alt

জাতীয়

সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আইনমন্ত্রী-সংবাদ

সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটায়। এখন থেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অর্থাৎ ৯ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি ৯৩ শতাংশই কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ’ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদসমূহ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানান। এ সময় জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন’ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিল করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সেটিও ‘রহিত’ বা বাতিল করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিবিধবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরি বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

সরকারি চাকরিতে মোট ২০টি গ্রেড আছে। সরাসরি নিয়োগ হয় ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডে। বাকি গ্রেডগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

সরকারের করণীয় সম্পন্ন
কোটা নিয়ে এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের করনীয় সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘যা যা করণীয় ছিলো...আমরা কোটা সংস্কারের যে রায় আপিল বিভাগ দিয়েছে তা প্রতিপালন করেছি। আমরা....একটি কথা ছিল...একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত...আমরা এক সদস্য বিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তিনি কাজ শুরু করেছেন। অবস্থা একটু শান্ত হলেই তিনি স্পট ঘুরে দেখবেন।’

সহিংসতা যেসব ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আর সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন তাদের ব্যাপারে যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে সেটি আমরা অবশ্যই দেখবো।’ এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নারী কোটা বাতিল হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সর্বোচ্চ আদালত-আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছে। আপিল বিভাগের রায়ে একটা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তারা যেভাবে রায় দিয়েছেন, আমরা সেভাবেই প্রতিপালন করেছি।’

শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান
কোটা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের আরো কয়েকটি দাবি রয়েছে সেগুলো মানা না হলে তারা ফের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে- সেই বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে। আমরা সংস্কার করেছি। এখন তাদেরও একটা কর্তব্য আছে...যে জনগণ মনে করে, তাদের করা উচিত। সেটি হলো তাদের স্ব-স্ব জায়গায় গিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।’

সরকারের যেসব নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেগুলোতে কোটা পদ্ধতি সংশোধনের এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে কী না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপনে পরিস্কার বলা আছে-এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আমার মনে হয়, এই শেষ লাইনটা জনপ্রশাসনমন্ত্রী আছেন...তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।’

ভবিষ্যতে এই প্রজ্ঞাপন পাল্টানোর সুযোগ রয়েছে-এ সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় দিয়েছে....সুদূর প্রসারী; তার কারণ হলো- সর্বোচ্চ আদালত এখানে শেষ করে দিতেন তাহলে এটা বদলাতে হলো আবারও রিভিউ করতে হতো......ফিউচারে যদি প্রয়োজন হয় তখন দেখা যাবে।’

এই প্রজ্ঞাপন আইনি রূপ পাবে না
কোটা আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী এই প্রজ্ঞাপনকে আইনে রুপ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দিন, কখনো আইন ছিল না। এটা সব সময়...ইটস এ পলিসি ম্যাটার অব দ্যা গভর্মেন্ট এবং এটা সবসময় পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন দ্বারাই করা হয়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অন্যতম একটি দাবি হলো- সব কোটা বাতিল এবং এটিকে স্থায়ী রুপ দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে আইন করা।

মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতির কোটা
মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা এখন কোটার সুবিধা পাবে কিনা-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হলো- সর্বোচ্চ আদালত। তারা এই রায় দিয়েছেন। এই রায়ের দাঁড়ি-কমা, সেমিকোলনও বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।’

শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা শুধু কোটা বিরোধী বা কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল না। এটা- জঙ্গিরা, যারা বিএনপি-জামায়াত, ইসলামি ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের যারা জঙ্গি হয়ে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে দেশ নষ্ট করা চেষ্টা করছে।’

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে শান্তিপূর্ণ মুবমেন্টের মধ্যে সহিংসতা ঢুকানোর যে পরিকল্পনা....কাজেই তাদের মধ্যে প্রিপারেশন ছিলো যে তারা ডাটা সেন্টার জালিয়ে দেবে, ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে আমরাও বিপদে পড়েছি, গ্লোবালি যোগাযোগ করতে পারছি না।’

সহিংসতাকারীরা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ‘ইন্টারনেটকে ইন্টারাপ্ট’ করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কিন্তু বেক-আপ রেখেছিল, এটিরই প্রতিফলন হিসেবে বিশ^ব্যাপী ভুল তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে। আমি আজকে ফ্রান্সের একটি গণমাধ্যমে দেখলাম টোটালি একপেশে একটি প্রতিবেদন। ছাত্রদের সঙ্গে যে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে সেই তথ্য নেই। ছাত্রদের সঙ্গে যে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়েছে সেই তথ্য কিন্তু নেই। তারা যে সন্ত্রাস করেছে সেই তথ্য নেই।’

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সহিংসতা হলে সেই বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে আগাম তথ্য ছিল কিনা এবং না থাকলে ব্যর্থতার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যা বলেছিল তাই কিন্তু হলো। সরকার বলেছিল, একটু ধের্য ধরুন, আদালতে আছে, এটা সমাধান হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীও এই কথা বলেছেন, তাই তো হলো। তারা যে অধর্য্য হলো সেই সুযোগই সন্ত্রাসীরা নিয়েছে।’

