রাজধানীর হাইকোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে আশরাফুল হক নামে রংপুরের এক ব্যবসায়ীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ জরেজের বরাতে গোয়েন্দা পুলিশ বলেছে, হত্যাকাণ্ডটা ঘটেছে ‘প্রেমঘটিত সংকটে’। এর আগে জরেজের বন্ধু শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার,(১৫ নভেম্বর ২০২৫) সকালে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব বলেছে, প্রেমিকাকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের। সে পরিকল্পনায় আশরাফুলকে ঢাকায় আনার কথা র্যাবকে বলেছেন শামীমা। কিন্তু টাকা আদায় না করে কেন তাকে খুন করা হলো, সে ব্যাপারে কোনো ‘স্পষ্ট ধারণা’ মেলেনি।
বন্ধুকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের
শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে দেন
লাশটি ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরে ওপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেন
দুই আসামি ৫ দিনের রিমান্ডে
তখন হত্যাকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত হতে জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল র্যাব, যাকে গতকাল শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবি। এদিন দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে জরেজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এটা আসলে একটা ‘ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী’।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেইটের কাছে দুটি নীল ড্রাম থেকে খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৬ টুকরা লাশের প্রথমে পরিচয় পাওয়া না গেলেও আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইজ থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। জানা যায়, লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুল হকের। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন আশরাফুলের বোন। এ হত্যাকাণ্ডে তার ‘বন্ধু’ জরেজ নামে একজনকে ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ হিসেবে খোঁজার কথা বলেছিল পুলিশ। রাতেই ডিবি পুলিশ জরেজকে এবং র্যাব জরেজের বন্ধু শামীমাকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছিল।
ডিএমপির ডিবিপ্রধান শফিকুল ইসলাম বলছিলেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ মাস দেড়েক আগে দেশে ফেরেন। সেখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। জরেজের দেশে ফেরার দিন শামীমাই তাকে ঢাকার বিমানবন্দরে ‘রিসিভ করেন’ এবং পরে যে যার বাড়ি চলে যান। দেশে ফেরার পর তাদের মধ্যে চলতে থাকা যোগাযোগের বিষয়টি জরেজের স্ত্রী ‘ধরে ফেলেন’। আর এ বিষয়ে সহায়তার জন্য তিনি দ্বারস্থ হন জরেজের ঘনিষ্ট বন্ধু আশরাফুলের।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘জরেজের স্ত্রী শামীমার নম্বর দেন আশরাফুলকে। তাকে ফোন করে যেন তার স্বামীর জীবন থেকে সরে যেতে বলেন, সেই অনুরোধ করেন। এরমধ্যে শামীমাকে ফোন দেন আশরাফুল। এক সময় শামীমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রেমে পড়ে যান তিনি। তারা দুইজন নিয়মিত কথা বলতেন ও ভিডিও চ্যাটিং করতেন।’
এরমধ্যে আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করেন যে জরেজকে জাপানে পাঠিয়ে দেবেন, তারা দুইজনের জাপান যাওয়ার খরচ ৭ লাখ করে ১৪ লাখ টাকা দেবেন। জাপান যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং টাকা নেয়ার জন্য শামীমা তাদের ঢাকায় যেতে বলেন, সে অনুযায়ী দুই বন্ধু মিলে গত মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন সকালে তাদের সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ‘রিসিভ করেন’ শামীমা। এরপর তারা শনির আখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন।
ডিবি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিজেরা একান্তে সময় কাটাতে আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান জরেজ ও শামীমা, কিন্তু তিনি ঘুমান না। আশরাফুল বার বার শামীমার সান্নিধ্যে যেতে চেষ্টা করেন, এতে জরেজ বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়।’ তিনি বলেন, একপর্যায়ে জরেজ বাসা থেকে বেরিয়ে যান এবং দেখতে একইরকম হওয়ায় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে যান। সে বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মোবাইল নিতে আবার বাসায় ফেরত যান।
