একটি মহল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে এবং ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটছে—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
সোমবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, এটি ২০১২ সালে রামুর ঘটনার পর আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মিল রয়েছে। সভার শিরোনাম ছিল: ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কালক্রম: রামুসহ সারা দেশে বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের ১৩ বছর এবং গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’।
আলোচনা সভার শুরুতে সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যত সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তার একটিরও বিচার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও মন্দির ও মাজারে হামলা এবং বৈষম্যবাদী ও জনতুষ্টিবাদীদের নানা তৎপরতা রয়েছে। খাগড়াছড়ির ঘটনাটিও বিব্রতকর। সভার সমাপনী বক্তব্যও দেন তিনি এবং বলেন, ‘রামু নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করছি, খাগড়াছড়িতে তখন আগুন জ্বলছে।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে এভাবে সমালোচনা করেন: ‘একটির পর এক ব্যর্থতার কারণে এক ব্যক্তির পদত্যাগের দাবি উঠলেও তিনি বসে আছেন। তাঁর নির্লজ্জ হাসি এখনো দেখা যাচ্ছে। কোনো তদন্ত ছাড়াই খাগড়াছড়ির ঘটনায় ভারতের চক্রান্ত দেখছেন। এটি ২০১২ সালে রামুর ঘটনার পর আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সে সময় বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রামুর ঘটনা ঘটেছে। পরে দেখা গেছে হামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই জড়িত। এখনো সেই একই রকম ছাঁচ ও মডেল দেখা যাচ্ছে।’
পাহাড়ের মানুষ বিচ্ছিন্নতা চায় না, গণতান্ত্রিক অধিকার চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাহাড়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সরকারসহ সবাইকে কাজ করতে হবে। পাহাড় ও সেখানকার জমি কার দখলে আছে, তার তালিকা প্রকাশ করলেই বোঝা যাবে কার স্বার্থে অশান্তি টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। গত কয়েক দশকে কতজনকে পাহাড় ইজারা দেওয়া হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। সেখানে যাওয়া উন্নয়ন বরাদ্দেরও কোনো হিসাব নেই।
দরকার শক্তির সমাবেশ
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অনলাইনে প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) ও ‘মব’ সন্ত্রাস নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন কিশোরের নামে অভিযোগ তুলে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে নারীবিদ্বেষী প্রচার ও আক্রমণ হচ্ছে। এর শিকার হয়ে অনেক নারী আর কথাই বলছেন না। সমাজে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। মব সন্ত্রাসে জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাচ্ছে না; এর পেছনে শক্তিশালী চক্র ও পরিকল্পনা আছে। জনতাকে উসকানি দিয়ে উত্তেজিত করে মব তৈরি করা হচ্ছে।
নদী দখল, পাথর উত্তোলন, সাম্প্রদায়িক হামলা ও জমি দখলে বিভিন্ন দল–মতের একধরনের ঐক্য দেখা গেলেও এগুলোর বিরুদ্ধে ঐক্য দেখা যায় না। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার কথা থাকলেও তা হয়নি। বৈষম্য বৃদ্ধির মতাদর্শ ধারণকারীদের দাপট দেখা যাচ্ছে। তারা কোনো কিছুই শুনতে রাজি নয়। এই অবস্থা বিস্ময়কর নয়। নির্মোহভাবে দেখলে হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। অত্যাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকের পতন হলেও, সম্প্রীতির যাত্রা বা বৈষম্যহীন যাত্রার জন্য আমাদের সামাজিক ও মতাদর্শিক শক্তির সমাবেশ প্রস্তুত ছিল না। সেই শক্তির সমাবেশই অবস্থার পরিবর্তনের একমাত্র শর্ত।’
সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অর্থনীতিবিদ ও লেখক সুজিত চৌধুরী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য, লেখক তাহমিদাল জামী, শিল্পী ও গবেষক অরূপ রাহী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ফেরদৌস আরা রুমি।
