alt

প্রবাস

সুদানে লুটপাট-নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরেছেন তারা

‘সুদিনের স্বপ্ন’ ফেলে আতঙ্ক পেরিয়ে অনিশ্চিতে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ০৯ মে ২০২৩

সংঘাতপূর্ণ সুদানে আটকে পড়া ১৩৬ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন গত সোমবার। উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশিদের। অনেকটা মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছেন অনেকেই। আর বেশির ভাগই সেখানে লুটপাট-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশে ফিরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সুদান ফেরত বাংলাদেশিরা।

এদিকে, শ্রমিক হয়ে যারা গিয়েছিলেন সশস্ত্র সংঘাতের পর তাদের কেউ কেউ কোন রকমে যেন পালিয়ে বেঁচেছেন সুদান থেকে, ফিরেছেনও একেবারে খালি হাতে। নিশিকান্ত বিশ্বাস তাদেরই একজন। সংঘাতে বিশৃঙ্খল দেশটি থেকে ফিরিয়ে আনাদের প্রথম দলের সঙ্গে ফ্লাইট থেকে ঢাকায় নেমে হাঁটছিলেন খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে। গত সোমবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিশিকান্ত বললেন, ‘ওরা-ওরাই, সুদানিরাই মারামারি করতিছে। পাবলিক সামনে পালিই মারতিছে। লুটপাট, ডাকাতি করতিছে। কাইড়ে-কুইড়ে নিচ্ছে, ডাকাতি কইত্তিছে। খাওয়ার কিছু নেই। আমার স্বর্বস্ব নিয়ে গেছে। পায়ে মারছে। মোবাইলটা বাঁচাইতে চাইছিলাম। পায়ে বারি দিচ্ছিল। আমার পায়ে সমস্যা হয়ে গেছে।’

আতঙ্কের সময়গুলো পেছনে ফেলে দেশে আসতে পেরে স্বস্তি পেলেও সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে চিন্তাভাবনার কোন খেই পাচ্ছেন না তিনি। জানুয়ারিতে দালাল ধরে গেলেন সুদানে, পাঁচ মাস না যেতেই ফিরতে হলো তাকে। কপাল ফেরার বদলে তার ভাগ্যে নেমেছে ঘোর অমানিষা। তার মতো দুর্ভাগ্যের কথা শোনালেন ভাগ্য বদলাতে স্বামীর সঙ্গে আট বছর আগে সুদান পাড়ি দেয়া চট্টগ্রামের হালিশহরের সাকি আক্তার।

কোলের তিন মেয়ে আর নিজের জীবন সঙ্গে করে আরেক অনিশ্চিত জীবনে ফিরতে হওয়ায় কাতর শোনালো তার কণ্ঠও। জানালেন সঙ্গে আনতে পারেননি সেখানকার সংসারের কিছুই। সংঘাতে এলোমেলো সুদানে রয়ে গেছেন তার স্বামী মোহাম্মদ বাহাদুর। এত বলার পরও তাকে সঙ্গে আসতে রাজি করাতে পারেননি।

পোর্ট সুদানে সন্তান ও স্ত্রীকে জেদ্দাগামী উড়োজাহাজে তুলে দিয়ে বিদায় দেয়ার সময়ও বাহাদুর আশায় রয়েছেন, সেখানকার পরিস্থিতি ভালো হবে। তিনি খার্তুমে ফিরবেন তার ব্যবসার স্থলে। ভয় আর আতঙ্কে মুষড়ে যাওয়া তিন বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরার পর কান্না বিজড়িত কণ্ঠে নিজের স্বামীকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছিলেন সাকি। ‘আমার স্বামী এখনও আসে নাই। ও ওখানেই আছে। সব কিছু শেষ। আমি ওরে ফেলে আসতে চাই নাই। অনেক বলসি চলে আসো। আসলো না। আমি পারলে এক বেলা খাইলে আরেক বেলা খাব না, তবুও চলে আসো। তুমি থাকলে আমার খাওয়ার অভাব নাই।’

সশস্ত্র সংঘাত ঘেরা সুদানের রাজধানী খার্তুমে ১৫ বছর ধরে ছোট ব্যবসা করা বাহাদুরের অর্থ আর ভবিষ্যতের চিন্তার কাছে হার মেনেছে স্ত্রীর এমন আকুতি।

