alt

৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েব

কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহীদুল ও সাহেদের পেছনে কারা?

সাইফ বাবলু : বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা ঘটে। সহকারী কর্মকর্তা (গোডাউনের দায়িত্ব পালনকারী) শহিদুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম সাহেদের নেতৃত্বেই ‘সুরক্ষিত’ লকার থেকে স্বর্ণ গায়েব হলেও নেপথ্যে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে আরও কেউ জড়িত আছে। ওই দুই কর্মকর্তার কাজে কাস্টমস সিপাহী নেয়ামত হাওলাদারের সম্পৃক্তা মিললেও কাস্টমসের পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্বর্ণ গায়েবে জড়িত। এসব মাস্টার মাইন্ডদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে স্বর্ণ গায়েব হওয়ার বিষয়টি জেনেও কেন ২০ দিন পর সে ঘটনায় মামলা করা হয়েছে তার উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, লকার থেকে রক্ষিত স্বর্ণ গায়েবে শুধু দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাই জড়িত নয়, নেপথ্যে কাস্টমসের পদস্থ কর্মকর্তাদেরও যোগসূত্র রয়েছে। কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, স্বর্ণ গায়েব একদিনে হয়নি, বরং বহুদিন ধরে লকার থেকে স্বর্ণ সরানো হয়েছে। কিন্তু শেষ দিকে এসে চুরির নাটক সাজানো হয়েছে।

কাস্টমসের একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বর্ণ গায়েবের ঘটনায় যে দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার নাম এসেছে তাদের নেপথ্যে এয়ারপোর্টের পদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারে। কারণ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা হচ্ছে গোডাউন পাহাড়াদার। কিন্তু গোডাউনের তত্ত্ববধায়নে থাকেন অতিরিক্ত কমিশনার অথবা যুগ্ম কমিশনার। কোন মাল আটক হলে তার একটি জেনারেল রেজিস্টার (জিআর) থাকে। জিআর অনুযায়ী স্বর্ণ হলে সেগুলো ৩ দিন থেকে ৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়বে। এতদিন কেন সেটি জমা পড়েনি সেটি আগে খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া এয়ারপোর্টের দায়িত্ব পালনকারী প্রত্যেক কাস্টমস কর্মকর্তাকে তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দায়িত্ব পালনের সময় কে কখন আসছে, আবার বেরিয়ে যাওয়ার সময় কে কখন বের হয়ে যাচ্ছে তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যে স্বর্ণগুলো গায়েব করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে যারা বের হয়েছে তারা কেন তল্লাশির সময় ধরা পড়েনি সেটি প্রশ্ন। অথবা তাদের বেরিয়ে যেতে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এ কাজের সঙ্গে এয়ারপোর্টের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই জড়িত না হলে গোডাউন পাহাড়াদারদের পক্ষে এতো বড় ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।

স্বর্ণ গায়েবের ঘটনায় কাস্টমসের পক্ষ থেকে যে চুরির মামলা হয়েছে সেই মামলার তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ৪ সিপাহিসহ ৮ জনকে হেফাজতে নেয় বিমানবন্দর থানা পুলিশ। তখন পুলিশের উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার তৌহিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে মামলা তদন্ত করেছিল বিমানবন্দর থানা পুলিশ। এর একদিন পরই মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পরে মামলার নথিপত্র ডিবিতে হস্তান্তর করে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। তবে পুলিশ যে ৮ জনকে হেফাজতে নিয়েছে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গোডাউনে কর্মরত এ. বি. সি ও ডি শিফটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম সাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আকরাম শেখ এবং সিপাহি রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মো. আফজাল হোসেন ও মো. নিয়ামত হাওলাদারকে ডিবি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এদের কাছ থেকে যেসব তথ্য মিলছে, সেগুলো পর্যালোচনা চলছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলাটি যখন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তৌহিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে তদন্ত চলছিল, তখনই স্বর্ণ গায়েবের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা গেছে। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাহেদ এবং মো. শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বেই যে স্বর্ণ বিভিন্ন সময়ে গায়েব করা হচ্ছিল তা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এর সঙ্গে কাস্টমসের সিপাহি নিয়ামত হাওলাদারও জড়িত ছিলেন। মূলত এ ৩ জনই স্বর্ণ গায়েব করেছে। এটি পরিষ্কার হলেও এদের নেপথ্যে কাস্টমসের পদস্থ অনেক কর্মকর্তা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছে তদন্তকারীরা। যে কারণে মামলাটি ‘অধিকতর’ তদন্তের জন্য ডিবিতে পাঠানো হয়েছে।

ডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমি মোটামুটিভাবে পরিষ্কার হয়েছি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সাহেদ এবং মো. শহিদুল ইসলামের পরিকল্পনায় গোডাউনে রক্ষিত লকার থেকে স্বর্ণ গায়েবের ঘটনাটি ঘটেছে। এ কাজে তাদের অন্যতম সহযোগী ছিল সিপাহি নেয়ামত হাওলাদার। এ ৩ জনের সম্পৃক্ততা পেলেও তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। যেহেতু তারা সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী তাই আরও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করছে ডিবির টিম। ওই ৩ জনসহ ৮ জন ডিবির নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সাহেদ ও শহিদুল এবং সিপাহি নিয়ামতকে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরের কাস্টমস গোডাউন থেকে কয়েক মাস ধরে ধাপে ধাপে স্বর্ণ আত্মসাতের বিষয়টি মামলা দায়েরের প্রায় বিশ দিন আগেই জানতে পারেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। জানার পর আত্মসাৎকারীদের খুঁজে বের না করে প্রথমে তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এজন্য খোলা বাজার থেকে প্রায় ১৫০ ভরি স্বর্ণ কিনে গোডাউনে রাখা হয়। পরে যখন বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালঙ্কার উধাও হওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে, তখন আর কেউ দায়িত্ব নিতে চায়নি। এরপরই একটি লকার ভেঙে স্বর্ণ চুরির নাটক পরিকল্পিতভাবে সামনে আনা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা এই কারচুপির পেছনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকতে পারে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে বলেন, অপরাধ তো অপরাধই। মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদামে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি, অর্থাৎ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আটজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর মধ্যে চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহি।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বিমানবন্দরের মতো একটা জায়গা যেখানে কঠোর নিরাপত্তা সেখানে এত বড় একটা চুরির ঘটনা, এটা আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পাশাপাশি গত চার-পাঁচ মাস গুদামে কারা গেছে সেটিও তদন্তে আনা হবে। সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, দায়িত্ব পালন ও জিজ্ঞাসাবাদের পরে বলা যাবে আসলে ঘটনাটি কীভাবে হয়েছে এবং কারা ঘটিয়েছে। এক কর্তৃপক্ষ স্বর্ণগুলো আরেক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করল। কিন্তু তারা কীভাবে বুঝিয়ে দিলো আর যারা বুঝে নিলো তারাই বা কীভাবে বুঝে নিয়েছে সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্তের কাজ শেষ করবো।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা গোডাউনের ভাঙা আলমারি থেকে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে। এছাড়া যেসব জিনিসপত্র দিয়ে আলমারি ভাঙা হয়েছে তারও ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, আলমারি ভাঙার জন্য গোডাউনের ভেতরেই সরঞ্জাম রক্ষিত ছিল।

দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বাইরের চোর চক্রের কারো জানার কথা নয় যে ভেতরে আলমারি ভাঙার সব জিনিস মজুত রয়েছে। বাইরের কোন চোর চক্র হলে তারা আলমারি ভাঙার জিনিসপত্র বা কাটার মেশিন নিয়ে প্রবেশ করতো। ভেতরের লোকজন নিজেদের কাটার মেশিন দিয়ে আলমারি ভেঙে স্বর্ণ চুরির গল্প সাজিয়েছে। আর একসঙ্গে এত স্বর্ণ বের করাও কঠিন। আত্মসাৎকারীরা দীর্ঘদিন ধরে অল্প অল্প করে স্বর্ণ বাইরে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে।

কাস্টমসের একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের বাথরুমে অবৈধ স্বর্র্ণসহ কাস্টমসের সহকারী এক রাজস্ব কর্মকর্তা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের হাতে ধরা পড়েছে। এক যাত্রী স্বর্ণ নিয়ে বাথরুমে যায়। সেখানে ব্যাগে থাকা স্বর্ণ সহকারী এক রাজস্ব কর্মকর্তা রিসিভ করে। এখন অনভিজ্ঞ অফিসারদের এয়ারপোর্টসহ স্পর্শকাতার জায়গাগুলোতে পোস্টিং দেয়া হচ্ছে। যাদের অধিকাংশ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত। আগে এমনটি ছিল না। অভিজ্ঞ অফিসারদের এয়ারপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হতো।

