alt

আন্তর্জাতিক

পেঁয়াজের দাম নিয়ে মন্তব্য করে ক্ষমতা হারালেন প্রেসিডেন্ট!

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়েছে উদারপন্থি বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি (ডিপি)। ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) কে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার ৯৯ শতাংশেরও বেশি ভোট গণনায় দেখা গেছে, নতুন জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৭৫ টিই পাচ্ছে ডিপি। আর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োলের দল পিপিপি পাচ্ছে ১০৮ টি আসন।

ওদিকে, ডিপি’র সঙ্গে ছোট ছোট আরও কয়েকটি বিরোধী দল জোট বেঁধে কাজ করলে পার্লামেন্টে ১৯০ বা তারও বেশি আসন দখলে থাকবে দলটির।

প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের জন্য এ এক বড় ধাক্কা। নির্বাচনে তার দলের এমন শোচনীয় পরাজয় ইয়ুনের প্রেসিডেন্সির শেষ তিনবছর মেয়াদ পাড়ি দেওয়া কঠিন করে তুলবে।

কী কারণে ইয়ুন ভোটে এমন ধাক্কা খেলেন তা বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

কিছু বিশ্লেষক এবারের নির্বাচনকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের জন্য গণভোট হিসেবে দেখছেন; যার জনপ্রিয়তা সম্প্রতি জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধি সংকট এবং কয়েকদফা রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে তলানিতে ঠেকেছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন রান্নার খরচ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সে সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকার কারণে ইয়ুন উপহাসের পাত্র হয়েছেন। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম সম্পর্কে তার এক মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় হয়েছে। বিরোধীদলও নির্বাচনী প্রচারে তাকে নিয়ে উপহাস করেছে।

ফলে পেঁয়াজের দাম নিয়ে ইয়ুনের সেই মন্তব্যই নির্বাচনে তার জন্য কাল হল কিনা সেটি একটি প্রশ্ন। ভোটারদের ওপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব নিয়ে ইয়ুনের মাথাব্যথা নেই, এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরেই সমালোচনার মুখে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে,কোরিয়ার অভিজাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে একেকটি আপেলের দাম উঠেছিল সাত ডলার পর্যন্ত। যদিও দেশটিতে ফলের দাম এত বেশি না হলেও যথেষ্ট ব্যয়বহুলই থাকে।

কিন্তু ভোটাররা যারা নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্র ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেটি সীমা ছাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভোটারদের উদ্বেগ দূর করতে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন একটি খাদ্যপণ্যের বাজার পরিদর্শনে যান।

সেখানে স্প্রিং ওনিয়ন (বসন্তকালীন পেঁয়াজ)-এর ‘সুলভ মূল্য’ (রিজনেবল প্রাইস) দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। আসলে পেঁয়াজে অনেক বেশি ভর্তুকি দিয়ে সেটি সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছিল। ভর্তুকি’র কারণে ওই ছাড় দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল। নইলে দাম ধরা-ছোঁয়ার বাইরে হত।

ফলে পেঁয়াজের দাম সুলভ বলে ইয়ুন যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে অনলাইনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। বিরোধীদল ডিপি পার্টিও তখন নির্বাচনী সমাবেশে পেঁয়াজকে ইস্যু করে।

তখনই এক বিরোধীদলীয় নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, “স্প্রিং ওনিয়নই নির্বাচনে প্রেসিডেন্টকে ধরাশায়ী করবে।"

তবে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের দল হেরে যাওয়ার পেছনে দ্রব্যমূল্য একটি কারণ মাত্র। তালিকাটা আরও দীর্ঘ।

ইয়ুন নাগরিকদের কাছে সবসময়ই অজনপ্রিয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে কম, ০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গত মাসে তার প্রতি জনসমর্থনের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখা গেছে।

জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে এতে অংশ নেওয়া অর্ধেক মানুষই বলেছেন, ইয়ুন এ পর্যন্ত ‘খুবই বাজে’ কাজ করেছেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. লি সানসিন বিবিসি-কে বলেন, “অনেকগুলো ঘটনায় ইয়ুনের অবস্থান এমন নাজুক হয়েছে।” প্রথমটি হচ্ছে, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ঘাটতি, যার কারণে তিনি আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পরই মার্কিন আইনপ্রণেতাদের নিয়ে ইয়ুন সুক-ইওলের কটুকথা মাইকে শোনা গিয়েছিল। এ ঘটনা কোরিয়ানদের বিব্রত করেছে, যারা মনে করেন বহির্বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন।