সাকি বলেন, ও আমার কথা শুনলো না। বলতেছে, আমি যদি এভাবে চলি যাই, আমার তো কিচ্ছু নাই, আমি সম্পূর্ণ নিঃস্ব। এই অবস্থায় চলে গেলে আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কী হবে। আমার তিনটা মেয়ে আমি কীভাবে কী করব, তাদের খরচ কই থেকে দেব। সুদানের দুই বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে খার্তুম থেকে গত ২ মে রাতে পোর্ট সুদানে পৌঁছান ৬৮২ বাংলাদেশি, সেখানে তাদেরকে একটি মাদ্রাসায় অস্থায়ীভাবে রেখে ফেরানোর কার্যক্রম চলছে।

শুরুতে পোর্ট সুদান থেকে জাহাজে করে জেদ্দায় আনার কথা ছিল এসব প্রবাসীকে। শেষ পর্যন্ত সৌদি বিমানবাহিনীর ফ্লাইটে তিন দফায় ১৩৬ জনকে অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে জেদ্দায় পাঠানো হয়। প্রথম দল হিসেবে সেখান থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে গত সোমবার সকালে তারা ঢাকায় ফেরেন। প্রথম দফায় সুদান ছাড়তে পারা প্রবাসীদের মধ্যে নারী, শিশু ও অসুস্থ যাত্রীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস।

গত ১৫ এপ্রিলে সুদানে সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন। রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নাগরিক পরিষেবা। বিমানবন্দরে সুদান প্রবাসীদের ফেরার সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সেখানকার শ্রমিক ও অন্যদের দুর্দশা ও অনিশ্চিত জীবনের কথা শুনে তিনি বলেন, ‘আপনারা এসেছেন, পরবর্তীতে সুদানের অবস্থা ভালো হলে আপনারা আবার যেতে পারবেন। এর বিকল্প হিসেবে অন্য কোন দেশে যদি যাওয়ার ব্যবস্থা হয়, তাহলে আমরা সেই ভাবে ব্যবস্থা করব।

আপনাদের পুনর্বাসনের জন্য আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আছে, আমরা একটা নীতিমালা ঠিক করে দিলে আপনারা ওখান থেকেও সাহায্য নিতে পারবেন। সশস্ত্র সংঘাতের উৎকণ্ঠার মাঝে এমন নানা অনিশ্চয়তার গল্প নিয়ে তিন সপ্তাহ ওই দেশে আটকে থাকার পর সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশিদের প্রথম দল। সেই দলের কেউ সুদানে জমানো সব অর্থ হারিয়েছেন, জামা, প্যান্ট, চাল-ডাল-আলু পর্যন্তও সংঘাতের বাজারে লুট হয়েছে, কেউ কেউ পাননি বেতন-বোনাস, ফিরেছেন শুধু লুঙ্গি আর বিছানার চাদর সঙ্গে করে। এসব প্রবাসীর মনে এখন ফেলে আসা আতঙ্ক আর সামনের অনিশ্চিত যাত্রার শঙ্কা।

স্বামীকে সুদানে রেখে আসা সাকি বলেন, ‘ও বলতেসে, ‘আমি দেশে গিয়ে আর কী করবো। আমাদের সব শেষ। আগে দেখি তোমরা যাও পরিস্থিতি ভালো হলে তো আমি আবার খার্তুমে চলে গেলাম। আর ঠিক না হলে তো আমাকে নিঃস্ব হয়েই চলে আসতে হবে।’

‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’

দালালের মাধ্যমে পাঁচ মাসের মধ্যে সুদানে গিয়ে একেবারে খালি হাতে ফেরা নিশিকান্ত জানান, জানুয়ারিতে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্নে দালালের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন জেনে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সুদানে। তবে ২৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ পান এক টাইলস কারখানায়। কপাল ফেরার বদলে তার ভাগ্যে নেমেছে ঘোর অমানিশা।

