ও বাস মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে বাসটির হেলপার এখনও পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, চালক জাকির ২০০৫ সালে ঢাকায় টেম্পুর হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০১০ সালের দিকে তিনি লেগুনা চালাতেন। পরে ২০১৫ সালে বাসের হেলপার হিসেবে ঢাকায় চাকরি নেন। ২০১৮ সাল থেকে লাব্বাইক ও ওয়েলকাম পরিবহনে চালক হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাস চালানো শুরু করেন।
২০১৯ সালে হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স করে নিয়মিত বাস চালানো শুরু করেন। প্রায় এক মাস আগে বর্তমান গাড়ির মালিক খোকার সঙ্গে জাকিরের পরিচয় হয়। প্রায় ২০ দিন আগে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসটি দৈনিক ২৫০০ টাকা চুক্তিতে চালানো শুরু করেন তিনি। এর বাইরে গাড়ির লাইন খরচ ১৩০০ টাকা দিতে হতো। এরপর বাকি টাকা জাকির, হেলপার ও কন্ডাক্টর ভাগ করে নিতেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার দিন কারওয়ান বাজার সিগন্যাল থেকে যাত্রী নিয়ে পরবর্তী সিগন্যালে বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্যকে চাপা দেন জাকির। বাংলামটরে গিয়ে বাসটি রেখে পালিয়ে যান তিনি। পরে বাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘোরাঘুরি করে রাতে চট্টগ্রামে চলে যান তিনি। সেখানে এক আত্মীয়ের বাসায় দুই দিন থাকার পর আরেক জায়গায় চলে যান। সেখান থেকে শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আত্মগোপনে যান। যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাকিরের পরিকল্পনা ছিল সীমান্ত পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়া।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বাসের মালিক আলম ২০১৭ সালে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন। একটি বাসের লাভ দিয়ে ২০২০ সালে এই বাসটি কিনে রুট পারমিট ছাড়াই সড়কে চালানো শুরু করেন। এখনও গাড়িটির রুট পারমিট না পেলেও দুই বছর ধরে গাড়িটি রাস্তায় চলছিল। ঘটনার পর তিনিও সাভারে আত্মগোপনে যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে র্যাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস চালক-মালিক থেকে শুরু করে স্টেকহোল্ডারদের গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। এটি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নেই। সবাই সচেতন না হলে সড়কে রোধ করা কঠিন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বাসচাপায় নিহত পুলিশ সদস্য কোরবান
দুর্ঘটনার পর চালক জাকির পালানোর চেষ্টা করে সীমান্তপথে
শনিবার, ১১ জুন ২০২২
রাজধানীর বাংলামটরে পুলিশ সদস্য কোরবান আলীকে চাপা দেয়া বাসটি ছিল ফিটনেসবিহীন ও দুর্ঘটনার সময় বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। জানা যায়, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক বাসটি চালিয়ে আসা জাকির হোসেন বেপরোয়া গতিতে বাংলামটরের দিকে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্যকে চাপা দেন। আগে লেগুনা চালানো ও হেলপারি করে আসা জাকির ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত বাস চালানো শুরু করেন। শুক্রবার (১০ জুন) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এলাকা থেকে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসচালক জাকির হোসেন (৪০) ও ঢাকার সাভার এলাকা থেকে বাসটির মালিক মো. আলম ওরফে খোকাকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২)।
র্যাব জানায়, দুর্ঘটনার ২০ দিন আগে চুক্তিতে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসটি চালানো শুরু করেন জাকির। ঘটনার পর প্রথমে আত্মগোপন করতে চট্টগ্রাম যান চালক। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া যান, সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হন। সেখান থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা হয়ে পাশের দেশে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বাসচালক জাকির। শনিবার (১১ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৬ জুন সকালে বাংলামটর সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যাওয়ার পথে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসচাপায় পুলিশ কনস্টেবল কোরবান আলী নিহত হন। এ ঘটনায় করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় চালক ও বাস মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে বাসটির হেলপার এখনও পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, চালক জাকির ২০০৫ সালে ঢাকায় টেম্পুর হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০১০ সালের দিকে তিনি লেগুনা চালাতেন। পরে ২০১৫ সালে বাসের হেলপার হিসেবে ঢাকায় চাকরি নেন। ২০১৮ সাল থেকে লাব্বাইক ও ওয়েলকাম পরিবহনে চালক হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাস চালানো শুরু করেন।
২০১৯ সালে হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স করে নিয়মিত বাস চালানো শুরু করেন। প্রায় এক মাস আগে বর্তমান গাড়ির মালিক খোকার সঙ্গে জাকিরের পরিচয় হয়। প্রায় ২০ দিন আগে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসটি দৈনিক ২৫০০ টাকা চুক্তিতে চালানো শুরু করেন তিনি। এর বাইরে গাড়ির লাইন খরচ ১৩০০ টাকা দিতে হতো। এরপর বাকি টাকা জাকির, হেলপার ও কন্ডাক্টর ভাগ করে নিতেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার দিন কারওয়ান বাজার সিগন্যাল থেকে যাত্রী নিয়ে পরবর্তী সিগন্যালে বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্যকে চাপা দেন জাকির। বাংলামটরে গিয়ে বাসটি রেখে পালিয়ে যান তিনি। পরে বাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘোরাঘুরি করে রাতে চট্টগ্রামে চলে যান তিনি। সেখানে এক আত্মীয়ের বাসায় দুই দিন থাকার পর আরেক জায়গায় চলে যান। সেখান থেকে শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আত্মগোপনে যান। যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাকিরের পরিকল্পনা ছিল সীমান্ত পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়া।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বাসের মালিক আলম ২০১৭ সালে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন। একটি বাসের লাভ দিয়ে ২০২০ সালে এই বাসটি কিনে রুট পারমিট ছাড়াই সড়কে চালানো শুরু করেন। এখনও গাড়িটির রুট পারমিট না পেলেও দুই বছর ধরে গাড়িটি রাস্তায় চলছিল। ঘটনার পর তিনিও সাভারে আত্মগোপনে যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে র্যাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস চালক-মালিক থেকে শুরু করে স্টেকহোল্ডারদের গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। এটি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নেই। সবাই সচেতন না হলে সড়কে রোধ করা কঠিন।