রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মোট ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতদের বেশিরভাগেরই এক্সটার্নাল বার্ন কম ছিল। তবে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় আহত ও মৃতদের ইন্টার্নাল বার্ন হয়েছে বলে ধারণা করছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের শারীরিক অবস্থান বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রতে (আইসিইউ) ভর্তি। বাকিরা পোস্ট অপারেটিভ সেন্টারে রয়েছে। তাদের এক্সটার্নাল বার্ন মারাত্মক নয়। তবে সকলের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে এবং ইন্টার্নাল বার্ন হয়েছে। এই মুহূর্তে সবার অক্সিজেন সেচুরেশন ভালো রয়েছে। তবে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পার না হলে বোঝা যাবে না। তারা প্রত্যেকে কার্বন মনোক্সাইড ইনফেল করেছেন। এটি মারাত্মক বিষাক্ত। এটি ইন্টার্নাল অর্গানগুলোকে নষ্ট করে দেয়। অক্সিজেন গ্রহণে বাধা প্রদান করে। ফলে যতক্ষণ না এই গ্যাস বের হচ্ছে রোগীরা শঙ্কামুক্ত নয়। যে কারণে আমরা স্পটে যাদের মৃত পেয়েছি তাদের এক্সটার্নাল বার্ন খুব বেশি ছিল না।
তিনি আরও বলেন, তরুণদের শরীর থেকে এটি দ্রুত ক্লেয়ার হয়। তবে কারো যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগ থাকে তাহলে সে সহজে কার্বন মনোক্সাইড মুক্ত হতে পারেন না। এর সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য যদি অর্গান ফেইলিউর ঘটে তবে তার মেডিকেল প্রবলেম ডেভেলপ ঘটবে। তখন তাদের আমরা মেডিসিন বিভাগে রেফার করব। আমরা সর্বোচ্চ ভালোটা আশা করছি। তবে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
কার্বন মনোক্সাইডের সম্ভাব্য উৎসের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা হয় তাতে হাইড্রো কার্বন থাকে। এছাড়া মিথেন গ্যাস পুড়ে কার্বন মনোক্সাইড ও ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। হাইড্রো কার্বন থেকে ডাই ও মনোঅক্সাইড তৈরি হয়। এটি মারাত্মক বিষাক্ত, এমনকি তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে। আমরা ধারণা করছি কার্বন মনোক্সাইডের কারণেই এত অধিক মৃত্যু হয়েছে।
মৃত ও আমাদের এখানে ভর্তিদের অবস্থা দেখে এমন মনে হয়েছে। আমাদের এখানে সবাই অল্প বার্ন নিয়ে ভর্তি। এছাড়া বাকিরা যারা ছাড়া পেয়েছে তাদের হাতে বা অন্যান্য বহিঃঅঙ্গে সামান্য বার্ন ছিল বলেও জানান তিনি।
বোর্ড গঠন বিষয়ে ডা. তানভীর বলেন, রাতেই আমাদের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের সবাই রোগীদের দেখে গেছেন। আমাদের সকল সেটআপ রয়েছে। প্রতিদিন আমরা গড়ে ১২০ জন রোগী ডিল করে থাকি।
বার্নের অনেকগুলো ক্রাইটেরিয়া রয়েছে জানিয়ে এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, আমরা পানি ও আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে অভ্যস্ত ছিলাম। এখন আমাদের দেশে বৈদ্যুতিক বার্ন ও এই ধরনের বিষক্রিয়ার বার্ন বাড়ছে। এ ধরনের বার্ন শতাংশ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। এক সময় এসিড বার্ন ছিল। অল্প এসিড ছুড়ে মারতো, কিন্তু বিকৃতি হতো ভয়ানক পর্যায়ের। তেমনই বৈদ্যুতিক বার্নে বাইরে অল্প পুড়ে অথচ হার্ট, কিডনি ও লিভার পুড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় বদ্ধ ঘরে সব অক্সিজেন পুড়ে যায়, বাইরে থেকে কোন অক্সিজেন ঢুকতে না পারার ফলে কেউ আটক পড়লে ওই ধোঁয়ায় তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, কালো ধোঁয়া গলা দিয়ে প্রবেশের সময় নরম টিস্যু পুড়ে যায়। কালো ধোয়ায় শ্বাস শরীরে বিষের মত প্রবেশ করে মৃত্যু ত্বরিত করে।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘যারা আগুনে পুড়ে মারা যান, তাদের শরীরের কোনো না কোনো অঙ্গের ভেতরে তাপে বা পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। আবার আগুনের ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নিতে না পারায় কারো কারো মৃত্যু হয়।’
‘শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া মানুষ এক দণ্ড বাঁচতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেনের। আগুনের ধোঁয়ায় কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়। এই কার্বন মনোক্সাইডের মধ্যে শ্বাস নিতে গেলে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং সেক্ষেত্রে মানুষ মারা যায়।’