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানাড়ে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এক পর্যায়ে সরকার ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে পুরো কোটাই বাতিল করে দেয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বহাল থাকে। এই দুই শ্রেণীতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ কিছু কোটা রয়েছে।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন ২০২১ সালে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।

সর্বশেষ সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় গত ২১ জুলাই বাতিল করে রায় আপিল বিভাগ। এই রায়ের ফলে এখন কোটা থাকছে মাত্র ৭ শতাংশ। আগে এই কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ।

ছবি

রাখাইনে তীব্র হচ্ছে সংঘাত, বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত : গণতদন্ত কমিটি

মুক্তিযুদ্ধ সংবিধান ও জাতীয় সংগীতকে কটাক্ষ : ৪৮ নাগরিকের নিন্দা ও প্রতিবাদ

বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কিছু করবে না অন্তর্বর্তী সরকার : ধর্ম উপদেষ্টা

গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরে শিগগিরই কমিটি : উপদেষ্টা নাহিদ

ছবি

সীতাকুণ্ডে শিপ ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ১২

বন্যায় ধানের আবাদ ও উৎপাদন কমতে পারে

ছবি

দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে লক্ষ্মীপুর, নানা দুর্ভোগে বানবাসিরা

ছবি

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি প্রবাসী অধিকার আন্দোলনের

ছবি

নিউইয়র্কে মোদি-ইউনূস বৈঠকের প্রস্তাব, নয়াদিল্লির সিদ্ধান্ত অনিশ্চিত

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম

সিলেটে ভারতে অনুপ্রবেশকালে আওয়ামী লীগ নেতা আটক

পীরগাছায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার নামে বিএনপি আহবায়কের মামলা, পাল্টা মামলা ও গ্রেপ্তারের দাবীতে থানার সামনে ছাত্রদের অবস্থান

মুক্তিযুদ্ধ সংবিধান ও জাতীয় সংগীতকে কটাক্ষ: ৪৮ বিশিষ্ট নাগরিকের নিন্দা ও প্রতিবাদ

ছবি

আন্দোলনে আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভার্সিটির নতুন রেজিস্ট্রার ডাঃ নজরুল

ছবি

আমিরাতে বিক্ষোভ : ক্ষমা পাওয়া ৫৭ বাংলাদেশির মধ্যে ১৪ জন দেশে ফিরবেন আজ

ছবি

সীমান্তে ফেলানীর মতো হত্যাকাণ্ড আর চাই না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কিছু করবে না অন্তর্বর্তী সরকার

সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত : গণতদন্ত কমিটি

ছবি

নিউ ইয়র্কে মুহাম্মদ ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা, আওয়ামী লীগের বিক্ষোভের প্রস্তুতি

ছবি

গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরে শিগগিরই কমিটি : উপদেষ্টা নাহিদ

দলীয় রাজনীতির কারণেই শ্রমিকদের বিক্ষোভ

ছবি

বাজারে স্বস্তি নেই, বেড়েই চলেছে পণ্যের দাম

ছবি

আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হতে হবে : পিটিআইকে প্রধান উপদেষ্টা

সিলেটে ‘নিরাপত্তার কারণে’ স্থগিত ‘সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’

ছবি

অধ্যাপক ডা.আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের নতুন পরিচালক

ছবি

‘চাকরীর আশায় কতোই পরীক্ষা দিয়েছি, শেষ পর্যন্ত ভাগ্য আমার সাথে এমন করলো’

ছবি

কুমিল্লায় সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিব ও সাবেক এমপি বাহারসহ ৪৩৩ জনের নামে মামলা

ছবি

সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান ৭ দিনের রিমান্ডে

ছবি

তিস্তা সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ: ইউনূস

ছবি

সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান গ্রেপ্তার

ছবি

একযোগে জাতীয় সংগীত গেয়ে প্রতিবাদ জানাল উদীচী

ছবি

সেন্টমার্টিনে যেতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি পরিবেশ মন্ত্রণালয়

ছবি

‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘শহীদি মার্চে’ ধ্বনিত শ্লোগান

অধ্যক্ষকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে স্বাক্ষর নেয়া হলো পদত্যাগপত্রে

tab

জাতীয়

সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আইনমন্ত্রী-সংবাদ

মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটায়। এখন থেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অর্থাৎ ৯ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি ৯৩ শতাংশই কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ’ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদসমূহ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানান। এ সময় জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন’ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিল করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সেটিও ‘রহিত’ বা বাতিল করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিবিধবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরি বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

সরকারি চাকরিতে মোট ২০টি গ্রেড আছে। সরাসরি নিয়োগ হয় ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডে। বাকি গ্রেডগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

