১৫ মাসে ১৭ হত্যাকাণ্ড
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
চট্টগ্রামের রাউজানে ১৮ দিনের মাথায় আবারও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এবার দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়েছেন মুহাম্মদ আলমগীর আলম (৪৫) নামে যুবদলের এক কর্মী। শনিবার,(২৫ অক্টোবর ২০২৫) বিকেল পাঁচটার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রাউজানের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
যুবদল কর্মী আলমগীর আলম মোটরসাইকেলে পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তার স্ত্রী ও সন্তান মোটরসাইকেলের পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। এ ঘটনায় আলমগীর আলমের আত্মীয় মুহাম্মদ রিয়াদও (২৫) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কায়কোবাদ জামে মসজিদের কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমগীরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অস্ত্রধারীরা তাকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে যান। পুলিশ তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি। নিহত আলমগীরের শরীরে ৫টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর উপজেলার বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে (৫২) রাউজানের খামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাটে চলন্ত গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই উপজেলায় আরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটল।
নিহত আলমগীর আলমের বাড়ি ঢালার মুখ এলাকায়। তিনি আবদুস সত্তারের ছেলে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তিনি একাধিক মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে মুহাম্মদ আলমগীর আলম পাশের গ্রাম রশিদারপাড়া থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় একদল অস্ত্রধারী চারাবটতলের মসজিদের পাশের কবরস্থান থেকে বের হয়ে তার মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি পড়ে যান। পরে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে। সন্ধ্যায় পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আলমগীর আগে অপরাধ জগতে থাকলেও এবার জেল থেকে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। পূর্বশত্রুতা কিংবা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। আমরা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’
রাউজান পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল হক নিহত আলমগীর বিএনপি বা সহযোগী কোনো সংগঠনের কর্মী নন বলে দাবি করেন। বলেন, নিহত ব্যক্তি বিএনপির কেউ নন। তিনি দলের কোনো পদ পদবিতে আগেও ছিলেন না, এখনও নেই।
তবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার এক বিবৃতিতে আলমগীরকে যুবদল কর্মী দাবি করে তার হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিহত আলমগীর আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছিলেন। রাউজানের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হলেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের এবং খুনের নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয় শতাধিকবার। ৩৫০ জনের বেশি মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
১৫ মাসে ১৭ হত্যাকাণ্ড
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
চট্টগ্রামের রাউজানে ১৮ দিনের মাথায় আবারও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এবার দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়েছেন মুহাম্মদ আলমগীর আলম (৪৫) নামে যুবদলের এক কর্মী। শনিবার,(২৫ অক্টোবর ২০২৫) বিকেল পাঁচটার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রাউজানের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
যুবদল কর্মী আলমগীর আলম মোটরসাইকেলে পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তার স্ত্রী ও সন্তান মোটরসাইকেলের পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। এ ঘটনায় আলমগীর আলমের আত্মীয় মুহাম্মদ রিয়াদও (২৫) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কায়কোবাদ জামে মসজিদের কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমগীরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অস্ত্রধারীরা তাকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে যান। পুলিশ তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি। নিহত আলমগীরের শরীরে ৫টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর উপজেলার বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে (৫২) রাউজানের খামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাটে চলন্ত গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই উপজেলায় আরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটল।
নিহত আলমগীর আলমের বাড়ি ঢালার মুখ এলাকায়। তিনি আবদুস সত্তারের ছেলে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তিনি একাধিক মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে মুহাম্মদ আলমগীর আলম পাশের গ্রাম রশিদারপাড়া থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় একদল অস্ত্রধারী চারাবটতলের মসজিদের পাশের কবরস্থান থেকে বের হয়ে তার মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি পড়ে যান। পরে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে। সন্ধ্যায় পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আলমগীর আগে অপরাধ জগতে থাকলেও এবার জেল থেকে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। পূর্বশত্রুতা কিংবা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। আমরা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’
রাউজান পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল হক নিহত আলমগীর বিএনপি বা সহযোগী কোনো সংগঠনের কর্মী নন বলে দাবি করেন। বলেন, নিহত ব্যক্তি বিএনপির কেউ নন। তিনি দলের কোনো পদ পদবিতে আগেও ছিলেন না, এখনও নেই।
তবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার এক বিবৃতিতে আলমগীরকে যুবদল কর্মী দাবি করে তার হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিহত আলমগীর আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছিলেন। রাউজানের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হলেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের এবং খুনের নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয় শতাধিকবার। ৩৫০ জনের বেশি মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।