এমনিতেই ধ্বংসস্তূপ, শনিবার ও বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে গাজা শহরে ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ বন্ধে ট্রাম্পের অনুরোধের পরও এই বিস্ফোরণ -আল জাজিরা
গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে’ পৌঁছতে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। যদিও হামাস বলেছে, ট্রাম্পের ওই ২০ দফা প্রস্তাবের কিছু বিষয়ে আলোচনার দরকার আছে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া, জিম্মি মুক্তিতে রাজি
ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার অনুরোধ ট্রাম্পের
ইসরায়েলের হামলা, আরও অন্তত ৪১ জন নিহত
‘আবারও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত’ থাকার আহ্বান ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
এরপর ট্রাম্প ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। আর ইসরায়েল বলেছে, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাব বাস্তবায়নে মাঠে নেমে গেছে।
এর পরপরই গাজায় শুরু হয়ে গেছে আরেক দফা হামলা। ট্রাম্প প্রস্তাবিত ‘শান্তি প্রক্রিয়ার’ প্রথম পর্ব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা ইসরায়েল দেয়ার পর গাজার তিনটি স্থানে হামলায় অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে।
২০২৩ এর ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা এখন ৬৭ হাজার এর ওপরে। আর তার আগের দিন ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় ২৫১ জনকে ধরে নেয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে, হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা।
সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সফরকালে ডনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংকট নিরসনে ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। পরিকল্পনায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ এবং হামাসের হাতে আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়। একই সঙ্গে মৃত বলে ধারণা করা আরও দুই ডজনের বেশি ইসরায়েলির মরদেহ ফেরত দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এর বিপরীতে ইসরায়েল থেকে শত শত প্যালেস্টাইনি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি নিহত গাজার নাগরিকদের মরদেহ ফেরত দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে এবং গাজার শাসন ব্যবস্থায় তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। ট্রাম্পের নেতৃত্বে এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং অন্য নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিস’ বা ‘শান্তি বোর্ড’ গঠন করা হবে এবং এর তত্ত্বাবধানে একটি ‘টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক প্যালেস্টাইনি কমিটির’ মাধ্যমে গাজা উপত্যকার ভবিষ্যত শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা হবে।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যদি দুই পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মতি দেয়, তবে গাজায় অবিলম্বে পূর্ণ মাত্রায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
পরিকল্পনায় ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের ‘সম্ভাবনা খোলা রাখা হয়েছে’, তবে তা খুব স্পষ্ট নয়।
তারপরও নেতানিয়াহু গত সোমবার আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি এ ধরনের কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে নন। ফলে পরিকল্পনাটি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিলেও এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ সদ্য একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তিনি লিখেন: ‘হামাসের সদ্য প্রকাশিত বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি তারা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবশ্যই অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা দ্রুত ও নিরাপদে জিম্মিদের মুক্ত করতে পারি!
‘আমরা ইতোমধ্যে বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। এটি কেবল গাজার ব্যাপার নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির ব্যাপার।’
কী বললো হামাস
মার্কিন প্রস্তাবের জবাবে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘ইসরায়েলি সব বন্দীকে জীবিত ও মৃত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে উল্লিখিত বিনিময় সূত্র অনুযায়ী মুক্তি দিতে সম্মত, যদি বিনিময়ের জন্য মাঠ পর্যায়ের শর্ত পূরণ হয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা ‘গাজা উপত্যকার প্রশাসনকে স্বাধীন প্যালেস্টাইনি সংস্থার হাতে হস্তান্তরে পুনরায় সম্মতি জানাচ্ছে,’ যা ‘প্যালেস্টাইনি জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামি সমর্থনের ভিত্তিতে’ গঠিত হবে।
হামাস তাদের বিবৃতিতে নিরস্ত্রীকরণের কথা উল্লেখ করেনি। গাজার শাসনব্যবস্থায় ভবিষ্যতে আর কোনো ভূমিকা পালন করবে না, এরকম কিছুই তারা বলেনি।
গাজার ভবিষ্যৎ ও প্যালেস্টাইনি জনগণের অধিকার বিষয়ে হামাস জানায়, এটি ‘প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক আইন ও প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে একটি সামগ্রিক জাতীয় অবস্থানের সঙ্গে যুক্ত, যা জাতীয় কাঠামোর ভেতরে আলোচিত হচ্ছে এবং হামাসও তার অংশ।’
২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশগ্রহণকারী হামাসের মিত্র প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) ট্রাম্পের; শান্তি পরিকল্পনায়’ হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে।
আর, প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসের বক্তব্যকে ‘ইতিবাচক’ বলেছেন।
গাজা যুদ্ধের অবসানে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা কাতার হামাসের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। কাতার ট্রাম্পের ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আহ্বানকেও সমর্থন জানিয়েছে।
এছাড়া কাতার জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারী মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করেছে।
হামাসের বিবৃতির পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন।
তিনি কাতার, তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্ডান ও মিশরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শান্তি চুক্তির আলোচনায় তাকে সহযোগিতা করার জন্য।