তার ভাষ্য, ‘একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। ভাঙতি মাসের আট দিনের বেতন পাইছিলাম আর কিচ্ছু পাই নাই। চাল-ডাল-আলু, যা পাইছে, সব নিয়ে গেছে। আমার সর্বস্ব নিয়ে গেছে। আমাদের ফ্যাক্টরিতে প্রতিদিন ৫০০-৬০০টি গুলি পড়তো।

যুদ্ধ বাঁধিছে পরে আর খাওয়া-দাওয়া নাই। পরে সৌদি আইসা দুডো ভাত খাইছি। আমি এখন কী যে করুম কিচ্ছু জানি না। লক্ষ্মীপুরের মান্দারির সবুজও সুদান গিয়েছিলেন সুদিনের স্বপ্নে। তবে ফিরেছেন দুঃস্বপ্নকে সঙ্গী করে। পরনের প্যান্ট গেঞ্জির সঙ্গে ব্যাগে করে আনতে পেরেছেন শুধু পুরনো একটি লুঙ্গি আর বিছানার চাদর।

সবুজ বলেন, ‘আমরা রওনা দিছি রোববার রাত নয়টার দিকে। দুইটার দিকে জেদ্দায় আসছি। সেখান থেকে আমাকে একটা মাদ্রাসায় আনলো। এরপরে দেশে আনছে। আমি কিচ্ছু নিয়া আসতে পারি নাই। ‘আমি যে এখন বাড়ি যাব সেই গাড়ি ভাড়াটাও আমার কাছে নাই। আমাদের দুই মাসের বেতন, বোনাস কিছু পাই নাই। কোম্পানি বলে তোরা থাক। ওরা মনে করতাছে, আমরা থাকলে তার কোম্পানি পাহাড়ায় থাকল।’

‘আতঙ্কে-নির্যাতনে কেটেছে দিন’

চার মাসের এক শিশুকে কোলে নিয়ে সুদান থেকে ফিরেছেন সাহারা বেগম। আতঙ্কের ঘোর কাটছিল না তার। তিনি বলেন, ‘এই বাচ্চা নিয়ে প্রচন্ড গোলাগুলির মধ্যে ছিলাম। নানা দিক থেকে এসে গুলি পড়তো। ভয়ানক আওয়াজ, পরিস্থিতি ওখানে খুবই খারাপ।’

পানি-বিদ্যুৎ-খাবার কোন কিছু ছাড়া গোলাগুলি আর বোমা বিস্ফোরণের মাঝে কী আতঙ্কে দিনগুলো কাটিয়েছেন তা বর্ণনা করলেন সাকি আক্তার। বললেন, ‘অনেক খারাপ অবস্থা, অনেক গোলাগুলির ভেতরে ছিলাম। আমাদের নাওয়া ছিল না, খাওয়া ছিল না। ঘরের ভেতরে পানি বিদ্যুৎ-কিছুই ছিল না। অনেক কষ্টে ছিলাম আমরা ওখানে। বাচ্চাদের নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়েছে। খুবই আতঙ্কে ছিলাম ঘুমাইলেই বুমের শব্দ, গুলির শব্দ। বোমা যে মারে, তাতে আমার বাসা পুরা আলোকিত হয়ে যায়। এর মাঝেই প্রাণ হারানোর শঙ্কা নিয়ে দেশে ফিরতে খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানে যাত্রা করেন তারা। সেই যাত্রাও ছিল শ্বাপদসঙ্কুল।

সাকি আক্তার বলেন, ‘এরপরে আমাদের টাইম দিল শারিয়া আল সিত্তিন (খার্তুমের বাসছাড়ার স্থান) যাওয়ার জন্য। আমাদের এই বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে রাত সাড়ে তিনটা চারটার সময় বের হতে হতো। কিন্তু এমন পরিস্থিতি যে রাতে বের হওয়া যেত না। এরপরে একটা হোটেলে যেতে বলল। সেখানে অনেকটা সময় আটকে ছিলাম। আমাদের গেটের সামনে অনেক গোলাগুলি। আমরা আবার ভয় পেয়ে গেছি, কোন খাবার নাই, শুধু পানি, বাচ্চাদের খাওয়ার কিছু নেই। এখানে যদি আটকে যাই।’

