alt

দুদকে তিন মাসে ৬ বরখাস্ত, ৬৯ বদলি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৬ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। বদলি করা হয়েছে ৫১ কর্মকর্তা ও ১৮ কর্মচারীসহ ৬৯ জনকে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর ‘পাচার করা’ অর্থ ফেরাতে যে ১১টি যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) কাজ করছে, বদলির তালিকায় সেসব দলের কর্মকর্তাও আছেন। বদলি করা হয়েছে দলের প্রধানকেও।

স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়ার ভিন্ন কারণ তুলে ধরা হয়েছে এসব আদেশে। দুদকের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ইউনিটের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, অন্তত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দায়িত্বে গাফিলতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা ‘গুরুতর’ অভিযোগ রয়েছে। তার ভিত্তিতে কারণ দর্শানোর নোটিস, বিভাগীয় ব্যবস্থা, বদলি ও সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

সংস্থার মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনিক কারণে বদলি করাটা কাজের রুটিনের অংশ।’ তবে তিন মাসের মধ্যে কমিশনের সাময়িক বরখাস্তসহ অনেকগুলো বদলির পদক্ষেপ ভাবাচ্ছে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তবে তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।

তাদের কেউ বলছেন, অনিয়ম করলে কর্মীরাও যে ছাড় পাবেন না, কমিশন মূলত সে বার্তা দিতে চাইছে। দুদকের সুনাম বাড়াতে এসব পদক্ষেপ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা। আবার কেউ আশঙ্কা করছেন, একের পর এক বদলির কারণে তদন্ত কাজের বিশেষ করে যৌথ তদন্ত কাজের গতি ধীর হয়ে যেতে পারে। সাময়িক বরখাস্ত ও বদলির কারণে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথাও বলছেন তারা।

উপ-পরিচালক শেখ গোলাম মাওলাকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয় ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে। এর আগে তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে গঠিত যৌথ তদন্ত দলের প্রধান ছিলেন।

এর আগে একটি জেআইটির সদস্য উপ-পরিচালক রাশেদুল ইসলামকে কক্সবাজারে বদলি করা হয়। তবে অনুসন্ধান কাজে যেন প্রভাব না পড়ে, সেজন্য তাকে আবার প্রধান কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে জেআইটির অন্য দুটি দলের নেতা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ও মো. সালাহউদ্দিনকে প্রধান কার্যালয় থেকে বদলি করার পর আর ফিরিয়ে আনা হয়নি।

গত ২১ সেপ্টেম্বর দুদকের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. রাজিব হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, ‘গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে ব্যক্তিস্বার্থে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।’

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় দুদকের পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলামকে। তার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপের কারণ হিসেবে আদেশে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘অনৈতিক সুবিধা’ নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর কমিশনের নির্দেশে গোপন অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, মীজানুল ১৭ আগস্ট ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ৩ দিন চিকিৎসা শেষে তিনি ছাড়পত্র নেন। কিন্তু চিকিৎসা বাবদ ২ লাখ ৪ হাজার ১৩২ টাকা নিজে পরিশোধ না করে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাহাবুবুল আনামের দেয়া ‘গ্যারান্টির’ ভিত্তিতে ছাড়পত্র গ্রহণ করেন তিনি।

এর আগে গত ১৭ জুলাই ‘সময়মতো’ অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় দুদকের উপ-পরিচালক কমলেশ ম-লকে। বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, তিনি ঢাকা ওয়াসার ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের’ পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আখতারুজ্জামানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান পরিচালনার দায়িত্ব পান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেননি।

দুদক বলছে, অভিযোগের বিষয়ে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেননি এবং সময় বাড়ানোর আবেদনও করেননি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দেরিতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কারণে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে বলে তুলে ধরেন একাধিক কর্মকর্তা।

বর্তমান সরকারের এক বছরে দুদকে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তারা বলছেন, অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে নথিপত্র সংগ্রহ, সংশ্লিষ্টদের তলবসহ নানা ধাপ সম্পন্ন করতে যথেষ্ট সময় লাগে। একজন কর্মকর্তার ওপর একসঙ্গে একাধিক অভিযোগের দায়িত্ব পড়ছে। পাশাপাশি পুরোনো মামলার তদন্ত চালানো এবং আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার কাজও সামলাতে হচ্ছে।

এরমধ্যে যদি শুধু সময় বেশি নেয়ার অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হয়, তবে তা কর্মকর্তাদের ওপর চাপ তৈরি করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ছোটোখাটো ভুলত্রুটি ধরা পড়লেও যেকোনো সময় কারণ দর্শানোর নোটিস থেকে শুরু করে বিভাগীয় ব্যবস্থার মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

