গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী শিবিরে ভারি বৃষ্টিপাতের পরে প্লাবিত তাঁবু পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন একজন মহিলা -এপি
গাজা উপত্যকায় হু হু করে বয়ে যাওয়া হিমশীতল বাতাসে অনেক তাঁবু উড়ে গেছে। এতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। বাসস্থানের পাশাপাশি গরম পোশাকের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পার হলেও গাজার লাখ লাখ মানুষ এখনও গৃহহীন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় আগ্রাসন চালায় তেল আবিব। ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধের মধ্যেই গাজাবাসীকে এক ভয়াবহ শীতকাল পার করতে হয়েছে। যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় দ্বিতীয়বারের মতো আঘাত হেনেছে তীব্র শীত।
ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় হাজার হাজার পরিবার জীর্ণ তাঁবুতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। তীব্র বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, জরুরি ভিত্তিতে ১ লাখ ২০ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন। তাঁবুর বাসিন্দা কাসেম আবু হাসুন বলেন, রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাতাসের কারণে তাঁবুগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ঝোড়ো বাতাসে পোশাক ও খাবারে বালু ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে চলতি মাসের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন বলে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এটাই হবে তাঁর প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফর। রুবিও ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেবেন। পরে ইসরায়েল, আরব আমিরাত, কাতার ও সৌদি আরব সফর করবেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সৌদি আরব নিজ দেশের মাটিতেই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে পারে। তাদের অনেক জায়গা আছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের চ্যানেল ফোরটিনে সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে, দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। আর এবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখ-ে বালির ঢিবি থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উত্তর গাজার ওই বালির ঢিবিটি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তৈরি করেছিল। বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো উত্তর গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্মিত বালির ঢিবি থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করেছে বলে সংস্থাটি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আনাদোলুকে বলেছেন, “ইসরায়েলের বুলডোজিং অভিযানের কারণে গাজা শহর এবং উত্তরের বেশ কয়েকটি এলাকায় আত্মরক্ষার্থে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা বালির ঢিবির নিচে ফিলিস্তিনিদের কবর দিয়েছিল তারা (ইসরায়েলি বাহিনী)। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ায় ৩৭টি এবং গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে ২৯ জনের লাশ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক কবর এখনও আবিষ্কৃত হয়নি, কারণ ইসরায়েলি স্থল অভিযানের সময় ফিলিস্তিনিরা তাদের মৃতদের রাস্তায়, স্কোয়ার এবং পাবলিক পার্কে কবর দিতে বাধ্য হয়েছিল। সিভিল ডিফেন্স টিম এবং মেডিকেল ক্রুরা সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ধ্বংসস্তূপ এবং বালির ঢিবির নিচ থেকে লাশ উদ্ধারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।’ গাজার এই বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় ঝোড়ো আবহাওয়া গাজাজুড়ে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের কয়েক ডজন তাঁবু উড়িয়ে নিয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পানি অন্যান্য আরও অনেক তাঁবুকে প্লাবিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের থাকার জন্য গাজায় জরুরিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন যাদের বাড়ি ইসরায়েলি অভিযানে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত গাজা স্ট্রিপে প্রবেশ করা তাঁবুগুলো সংখ্যাগত পরিমাণ বা মানের দিক থেকে ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করছে না এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন সেগুলো মোকাবিলার জন্যও অনুপযুক্ত।’ ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও ৩৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের জন্য নির্ধারিত ৩ সপ্তাহের সময়সীমায় হামাসের পক্ষ থেকে আরও ৩৩ জন জিম্মি এবং ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার কথা রয়েছে। যদিও ইসরায়েল বলছে, ওই ৩৩ জিম্মির মধ্যে ৮ জন মারা গেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখ-ে হামলা চালায় হামাস। জিম্মি করে গাজায় আনা হয় ২৫১ জনকে। নিহত হন ১ হাজার ২০০ মানুষ।
ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। শুরু হয় যুদ্ধ।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় অন্তত ৪৭ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন।
গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী শিবিরে ভারি বৃষ্টিপাতের পরে প্লাবিত তাঁবু পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন একজন মহিলা -এপি
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
গাজা উপত্যকায় হু হু করে বয়ে যাওয়া হিমশীতল বাতাসে অনেক তাঁবু উড়ে গেছে। এতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। বাসস্থানের পাশাপাশি গরম পোশাকের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পার হলেও গাজার লাখ লাখ মানুষ এখনও গৃহহীন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় আগ্রাসন চালায় তেল আবিব। ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধের মধ্যেই গাজাবাসীকে এক ভয়াবহ শীতকাল পার করতে হয়েছে। যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় দ্বিতীয়বারের মতো আঘাত হেনেছে তীব্র শীত।
ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় হাজার হাজার পরিবার জীর্ণ তাঁবুতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। তীব্র বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, জরুরি ভিত্তিতে ১ লাখ ২০ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন। তাঁবুর বাসিন্দা কাসেম আবু হাসুন বলেন, রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাতাসের কারণে তাঁবুগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ঝোড়ো বাতাসে পোশাক ও খাবারে বালু ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে চলতি মাসের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন বলে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এটাই হবে তাঁর প্রথম মধ্যপ্রাচ্য সফর। রুবিও ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেবেন। পরে ইসরায়েল, আরব আমিরাত, কাতার ও সৌদি আরব সফর করবেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সৌদি আরব নিজ দেশের মাটিতেই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে পারে। তাদের অনেক জায়গা আছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের চ্যানেল ফোরটিনে সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে, দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। আর এবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখ-ে বালির ঢিবি থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উত্তর গাজার ওই বালির ঢিবিটি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তৈরি করেছিল। বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো উত্তর গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্মিত বালির ঢিবি থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করেছে বলে সংস্থাটি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল আনাদোলুকে বলেছেন, “ইসরায়েলের বুলডোজিং অভিযানের কারণে গাজা শহর এবং উত্তরের বেশ কয়েকটি এলাকায় আত্মরক্ষার্থে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা বালির ঢিবির নিচে ফিলিস্তিনিদের কবর দিয়েছিল তারা (ইসরায়েলি বাহিনী)। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ায় ৩৭টি এবং গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে ২৯ জনের লাশ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক কবর এখনও আবিষ্কৃত হয়নি, কারণ ইসরায়েলি স্থল অভিযানের সময় ফিলিস্তিনিরা তাদের মৃতদের রাস্তায়, স্কোয়ার এবং পাবলিক পার্কে কবর দিতে বাধ্য হয়েছিল। সিভিল ডিফেন্স টিম এবং মেডিকেল ক্রুরা সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ধ্বংসস্তূপ এবং বালির ঢিবির নিচ থেকে লাশ উদ্ধারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।’ গাজার এই বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় ঝোড়ো আবহাওয়া গাজাজুড়ে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের কয়েক ডজন তাঁবু উড়িয়ে নিয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পানি অন্যান্য আরও অনেক তাঁবুকে প্লাবিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের থাকার জন্য গাজায় জরুরিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন যাদের বাড়ি ইসরায়েলি অভিযানে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত গাজা স্ট্রিপে প্রবেশ করা তাঁবুগুলো সংখ্যাগত পরিমাণ বা মানের দিক থেকে ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করছে না এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন সেগুলো মোকাবিলার জন্যও অনুপযুক্ত।’ ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও ৩৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের জন্য নির্ধারিত ৩ সপ্তাহের সময়সীমায় হামাসের পক্ষ থেকে আরও ৩৩ জন জিম্মি এবং ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার কথা রয়েছে। যদিও ইসরায়েল বলছে, ওই ৩৩ জিম্মির মধ্যে ৮ জন মারা গেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখ-ে হামলা চালায় হামাস। জিম্মি করে গাজায় আনা হয় ২৫১ জনকে। নিহত হন ১ হাজার ২০০ মানুষ।
ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। শুরু হয় যুদ্ধ।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় অন্তত ৪৭ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন।