alt

পশ্চিম তীরে গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করছে ইসরায়েল

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

জীবনের সব মৌলিক সুবিধা– পানি, বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, পানির কূপ, আবর্জনার পাত্র, রাস্তার বাতি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল -এএফপি

অধিকৃত পশ্চিম তীরের দক্ষিণে মাসাফার ইয়াত্তার ছোট্ট গ্রাম খাল্লেত আল-ডাবা। গত মে মাসের এক সকালে হঠাৎ গ্রামটির শান্ত পরিবেশ কেঁপে ওঠে বুলডোজার ও অন্যান্য যন্ত্রের শব্দে। সঙ্গে ছিল ইসরায়েলের সেনারা। তারা দলে দলে গ্রামটির বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের করে দেয়। গবাদি পশু ছেড়ে দেওয়া হয় খোলা মাঠে।

ঘটনাটি গত ৫ মের। দিন শেষে খাল্লেত আল-ডাবার ফিলিস্তিনিদের ছোট একটি সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। গত বুধবার আলজাজিরার বিশেষ প্রতিবেদন জানায়, চলতি বছর অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী এ ধরনের চারটি ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এ ধ্বংসযজ্ঞ ‘নাকবা’র চেয়ে কম কষ্টের নয়। এটি এক ‘নতুন নাকবা’; অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি ও জাতিগত নির্মূলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ওই ধ্বংসযজ্ঞ চলাকালে কয়েক ডজন সামরিক, সাঁজোয়া যান ও জিপ গ্রামটি ঘিরে রাখে। পরিবারগুলোর নারী-শিশুসহ অন্য সদস্যরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বলন্ত সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন। চোখের সামনে তাদের বাড়িঘর, ঘরের পেছনের দেয়াল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো তখন থেকে নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ কয়েক বছর আগে তৈরি গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যরা অসহায় অবস্থায় থাকছেন নাজুক তাঁবুতে। শীত ও গ্রীষ্মের চরম তাপমাত্রায় এসব তাঁবু থেকে গা বাঁচানো যায় না। পার্শ্ববর্তী আত-তুবানি গ্রামের কাউন্সিলপ্রধান মোহাম্মদ রাবিয়া বলেন, ‘এ ঘটনা খাল্লেত আল-ডাবার মানুষের জীবনের সব মৌলিক সুবিধা– পানি, বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, পানির কূপ, আবর্জনার পাত্র, এমনকি রাস্তার বাতি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তরযুগে ফিরে গেছি। গুহা ও তাঁবুতে থাকছি। নেই জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তবু কেউ গ্রাম ছেড়ে যাননি।’

সামরিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল: খাল্লেত আল-ডাবা পাহাড়ঘেরা ১২টি ফিলিস্তিনি গ্রামের একটি। জাতিসংঘের আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসাফের ইয়াত্তায় এক হাজার ১৫০ জনের বাস। তবে রাবিয়া বলেছেন, সেখানে প্রকৃত ফিলিস্তিনির সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। তারা মূলত ভেড়া পালন, গম ও বার্লি চাষ করেন। এটি তাদের আয়ের প্রধান উৎস। পশ্চিম তীরের প্রায় ২০ শতাংশ ভূমির মতো ইসরায়েল ১৯৮০-এর দশকে ওই এলাকার একটি অংশকে সামরিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল ‘ফায়ারিং জোন ৯১৮’ ঘোষণা করে। এর পর থেকেই তারা স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি গবেষণা সংস্থা আকেভট জানায়, পশ্চিম তীরে এ সামরিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল ঘোষণার কাজ ১৯৮১ সালে তখনকার ইসরায়েলি কৃষিমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারনের প্রস্তাবিত ছিল। পরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হন। খাল্লেত আল-ডাবার বাড়িঘর বারবার সামরিক আদেশে ধ্বংস করা হয়। স্থানীয়রা বলেন, অনুমতি ছাড়া নির্মাণ, সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকার কাছাকাছি অবস্থান বা অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনে জমি দাবি; কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই– ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তর।

ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) ব্যবস্থাপক ফ্রেডেরিক ভ্যান ডোঙ্গেন বলেন, মাসাফের ইয়াত্তায় ইসরায়েলের কর্মকা- হলো বৃহত্তর পরিসরে জাতিগত নির্মূল নীতির অংশ। এর লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের এ এলাকা থেকে সরানো।

গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গুহাও: নিজেদের বসতি ধ্বংসের দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সামিহা মুহাম্মদ আল-ডাবাবসেহ আছেন। জন্মের পর থেকে এ নারী ওই গ্রামে থাকেন। তাঁর মুখেই কয়েক দশকের কষ্ট ও সংগ্রামী জীবনের ছাপ স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘কয়েক মিনিটের মধ্যে সেনারা ঘরে ঢুকে আমাদের জোরপূর্বক বের করে দেয়। কিছু নেওয়ার অনুমতি দেয়নি– না খাবার, না কাপড়। তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, এটি তোমার জমি নয়; এখানে তোমার ঘর বা ঠিকানা থাকবে না।’

ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সামিহারার একটি গুহায় আশ্রয় নেন। তারা এটি নিজেরাই খুঁড়ে বানিয়েছিলেন। পরিবারের নারী ও শিশুরা গুহার ভেতর ঘুমাত; পুরুষরা বাইরে মাটিতে থাকতেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ গুহাও ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এদিকে, রাফা ক্রসিং আবার খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ত্রাণ পরিবহনে ক্রসিংটি ব্যবহার করা যাবে না।

তবে মিসর সীমান্তবর্তী এ ক্রসিং কবে খুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরায়েল। অন্যদিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ইসরায়েল ও হামাস। হামাসের হাতে এখনো ইসরায়েলের কয়েকজন জিম্মির মরদেহ রয়ে গেছে। এটা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে।

তা ছাড়া হামাস ও গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজার নতুন সরকার কাদের নিয়ে গঠিত হবে, তা নিয়েও মতবিরোধ রয়ে গেছে। এসব টানাপোড়েন ও মতবিরোধ নিয়ে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলছি। হামাসের হাতে এখনো ১৯ জিম্মির মরদেহ রয়েছে। দেরি না করে সেগুলো হস্তান্তর করতে হবে।’

ছবি

আফগান সীমান্তে আত্মঘাতী হামলা, ৭ পাকিস্তানি সেনাসহ ১০ জন নিহত

ছবি

হামাসকে ‘মেরে ফেলার’ হুমকি ট্রাম্পের

ছবি

সাড়ে ৩০০ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে হামলা রাশিয়ার

ছবি

ট্রাম্প-পুতিনের পরবর্তী বৈঠক হবে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে

ছবি

ভারতের ‘নোংরা খেলার’ আশঙ্কা, ‘দ্বিমুখী যুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুত পাকিস্তান

ছবি

পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসরায়েল ও হামাসের

ছবি

ট্রাম্প বলেছেন—চুক্তি না মানলে ইসরায়েলকে আবারো ‘রাস্তায়’ পাঠানোর অনুমোদন দিতে পারেন

ছবি

মারা গেছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

ছবি

রাশিয়ার থেকে তেল কিনবে না ভারত: দাবি ট্রাম্পের

ছবি

সমুদ্রে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত বন্দর ফি আদায় শুরু

ছবি

গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

পাকিস্তানের সঙ্গে আফগান তালেবানের সম্পর্ক কোন দিকে যাচ্ছে

ছবি

যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়

ছবি

সীমান্তে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মধ্যে ফের সংঘাত শুরু

ছবি

তাইওয়ানকে ‘ভুলভাবে’ চিহ্নিত করায় চীনে ৬০ হাজার মানচিত্র জব্দ

ছবি

বল প্রয়োগ করে হলেও হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করব: ট্রাম্প

ছবি

গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ফের ইসরায়েলের বিধিনিষেধ, হুমকির মুখে যুদ্ধবিরতি

ছবি

গাজা নগরীর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে হামাস, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তীব্র লড়াই