সরকারের করণীয় সম্পন্ন
কোটা নিয়ে এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের করনীয় সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘যা যা করণীয় ছিলো...আমরা কোটা সংস্কারের যে রায় আপিল বিভাগ দিয়েছে তা প্রতিপালন করেছি। আমরা....একটি কথা ছিল...একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত...আমরা এক সদস্য বিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তিনি কাজ শুরু করেছেন। অবস্থা একটু শান্ত হলেই তিনি স্পট ঘুরে দেখবেন।’

সহিংসতা যেসব ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আর সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন তাদের ব্যাপারে যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে সেটি আমরা অবশ্যই দেখবো।’ এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নারী কোটা বাতিল হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সর্বোচ্চ আদালত-আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছে। আপিল বিভাগের রায়ে একটা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তারা যেভাবে রায় দিয়েছেন, আমরা সেভাবেই প্রতিপালন করেছি।’

শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান
কোটা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের আরো কয়েকটি দাবি রয়েছে সেগুলো মানা না হলে তারা ফের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে- সেই বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে। আমরা সংস্কার করেছি। এখন তাদেরও একটা কর্তব্য আছে...যে জনগণ মনে করে, তাদের করা উচিত। সেটি হলো তাদের স্ব-স্ব জায়গায় গিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।’

সরকারের যেসব নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেগুলোতে কোটা পদ্ধতি সংশোধনের এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে কী না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপনে পরিস্কার বলা আছে-এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আমার মনে হয়, এই শেষ লাইনটা জনপ্রশাসনমন্ত্রী আছেন...তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।’

ভবিষ্যতে এই প্রজ্ঞাপন পাল্টানোর সুযোগ রয়েছে-এ সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় দিয়েছে....সুদূর প্রসারী; তার কারণ হলো- সর্বোচ্চ আদালত এখানে শেষ করে দিতেন তাহলে এটা বদলাতে হলো আবারও রিভিউ করতে হতো......ফিউচারে যদি প্রয়োজন হয় তখন দেখা যাবে।’

এই প্রজ্ঞাপন আইনি রূপ পাবে না
কোটা আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী এই প্রজ্ঞাপনকে আইনে রুপ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দিন, কখনো আইন ছিল না। এটা সব সময়...ইটস এ পলিসি ম্যাটার অব দ্যা গভর্মেন্ট এবং এটা সবসময় পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন দ্বারাই করা হয়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অন্যতম একটি দাবি হলো- সব কোটা বাতিল এবং এটিকে স্থায়ী রুপ দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে আইন করা।

মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতির কোটা
মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা এখন কোটার সুবিধা পাবে কিনা-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হলো- সর্বোচ্চ আদালত। তারা এই রায় দিয়েছেন। এই রায়ের দাঁড়ি-কমা, সেমিকোলনও বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।’

শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা শুধু কোটা বিরোধী বা কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল না। এটা- জঙ্গিরা, যারা বিএনপি-জামায়াত, ইসলামি ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের যারা জঙ্গি হয়ে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে দেশ নষ্ট করা চেষ্টা করছে।’

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে শান্তিপূর্ণ মুবমেন্টের মধ্যে সহিংসতা ঢুকানোর যে পরিকল্পনা....কাজেই তাদের মধ্যে প্রিপারেশন ছিলো যে তারা ডাটা সেন্টার জালিয়ে দেবে, ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে আমরাও বিপদে পড়েছি, গ্লোবালি যোগাযোগ করতে পারছি না।’

সহিংসতাকারীরা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ‘ইন্টারনেটকে ইন্টারাপ্ট’ করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কিন্তু বেক-আপ রেখেছিল, এটিরই প্রতিফলন হিসেবে বিশ^ব্যাপী ভুল তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে। আমি আজকে ফ্রান্সের একটি গণমাধ্যমে দেখলাম টোটালি একপেশে একটি প্রতিবেদন। ছাত্রদের সঙ্গে যে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে সেই তথ্য নেই। ছাত্রদের সঙ্গে যে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়েছে সেই তথ্য কিন্তু নেই। তারা যে সন্ত্রাস করেছে সেই তথ্য নেই।’

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সহিংসতা হলে সেই বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে আগাম তথ্য ছিল কিনা এবং না থাকলে ব্যর্থতার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যা বলেছিল তাই কিন্তু হলো। সরকার বলেছিল, একটু ধের্য ধরুন, আদালতে আছে, এটা সমাধান হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীও এই কথা বলেছেন, তাই তো হলো। তারা যে অধর্য্য হলো সেই সুযোগই সন্ত্রাসীরা নিয়েছে।’

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানাড়ে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এক পর্যায়ে সরকার ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে পুরো কোটাই বাতিল করে দেয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বহাল থাকে। এই দুই শ্রেণীতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ কিছু কোটা রয়েছে।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন ২০২১ সালে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।

সর্বশেষ সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় গত ২১ জুলাই বাতিল করে রায় আপিল বিভাগ। এই রায়ের ফলে এখন কোটা থাকছে মাত্র ৭ শতাংশ। আগে এই কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ।

back to top