alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি : টিআইবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছে। যা টাকার অঙ্কে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক ও সেতু খাতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

সংস্থাটি বলেছে, ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে এই দুর্নীতি হয়েছে। পক্ষগুলো হলো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনীতিক; আমলা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার।

বুধবার (৯ অক্টোবর) ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি ‘গবেষণা প্রতিবেদনে’ প্রকাশ করা হয়। ‘সড়ক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণাটি করেছেন মো. মোস্তফা কামাল ও মো.জুলকারনাইন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ঠিকাদারের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমের নীতি নির্ধারণ, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে এই দুর্নীতি করা হয়েছে।’

গবেষণাপত্রটি তৈরিতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের নানা প্রকল্পের তথ্য চাইতে গেলে তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, যেসব তথ্য প্রকাশযোগ্য সেগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। তবে বাস্তব কথা হল, প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে তবে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার তো পরিবর্তন হয়নি। তাই রাতারাতি পরিবর্তন আশা করছি না।’

তিনি বলেন, ‘একেবারে নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসব দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের ঘুষ লেনদেনে ৪০-৪৩ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়। এখন ত্রিপক্ষীয় সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, তাহলে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম সফল হবে না।

দুর্নীতিতে দেশীয় আমলাতন্ত্রের সঙ্গে বিদেশি আমলাতন্ত্রের যোগসাজশের কথা বলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘তাদের গবেষণা প্রতিবেদন শুধু দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে হয়েছে। তবে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতেও ‘কম বেশি দুর্নীতি হয়েছে।’

টিআইবির গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণার আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলো ছিল। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর সময় ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত।

গবেষণায় সড়ক নির্মাণ, সড়ক উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ, সেতু উন্নয়ন (অনূর্ধ্ব ১৫০০ মিটার) ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কিত প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১০টি জোনের ১৩টি সার্কেলের ২১টি বিভাগীয় দপ্তরের (জেলা পর্যায়) আওতাধীন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সারাদেশের এসব এলাকায় ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক (জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক) বাস্তবায়ন করা হয়।

যা গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ২৫৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫৮টি প্রকল্প বরাদ্দ পায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

কোথায় কেমন দুর্নীতি

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের লাইসেন্স ভাড়া নেয়া, কোনো ঠিকাদারের পাওয়া কার্যাদেশ ক্রয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে সাব-কন্ট্যাক্ট নেয়া, প্রতিযোগী ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা বা স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যাদেশের ক্ষেত্রে মোট বরাদ্দের ২ থেকে ৬ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে। নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রাপ্তি ও ঠিকাদারের বিল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষের পরিমাণ ১১ থেকে ১৪ শতাংশ।

নির্মাণ কাজে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ।

দরপত্র লাইসেন্স ভাড়া, কার্যাদেশ বিক্রয়, সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতির হার ২ থেকে ৬ শতাংশ।

ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির টাকা ভাগাভাগি হয়েছে। ঠিকাদাররা নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে বা বিভিন্ন উপকরণ কম দেন; সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক, প্রকৌশলীরা এই অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ করে দেন। পাথরের ঘনত্ব কম দেয়া, নিম্ন মানের বিটুমিন ব্যবহার বা কম দেয়া, ট্যাক কোট বিটুমিন না দেয়া বরাদ্দ থাকলেও বৃক্ষরোপণ, রোড সেইফটি সাইন, আর্থ ওয়ার্ক এবং সার্ফেসিং না করা বা অর্ধসমাপ্ত রাখা হয়েছে।

টিআইবি বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা ‘সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্য পাওয়ায়’ নিম্নমানের কাজ করা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির জন্য তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না।

ইজিপি’র তথ্যের বরাত দিয়ে টিআইবি বলেছে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) ঠিকাদারি কাজ পেতে জালিয়াতি করায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৫টি ঠিকাদার কোম্পানিকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে ২৬টি কোম্পানির নিষেধাজ্ঞার ওপর উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। আবার ঠিকাদারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই।

কিছু ঠিকাদারের ‘রাজনৈতিক প্রভাব ও উচ্চ পর্যায়ে যোগসাজশ’ থাকার কারণে সওজের কর্মকর্তা ঠিকাদারদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না বলেও ধারণা পেয়েছে টিআইবি।

গত পাঁচ বছরে সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর ৩৮ দশিমিক ৮ শতাংশ চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ হয়েছে। এছাড়া ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রকল্প পাঁচ বছরের বেশি সময় নিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং একটি প্রকল্প শেষ করতে সর্বোচ্চ ১৭ বছর লেগেছে বলে তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, বাংলাদেশে চার লেন সড়কের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণ ব্যয় ২১-১০০ কোটি টাকা, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে দুই থেকে নয় গুণ বেশি এবং ইউরোপের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।

