এক সময় গণবিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল ছায়াছবি বা সিনেমা। দেশ ব্যাপি গড়ে উঠেছিল অসংখ্য সিনেমা হল। কোথায় কবে কোন সিনেমা চলছে বা আসছে তা নিয়ে ছিল দর্শকদের ব্যাপক উৎসাহ। নতুন সিনেমা রিলিজ হলেই হলগুলোতে লেগে যেতো উপচেপড়া ভিড়। টিকেট নিয়ে কারাকারি। জনপ্রিয় হয়ে উঠে টিকেট ব্লেকিংয়ের ব্যাপারটাও। কালের বিবর্তে সেই দিন আজ বড় বেশি বিবর্ণ। সিনেমা হলমুখি হতে চান না এখন আর তেমন কেউ। দর্শক নাই তাই ব্যবসা বড়ই মন্দা। ফলে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক সিনেমা হল।
সেই ধারাবাহিকতায় বন্ধ হবার পর এবার পুরোপুরি ভেঙ্গে ফেরা হচ্ছে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী পূরবী সিনেমা হল। হলটি নগরীর চমড়াগুদাম এলাকায় স্বাধীনতার পূর্বে নির্মাণ করেছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা আব্বাস আলী তালুকদার। বিগত প্রায় একমাস হলটিতে প্রদর্শিত হয়েছিল একবুক জ্বালা চলচ্চিত্র। তবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হওয়া সুস্থ সংস্কৃতির জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষজন।
গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ভাঙা শুরু হয়েছে ময়মনসিংহের সবচেয়ে পুরোনো বড় সিনেমা হল পূরবী। ৩২ শতাংশ জায়গায় স্বাধীনতার পূর্বে দুতলা সিনেমা হলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আসন সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। ১৯৮০-১৯৯০ দশকে দর্শকপ্রিয় ছিল হলটি। ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর একই সময়ে অলকা, অজন্তা, ছায়াবাণী ও পূরবী সিনেমা হলে বোমা হামলার পর মূলত সিনেমা হলগুলো দর্শক সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে থাকে। করোনার পর থেকে সে সংখ্যাটা আরও বৃদ্ধি পায়। হল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি শোতে ৫-৭জন করে দর্শক হয়। অনেক সময় দর্শক না থাকার কারণে শো বন্ধ থাকে। দিনের পর দিন স্টাফ খরচও না ওঠায় হল ভাঙার সিদ্ধান্ত। তাই সেখানে বহুতল ভবন করে দর্শক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে পূরবী সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।
শনিবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৮-১০ জন শ্রমিক দেয়াল ভেঙে ইট, পাথর, লোহা সরানোর কাজ করছেন। শ্রমিক মুকুল মিয়া বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে হল ভাঙার কাজ শুরু করেছি। দৈনিক গড়ে ১২-১৪ শ্রমিক কাজ করছি। প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ছাঁদ এবং দেওয়াল ভাঙা হয়েছে। সম্পন্ন ভাঙতে আরও কমপক্ষে তিনমাস সময় লাগবে। শুনেছি সেখানে মালিকপক্ষ কমপ্লেক্স করবেন।
ঠিকাদার হারুন অর রশিদ বলেন, ১৫ লাখ টাকায় পূরবী সিনেমা হলের পুরাতন মালামাল ক্রয় করেছি। আমরা সেগুলো ভেঙে এখন জায়গা খালি করছি। সবমিলিয়ে আমাদের চারমাস সময় লাগবে। স্থানীয় বাসিন্দা মনু মিয়া বলেন, হলটি দেখতে দেখতে আমরা বড় হয়েছি। এক সময় সিনেমার জোয়ার ছিল। তাই মানুষ হলের আশপাশে অনেক ভিড় জমাতো। এখন ছবি না চলার কারণে মালিকপক্ষ হল ভাঙছে। এতে খারাপ লাগলেও মালিক তো আর বছরের পর বছর লোকসান গুনবে না।
পূরবী সিনেমা হলের ম্যানেজার মোখতার হোসেন বলেন, দেশের নাম করা কয়েকটি হলের একটি ছিল পূরবী। স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পূর্বে সেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন ভালো ভালো ছবি নির্মাণ হওয়ার কারণে হল ভর্তি দর্শক হতো। বিশেষ করে করোনার পর হলের দর্শক একেবারে কমে যায়। সবশেষ এক মাস আগে আমরা একবুক জ্বালা ছবিটি চালিয়ে ছিলাম। হলের নিচতলায় ৭ শ আসন, দ্বিতীয় তলায় ডি চেয়ার ছিল ৩২০টি এবং বক্স ছিল ২০টি।
তিনি আরও বলেন, হলের জায়গাটিতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে শপিং কমপ্লেক্স, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আবাসিক বাসস্থানের ব্যবস্থা, দর্শক চাহিদা বিবেচনায় পূরবী সিনেপ্লেক্স স্থাপনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে। সমাজ রুপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এক সময় একের পর এক করে তিনটি হলে ছবি দেখতাম। সে সময়টা আর কখনও আসবে না। হল বন্ধ হওয়া মানে সাংস্কৃতিকর ওপর বড় ধরণের একটি হুমকি আসা। একের পর এক হল বন্ধ হওয়ায় আমাদের ছেলে মেয়েরা ভারতীয় সংস্কৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরজন্য দায়ী মানহীন ছবি। একটি ছবির মাধ্যমে সমাজ ও দেশের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তাই দেশীয় সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫
এক সময় গণবিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল ছায়াছবি বা সিনেমা। দেশ ব্যাপি গড়ে উঠেছিল অসংখ্য সিনেমা হল। কোথায় কবে কোন সিনেমা চলছে বা আসছে তা নিয়ে ছিল দর্শকদের ব্যাপক উৎসাহ। নতুন সিনেমা রিলিজ হলেই হলগুলোতে লেগে যেতো উপচেপড়া ভিড়। টিকেট নিয়ে কারাকারি। জনপ্রিয় হয়ে উঠে টিকেট ব্লেকিংয়ের ব্যাপারটাও। কালের বিবর্তে সেই দিন আজ বড় বেশি বিবর্ণ। সিনেমা হলমুখি হতে চান না এখন আর তেমন কেউ। দর্শক নাই তাই ব্যবসা বড়ই মন্দা। ফলে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক সিনেমা হল।
সেই ধারাবাহিকতায় বন্ধ হবার পর এবার পুরোপুরি ভেঙ্গে ফেরা হচ্ছে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী পূরবী সিনেমা হল। হলটি নগরীর চমড়াগুদাম এলাকায় স্বাধীনতার পূর্বে নির্মাণ করেছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা আব্বাস আলী তালুকদার। বিগত প্রায় একমাস হলটিতে প্রদর্শিত হয়েছিল একবুক জ্বালা চলচ্চিত্র। তবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হওয়া সুস্থ সংস্কৃতির জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষজন।
গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ভাঙা শুরু হয়েছে ময়মনসিংহের সবচেয়ে পুরোনো বড় সিনেমা হল পূরবী। ৩২ শতাংশ জায়গায় স্বাধীনতার পূর্বে দুতলা সিনেমা হলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আসন সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। ১৯৮০-১৯৯০ দশকে দর্শকপ্রিয় ছিল হলটি। ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর একই সময়ে অলকা, অজন্তা, ছায়াবাণী ও পূরবী সিনেমা হলে বোমা হামলার পর মূলত সিনেমা হলগুলো দর্শক সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে থাকে। করোনার পর থেকে সে সংখ্যাটা আরও বৃদ্ধি পায়। হল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি শোতে ৫-৭জন করে দর্শক হয়। অনেক সময় দর্শক না থাকার কারণে শো বন্ধ থাকে। দিনের পর দিন স্টাফ খরচও না ওঠায় হল ভাঙার সিদ্ধান্ত। তাই সেখানে বহুতল ভবন করে দর্শক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে পূরবী সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।
শনিবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৮-১০ জন শ্রমিক দেয়াল ভেঙে ইট, পাথর, লোহা সরানোর কাজ করছেন। শ্রমিক মুকুল মিয়া বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে হল ভাঙার কাজ শুরু করেছি। দৈনিক গড়ে ১২-১৪ শ্রমিক কাজ করছি। প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ছাঁদ এবং দেওয়াল ভাঙা হয়েছে। সম্পন্ন ভাঙতে আরও কমপক্ষে তিনমাস সময় লাগবে। শুনেছি সেখানে মালিকপক্ষ কমপ্লেক্স করবেন।
ঠিকাদার হারুন অর রশিদ বলেন, ১৫ লাখ টাকায় পূরবী সিনেমা হলের পুরাতন মালামাল ক্রয় করেছি। আমরা সেগুলো ভেঙে এখন জায়গা খালি করছি। সবমিলিয়ে আমাদের চারমাস সময় লাগবে। স্থানীয় বাসিন্দা মনু মিয়া বলেন, হলটি দেখতে দেখতে আমরা বড় হয়েছি। এক সময় সিনেমার জোয়ার ছিল। তাই মানুষ হলের আশপাশে অনেক ভিড় জমাতো। এখন ছবি না চলার কারণে মালিকপক্ষ হল ভাঙছে। এতে খারাপ লাগলেও মালিক তো আর বছরের পর বছর লোকসান গুনবে না।
পূরবী সিনেমা হলের ম্যানেজার মোখতার হোসেন বলেন, দেশের নাম করা কয়েকটি হলের একটি ছিল পূরবী। স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পূর্বে সেটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন ভালো ভালো ছবি নির্মাণ হওয়ার কারণে হল ভর্তি দর্শক হতো। বিশেষ করে করোনার পর হলের দর্শক একেবারে কমে যায়। সবশেষ এক মাস আগে আমরা একবুক জ্বালা ছবিটি চালিয়ে ছিলাম। হলের নিচতলায় ৭ শ আসন, দ্বিতীয় তলায় ডি চেয়ার ছিল ৩২০টি এবং বক্স ছিল ২০টি।
তিনি আরও বলেন, হলের জায়গাটিতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে শপিং কমপ্লেক্স, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আবাসিক বাসস্থানের ব্যবস্থা, দর্শক চাহিদা বিবেচনায় পূরবী সিনেপ্লেক্স স্থাপনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে। সমাজ রুপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এক সময় একের পর এক করে তিনটি হলে ছবি দেখতাম। সে সময়টা আর কখনও আসবে না। হল বন্ধ হওয়া মানে সাংস্কৃতিকর ওপর বড় ধরণের একটি হুমকি আসা। একের পর এক হল বন্ধ হওয়ায় আমাদের ছেলে মেয়েরা ভারতীয় সংস্কৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরজন্য দায়ী মানহীন ছবি। একটি ছবির মাধ্যমে সমাজ ও দেশের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তাই দেশীয় সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।