উল্লেখ্য, স্বর্ণ চুরির ঘটনায় গত রোববার রাতেই বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। সূত্র জানায়, প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার জানতে পারেন গুদাম থেকে প্রায় ১৫ কেজি স্বর্ণ নিখোঁজ রয়েছে। পরে গুদামে থাকা স্বর্ণের হিসাব করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ৫৫ কেজি ৫০১ গ্রাম স্বর্ণ গায়েবের সত্যতা পায়।

ছবি

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ছবি

স্ত্রীকে হত্যা: লাশ ডিপ ফ্রিজে, স্বামী গ্রেপ্তার

ছবি

বাগেরহাটে একদিনের ব্যবধানে যুবদল নেতাসহ দুই খুন, রাজমিস্ত্রির মৃতদেহ উদ্ধার

সখীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত বিএনপি নেতা পলাতক

ছবি

মেঘনা ও পদ্মায় বিশেষ অভিযানে ৪৫ জেলে আটক

ছবি

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা,পুলিশ বলছে কিছু জানেনা

ছবি

দুর্নীতির মামলায় আসাদুজ্জামান নূরের জামিন নাকচ

ছবি

গোমতী সেতুর টোলের কার্যাদেশে ‘অনিয়ম’: হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

ছবি

হিরো আলম হত্যাচেষ্টা মামলা: ম্যাক্স অভির জামিন আবেদন নাকচ

ছবি

ছাত্রীনিবাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে আটকে মারধরের ঘটনায় পরিচালক রাজিয়া বেগমের জামিন

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় মদসহ ১১ বাংলাদেশি আটক

ছবি

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে মাছের ঘের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট, প্রতিকার দাবী

সিলেটে ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

ছবি

পীরগাছায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি,বেড়েছে চুরি

ছবি

যশোরে মাদক সিন্ডিকেটের হামলায় যুবক খুন, আহত ৬

ছবি

সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুনের ফ্ল্যাট ও জমি জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

চাঁদাবাজির মামলায় ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার আট বছরের কারাদণ্ড

ছবি

পলাশে প্রবাসীর বাড়িতে চুরি মালামালসহ ২ চোর গ্রেপ্তার

ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, শ্যালিকা গ্রেপ্তার

ছবি

মালিবাগে বোরকা পরে জুয়েলারি দোকান থেকে ‘৫০০ ভরি’ স্বর্ণালংকার চুরি

ছবি

ফরিদপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

ঝিনাইদহে ভাড়া নিয়ে তর্ক, পিতা-পুত্রকে কুপিয়ে জখম

ছবি

ফরিদপুরে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

রূপগঞ্জে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষক গ্রেপ্তার

ছবি

ঢাবি ছাত্রীকে ‘আটকে রেখে মারধর’

ছবি

পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার ১৪ বছর পর আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

রামপুরা হত্যাকাণ্ডে বি‌জি‌বি ও পুলি‌শের চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

নড়াইলে ভ্যানচালক হত্যায় গ্রেপ্তার ২

ছবি

পাথরঘাটায় স্ত্রী হত্যার দায়ে তিন জনের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

গৌরনদীতে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি

ছবি

গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ঝালকাঠিতে মা ইলিশ ধরায় ১১ জেলের কারাদণ্ড

ছবি

যশোরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ

নতুন মামলায় রাশেদ মেনন, দস্তগীর গাজী, পলক ও আতিকুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

tab

৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েব

কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহীদুল ও সাহেদের পেছনে কারা?

