খাবার ছিল না, ফুরিয়ে গিয়েছিল পানি, তিন রাত ঘুমাইনি। খোলা আকাশের নিচে, ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিল।
এভাবেই বর্ণনা করছিলেন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বগমোলেটস ন্যশনাল মেডিকেল ইউনিভারসিটির এমবিবিএস ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিথিলা নন্দিনী তূনা। মঙ্গলবার (১ মার্চ) সংবাদের এই প্রতিবেদককে পোল্যান্ডের ওয়ারশ থেকে মোবাইল ফোনে জানান, সেই বিভিষিকাময় দিনগুলোর কথা।
তিনি জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বগমোলেটস ন্যশনাল মেডিকেল ইউনিভারসিটিতে ক্লাস করছিলাম। আমরা কেউই বুঝতে পারিনি যুদ্ধ শুরু হতে পারে। আত্মীয়-স্বজন বলছিল তোমাদের ওখানে যুদ্ধ লেগেছে, সাবধানে থেকো। তবুও আমরা বুঝতে পারিনি। ক্লাস শেষে ইউনিভার্সিটি হোস্টেলে ফিরে আসি। স্বাভাবিকভাবে রাতে ঘুমাতেও যাই। তবে ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টার পরপরই হঠাৎ সহপাঠীদের চেচামেচিতে ঘুম ভাঙে। জানতে পারি কিয়েভে হামলা হয়েছে। তখন আমরা প্রচন্ড আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেই। তখন পোলান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা জানায়, যেভাবে হোক আমরা যেন পোলান্ড সীমান্তে পৌঁছাই। আমরা কীভাবে কিয়েভ থেকে বের হবো, তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে হোস্টেলের সহপাঠীরা মিলে একটি গাড়ি ঠিক করি। তবে কিয়েভ থেকে ইউক্রেনের লিভিভ শহরে পৌঁছলে জানানো হয় গাড়ি যাবে না। তখন আমরা হাঁটতে শুরু করি। প্রায় ২০ কি.মি হেঁটে আমরা ইউক্রেন ও পোলান্ড সীমান্তের নির্জন পাহাড়ি একটি গ্রামে পৌঁছাই। তার আগে আমাদের কাছে যে লাগেজ ছিল, তা হালকা করার জন্য অনেক জিনিস ফেলে দেই।
পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তে রয়েছে মোট ৯টি বর্ডার। যার মধ্যে মেডিকা, মানুষ পারাপারের পক্ষে সব থেকে বড়। চেক পয়েন্ট ওয়ান, চেক পয়েন্ট টু এবং পোলিশ গার্ড- এই তিনটি পথ পেরিয়ে তবেই পোল্যান্ডে ঢুকতে হয়। সেখানে একজন শিক্ষার্থী তার ইউক্রেনের পাসপোর্ট এবং স্টুডেন্ট কার্ড দেখালে স্ট্যাম্প মারা কাগজে ১৫ দিন পোল্যান্ডে থাকার অনুমোদন পান।
চেক পয়েন্ট ১ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে থেমেছে বাস। সীমান্ত পেরোতে তীব্র ঠান্ডায় সেখান থেকে হাঁটা শুরু করতে হয়, ওই দীর্ঘ পথ হেঁটে চেক পয়েন্ট ওয়ানে পৌঁছলে ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাথমিক বাছাই করেন। সেখান থেকে ছয় কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় চেক পয়েন্ট টু-তে। যেখানে অভিবাসনের অনুমতিপত্র দেয়া হয়।
পারাপারের জন্য সেখানে দুটি লাইন। একটি ইউক্রেনের অধিবাসীদের জন্য। অন্যটি বিদেশিদের জন্য। ওরা প্রথমে নিজেদের দেশের বাচ্চাসহ মহিলা, তার পরে মেয়েদের ছাড়ছিলেন। এরপর বিদেশিদের ছাড়ছিলেন। যখনই ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থীর দল হাজির হয়, তখন ধৈর্য হারাচ্ছিলেন ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীরা।
২৫ ফেব্রুয়ারি রাত হয়ে যায় তবুও ইউক্রেন সীমান্তরক্ষীরা তাদের মতো করেই সীমান্ত পার করতে থাকে। সীমান্তে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘলাইন। পাহাড়ি নির্জন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে সবাই। তখন রাত ১১টা বাজে, আমরা কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। তখন আমাদের জানানো হয় সেদিনের মতো শেষ। ২৬ তারিখ ভোর থেকে সীমান্ত পারাপার আবার শুরু হবে।
পানি ছিল না, খাবার ছিল না। অমি তখন পোলান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দূতাবাস থেকে জানায় তারা অপেক্ষা করছে। সীমান্ত পার হলেই সহযোগিতা করতে পারবে। তারা বলে রাতটুকু অপেক্ষা করতে। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে লাইনে দাঁড়াই। বিশাল লম্বা লাইন। সকাল থেকে বিকেল পার করে রাত হয়ে গেল। লম্বা লাইন শেষ হয় না। খাবার শেষ, পানি শেষ, ঘুম নেই। পা দুটি অবশ হয়ে যাচ্ছিল। অনেককেই অসুুস্থ হয়ে পড়তে দেখছিলাম। অবশেষে রাত ১১টায় আমার ডাক পড়ে। সীমান্ত চেকপোস্টে আমার কাগজপত্র চেক করে পোল্যান্ডে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়। সেখানে দেখলাম বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের গাড়িতে নিয়ে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ শহরে একটি হোটেলে নিয়ে আসে। সেখাইে আমরা অবস্থান করছি। আমরা ভালো আছি, দূতাবাস আমাদের সবসময় খোঁজ খবর রাখছে।