এরপর আছেন ইয়ুনের স্ত্রী,ফার্স্ট লেডি কিম কিওন হি। অধ্যাপক লির মতে, “ যাকে মানুষ প্রেসিডেন্টের চেয়েও বেশি অপছন্দ করে।”

কিওন হি এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামূলক প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তি এবং স্টক মার্কেটে কারচুপি করার অভিযোগ আছে। গত বছর তার বিরুদ্ধে একটি দামী ডিওর হাতব্যাগ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

প্রাথমিকভাবে ফার্স্ট লেডি হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও, কিওন হি কে পরে আর তার স্বামীর সঙ্গে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

ইয়ুনের আগ্রাসী রাজনৈতিক ধারার কারণে তিনি ভোটারদের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ইয়ুন ছিলেন এক কৌঁসুলি। তার কোনও পূর্ব রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি কখনও কখনও একজন রাজনীতিবিদের তুলনায় বরং অনেকটা কৌসুলির মতো কাজ করেন- এমনটিই বলা হয়ে থাকে।

কোরিয়া ইন্সটিটিউশন ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের অধ্যাপক লি বলেন, “ইয়ুন একগুঁয়ে আচরণ করেন। তিনি কারও কথাও শোনেন না আপোসও করেন না। প্রায় কর্তৃত্ববাদী এক শাসনধারাই তিনি গড়ে তুলেছেন।”

মোট কথা, প্রেসিডেন্ট ইয়ুন তার অনুগত কনজারভেটিভদের সমর্থন পেলেও ভোটারদের মন জয় করতে পারেননি। এর পরিণতিতে তার দল পার্লামেন্টের দখল করায়ত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে এখন যা হবে তা হচ্ছে, ইয়ুনের জন্য পার্লামেন্টে কোনও আইন পাস করা কিংবা জরুরি কোনও বিষয় ঠিক করা কঠিন হয়ে পড়বে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া মানুষ বাড়তে থাকাসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সংকটে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। সব মিলিয়ে চাপে আছেন ইয়ুন। এইসব বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন তার জন্য কঠিন হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় বুধবারের নির্বাচনের আগেও পার্লামেন্ট বিরোধীদের দখলেই ছিল। আর এখন নির্বাচনে বিরোধীদলের বিপুল জয়ের পর দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক ইতিহাসে ইয়ুনই হবেন একমাত্র প্রেসিডেন্ট যাকে পূর্ণ মেয়াদেই বিরোধীদলের-নেতৃত্বাধীন জাতীয় পরিষদকে মোকাবেলা করে চলতে হবে।

ইয়ুনের কর্তৃত্ব এখন মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ল এবং বিশ্লেষকদের মতে, তিনি ‘খোঁড়া হাস’ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়লেন।

ছবি

পাকিস্তানে চীনা প্রকৌশলীদের হত্যা : হামলার কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ৪

ছবি

ফিলিস্তিনের জন্য বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

দেশের পথে এমভি আবদুল্লাহ

ছবি

কলোম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ৯ সেনা নিহত

ছবি

পাহাড়ি রাস্তা থেকে ৬৫০ ফুট খাদে পড়ল বাস, নিহত ২৫

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৪

ছবি

নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি হত্যায় সন্দেহভাজন যুবক গ্রেপ্তার

ছবি

ইলন মাস্কের প্রেমে পাগল তরুণী খোয়ালেন অর্ধকোটি টাকা!

ছবি

ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৯০০

ছবি

রাফাহতে ইসরায়েলি বিমান হামলা, ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত

ছবি

রুশ হামলা আমাদের পেছনে ঠেলে দিচ্ছে : ইউক্রেনের সেনাপ্রধান

ছবি

যেসব দাবিতে বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে

ছবি

পদত্যাগ করতে পারেন ইসরায়েলি সেনাপ্রধান

ছবি

দুই জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলোতে ২ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা

ছবি

চীনে গুয়াংজৌতে টনের্ডোয় নিহত ৫, আহত ৩৩

ছবি

পশ্চিমবঙ্গের এক এলাকার তাপমাত্রা উঠল ৪৫.৮ ডিগ্রিতে

ছবি

আমিরাতের প্রথম মহিলা কৃষক মরুভূমিতে ফলের চাষ

ছবি

ইরাকি জনপ্রিয় টিকটক তারকাকে বাগদাদে গুলি করে হত্যা

ছবি

একদিনেই দফায় দফায় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো তাইওয়ান

ছবি

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ নিহত ১৫

ছবি

যে কারণে ইউক্রেনের রেল ব্যবস্থায় হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া

ছবি

ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ২য় দফার ভোটগ্রহণ চলছে, রাহুলের পরীক্ষা আজ

ছবি

ভারী বৃষ্টিপাতের পর তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫

উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া অস্ত্র হস্তান্তরের সাথে চীনের জাহাজ নোঙর করে রাখা

ছবি

পশ্চিমবঙ্গের ২০ জায়গায় তাপমাত্রা ছাড়াল ৪০ ডিগ্রি

ছবি

স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, দায়িত্বপালন বন্ধ করলেন সানচেজ

ছবি

মায়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি

ছবি

ইউক্রেনকে আরও ৬২ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা ব্রিটেনের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে কে প্রশ্ন বাইডেনের

ছবি

ফের হামলা হলে ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে : ইরান

ছবি

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল জ্যামাইকা

ছবি

বন্যার পর এবার আরব আমিরাতে ঘন কুয়াশার প্রকোপ

ছবি

গাজায় গণকবরে শত শত লাশ, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকারপ্রধান

ছবি

জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া

ছবি

মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেইন, ইসরায়েল সহায়তা বিল পাস

tab

আন্তর্জাতিক

পেঁয়াজের দাম নিয়ে মন্তব্য করে ক্ষমতা হারালেন প্রেসিডেন্ট!

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়েছে উদারপন্থি বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি (ডিপি)। ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) কে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার ৯৯ শতাংশেরও বেশি ভোট গণনায় দেখা গেছে, নতুন জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৭৫ টিই পাচ্ছে ডিপি। আর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োলের দল পিপিপি পাচ্ছে ১০৮ টি আসন।

ওদিকে, ডিপি’র সঙ্গে ছোট ছোট আরও কয়েকটি বিরোধী দল জোট বেঁধে কাজ করলে পার্লামেন্টে ১৯০ বা তারও বেশি আসন দখলে থাকবে দলটির।

প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের জন্য এ এক বড় ধাক্কা। নির্বাচনে তার দলের এমন শোচনীয় পরাজয় ইয়ুনের প্রেসিডেন্সির শেষ তিনবছর মেয়াদ পাড়ি দেওয়া কঠিন করে তুলবে।

কী কারণে ইয়ুন ভোটে এমন ধাক্কা খেলেন তা বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

কিছু বিশ্লেষক এবারের নির্বাচনকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের জন্য গণভোট হিসেবে দেখছেন; যার জনপ্রিয়তা সম্প্রতি জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধি সংকট এবং কয়েকদফা রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে তলানিতে ঠেকেছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন রান্নার খরচ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সে সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকার কারণে ইয়ুন উপহাসের পাত্র হয়েছেন। বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম সম্পর্কে তার এক মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় হয়েছে। বিরোধীদলও নির্বাচনী প্রচারে তাকে নিয়ে উপহাস করেছে।

ফলে পেঁয়াজের দাম নিয়ে ইয়ুনের সেই মন্তব্যই নির্বাচনে তার জন্য কাল হল কিনা সেটি একটি প্রশ্ন। ভোটারদের ওপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব নিয়ে ইয়ুনের মাথাব্যথা নেই, এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরেই সমালোচনার মুখে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে,কোরিয়ার অভিজাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে একেকটি আপেলের দাম উঠেছিল সাত ডলার পর্যন্ত। যদিও দেশটিতে ফলের দাম এত বেশি না হলেও যথেষ্ট ব্যয়বহুলই থাকে।

কিন্তু ভোটাররা যারা নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্র ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেটি সীমা ছাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভোটারদের উদ্বেগ দূর করতে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন একটি খাদ্যপণ্যের বাজার পরিদর্শনে যান।

সেখানে স্প্রিং ওনিয়ন (বসন্তকালীন পেঁয়াজ)-এর ‘সুলভ মূল্য’ (রিজনেবল প্রাইস) দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। আসলে পেঁয়াজে অনেক বেশি ভর্তুকি দিয়ে সেটি সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছিল। ভর্তুকি’র কারণে ওই ছাড় দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল। নইলে দাম ধরা-ছোঁয়ার বাইরে হত।