নিশিকান্তের মতো মারধর আর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের সবুজও। তিনি বলেন, ‘ওইখানের অবস্থা ভাই কী বলবো, ভয়াবহ। আমরা একটা ঘরে ৬০ জন ছিলাম। আমাদের সবকিছু ওরা নিয়ে গেছে। মারধর করছে। আমার পিঠে লাঠি দিয়া মারছে। এই দেখেন, দেখেন। আমাদের বেডশিট পর্যন্ত নিয়ে গেছে।’

আবদুল কাশেম নামে সুদান ফেরত আরেক প্রবাসী বলেন, ‘এক রুমে কোন খাবার দাবার ছাড়া তিন দিন বন্দী ছিলাম। খুবই ভয়ঙ্কর। দুই বাহিনীই সেখানে শক্তিশালী। প্রশাসনিক বাহিনী গেলে পরে আবার আসে সন্ত্রাসবাহিনী। ওরা আইসা সব লুট কইরা নিয়া যায়। আমি কিচ্ছু আনতে পারি নাই। একটা টাকাও না। মোবাইলটাও না। এক কাপড়ে দেশে আসছি।

‘আমাদের এখন কী হবে?’

সুদান থেকে প্রথম দফায় যে ১৩৬ জন বাংলাদেশি ফিরেছেন তাদের কেউ কেউ সুদানে বিভিন্ন কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করতেন কেউবা করতেন ছোট ব্যবসা। দেশ থেকে পুঁজি জড়ো করে তারা সুদান গিয়েছিলেন নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে। তবে এই সংঘাত পরিস্থিতিতে পড়ে তারা এখন শঙ্কায় পড়েছেন ভবিষ্যৎ নিয়ে।

নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরা নিশিকান্ত বলেন, ‘আমাদের এখন কী হবে? আমি যে এখন কী করবো তা তো জানি না, ওইখানে যুদ্ধ যে চলতেছে কোন থামাথামি নাই। আমি তো সব টাকা দিয়ে ওই দেশে গেছি। এখন তো আমার কিছু নাই। সামনের দিন কীভাবে কাটবে জানি না।’

লক্ষ্মীপুরের সবুজ বলেন, ‘আমরা তো তাও দেশে ফিরছি। ওইখানে এখনও অনেক বাঙালি ভাই আটকা। তাদের কী হবে। আপনারা তাদের নিয়া আসেন। ওইখানে গিয়ে তো সব হারাইছি, কিছুই নিয়ে আসতে পারি না, আমাদের কী হবে তা জানি না।’ চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সুদানফেরত এসব প্রবাসীদের ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর সময় প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড তাদের প্রত্যেকের হাতে তিন হাজার টাকা তুলে দেয়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওম) থেকে দেয়া হয় দুই হাজার টাকা ও খাদ্য সহায়তা।

ছবি

ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার আদায়ে মুসলিম বিশ্বকে এক হওয়ার আহবান বিএসপি চেয়ারম্যানের

ছবি

প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান

ছবি

মালয়েশিয়ায় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর ইসলাম জয়ের মৃত্যু

ছবি

কলকাতায় উপ-হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত

ছবি

নিউইয়র্কের সড়কে বাংলাদেশি দম্পতির মৃত্যু, আশঙ্কাজনক মেয়ে

ছবি

২১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল ফ্রান্স, কমিউনিটিতে ক্ষোভ

ছবি

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ আটক ৫৬০

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে এক বাংলাদেশি নিহত

ছবি

জাতিসংঘের তিন সংস্থার বোর্ড সভাপতি হলেন বাংলাদেশের মুহিত

ওমরাহ করতে যাওয়ার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় মা-মেয়ের মৃত্যু

ছবি

মালয়েশিয়ায় ২৫২ জন বাংলাদেশিসহ ৫৬৭ অভিবাসী আটক

ছবি

দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি

ছবি

আমিরাতে সড়কে প্রাণ ঝরলো বাংলাদেশি তরুণের

ছবি

ইতালিতে ২ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ

দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ছবি

৩৬ হাজার অভিবাসীকে ফেরত পাঠালো মালয়েশিয়া

ছবি

৯৬৮ অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে লিবিয়া

ছবি

মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন ভবন ধসে ৩ বাংলাদেশি নিহত

ছবি

আয়ারল্যান্ডে প্রথম বারের মতো বাংলা সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