সাইফ বাবলু

বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা ঘটে। সহকারী কর্মকর্তা (গোডাউনের দায়িত্ব পালনকারী) শহিদুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম সাহেদের নেতৃত্বেই ‘সুরক্ষিত’ লকার থেকে স্বর্ণ গায়েব হলেও নেপথ্যে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে আরও কেউ জড়িত আছে। ওই দুই কর্মকর্তার কাজে কাস্টমস সিপাহী নেয়ামত হাওলাদারের সম্পৃক্তা মিললেও কাস্টমসের পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্বর্ণ গায়েবে জড়িত। এসব মাস্টার মাইন্ডদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে স্বর্ণ গায়েব হওয়ার বিষয়টি জেনেও কেন ২০ দিন পর সে ঘটনায় মামলা করা হয়েছে তার উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, লকার থেকে রক্ষিত স্বর্ণ গায়েবে শুধু দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাই জড়িত নয়, নেপথ্যে কাস্টমসের পদস্থ কর্মকর্তাদেরও যোগসূত্র রয়েছে। কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, স্বর্ণ গায়েব একদিনে হয়নি, বরং বহুদিন ধরে লকার থেকে স্বর্ণ সরানো হয়েছে। কিন্তু শেষ দিকে এসে চুরির নাটক সাজানো হয়েছে।

কাস্টমসের একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বর্ণ গায়েবের ঘটনায় যে দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার নাম এসেছে তাদের নেপথ্যে এয়ারপোর্টের পদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারে। কারণ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা হচ্ছে গোডাউন পাহাড়াদার। কিন্তু গোডাউনের তত্ত্ববধায়নে থাকেন অতিরিক্ত কমিশনার অথবা যুগ্ম কমিশনার। কোন মাল আটক হলে তার একটি জেনারেল রেজিস্টার (জিআর) থাকে। জিআর অনুযায়ী স্বর্ণ হলে সেগুলো ৩ দিন থেকে ৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়বে। এতদিন কেন সেটি জমা পড়েনি সেটি আগে খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া এয়ারপোর্টের দায়িত্ব পালনকারী প্রত্যেক কাস্টমস কর্মকর্তাকে তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দায়িত্ব পালনের সময় কে কখন আসছে, আবার বেরিয়ে যাওয়ার সময় কে কখন বের হয়ে যাচ্ছে তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যে স্বর্ণগুলো গায়েব করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে যারা বের হয়েছে তারা কেন তল্লাশির সময় ধরা পড়েনি সেটি প্রশ্ন। অথবা তাদের বেরিয়ে যেতে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এ কাজের সঙ্গে এয়ারপোর্টের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই জড়িত না হলে গোডাউন পাহাড়াদারদের পক্ষে এতো বড় ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।

স্বর্ণ গায়েবের ঘটনায় কাস্টমসের পক্ষ থেকে যে চুরির মামলা হয়েছে সেই মামলার তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ৪ সিপাহিসহ ৮ জনকে হেফাজতে নেয় বিমানবন্দর থানা পুলিশ। তখন পুলিশের উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার তৌহিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে মামলা তদন্ত করেছিল বিমানবন্দর থানা পুলিশ। এর একদিন পরই মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পরে মামলার নথিপত্র ডিবিতে হস্তান্তর করে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। তবে পুলিশ যে ৮ জনকে হেফাজতে নিয়েছে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গোডাউনে কর্মরত এ. বি. সি ও ডি শিফটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম সাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আকরাম শেখ এবং সিপাহি রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মো. আফজাল হোসেন ও মো. নিয়ামত হাওলাদারকে ডিবি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এদের কাছ থেকে যেসব তথ্য মিলছে, সেগুলো পর্যালোচনা চলছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলাটি যখন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তৌহিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে তদন্ত চলছিল, তখনই স্বর্ণ গায়েবের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা গেছে। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাহেদ এবং মো. শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বেই যে স্বর্ণ বিভিন্ন সময়ে গায়েব করা হচ্ছিল তা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এর সঙ্গে কাস্টমসের সিপাহি নিয়ামত হাওলাদারও জড়িত ছিলেন। মূলত এ ৩ জনই স্বর্ণ গায়েব করেছে। এটি পরিষ্কার হলেও এদের নেপথ্যে কাস্টমসের পদস্থ অনেক কর্মকর্তা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছে তদন্তকারীরা। যে কারণে মামলাটি ‘অধিকতর’ তদন্তের জন্য ডিবিতে পাঠানো হয়েছে।

ডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমি মোটামুটিভাবে পরিষ্কার হয়েছি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সাহেদ এবং মো. শহিদুল ইসলামের পরিকল্পনায় গোডাউনে রক্ষিত লকার থেকে স্বর্ণ গায়েবের ঘটনাটি ঘটেছে। এ কাজে তাদের অন্যতম সহযোগী ছিল সিপাহি নেয়ামত হাওলাদার। এ ৩ জনের সম্পৃক্ততা পেলেও তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। যেহেতু তারা সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী তাই আরও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করছে ডিবির টিম। ওই ৩ জনসহ ৮ জন ডিবির নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সাহেদ ও শহিদুল এবং সিপাহি নিয়ামতকে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দরের কাস্টমস গোডাউন থেকে কয়েক মাস ধরে ধাপে ধাপে স্বর্ণ আত্মসাতের বিষয়টি মামলা দায়েরের প্রায় বিশ দিন আগেই জানতে পারেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। জানার পর আত্মসাৎকারীদের খুঁজে বের না করে প্রথমে তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এজন্য খোলা বাজার থেকে প্রায় ১৫০ ভরি স্বর্ণ কিনে গোডাউনে রাখা হয়। পরে যখন বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বার ও স্বর্ণালঙ্কার উধাও হওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে, তখন আর কেউ দায়িত্ব নিতে চায়নি। এরপরই একটি লকার ভেঙে স্বর্ণ চুরির নাটক পরিকল্পিতভাবে সামনে আনা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা এই কারচুপির পেছনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকতে পারে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে বলেন, অপরাধ তো অপরাধই। মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদামে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি, অর্থাৎ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আটজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর মধ্যে চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহি।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বিমানবন্দরের মতো একটা জায়গা যেখানে কঠোর নিরাপত্তা সেখানে এত বড় একটা চুরির ঘটনা, এটা আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পাশাপাশি গত চার-পাঁচ মাস গুদামে কারা গেছে সেটিও তদন্তে আনা হবে। সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, দায়িত্ব পালন ও জিজ্ঞাসাবাদের পরে বলা যাবে আসলে ঘটনাটি কীভাবে হয়েছে এবং কারা ঘটিয়েছে। এক কর্তৃপক্ষ স্বর্ণগুলো আরেক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করল। কিন্তু তারা কীভাবে বুঝিয়ে দিলো আর যারা বুঝে নিলো তারাই বা কীভাবে বুঝে নিয়েছে সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্তের কাজ শেষ করবো।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা গোডাউনের ভাঙা আলমারি থেকে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে। এছাড়া যেসব জিনিসপত্র দিয়ে আলমারি ভাঙা হয়েছে তারও ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, আলমারি ভাঙার জন্য গোডাউনের ভেতরেই সরঞ্জাম রক্ষিত ছিল।

দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বাইরের চোর চক্রের কারো জানার কথা নয় যে ভেতরে আলমারি ভাঙার সব জিনিস মজুত রয়েছে। বাইরের কোন চোর চক্র হলে তারা আলমারি ভাঙার জিনিসপত্র বা কাটার মেশিন নিয়ে প্রবেশ করতো। ভেতরের লোকজন নিজেদের কাটার মেশিন দিয়ে আলমারি ভেঙে স্বর্ণ চুরির গল্প সাজিয়েছে। আর একসঙ্গে এত স্বর্ণ বের করাও কঠিন। আত্মসাৎকারীরা দীর্ঘদিন ধরে অল্প অল্প করে স্বর্ণ বাইরে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে।

কাস্টমসের একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের বাথরুমে অবৈধ স্বর্র্ণসহ কাস্টমসের সহকারী এক রাজস্ব কর্মকর্তা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের হাতে ধরা পড়েছে। এক যাত্রী স্বর্ণ নিয়ে বাথরুমে যায়। সেখানে ব্যাগে থাকা স্বর্ণ সহকারী এক রাজস্ব কর্মকর্তা রিসিভ করে। এখন অনভিজ্ঞ অফিসারদের এয়ারপোর্টসহ স্পর্শকাতার জায়গাগুলোতে পোস্টিং দেয়া হচ্ছে। যাদের অধিকাংশ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত। আগে এমনটি ছিল না। অভিজ্ঞ অফিসারদের এয়ারপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হতো।

উল্লেখ্য, স্বর্ণ চুরির ঘটনায় গত রোববার রাতেই বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। সূত্র জানায়, প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার জানতে পারেন গুদাম থেকে প্রায় ১৫ কেজি স্বর্ণ নিখোঁজ রয়েছে। পরে গুদামে থাকা স্বর্ণের হিসাব করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ৫৫ কেজি ৫০১ গ্রাম স্বর্ণ গায়েবের সত্যতা পায়।

back to top