গবেষণায় টিআইবি দেখিয়েছে; পরিকল্পনা কমিশনে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে কারিগরি বিষয়ে দক্ষ লোক না থাকায় প্রকল্প প্রস্তাবগুলো মূল্যায়নে দুর্বলতা দেখা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ স্বপ্রণোদিত হয়ে পরিবেশগত প্রভাব মোকাবিলায় পরামর্শ দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়। একারনে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুকি মূল্যায়ন না করায় প্রকল্পগুলো টেকসই হয় না। যার কারণে প্রকল্পগুলো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ছবি

কেরানীগঞ্জে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় মামলা, খেলনা পিস্তল ও নগদ টাকাসহ ৩ কিশোর গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে শিশুকে জ্যান্ত কবর দেয়ার চেষ্টার ঘটনায় প্রধান আসামীসহ ২ জন গ্রেপ্তার

অপমৃত্যু নয়, পরিকল্পিত হত্যা ঘাতক গ্রেপ্তার, স্বীকারোক্তি

ছবি

‘ঋণ জালিয়াতি’: এস আলমের ছেলেসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ

ছবি

যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী কামরুল ও এমপি সোলায়মান ৪ দিনের রিমান্ডে

ছবি

শেখ হাসিনার ‘৪০০ কোটির’ সেই পিয়নের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের ‘দেশত্যাগ’, ব্যাখ্যা চেয়েছে ট্রাইব্যুনাল

ছবি

হাসিনা, পরিবারের ‘দুর্নীতি’ অনুসন্ধানে দুদক

ছবি

ডিবির সাবেক কর্মকর্তা হারুন ও পরিবারের ‘৪১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ’

ছবি

বি‌জি‌বির অ‌ভিযানে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীমান্তে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা মূল্যের মাদক ও অবৈধ মালামাল জব্দ

ছবি

সাবেক আইজিপি বেনজীর ও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ছয় মামলা

ভাঙ্গায় কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণ, মামলা, ধর্ষণকারী দুই যুবক গ্রেফতার

শিবচরে জমি নিয়ে বিরোধে স্বামী ও স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে

সিরাজগঞ্জে এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারীদের তুলে নিয়ে ২৮ লাখ টাকা ছিনতাই

খাগড়াছড়িতে হাজার কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র্র-মল্লিকা মামলার ফাঁদে

ঘিওরে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিহত

ছবি

একাধিক হত্যা মামলার আসামি কাউন্সিলর ফোরকান গ্রেপ্তার

ছবি

এস আলম ও পরিবারের ব্যাংক শেয়ার জব্দের নির্দেশ, দুদককে তদন্তের নির্দেশ

ছবি

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা : হাইকোর্টের রায় রোববার

ছবি

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন সেই তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি

ছবি

গণহত্যা মামলায় মামুন-জিয়াউলসহ আরও ৬ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখানো হলো

ছবি

জমি নিয়ে বিরোধ: মাদারীপুরে ২ বোনকে লাঠিপেটা, ভিডিও ভাইরাল

ছবি

উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিপণ, নজরদারিতে শিশুটির বাবা

ছবি

প্রতিবেশীর সাথে মুরগী নিয়ে ঝগড়া, সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ২

ছবি

রাজধানীর আজিমপুরে ডাকাতি মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকেও নিয়ে যায় ডাকাতরা

সূত্রাপুরে সাংবাদিকের বাসার গ্রিল কেটে ২০ ভরি স্বর্ণ ও আড়াই লাখ টাকা চুরি

ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা: ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৪

হাত খরচের টাকার জন্য মাকে খুন, ছেলে গ্রেপ্তার

ছবি

বেক্সিমকো ফার্মায় রিসিভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত

ছবি

শরীয়তপুরে সড়কের পাশে পড়ে থাকা দশটি ব্যাগ থেকে ১২৩টি ককটেল বোমা উদ্ধার

ছবি

কেন শিশু মুনতাহাকে হত্যা করে তার গৃহশিক্ষিকা?

ছবি

ঝিকরগাছায় দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে যুবদল কর্মী খুন

জামালপুরে সেনা সদস্যের স্ত্রী ধর্ষণসহ হত্যা মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৪

আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ড্রেজিংয়ের নামে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট

ছবি

আদালতে আমুর আইনজীবীকে পিটুনি

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি : টিআইবি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছে। যা টাকার অঙ্কে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক ও সেতু খাতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

সংস্থাটি বলেছে, ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে এই দুর্নীতি হয়েছে। পক্ষগুলো হলো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনীতিক; আমলা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার।

বুধবার (৯ অক্টোবর) ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি ‘গবেষণা প্রতিবেদনে’ প্রকাশ করা হয়। ‘সড়ক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণাটি করেছেন মো. মোস্তফা কামাল ও মো.জুলকারনাইন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ঠিকাদারের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমের নীতি নির্ধারণ, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে এই দুর্নীতি করা হয়েছে।’