ইতালিতে অ্যাসাইলাম আবেদনে নতুন আইন

ছবি

ইতালিতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি যুবক নিহত

ছবি

লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় ৬ বাংলাদেশির মৃত্যু

ছবি

জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে নারিতার রানওয়েতে বিমানকে অভ্যর্থনা

ছবি

নিউইয়র্কের শুদ্ধভাবে বাংলা লেখার দাবীতে তিনদিনব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচী

ছবি

যুক্তরাজ্য শেফিল্ড আওয়ামী লীগের শোক দিবস পালন

ছবি

পাকিস্তানে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালিত

ছবি

ইতালিতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু, আহত ৫

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে ফের বাংলাদেশি নিহত

ছবি

বাংলাদেশের আম্রপালির স্বাদে মোহিত স্পেন

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউকের নতুন কমিটি গঠন

ছবি

বাংলাদেশি বন্ধুকে খুন, ৮ বছর পালিয়ে থাকার পর বিচারের মুখে যুবক

ছবি

মালয়েশিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আরও এক বাংলাদেশির মৃত্যু

এবার নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ সন্ত্রাসী হামলার শিকার

ছবি

নিউইয়র্কে দু’দিনব্যাপী ‘উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব’

দেশে ফিরিয়ে না আনলে আত্মহত্যার হুমকি

ছবি

মালয়েশিয়ায় মেশিনে আটকে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু

tab

প্রবাস

সুদানে লুটপাট-নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরেছেন তারা

‘সুদিনের স্বপ্ন’ ফেলে আতঙ্ক পেরিয়ে অনিশ্চিতে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০৯ মে ২০২৩

সংঘাতপূর্ণ সুদানে আটকে পড়া ১৩৬ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন গত সোমবার। উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশিদের। অনেকটা মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছেন অনেকেই। আর বেশির ভাগই সেখানে লুটপাট-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশে ফিরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সুদান ফেরত বাংলাদেশিরা।

এদিকে, শ্রমিক হয়ে যারা গিয়েছিলেন সশস্ত্র সংঘাতের পর তাদের কেউ কেউ কোন রকমে যেন পালিয়ে বেঁচেছেন সুদান থেকে, ফিরেছেনও একেবারে খালি হাতে। নিশিকান্ত বিশ্বাস তাদেরই একজন। সংঘাতে বিশৃঙ্খল দেশটি থেকে ফিরিয়ে আনাদের প্রথম দলের সঙ্গে ফ্লাইট থেকে ঢাকায় নেমে হাঁটছিলেন খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে। গত সোমবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিশিকান্ত বললেন, ‘ওরা-ওরাই, সুদানিরাই মারামারি করতিছে। পাবলিক সামনে পালিই মারতিছে। লুটপাট, ডাকাতি করতিছে। কাইড়ে-কুইড়ে নিচ্ছে, ডাকাতি কইত্তিছে। খাওয়ার কিছু নেই। আমার স্বর্বস্ব নিয়ে গেছে। পায়ে মারছে। মোবাইলটা বাঁচাইতে চাইছিলাম। পায়ে বারি দিচ্ছিল। আমার পায়ে সমস্যা হয়ে গেছে।’

আতঙ্কের সময়গুলো পেছনে ফেলে দেশে আসতে পেরে স্বস্তি পেলেও সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে চিন্তাভাবনার কোন খেই পাচ্ছেন না তিনি। জানুয়ারিতে দালাল ধরে গেলেন সুদানে, পাঁচ মাস না যেতেই ফিরতে হলো তাকে। কপাল ফেরার বদলে তার ভাগ্যে নেমেছে ঘোর অমানিষা। তার মতো দুর্ভাগ্যের কথা শোনালেন ভাগ্য বদলাতে স্বামীর সঙ্গে আট বছর আগে সুদান পাড়ি দেয়া চট্টগ্রামের হালিশহরের সাকি আক্তার।