তবে এমন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা কর্মকর্তারা বলছেন, এতে করে কমিশনে একটি সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ তৈরি হয়েছে। ‘ফাইলভিত্তিক’ তদবিরও কমে গেছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দুদকের প্রতি আস্থা তৈরি হবে। আবার কেউ বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর দুদকেও রদবদলের সূত্র ধরে কিছু কর্মকর্তা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা’ গ্রহণের অভিযোগও উঠেছে। তাদের জন্য এমন পদক্ষেপ একটি বার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য তাদের। এসব বিষয় নিয়ে বক্তব্য জানতে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে মোবাইল ফোনে কল করার পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।

ছবি

সুন্দরবনে ‘বনদস্যুদের হাতে জিম্মি’ থাকা ৪ জেলে উদ্ধার

ছবি

পাউবোর সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ

ছবি

অসহায় নারীর সন্তান বিক্রি, ক্লিনিক মালিকের কারাদণ্ড, হাসপাতাল সিলগালা

ছবি

নারী নির্যাতন: রংপুরে আদালতে ঝুলছে ৫ হাজারের বেশি মামলা

ছবি

৬০৮ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং, ৬ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

ছবি

প্লট ‘দুর্নীতি’: হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন ৯ জন

ছবি

সাবেক এমপি বুবলীর জামিন নাকচ

ছবি

সাবেক ‘সমন্বয়ক’ রাব্বিসহ চারজন চাঁদাবাজির মামলায় রিমান্ডে

ছবি

সেপ্টেম্বরে ধর্ষণ ও গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে : এমএসএফ

ছবি

ঈশ্বরদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৬ জনকে কারাদন্ড

ছবি

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতার ছুরিকাঘাতে জামায়াত নেতা নিহত

ছবি

শেভরনের পাইপলাইনে কনডেনসেট চুরির ঘটনায় মৃত্যু ২, চলছে তদন্ত

ছবি

থানা থেকে হান্নান মাসউদের ছাড়িয়ে নেয়া সাইফুল চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার

ছবি

থাইল্যান্ডে সিকদার পরিবারের ৭ কোম্পানির সম্পদ অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

আড়াইহাজারে গণপিটুনিতে ইউপি মেম্বার নিহত

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ হেফাজতে তরুণের মৃত্যু, এসআই গ্রেপ্তার

ছবি

খাগড়াছড়ি: সহিংসতার পরদিন পরিস্থিতি থমথমে

ছবি

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে দিঘীতে বিষ প্রয়োগে কয়েক লাখ টাকার মাছ নিধন

ছবি

কামাল মজুমদারের ছেলে শাহেদ ৫ দিনের রিমান্ডে

ছবি

সাভারে দুই স্থান থেকে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার

ছবি

ফরিদপুরে কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে পিতার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

চোর সন্দেহে মাছ ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় মামলা, আটক ৪

ছবি

বেনাপোল বন্দর: ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আটক, ধরাছোঁয়ার বাইরে মূলহোতারা

ছবি

হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান: ‘বিলাসবহুল’ ৬ গাড়ি জব্দ

ছবি

মালয়েশিয়ার স্বপ্নভঙ্গ: কারওয়ান বাজারে সোয়া ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

ছবি

মারমা কিশোরী ধর্ষণ: খাগড়াছড়িতে সহিংসতা, গুলিতে ৩ জন নিহত

ছবি

শেভরনের পাইপলাইনে অগ্নিকাণ্ডে: অবৈধ ট্যাপিংয়ে জড়িত কারা?

ছবি

নরসিংদীতে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবক নিহত

ছবি

মোহনগঞ্জে বালু উত্তোলনের দায়ে ড্রেজার মালিককে জরিমানা

ছবি

শাবির ২০ শিক্ষার্থী আজীবন, ১৭ জন সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

জয়ের সম্পদ জব্দে যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি পাঠাচ্ছে দুদক

ছবি

মাগুরার বিনোদপুর থেকে টিসিবির ৭৮ টন চাল উদ্ধার

ছবি

প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

ছবি

এক বছরে ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ চেয়ে পুলিশে দুদকের চিঠি

ছবি

সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীদের ৫৯ শতাংশই নারী

ছবি

শ্রীনগরে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে সরবত বিক্রেতা আটক

tab

দুদকে তিন মাসে ৬ বরখাস্ত, ৬৯ বদলি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৬ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। বদলি করা হয়েছে ৫১ কর্মকর্তা ও ১৮ কর্মচারীসহ ৬৯ জনকে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর ‘পাচার করা’ অর্থ ফেরাতে যে ১১টি যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) কাজ করছে, বদলির তালিকায় সেসব দলের কর্মকর্তাও আছেন। বদলি করা হয়েছে দলের প্রধানকেও।