ফলে পেঁয়াজের দাম সুলভ বলে ইয়ুন যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে অনলাইনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। বিরোধীদল ডিপি পার্টিও তখন নির্বাচনী সমাবেশে পেঁয়াজকে ইস্যু করে।

তখনই এক বিরোধীদলীয় নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, “স্প্রিং ওনিয়নই নির্বাচনে প্রেসিডেন্টকে ধরাশায়ী করবে।"

তবে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের দল হেরে যাওয়ার পেছনে দ্রব্যমূল্য একটি কারণ মাত্র। তালিকাটা আরও দীর্ঘ।

ইয়ুন নাগরিকদের কাছে সবসময়ই অজনপ্রিয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে কম, ০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গত মাসে তার প্রতি জনসমর্থনের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখা গেছে।

জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে এতে অংশ নেওয়া অর্ধেক মানুষই বলেছেন, ইয়ুন এ পর্যন্ত ‘খুবই বাজে’ কাজ করেছেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. লি সানসিন বিবিসি-কে বলেন, “অনেকগুলো ঘটনায় ইয়ুনের অবস্থান এমন নাজুক হয়েছে।” প্রথমটি হচ্ছে, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ঘাটতি, যার কারণে তিনি আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পরই মার্কিন আইনপ্রণেতাদের নিয়ে ইয়ুন সুক-ইওলের কটুকথা মাইকে শোনা গিয়েছিল। এ ঘটনা কোরিয়ানদের বিব্রত করেছে, যারা মনে করেন বহির্বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন।

এরপর আছেন ইয়ুনের স্ত্রী,ফার্স্ট লেডি কিম কিওন হি। অধ্যাপক লির মতে, “ যাকে মানুষ প্রেসিডেন্টের চেয়েও বেশি অপছন্দ করে।”

কিওন হি এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামূলক প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তি এবং স্টক মার্কেটে কারচুপি করার অভিযোগ আছে। গত বছর তার বিরুদ্ধে একটি দামী ডিওর হাতব্যাগ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

প্রাথমিকভাবে ফার্স্ট লেডি হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও, কিওন হি কে পরে আর তার স্বামীর সঙ্গে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

ইয়ুনের আগ্রাসী রাজনৈতিক ধারার কারণে তিনি ভোটারদের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ইয়ুন ছিলেন এক কৌঁসুলি। তার কোনও পূর্ব রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি কখনও কখনও একজন রাজনীতিবিদের তুলনায় বরং অনেকটা কৌসুলির মতো কাজ করেন- এমনটিই বলা হয়ে থাকে।

কোরিয়া ইন্সটিটিউশন ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের অধ্যাপক লি বলেন, “ইয়ুন একগুঁয়ে আচরণ করেন। তিনি কারও কথাও শোনেন না আপোসও করেন না। প্রায় কর্তৃত্ববাদী এক শাসনধারাই তিনি গড়ে তুলেছেন।”

মোট কথা, প্রেসিডেন্ট ইয়ুন তার অনুগত কনজারভেটিভদের সমর্থন পেলেও ভোটারদের মন জয় করতে পারেননি। এর পরিণতিতে তার দল পার্লামেন্টের দখল করায়ত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে এখন যা হবে তা হচ্ছে, ইয়ুনের জন্য পার্লামেন্টে কোনও আইন পাস করা কিংবা জরুরি কোনও বিষয় ঠিক করা কঠিন হয়ে পড়বে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া মানুষ বাড়তে থাকাসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সংকটে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। সব মিলিয়ে চাপে আছেন ইয়ুন। এইসব বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন তার জন্য কঠিন হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় বুধবারের নির্বাচনের আগেও পার্লামেন্ট বিরোধীদের দখলেই ছিল। আর এখন নির্বাচনে বিরোধীদলের বিপুল জয়ের পর দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক ইতিহাসে ইয়ুনই হবেন একমাত্র প্রেসিডেন্ট যাকে পূর্ণ মেয়াদেই বিরোধীদলের-নেতৃত্বাধীন জাতীয় পরিষদকে মোকাবেলা করে চলতে হবে।

ইয়ুনের কর্তৃত্ব এখন মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ল এবং বিশ্লেষকদের মতে, তিনি ‘খোঁড়া হাস’ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়লেন।

back to top