শুক্রবার, ০১ মার্চ ২০২৪
রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মোট ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতদের বেশিরভাগেরই এক্সটার্নাল বার্ন কম ছিল। তবে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় আহত ও মৃতদের ইন্টার্নাল বার্ন হয়েছে বলে ধারণা করছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের শারীরিক অবস্থান বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রতে (আইসিইউ) ভর্তি। বাকিরা পোস্ট অপারেটিভ সেন্টারে রয়েছে। তাদের এক্সটার্নাল বার্ন মারাত্মক নয়। তবে সকলের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে এবং ইন্টার্নাল বার্ন হয়েছে। এই মুহূর্তে সবার অক্সিজেন সেচুরেশন ভালো রয়েছে। তবে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পার না হলে বোঝা যাবে না। তারা প্রত্যেকে কার্বন মনোক্সাইড ইনফেল করেছেন। এটি মারাত্মক বিষাক্ত। এটি ইন্টার্নাল অর্গানগুলোকে নষ্ট করে দেয়। অক্সিজেন গ্রহণে বাধা প্রদান করে। ফলে যতক্ষণ না এই গ্যাস বের হচ্ছে রোগীরা শঙ্কামুক্ত নয়। যে কারণে আমরা স্পটে যাদের মৃত পেয়েছি তাদের এক্সটার্নাল বার্ন খুব বেশি ছিল না।
তিনি আরও বলেন, তরুণদের শরীর থেকে এটি দ্রুত ক্লেয়ার হয়। তবে কারো যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগ থাকে তাহলে সে সহজে কার্বন মনোক্সাইড মুক্ত হতে পারেন না। এর সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য যদি অর্গান ফেইলিউর ঘটে তবে তার মেডিকেল প্রবলেম ডেভেলপ ঘটবে। তখন তাদের আমরা মেডিসিন বিভাগে রেফার করব। আমরা সর্বোচ্চ ভালোটা আশা করছি। তবে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
কার্বন মনোক্সাইডের সম্ভাব্য উৎসের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা হয় তাতে হাইড্রো কার্বন থাকে। এছাড়া মিথেন গ্যাস পুড়ে কার্বন মনোক্সাইড ও ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। হাইড্রো কার্বন থেকে ডাই ও মনোঅক্সাইড তৈরি হয়। এটি মারাত্মক বিষাক্ত, এমনকি তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে। আমরা ধারণা করছি কার্বন মনোক্সাইডের কারণেই এত অধিক মৃত্যু হয়েছে।
মৃত ও আমাদের এখানে ভর্তিদের অবস্থা দেখে এমন মনে হয়েছে। আমাদের এখানে সবাই অল্প বার্ন নিয়ে ভর্তি। এছাড়া বাকিরা যারা ছাড়া পেয়েছে তাদের হাতে বা অন্যান্য বহিঃঅঙ্গে সামান্য বার্ন ছিল বলেও জানান তিনি।
বোর্ড গঠন বিষয়ে ডা. তানভীর বলেন, রাতেই আমাদের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের সবাই রোগীদের দেখে গেছেন। আমাদের সকল সেটআপ রয়েছে। প্রতিদিন আমরা গড়ে ১২০ জন রোগী ডিল করে থাকি।
বার্নের অনেকগুলো ক্রাইটেরিয়া রয়েছে জানিয়ে এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, আমরা পানি ও আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে অভ্যস্ত ছিলাম। এখন আমাদের দেশে বৈদ্যুতিক বার্ন ও এই ধরনের বিষক্রিয়ার বার্ন বাড়ছে। এ ধরনের বার্ন শতাংশ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। এক সময় এসিড বার্ন ছিল। অল্প এসিড ছুড়ে মারতো, কিন্তু বিকৃতি হতো ভয়ানক পর্যায়ের। তেমনই বৈদ্যুতিক বার্নে বাইরে অল্প পুড়ে অথচ হার্ট, কিডনি ও লিভার পুড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় বদ্ধ ঘরে সব অক্সিজেন পুড়ে যায়, বাইরে থেকে কোন অক্সিজেন ঢুকতে না পারার ফলে কেউ আটক পড়লে ওই ধোঁয়ায় তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, কালো ধোঁয়া গলা দিয়ে প্রবেশের সময় নরম টিস্যু পুড়ে যায়। কালো ধোয়ায় শ্বাস শরীরে বিষের মত প্রবেশ করে মৃত্যু ত্বরিত করে।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘যারা আগুনে পুড়ে মারা যান, তাদের শরীরের কোনো না কোনো অঙ্গের ভেতরে তাপে বা পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। আবার আগুনের ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নিতে না পারায় কারো কারো মৃত্যু হয়।’
‘শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া মানুষ এক দণ্ড বাঁচতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেনের। আগুনের ধোঁয়ায় কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়। এই কার্বন মনোক্সাইডের মধ্যে শ্বাস নিতে গেলে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং সেক্ষেত্রে মানুষ মারা যায়।’