কোলের তিন মেয়ে আর নিজের জীবন সঙ্গে করে আরেক অনিশ্চিত জীবনে ফিরতে হওয়ায় কাতর শোনালো তার কণ্ঠও। জানালেন সঙ্গে আনতে পারেননি সেখানকার সংসারের কিছুই। সংঘাতে এলোমেলো সুদানে রয়ে গেছেন তার স্বামী মোহাম্মদ বাহাদুর। এত বলার পরও তাকে সঙ্গে আসতে রাজি করাতে পারেননি।

পোর্ট সুদানে সন্তান ও স্ত্রীকে জেদ্দাগামী উড়োজাহাজে তুলে দিয়ে বিদায় দেয়ার সময়ও বাহাদুর আশায় রয়েছেন, সেখানকার পরিস্থিতি ভালো হবে। তিনি খার্তুমে ফিরবেন তার ব্যবসার স্থলে। ভয় আর আতঙ্কে মুষড়ে যাওয়া তিন বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরার পর কান্না বিজড়িত কণ্ঠে নিজের স্বামীকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছিলেন সাকি। ‘আমার স্বামী এখনও আসে নাই। ও ওখানেই আছে। সব কিছু শেষ। আমি ওরে ফেলে আসতে চাই নাই। অনেক বলসি চলে আসো। আসলো না। আমি পারলে এক বেলা খাইলে আরেক বেলা খাব না, তবুও চলে আসো। তুমি থাকলে আমার খাওয়ার অভাব নাই।’

সশস্ত্র সংঘাত ঘেরা সুদানের রাজধানী খার্তুমে ১৫ বছর ধরে ছোট ব্যবসা করা বাহাদুরের অর্থ আর ভবিষ্যতের চিন্তার কাছে হার মেনেছে স্ত্রীর এমন আকুতি।

সাকি বলেন, ও আমার কথা শুনলো না। বলতেছে, আমি যদি এভাবে চলি যাই, আমার তো কিচ্ছু নাই, আমি সম্পূর্ণ নিঃস্ব। এই অবস্থায় চলে গেলে আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কী হবে। আমার তিনটা মেয়ে আমি কীভাবে কী করব, তাদের খরচ কই থেকে দেব। সুদানের দুই বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে খার্তুম থেকে গত ২ মে রাতে পোর্ট সুদানে পৌঁছান ৬৮২ বাংলাদেশি, সেখানে তাদেরকে একটি মাদ্রাসায় অস্থায়ীভাবে রেখে ফেরানোর কার্যক্রম চলছে।

শুরুতে পোর্ট সুদান থেকে জাহাজে করে জেদ্দায় আনার কথা ছিল এসব প্রবাসীকে। শেষ পর্যন্ত সৌদি বিমানবাহিনীর ফ্লাইটে তিন দফায় ১৩৬ জনকে অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে জেদ্দায় পাঠানো হয়। প্রথম দল হিসেবে সেখান থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে গত সোমবার সকালে তারা ঢাকায় ফেরেন। প্রথম দফায় সুদান ছাড়তে পারা প্রবাসীদের মধ্যে নারী, শিশু ও অসুস্থ যাত্রীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস।

গত ১৫ এপ্রিলে সুদানে সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন। রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নাগরিক পরিষেবা। বিমানবন্দরে সুদান প্রবাসীদের ফেরার সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সেখানকার শ্রমিক ও অন্যদের দুর্দশা ও অনিশ্চিত জীবনের কথা শুনে তিনি বলেন, ‘আপনারা এসেছেন, পরবর্তীতে সুদানের অবস্থা ভালো হলে আপনারা আবার যেতে পারবেন। এর বিকল্প হিসেবে অন্য কোন দেশে যদি যাওয়ার ব্যবস্থা হয়, তাহলে আমরা সেই ভাবে ব্যবস্থা করব।

আপনাদের পুনর্বাসনের জন্য আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আছে, আমরা একটা নীতিমালা ঠিক করে দিলে আপনারা ওখান থেকেও সাহায্য নিতে পারবেন। সশস্ত্র সংঘাতের উৎকণ্ঠার মাঝে এমন নানা অনিশ্চয়তার গল্প নিয়ে তিন সপ্তাহ ওই দেশে আটকে থাকার পর সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশিদের প্রথম দল। সেই দলের কেউ সুদানে জমানো সব অর্থ হারিয়েছেন, জামা, প্যান্ট, চাল-ডাল-আলু পর্যন্তও সংঘাতের বাজারে লুট হয়েছে, কেউ কেউ পাননি বেতন-বোনাস, ফিরেছেন শুধু লুঙ্গি আর বিছানার চাদর সঙ্গে করে। এসব প্রবাসীর মনে এখন ফেলে আসা আতঙ্ক আর সামনের অনিশ্চিত যাত্রার শঙ্কা।