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
একটি মহল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে এবং ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটছে—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
সোমবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, এটি ২০১২ সালে রামুর ঘটনার পর আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মিল রয়েছে। সভার শিরোনাম ছিল: ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কালক্রম: রামুসহ সারা দেশে বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের ১৩ বছর এবং গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’।
আলোচনা সভার শুরুতে সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যত সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তার একটিরও বিচার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও মন্দির ও মাজারে হামলা এবং বৈষম্যবাদী ও জনতুষ্টিবাদীদের নানা তৎপরতা রয়েছে। খাগড়াছড়ির ঘটনাটিও বিব্রতকর। সভার সমাপনী বক্তব্যও দেন তিনি এবং বলেন, ‘রামু নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করছি, খাগড়াছড়িতে তখন আগুন জ্বলছে।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে এভাবে সমালোচনা করেন: ‘একটির পর এক ব্যর্থতার কারণে এক ব্যক্তির পদত্যাগের দাবি উঠলেও তিনি বসে আছেন। তাঁর নির্লজ্জ হাসি এখনো দেখা যাচ্ছে। কোনো তদন্ত ছাড়াই খাগড়াছড়ির ঘটনায় ভারতের চক্রান্ত দেখছেন। এটি ২০১২ সালে রামুর ঘটনার পর আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সে সময় বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রামুর ঘটনা ঘটেছে। পরে দেখা গেছে হামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই জড়িত। এখনো সেই একই রকম ছাঁচ ও মডেল দেখা যাচ্ছে।’
পাহাড়ের মানুষ বিচ্ছিন্নতা চায় না, গণতান্ত্রিক অধিকার চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাহাড়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সরকারসহ সবাইকে কাজ করতে হবে। পাহাড় ও সেখানকার জমি কার দখলে আছে, তার তালিকা প্রকাশ করলেই বোঝা যাবে কার স্বার্থে অশান্তি টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। গত কয়েক দশকে কতজনকে পাহাড় ইজারা দেওয়া হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। সেখানে যাওয়া উন্নয়ন বরাদ্দেরও কোনো হিসাব নেই।
দরকার শক্তির সমাবেশ
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অনলাইনে প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) ও ‘মব’ সন্ত্রাস নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন কিশোরের নামে অভিযোগ তুলে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে নারীবিদ্বেষী প্রচার ও আক্রমণ হচ্ছে। এর শিকার হয়ে অনেক নারী আর কথাই বলছেন না। সমাজে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। মব সন্ত্রাসে জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাচ্ছে না; এর পেছনে শক্তিশালী চক্র ও পরিকল্পনা আছে। জনতাকে উসকানি দিয়ে উত্তেজিত করে মব তৈরি করা হচ্ছে।
নদী দখল, পাথর উত্তোলন, সাম্প্রদায়িক হামলা ও জমি দখলে বিভিন্ন দল–মতের একধরনের ঐক্য দেখা গেলেও এগুলোর বিরুদ্ধে ঐক্য দেখা যায় না। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার কথা থাকলেও তা হয়নি। বৈষম্য বৃদ্ধির মতাদর্শ ধারণকারীদের দাপট দেখা যাচ্ছে। তারা কোনো কিছুই শুনতে রাজি নয়। এই অবস্থা বিস্ময়কর নয়। নির্মোহভাবে দেখলে হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। অত্যাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকের পতন হলেও, সম্প্রীতির যাত্রা বা বৈষম্যহীন যাত্রার জন্য আমাদের সামাজিক ও মতাদর্শিক শক্তির সমাবেশ প্রস্তুত ছিল না। সেই শক্তির সমাবেশই অবস্থার পরিবর্তনের একমাত্র শর্ত।’
সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অর্থনীতিবিদ ও লেখক সুজিত চৌধুরী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য, লেখক তাহমিদাল জামী, শিল্পী ও গবেষক অরূপ রাহী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ফেরদৌস আরা রুমি।