স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়ার ভিন্ন কারণ তুলে ধরা হয়েছে এসব আদেশে। দুদকের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ইউনিটের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, অন্তত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দায়িত্বে গাফিলতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা ‘গুরুতর’ অভিযোগ রয়েছে। তার ভিত্তিতে কারণ দর্শানোর নোটিস, বিভাগীয় ব্যবস্থা, বদলি ও সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

সংস্থার মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনিক কারণে বদলি করাটা কাজের রুটিনের অংশ।’ তবে তিন মাসের মধ্যে কমিশনের সাময়িক বরখাস্তসহ অনেকগুলো বদলির পদক্ষেপ ভাবাচ্ছে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তবে তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।

তাদের কেউ বলছেন, অনিয়ম করলে কর্মীরাও যে ছাড় পাবেন না, কমিশন মূলত সে বার্তা দিতে চাইছে। দুদকের সুনাম বাড়াতে এসব পদক্ষেপ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা। আবার কেউ আশঙ্কা করছেন, একের পর এক বদলির কারণে তদন্ত কাজের বিশেষ করে যৌথ তদন্ত কাজের গতি ধীর হয়ে যেতে পারে। সাময়িক বরখাস্ত ও বদলির কারণে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথাও বলছেন তারা।

উপ-পরিচালক শেখ গোলাম মাওলাকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয় ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে। এর আগে তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে গঠিত যৌথ তদন্ত দলের প্রধান ছিলেন।

এর আগে একটি জেআইটির সদস্য উপ-পরিচালক রাশেদুল ইসলামকে কক্সবাজারে বদলি করা হয়। তবে অনুসন্ধান কাজে যেন প্রভাব না পড়ে, সেজন্য তাকে আবার প্রধান কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে জেআইটির অন্য দুটি দলের নেতা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ও মো. সালাহউদ্দিনকে প্রধান কার্যালয় থেকে বদলি করার পর আর ফিরিয়ে আনা হয়নি।

গত ২১ সেপ্টেম্বর দুদকের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. রাজিব হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, ‘গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে ব্যক্তিস্বার্থে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।’

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় দুদকের পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলামকে। তার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপের কারণ হিসেবে আদেশে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘অনৈতিক সুবিধা’ নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর কমিশনের নির্দেশে গোপন অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, মীজানুল ১৭ আগস্ট ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ৩ দিন চিকিৎসা শেষে তিনি ছাড়পত্র নেন। কিন্তু চিকিৎসা বাবদ ২ লাখ ৪ হাজার ১৩২ টাকা নিজে পরিশোধ না করে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাহাবুবুল আনামের দেয়া ‘গ্যারান্টির’ ভিত্তিতে ছাড়পত্র গ্রহণ করেন তিনি।

এর আগে গত ১৭ জুলাই ‘সময়মতো’ অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় দুদকের উপ-পরিচালক কমলেশ ম-লকে। বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, তিনি ঢাকা ওয়াসার ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের’ পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আখতারুজ্জামানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান পরিচালনার দায়িত্ব পান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেননি।

দুদক বলছে, অভিযোগের বিষয়ে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেননি এবং সময় বাড়ানোর আবেদনও করেননি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দেরিতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কারণে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে বলে তুলে ধরেন একাধিক কর্মকর্তা।

বর্তমান সরকারের এক বছরে দুদকে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তারা বলছেন, অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে নথিপত্র সংগ্রহ, সংশ্লিষ্টদের তলবসহ নানা ধাপ সম্পন্ন করতে যথেষ্ট সময় লাগে। একজন কর্মকর্তার ওপর একসঙ্গে একাধিক অভিযোগের দায়িত্ব পড়ছে। পাশাপাশি পুরোনো মামলার তদন্ত চালানো এবং আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার কাজও সামলাতে হচ্ছে।

এরমধ্যে যদি শুধু সময় বেশি নেয়ার অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হয়, তবে তা কর্মকর্তাদের ওপর চাপ তৈরি করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ছোটোখাটো ভুলত্রুটি ধরা পড়লেও যেকোনো সময় কারণ দর্শানোর নোটিস থেকে শুরু করে বিভাগীয় ব্যবস্থার মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

তবে এমন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা কর্মকর্তারা বলছেন, এতে করে কমিশনে একটি সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ তৈরি হয়েছে। ‘ফাইলভিত্তিক’ তদবিরও কমে গেছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দুদকের প্রতি আস্থা তৈরি হবে। আবার কেউ বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর দুদকেও রদবদলের সূত্র ধরে কিছু কর্মকর্তা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা’ গ্রহণের অভিযোগও উঠেছে। তাদের জন্য এমন পদক্ষেপ একটি বার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য তাদের। এসব বিষয় নিয়ে বক্তব্য জানতে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে মোবাইল ফোনে কল করার পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।

back to top