স্বামীকে সুদানে রেখে আসা সাকি বলেন, ‘ও বলতেসে, ‘আমি দেশে গিয়ে আর কী করবো। আমাদের সব শেষ। আগে দেখি তোমরা যাও পরিস্থিতি ভালো হলে তো আমি আবার খার্তুমে চলে গেলাম। আর ঠিক না হলে তো আমাকে নিঃস্ব হয়েই চলে আসতে হবে।’

‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’

দালালের মাধ্যমে পাঁচ মাসের মধ্যে সুদানে গিয়ে একেবারে খালি হাতে ফেরা নিশিকান্ত জানান, জানুয়ারিতে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্নে দালালের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন জেনে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সুদানে। তবে ২৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ পান এক টাইলস কারখানায়। কপাল ফেরার বদলে তার ভাগ্যে নেমেছে ঘোর অমানিশা।

তার ভাষ্য, ‘একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। ভাঙতি মাসের আট দিনের বেতন পাইছিলাম আর কিচ্ছু পাই নাই। চাল-ডাল-আলু, যা পাইছে, সব নিয়ে গেছে। আমার সর্বস্ব নিয়ে গেছে। আমাদের ফ্যাক্টরিতে প্রতিদিন ৫০০-৬০০টি গুলি পড়তো।

যুদ্ধ বাঁধিছে পরে আর খাওয়া-দাওয়া নাই। পরে সৌদি আইসা দুডো ভাত খাইছি। আমি এখন কী যে করুম কিচ্ছু জানি না। লক্ষ্মীপুরের মান্দারির সবুজও সুদান গিয়েছিলেন সুদিনের স্বপ্নে। তবে ফিরেছেন দুঃস্বপ্নকে সঙ্গী করে। পরনের প্যান্ট গেঞ্জির সঙ্গে ব্যাগে করে আনতে পেরেছেন শুধু পুরনো একটি লুঙ্গি আর বিছানার চাদর।

সবুজ বলেন, ‘আমরা রওনা দিছি রোববার রাত নয়টার দিকে। দুইটার দিকে জেদ্দায় আসছি। সেখান থেকে আমাকে একটা মাদ্রাসায় আনলো। এরপরে দেশে আনছে। আমি কিচ্ছু নিয়া আসতে পারি নাই। ‘আমি যে এখন বাড়ি যাব সেই গাড়ি ভাড়াটাও আমার কাছে নাই। আমাদের দুই মাসের বেতন, বোনাস কিছু পাই নাই। কোম্পানি বলে তোরা থাক। ওরা মনে করতাছে, আমরা থাকলে তার কোম্পানি পাহাড়ায় থাকল।’

‘আতঙ্কে-নির্যাতনে কেটেছে দিন’

চার মাসের এক শিশুকে কোলে নিয়ে সুদান থেকে ফিরেছেন সাহারা বেগম। আতঙ্কের ঘোর কাটছিল না তার। তিনি বলেন, ‘এই বাচ্চা নিয়ে প্রচন্ড গোলাগুলির মধ্যে ছিলাম। নানা দিক থেকে এসে গুলি পড়তো। ভয়ানক আওয়াজ, পরিস্থিতি ওখানে খুবই খারাপ।’