‘জরেজ বাসায় ঢুকলে শামীমা তাকে ভেতরে যেতে বলেন এবং আশরাফুল ঘুমিয়ে গেছে বলে জানান। ঘুমিয়েছে কিনা, দেখার জন্য শামীমা গায়ে হাত দিলে আশরাফুল জেগে যান। তখন জরেজ আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। ‘আশরাফুল বিকৃত যৌনাচারের জন্য শামীমাকে জোর করতে থাকে, তখন শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে দেন। এরমধ্যে শামীমা চিৎকার করলে জরেজ বেরিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে বাড়ি দেয়। তিনি চিৎকার করতে থাকলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে দিয়ে স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর দেখেন আশরাফুল আর নড়াচড়া করতেছে না, তিনি মারা গেছেন।’
ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, তারা এ অবস্থায় আশরাফুলের লাশ নিয়ে রাতে এক বাসায় থাকেন, নানা পরিকল্পনার পর বৃহস্পতিবার সকালে বাইরে থেকে ড্রাম এবং অন্য জিনিস কিনে আনেন। লাশটি ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরে ওপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেন। এরপর সিএনজিতে করে এসে হাইকোর্টের সামনে ড্রাম দুটি রেখে তারা সায়েদাবাদ চলে যান বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখান থেকে শামীমা নিজের বাড়ি লাকসামে চলে যান এবং জরেজ দাউদকান্দিতে তার পূর্ব পরিচিত একজনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন, যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
### দুই আসামি ৫ দিনের রিমান্ডে
ব্যবসায়ীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তারা হলো- আশরাফুলের বন্ধু ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ জরেজুল ইসলাম ওরফে জরেজ এবং তার ‘বন্ধু’ শমীমা আক্তার ওরফে শামীমা ওরফে কহিনুর। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিন তাদের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী এ তথ্য দিয়েছেন।
শনিবার তাদের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের এসআই মো. এনামুল হাসান। দুইজনের রিমান্ডে চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তা যে আবেদন করেছেন সেখানে বলা হয়েছে, আশরাফুলকে হত্যার কারণ আলামত নষ্ট ও লাশ গুম করতে কে বা কারা সহায়তা করেছে, হত্যকাণ্ডে কারা কীভাবে জড়িত এবং আশরাফুলের কাছ আর্থিক সুবিধা আদায়সংক্রান্ত তথ্য জানতে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। শুনানিকালে আসামিদের এজলাসে তোলা হয়। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। জরেজ ও শামীমার কিছু বলার আছে কিনা, জানতে চান বিচারক। জবাবে আসামিরা বলেন, তাদের কিছু বলার নেই। পরে আদালত তাদের প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
রাজধানীর হাইকোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে আশরাফুল হক নামে রংপুরের এক ব্যবসায়ীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ জরেজের বরাতে গোয়েন্দা পুলিশ বলেছে, হত্যাকাণ্ডটা ঘটেছে ‘প্রেমঘটিত সংকটে’। এর আগে জরেজের বন্ধু শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার,(১৫ নভেম্বর ২০২৫) সকালে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব বলেছে, প্রেমিকাকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের। সে পরিকল্পনায় আশরাফুলকে ঢাকায় আনার কথা র্যাবকে বলেছেন শামীমা। কিন্তু টাকা আদায় না করে কেন তাকে খুন করা হলো, সে ব্যাপারে কোনো ‘স্পষ্ট ধারণা’ মেলেনি।
বন্ধুকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের
শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে দেন
লাশটি ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরে ওপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেন
দুই আসামি ৫ দিনের রিমান্ডে
তখন হত্যাকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত হতে জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল র্যাব, যাকে গতকাল শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবি। এদিন দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে জরেজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এটা আসলে একটা ‘ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী’।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেইটের কাছে দুটি নীল ড্রাম থেকে খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৬ টুকরা লাশের প্রথমে পরিচয় পাওয়া না গেলেও আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইজ থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। জানা যায়, লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুল হকের। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন আশরাফুলের বোন। এ হত্যাকাণ্ডে তার ‘বন্ধু’ জরেজ নামে একজনকে ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ হিসেবে খোঁজার কথা বলেছিল পুলিশ। রাতেই ডিবি পুলিশ জরেজকে এবং র্যাব জরেজের বন্ধু শামীমাকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছিল।