মঙ্গলবার, ০১ মার্চ ২০২২
খাবার ছিল না, ফুরিয়ে গিয়েছিল পানি, তিন রাত ঘুমাইনি। খোলা আকাশের নিচে, ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিল।
এভাবেই বর্ণনা করছিলেন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বগমোলেটস ন্যশনাল মেডিকেল ইউনিভারসিটির এমবিবিএস ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিথিলা নন্দিনী তূনা। মঙ্গলবার (১ মার্চ) সংবাদের এই প্রতিবেদককে পোল্যান্ডের ওয়ারশ থেকে মোবাইল ফোনে জানান, সেই বিভিষিকাময় দিনগুলোর কথা।
তিনি জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বগমোলেটস ন্যশনাল মেডিকেল ইউনিভারসিটিতে ক্লাস করছিলাম। আমরা কেউই বুঝতে পারিনি যুদ্ধ শুরু হতে পারে। আত্মীয়-স্বজন বলছিল তোমাদের ওখানে যুদ্ধ লেগেছে, সাবধানে থেকো। তবুও আমরা বুঝতে পারিনি। ক্লাস শেষে ইউনিভার্সিটি হোস্টেলে ফিরে আসি। স্বাভাবিকভাবে রাতে ঘুমাতেও যাই। তবে ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টার পরপরই হঠাৎ সহপাঠীদের চেচামেচিতে ঘুম ভাঙে। জানতে পারি কিয়েভে হামলা হয়েছে। তখন আমরা প্রচন্ড আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেই। তখন পোলান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা জানায়, যেভাবে হোক আমরা যেন পোলান্ড সীমান্তে পৌঁছাই। আমরা কীভাবে কিয়েভ থেকে বের হবো, তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে হোস্টেলের সহপাঠীরা মিলে একটি গাড়ি ঠিক করি। তবে কিয়েভ থেকে ইউক্রেনের লিভিভ শহরে পৌঁছলে জানানো হয় গাড়ি যাবে না। তখন আমরা হাঁটতে শুরু করি। প্রায় ২০ কি.মি হেঁটে আমরা ইউক্রেন ও পোলান্ড সীমান্তের নির্জন পাহাড়ি একটি গ্রামে পৌঁছাই। তার আগে আমাদের কাছে যে লাগেজ ছিল, তা হালকা করার জন্য অনেক জিনিস ফেলে দেই।
পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তে রয়েছে মোট ৯টি বর্ডার। যার মধ্যে মেডিকা, মানুষ পারাপারের পক্ষে সব থেকে বড়। চেক পয়েন্ট ওয়ান, চেক পয়েন্ট টু এবং পোলিশ গার্ড- এই তিনটি পথ পেরিয়ে তবেই পোল্যান্ডে ঢুকতে হয়। সেখানে একজন শিক্ষার্থী তার ইউক্রেনের পাসপোর্ট এবং স্টুডেন্ট কার্ড দেখালে স্ট্যাম্প মারা কাগজে ১৫ দিন পোল্যান্ডে থাকার অনুমোদন পান।
চেক পয়েন্ট ১ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে থেমেছে বাস। সীমান্ত পেরোতে তীব্র ঠান্ডায় সেখান থেকে হাঁটা শুরু করতে হয়, ওই দীর্ঘ পথ হেঁটে চেক পয়েন্ট ওয়ানে পৌঁছলে ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাথমিক বাছাই করেন। সেখান থেকে ছয় কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় চেক পয়েন্ট টু-তে। যেখানে অভিবাসনের অনুমতিপত্র দেয়া হয়।
পারাপারের জন্য সেখানে দুটি লাইন। একটি ইউক্রেনের অধিবাসীদের জন্য। অন্যটি বিদেশিদের জন্য। ওরা প্রথমে নিজেদের দেশের বাচ্চাসহ মহিলা, তার পরে মেয়েদের ছাড়ছিলেন। এরপর বিদেশিদের ছাড়ছিলেন। যখনই ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থীর দল হাজির হয়, তখন ধৈর্য হারাচ্ছিলেন ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীরা।
২৫ ফেব্রুয়ারি রাত হয়ে যায় তবুও ইউক্রেন সীমান্তরক্ষীরা তাদের মতো করেই সীমান্ত পার করতে থাকে। সীমান্তে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘলাইন। পাহাড়ি নির্জন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে সবাই। তখন রাত ১১টা বাজে, আমরা কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। তখন আমাদের জানানো হয় সেদিনের মতো শেষ। ২৬ তারিখ ভোর থেকে সীমান্ত পারাপার আবার শুরু হবে।
পানি ছিল না, খাবার ছিল না। অমি তখন পোলান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দূতাবাস থেকে জানায় তারা অপেক্ষা করছে। সীমান্ত পার হলেই সহযোগিতা করতে পারবে। তারা বলে রাতটুকু অপেক্ষা করতে। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে লাইনে দাঁড়াই। বিশাল লম্বা লাইন। সকাল থেকে বিকেল পার করে রাত হয়ে গেল। লম্বা লাইন শেষ হয় না। খাবার শেষ, পানি শেষ, ঘুম নেই। পা দুটি অবশ হয়ে যাচ্ছিল। অনেককেই অসুুস্থ হয়ে পড়তে দেখছিলাম। অবশেষে রাত ১১টায় আমার ডাক পড়ে। সীমান্ত চেকপোস্টে আমার কাগজপত্র চেক করে পোল্যান্ডে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়। সেখানে দেখলাম বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের গাড়িতে নিয়ে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ শহরে একটি হোটেলে নিয়ে আসে। সেখাইে আমরা অবস্থান করছি। আমরা ভালো আছি, দূতাবাস আমাদের সবসময় খোঁজ খবর রাখছে।