পানি-বিদ্যুৎ-খাবার কোন কিছু ছাড়া গোলাগুলি আর বোমা বিস্ফোরণের মাঝে কী আতঙ্কে দিনগুলো কাটিয়েছেন তা বর্ণনা করলেন সাকি আক্তার। বললেন, ‘অনেক খারাপ অবস্থা, অনেক গোলাগুলির ভেতরে ছিলাম। আমাদের নাওয়া ছিল না, খাওয়া ছিল না। ঘরের ভেতরে পানি বিদ্যুৎ-কিছুই ছিল না। অনেক কষ্টে ছিলাম আমরা ওখানে। বাচ্চাদের নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়েছে। খুবই আতঙ্কে ছিলাম ঘুমাইলেই বুমের শব্দ, গুলির শব্দ। বোমা যে মারে, তাতে আমার বাসা পুরা আলোকিত হয়ে যায়। এর মাঝেই প্রাণ হারানোর শঙ্কা নিয়ে দেশে ফিরতে খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানে যাত্রা করেন তারা। সেই যাত্রাও ছিল শ্বাপদসঙ্কুল।

সাকি আক্তার বলেন, ‘এরপরে আমাদের টাইম দিল শারিয়া আল সিত্তিন (খার্তুমের বাসছাড়ার স্থান) যাওয়ার জন্য। আমাদের এই বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে রাত সাড়ে তিনটা চারটার সময় বের হতে হতো। কিন্তু এমন পরিস্থিতি যে রাতে বের হওয়া যেত না। এরপরে একটা হোটেলে যেতে বলল। সেখানে অনেকটা সময় আটকে ছিলাম। আমাদের গেটের সামনে অনেক গোলাগুলি। আমরা আবার ভয় পেয়ে গেছি, কোন খাবার নাই, শুধু পানি, বাচ্চাদের খাওয়ার কিছু নেই। এখানে যদি আটকে যাই।’

নিশিকান্তের মতো মারধর আর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের সবুজও। তিনি বলেন, ‘ওইখানের অবস্থা ভাই কী বলবো, ভয়াবহ। আমরা একটা ঘরে ৬০ জন ছিলাম। আমাদের সবকিছু ওরা নিয়ে গেছে। মারধর করছে। আমার পিঠে লাঠি দিয়া মারছে। এই দেখেন, দেখেন। আমাদের বেডশিট পর্যন্ত নিয়ে গেছে।’

আবদুল কাশেম নামে সুদান ফেরত আরেক প্রবাসী বলেন, ‘এক রুমে কোন খাবার দাবার ছাড়া তিন দিন বন্দী ছিলাম। খুবই ভয়ঙ্কর। দুই বাহিনীই সেখানে শক্তিশালী। প্রশাসনিক বাহিনী গেলে পরে আবার আসে সন্ত্রাসবাহিনী। ওরা আইসা সব লুট কইরা নিয়া যায়। আমি কিচ্ছু আনতে পারি নাই। একটা টাকাও না। মোবাইলটাও না। এক কাপড়ে দেশে আসছি।

‘আমাদের এখন কী হবে?’

সুদান থেকে প্রথম দফায় যে ১৩৬ জন বাংলাদেশি ফিরেছেন তাদের কেউ কেউ সুদানে বিভিন্ন কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করতেন কেউবা করতেন ছোট ব্যবসা। দেশ থেকে পুঁজি জড়ো করে তারা সুদান গিয়েছিলেন নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে। তবে এই সংঘাত পরিস্থিতিতে পড়ে তারা এখন শঙ্কায় পড়েছেন ভবিষ্যৎ নিয়ে।

নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরা নিশিকান্ত বলেন, ‘আমাদের এখন কী হবে? আমি যে এখন কী করবো তা তো জানি না, ওইখানে যুদ্ধ যে চলতেছে কোন থামাথামি নাই। আমি তো সব টাকা দিয়ে ওই দেশে গেছি। এখন তো আমার কিছু নাই। সামনের দিন কীভাবে কাটবে জানি না।’

লক্ষ্মীপুরের সবুজ বলেন, ‘আমরা তো তাও দেশে ফিরছি। ওইখানে এখনও অনেক বাঙালি ভাই আটকা। তাদের কী হবে। আপনারা তাদের নিয়া আসেন। ওইখানে গিয়ে তো সব হারাইছি, কিছুই নিয়ে আসতে পারি না, আমাদের কী হবে তা জানি না।’ চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সুদানফেরত এসব প্রবাসীদের ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর সময় প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড তাদের প্রত্যেকের হাতে তিন হাজার টাকা তুলে দেয়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওম) থেকে দেয়া হয় দুই হাজার টাকা ও খাদ্য সহায়তা।

back to top