ডিএমপির ডিবিপ্রধান শফিকুল ইসলাম বলছিলেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ মাস দেড়েক আগে দেশে ফেরেন। সেখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। জরেজের দেশে ফেরার দিন শামীমাই তাকে ঢাকার বিমানবন্দরে ‘রিসিভ করেন’ এবং পরে যে যার বাড়ি চলে যান। দেশে ফেরার পর তাদের মধ্যে চলতে থাকা যোগাযোগের বিষয়টি জরেজের স্ত্রী ‘ধরে ফেলেন’। আর এ বিষয়ে সহায়তার জন্য তিনি দ্বারস্থ হন জরেজের ঘনিষ্ট বন্ধু আশরাফুলের।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘জরেজের স্ত্রী শামীমার নম্বর দেন আশরাফুলকে। তাকে ফোন করে যেন তার স্বামীর জীবন থেকে সরে যেতে বলেন, সেই অনুরোধ করেন। এরমধ্যে শামীমাকে ফোন দেন আশরাফুল। এক সময় শামীমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রেমে পড়ে যান তিনি। তারা দুইজন নিয়মিত কথা বলতেন ও ভিডিও চ্যাটিং করতেন।’
এরমধ্যে আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করেন যে জরেজকে জাপানে পাঠিয়ে দেবেন, তারা দুইজনের জাপান যাওয়ার খরচ ৭ লাখ করে ১৪ লাখ টাকা দেবেন। জাপান যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং টাকা নেয়ার জন্য শামীমা তাদের ঢাকায় যেতে বলেন, সে অনুযায়ী দুই বন্ধু মিলে গত মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন সকালে তাদের সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ‘রিসিভ করেন’ শামীমা। এরপর তারা শনির আখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন।
ডিবি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিজেরা একান্তে সময় কাটাতে আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান জরেজ ও শামীমা, কিন্তু তিনি ঘুমান না। আশরাফুল বার বার শামীমার সান্নিধ্যে যেতে চেষ্টা করেন, এতে জরেজ বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়।’ তিনি বলেন, একপর্যায়ে জরেজ বাসা থেকে বেরিয়ে যান এবং দেখতে একইরকম হওয়ায় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে যান। সে বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মোবাইল নিতে আবার বাসায় ফেরত যান।
‘জরেজ বাসায় ঢুকলে শামীমা তাকে ভেতরে যেতে বলেন এবং আশরাফুল ঘুমিয়ে গেছে বলে জানান। ঘুমিয়েছে কিনা, দেখার জন্য শামীমা গায়ে হাত দিলে আশরাফুল জেগে যান। তখন জরেজ আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। ‘আশরাফুল বিকৃত যৌনাচারের জন্য শামীমাকে জোর করতে থাকে, তখন শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে দেন। এরমধ্যে শামীমা চিৎকার করলে জরেজ বেরিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে বাড়ি দেয়। তিনি চিৎকার করতে থাকলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে দিয়ে স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর দেখেন আশরাফুল আর নড়াচড়া করতেছে না, তিনি মারা গেছেন।’
ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, তারা এ অবস্থায় আশরাফুলের লাশ নিয়ে রাতে এক বাসায় থাকেন, নানা পরিকল্পনার পর বৃহস্পতিবার সকালে বাইরে থেকে ড্রাম এবং অন্য জিনিস কিনে আনেন। লাশটি ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরে ওপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেন। এরপর সিএনজিতে করে এসে হাইকোর্টের সামনে ড্রাম দুটি রেখে তারা সায়েদাবাদ চলে যান বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখান থেকে শামীমা নিজের বাড়ি লাকসামে চলে যান এবং জরেজ দাউদকান্দিতে তার পূর্ব পরিচিত একজনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন, যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
### দুই আসামি ৫ দিনের রিমান্ডে
ব্যবসায়ীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তারা হলো- আশরাফুলের বন্ধু ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ জরেজুল ইসলাম ওরফে জরেজ এবং তার ‘বন্ধু’ শমীমা আক্তার ওরফে শামীমা ওরফে কহিনুর। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিন তাদের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী এ তথ্য দিয়েছেন।
শনিবার তাদের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের এসআই মো. এনামুল হাসান। দুইজনের রিমান্ডে চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তা যে আবেদন করেছেন সেখানে বলা হয়েছে, আশরাফুলকে হত্যার কারণ আলামত নষ্ট ও লাশ গুম করতে কে বা কারা সহায়তা করেছে, হত্যকাণ্ডে কারা কীভাবে জড়িত এবং আশরাফুলের কাছ আর্থিক সুবিধা আদায়সংক্রান্ত তথ্য জানতে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। শুনানিকালে আসামিদের এজলাসে তোলা হয়। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। জরেজ ও শামীমার কিছু বলার আছে কিনা, জানতে চান বিচারক। জবাবে আসামিরা বলেন, তাদের কিছু বলার নেই। পরে আদালত তাদের প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেয়।