গবেষণাপত্রটি তৈরিতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের নানা প্রকল্পের তথ্য চাইতে গেলে তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, যেসব তথ্য প্রকাশযোগ্য সেগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। তবে বাস্তব কথা হল, প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে তবে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার তো পরিবর্তন হয়নি। তাই রাতারাতি পরিবর্তন আশা করছি না।’

তিনি বলেন, ‘একেবারে নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসব দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের ঘুষ লেনদেনে ৪০-৪৩ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়। এখন ত্রিপক্ষীয় সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, তাহলে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম সফল হবে না।

দুর্নীতিতে দেশীয় আমলাতন্ত্রের সঙ্গে বিদেশি আমলাতন্ত্রের যোগসাজশের কথা বলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘তাদের গবেষণা প্রতিবেদন শুধু দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে হয়েছে। তবে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতেও ‘কম বেশি দুর্নীতি হয়েছে।’

টিআইবির গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণার আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলো ছিল। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর সময় ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত।

গবেষণায় সড়ক নির্মাণ, সড়ক উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ, সেতু উন্নয়ন (অনূর্ধ্ব ১৫০০ মিটার) ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কিত প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১০টি জোনের ১৩টি সার্কেলের ২১টি বিভাগীয় দপ্তরের (জেলা পর্যায়) আওতাধীন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সারাদেশের এসব এলাকায় ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক (জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক) বাস্তবায়ন করা হয়।

যা গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ২৫৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫৮টি প্রকল্প বরাদ্দ পায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

কোথায় কেমন দুর্নীতি

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের লাইসেন্স ভাড়া নেয়া, কোনো ঠিকাদারের পাওয়া কার্যাদেশ ক্রয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে সাব-কন্ট্যাক্ট নেয়া, প্রতিযোগী ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা বা স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যাদেশের ক্ষেত্রে মোট বরাদ্দের ২ থেকে ৬ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে। নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রাপ্তি ও ঠিকাদারের বিল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষের পরিমাণ ১১ থেকে ১৪ শতাংশ।

নির্মাণ কাজে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ।

দরপত্র লাইসেন্স ভাড়া, কার্যাদেশ বিক্রয়, সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতির হার ২ থেকে ৬ শতাংশ।

ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির টাকা ভাগাভাগি হয়েছে। ঠিকাদাররা নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে বা বিভিন্ন উপকরণ কম দেন; সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক, প্রকৌশলীরা এই অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ করে দেন। পাথরের ঘনত্ব কম দেয়া, নিম্ন মানের বিটুমিন ব্যবহার বা কম দেয়া, ট্যাক কোট বিটুমিন না দেয়া বরাদ্দ থাকলেও বৃক্ষরোপণ, রোড সেইফটি সাইন, আর্থ ওয়ার্ক এবং সার্ফেসিং না করা বা অর্ধসমাপ্ত রাখা হয়েছে।

টিআইবি বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা ‘সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্য পাওয়ায়’ নিম্নমানের কাজ করা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির জন্য তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না।

ইজিপি’র তথ্যের বরাত দিয়ে টিআইবি বলেছে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) ঠিকাদারি কাজ পেতে জালিয়াতি করায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৫টি ঠিকাদার কোম্পানিকে বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে ২৬টি কোম্পানির নিষেধাজ্ঞার ওপর উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। আবার ঠিকাদারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই।

কিছু ঠিকাদারের ‘রাজনৈতিক প্রভাব ও উচ্চ পর্যায়ে যোগসাজশ’ থাকার কারণে সওজের কর্মকর্তা ঠিকাদারদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না বলেও ধারণা পেয়েছে টিআইবি।

গত পাঁচ বছরে সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর ৩৮ দশিমিক ৮ শতাংশ চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ হয়েছে। এছাড়া ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রকল্প পাঁচ বছরের বেশি সময় নিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং একটি প্রকল্প শেষ করতে সর্বোচ্চ ১৭ বছর লেগেছে বলে তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, বাংলাদেশে চার লেন সড়কের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণ ব্যয় ২১-১০০ কোটি টাকা, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে দুই থেকে নয় গুণ বেশি এবং ইউরোপের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।

গবেষণায় টিআইবি দেখিয়েছে; পরিকল্পনা কমিশনে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে কারিগরি বিষয়ে দক্ষ লোক না থাকায় প্রকল্প প্রস্তাবগুলো মূল্যায়নে দুর্বলতা দেখা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ স্বপ্রণোদিত হয়ে পরিবেশগত প্রভাব মোকাবিলায় পরামর্শ দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়। একারনে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুকি মূল্যায়ন না করায় প্রকল্পগুলো টেকসই হয় না। যার কারণে প্রকল্পগুলো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

back to top