ছবি

তালেবানের সাথে এত ঘনিষ্ঠতার কারণ কি, তবে কি স্বীকৃতি দিচ্ছে ভারত

ছবি

আরও চার জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করল হামাস

ছবি

জেন-জি বিক্ষোভের মুখে পালিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

ছবি

থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া ‘শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্পের শান্তিচুক্তির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলো ইরান

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে ‘শেষ পর্যন্ত লড়বে’ চীন

ছবি

পাকিস্তান-আফগান লড়াইয়ে তৈরি হচ্ছে বৃহত্তর সংঘাতের হুমকি

ছবি

প্যালেস্টাইনি-ইসরায়েল বন্দিবিনিময়ের পর চুক্তি সই

ছবি

গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ট্রাম্পসহ চার নেতার স্বাক্ষর

ছবি

ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ট্রাম্পের ভাষণে বাধা, প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতির আহ্বান

ছবি

জাতিসংঘের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি স্থগিত করল ইরান

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতিক্রমেই ফের সশস্ত্র হয়েছে হামাস: ট্রাম্প

ছবি

গাজার নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব হামাসের: ট্রাম্প

ছবি

জীবিত ২০ জিম্মিকে মুক্তি দিলো হামাস

ছবি

পশ্চিমা শক্তিকে দুর্বল করতে একাট্টা চীন-রাশিয়া

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলছে একের পর এক লাশ

ছবি

পাকিস্তান-আফগানিস্তান লড়াই, কোন দিকে মোড় নেবে পরিস্থিতি

ছবি

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে ক্ষুব্ধ বেইজিং, ‘দ্বিমুখী নীতি’র অভিযোগ চীনের

tab

পশ্চিম তীরে গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করছে ইসরায়েল

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

জীবনের সব মৌলিক সুবিধা– পানি, বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, পানির কূপ, আবর্জনার পাত্র, রাস্তার বাতি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল -এএফপি

শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

অধিকৃত পশ্চিম তীরের দক্ষিণে মাসাফার ইয়াত্তার ছোট্ট গ্রাম খাল্লেত আল-ডাবা। গত মে মাসের এক সকালে হঠাৎ গ্রামটির শান্ত পরিবেশ কেঁপে ওঠে বুলডোজার ও অন্যান্য যন্ত্রের শব্দে। সঙ্গে ছিল ইসরায়েলের সেনারা। তারা দলে দলে গ্রামটির বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের করে দেয়। গবাদি পশু ছেড়ে দেওয়া হয় খোলা মাঠে।

ঘটনাটি গত ৫ মের। দিন শেষে খাল্লেত আল-ডাবার ফিলিস্তিনিদের ছোট একটি সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। গত বুধবার আলজাজিরার বিশেষ প্রতিবেদন জানায়, চলতি বছর অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী এ ধরনের চারটি ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। স্থানীয়দের কাছে এ ধ্বংসযজ্ঞ ‘নাকবা’র চেয়ে কম কষ্টের নয়। এটি এক ‘নতুন নাকবা’; অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি ও জাতিগত নির্মূলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ওই ধ্বংসযজ্ঞ চলাকালে কয়েক ডজন সামরিক, সাঁজোয়া যান ও জিপ গ্রামটি ঘিরে রাখে। পরিবারগুলোর নারী-শিশুসহ অন্য সদস্যরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বলন্ত সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন। চোখের সামনে তাদের বাড়িঘর, ঘরের পেছনের দেয়াল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো তখন থেকে নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ কয়েক বছর আগে তৈরি গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যরা অসহায় অবস্থায় থাকছেন নাজুক তাঁবুতে। শীত ও গ্রীষ্মের চরম তাপমাত্রায় এসব তাঁবু থেকে গা বাঁচানো যায় না। পার্শ্ববর্তী আত-তুবানি গ্রামের কাউন্সিলপ্রধান মোহাম্মদ রাবিয়া বলেন, ‘এ ঘটনা খাল্লেত আল-ডাবার মানুষের জীবনের সব মৌলিক সুবিধা– পানি, বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, পানির কূপ, আবর্জনার পাত্র, এমনকি রাস্তার বাতি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তরযুগে ফিরে গেছি। গুহা ও তাঁবুতে থাকছি। নেই জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। তবু কেউ গ্রাম ছেড়ে যাননি।’

সামরিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল: খাল্লেত আল-ডাবা পাহাড়ঘেরা ১২টি ফিলিস্তিনি গ্রামের একটি। জাতিসংঘের আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসাফের ইয়াত্তায় এক হাজার ১৫০ জনের বাস। তবে রাবিয়া বলেছেন, সেখানে প্রকৃত ফিলিস্তিনির সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। তারা মূলত ভেড়া পালন, গম ও বার্লি চাষ করেন। এটি তাদের আয়ের প্রধান উৎস। পশ্চিম তীরের প্রায় ২০ শতাংশ ভূমির মতো ইসরায়েল ১৯৮০-এর দশকে ওই এলাকার একটি অংশকে সামরিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল ‘ফায়ারিং জোন ৯১৮’ ঘোষণা করে। এর পর থেকেই তারা স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি গবেষণা সংস্থা আকেভট জানায়, পশ্চিম তীরে এ সামরিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল ঘোষণার কাজ ১৯৮১ সালে তখনকার ইসরায়েলি কৃষিমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারনের প্রস্তাবিত ছিল। পরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হন। খাল্লেত আল-ডাবার বাড়িঘর বারবার সামরিক আদেশে ধ্বংস করা হয়। স্থানীয়রা বলেন, অনুমতি ছাড়া নির্মাণ, সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকার কাছাকাছি অবস্থান বা অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনে জমি দাবি; কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই– ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তর।

ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) ব্যবস্থাপক ফ্রেডেরিক ভ্যান ডোঙ্গেন বলেন, মাসাফের ইয়াত্তায় ইসরায়েলের কর্মকা- হলো বৃহত্তর পরিসরে জাতিগত নির্মূল নীতির অংশ। এর লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের এ এলাকা থেকে সরানো।

গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গুহাও: নিজেদের বসতি ধ্বংসের দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সামিহা মুহাম্মদ আল-ডাবাবসেহ আছেন। জন্মের পর থেকে এ নারী ওই গ্রামে থাকেন। তাঁর মুখেই কয়েক দশকের কষ্ট ও সংগ্রামী জীবনের ছাপ স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘কয়েক মিনিটের মধ্যে সেনারা ঘরে ঢুকে আমাদের জোরপূর্বক বের করে দেয়। কিছু নেওয়ার অনুমতি দেয়নি– না খাবার, না কাপড়। তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, এটি তোমার জমি নয়; এখানে তোমার ঘর বা ঠিকানা থাকবে না।’

ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সামিহারার একটি গুহায় আশ্রয় নেন। তারা এটি নিজেরাই খুঁড়ে বানিয়েছিলেন। পরিবারের নারী ও শিশুরা গুহার ভেতর ঘুমাত; পুরুষরা বাইরে মাটিতে থাকতেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ গুহাও ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এদিকে, রাফা ক্রসিং আবার খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ত্রাণ পরিবহনে ক্রসিংটি ব্যবহার করা যাবে না।

তবে মিসর সীমান্তবর্তী এ ক্রসিং কবে খুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরায়েল। অন্যদিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ইসরায়েল ও হামাস। হামাসের হাতে এখনো ইসরায়েলের কয়েকজন জিম্মির মরদেহ রয়ে গেছে। এটা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে।

তা ছাড়া হামাস ও গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজার নতুন সরকার কাদের নিয়ে গঠিত হবে, তা নিয়েও মতবিরোধ রয়ে গেছে। এসব টানাপোড়েন ও মতবিরোধ নিয়ে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলছি। হামাসের হাতে এখনো ১৯ জিম্মির মরদেহ রয়েছে। দেরি না করে সেগুলো হস্তান্তর করতে হবে।’

back to top