ইসরায়েলের বিবৃতি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে সদ্য প্রকাশিত দুই লাইনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে ‘ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে কাজ করবে।
হিব্রু থেকে অনূদিত বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে ইসরায়েল অবিলম্বে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে সব জিম্মিকে দ্রুত মুক্তি দেয়া যায়।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, দেশের শীর্ষ সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের রাতভর বৈঠক হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি সেনাদের নিরাপত্তা ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’ এবং ‘আইডিএফের সব সক্ষমতা দক্ষিণ কমান্ডে বরাদ্দ করা হবে,’ যা গাজায় কার্যক্রম পরিচালনা করে।
যদিও গাজায় সামরিক কার্যক্রম কমানোর বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি, তবে সৈন্যদের প্রয়োজনে ‘আবারও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত’ থাকতে বলা হয়েছে।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের শীর্ষ নেতারা হামাসের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমি সব পক্ষকে আহ্বান জানাই যেন তারা গাজার এই দুঃখজনক সংঘর্ষ শেষ করার সুযোগটি কাজে লাগায়।’
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিচেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়া স্থায়ী শান্তি অর্জনের দিকে একটি গঠনমূলক এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ বলেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি ও গাজার শান্তি এখন নাগালের মধ্যে... প্রায় দুই বছরের পরে এটি শান্তির জন্য সেরা সুযোগ।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখো বলেছেন, ‘হামাসের প্রতিশ্রুতি দ্রুত অনুসরণ করা উচিত।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘এখন সবার প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এমন যুদ্ধবিরতি অর্জন করা, যা সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকে উৎসাহ দিচ্ছি যেন তারা প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য দ্রুত কাজ শুরু করে।’
এমনিতেই ধ্বংসস্তূপ, শনিবার ও বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে গাজা শহরে ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ বন্ধে ট্রাম্পের অনুরোধের পরও এই বিস্ফোরণ -আল জাজিরা
শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫
গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে’ পৌঁছতে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। যদিও হামাস বলেছে, ট্রাম্পের ওই ২০ দফা প্রস্তাবের কিছু বিষয়ে আলোচনার দরকার আছে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া, জিম্মি মুক্তিতে রাজি
ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার অনুরোধ ট্রাম্পের
ইসরায়েলের হামলা, আরও অন্তত ৪১ জন নিহত
‘আবারও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত’ থাকার আহ্বান ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
এরপর ট্রাম্প ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। আর ইসরায়েল বলেছে, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাব বাস্তবায়নে মাঠে নেমে গেছে।
এর পরপরই গাজায় শুরু হয়ে গেছে আরেক দফা হামলা। ট্রাম্প প্রস্তাবিত ‘শান্তি প্রক্রিয়ার’ প্রথম পর্ব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা ইসরায়েল দেয়ার পর গাজার তিনটি স্থানে হামলায় অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে।
২০২৩ এর ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা এখন ৬৭ হাজার এর ওপরে। আর তার আগের দিন ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় ২৫১ জনকে ধরে নেয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে, হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা।
সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সফরকালে ডনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংকট নিরসনে ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। পরিকল্পনায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ এবং হামাসের হাতে আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়। একই সঙ্গে মৃত বলে ধারণা করা আরও দুই ডজনের বেশি ইসরায়েলির মরদেহ ফেরত দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এর বিপরীতে ইসরায়েল থেকে শত শত প্যালেস্টাইনি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি নিহত গাজার নাগরিকদের মরদেহ ফেরত দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে এবং গাজার শাসন ব্যবস্থায় তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। ট্রাম্পের নেতৃত্বে এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং অন্য নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিস’ বা ‘শান্তি বোর্ড’ গঠন করা হবে এবং এর তত্ত্বাবধানে একটি ‘টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক প্যালেস্টাইনি কমিটির’ মাধ্যমে গাজা উপত্যকার ভবিষ্যত শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা হবে।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যদি দুই পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মতি দেয়, তবে গাজায় অবিলম্বে পূর্ণ মাত্রায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
পরিকল্পনায় ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের ‘সম্ভাবনা খোলা রাখা হয়েছে’, তবে তা খুব স্পষ্ট নয়।
তারপরও নেতানিয়াহু গত সোমবার আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি এ ধরনের কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে নন। ফলে পরিকল্পনাটি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিলেও এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ সদ্য একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তিনি লিখেন: ‘হামাসের সদ্য প্রকাশিত বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি তারা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবশ্যই অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা দ্রুত ও নিরাপদে জিম্মিদের মুক্ত করতে পারি!
‘আমরা ইতোমধ্যে বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। এটি কেবল গাজার ব্যাপার নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির ব্যাপার।’
কী বললো হামাস
মার্কিন প্রস্তাবের জবাবে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘ইসরায়েলি সব বন্দীকে জীবিত ও মৃত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে উল্লিখিত বিনিময় সূত্র অনুযায়ী মুক্তি দিতে সম্মত, যদি বিনিময়ের জন্য মাঠ পর্যায়ের শর্ত পূরণ হয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা ‘গাজা উপত্যকার প্রশাসনকে স্বাধীন প্যালেস্টাইনি সংস্থার হাতে হস্তান্তরে পুনরায় সম্মতি জানাচ্ছে,’ যা ‘প্যালেস্টাইনি জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামি সমর্থনের ভিত্তিতে’ গঠিত হবে।
হামাস তাদের বিবৃতিতে নিরস্ত্রীকরণের কথা উল্লেখ করেনি। গাজার শাসনব্যবস্থায় ভবিষ্যতে আর কোনো ভূমিকা পালন করবে না, এরকম কিছুই তারা বলেনি।
গাজার ভবিষ্যৎ ও প্যালেস্টাইনি জনগণের অধিকার বিষয়ে হামাস জানায়, এটি ‘প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক আইন ও প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে একটি সামগ্রিক জাতীয় অবস্থানের সঙ্গে যুক্ত, যা জাতীয় কাঠামোর ভেতরে আলোচিত হচ্ছে এবং হামাসও তার অংশ।’
২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশগ্রহণকারী হামাসের মিত্র প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) ট্রাম্পের; শান্তি পরিকল্পনায়’ হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে।
আর, প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসের বক্তব্যকে ‘ইতিবাচক’ বলেছেন।
গাজা যুদ্ধের অবসানে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা কাতার হামাসের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। কাতার ট্রাম্পের ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আহ্বানকেও সমর্থন জানিয়েছে।
এছাড়া কাতার জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারী মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করেছে।
হামাসের বিবৃতির পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন।
তিনি কাতার, তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্ডান ও মিশরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শান্তি চুক্তির আলোচনায় তাকে সহযোগিতা করার জন্য।
ইসরায়েলের বিবৃতি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে সদ্য প্রকাশিত দুই লাইনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে ‘ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে কাজ করবে।
হিব্রু থেকে অনূদিত বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে ইসরায়েল অবিলম্বে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে সব জিম্মিকে দ্রুত মুক্তি দেয়া যায়।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, দেশের শীর্ষ সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের রাতভর বৈঠক হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি সেনাদের নিরাপত্তা ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’ এবং ‘আইডিএফের সব সক্ষমতা দক্ষিণ কমান্ডে বরাদ্দ করা হবে,’ যা গাজায় কার্যক্রম পরিচালনা করে।
যদিও গাজায় সামরিক কার্যক্রম কমানোর বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি, তবে সৈন্যদের প্রয়োজনে ‘আবারও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত’ থাকতে বলা হয়েছে।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের শীর্ষ নেতারা হামাসের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমি সব পক্ষকে আহ্বান জানাই যেন তারা গাজার এই দুঃখজনক সংঘর্ষ শেষ করার সুযোগটি কাজে লাগায়।’
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিচেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়া স্থায়ী শান্তি অর্জনের দিকে একটি গঠনমূলক এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ বলেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি ও গাজার শান্তি এখন নাগালের মধ্যে... প্রায় দুই বছরের পরে এটি শান্তির জন্য সেরা সুযোগ।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখো বলেছেন, ‘হামাসের প্রতিশ্রুতি দ্রুত অনুসরণ করা উচিত।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘এখন সবার প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এমন যুদ্ধবিরতি অর্জন করা, যা সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকে উৎসাহ দিচ্ছি যেন তারা প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য দ্রুত কাজ শুরু করে।’