‘অদক্ষতার কারণে সেবার বদলে ক্ষতির মুখে পড়ছে মানুষ’
উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান। তার দাবি, এই কোটার ফলে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসছেন, যা দেশের সেবা কাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘জন-আকাঙ্খা পূরণে প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ এই আয়োজন করে, যারা দীর্ঘদিন ধরে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
মফিজুর রহমান বলেন, “উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদোন্নতির কারণে প্রথম নয় মাসে কোনো কাজ হয় না। কর্মকর্তারা শুধু ফাইল খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। এরপর শেষ তিন মাসে তড়িঘড়ি করে বাজেট খরচ করা হয়। এতে দেশের মানুষ সেবা পাওয়ার পরিবর্তে ক্ষতির মুখে পড়ছে।”
তিনি আরও জানান, সিভিল সার্ভিসে ২৬টি ক্যাডার আছে, যেগুলো নির্দিষ্ট দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করে। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ হওয়ার পরও অন্য ক্যাডারের ওপরে বসে কাজ পরিচালনা করছেন।
“এভাবে কোনো রাষ্ট্র সেবামূলক হতে পারে না,” মন্তব্য করেন তিনি।
মফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের সময় থেকেই পক্ষপাতিত্ব ছিল। “এই কমিশন প্রশাসন ক্যাডারের লোকজন দিয়ে গঠন করা হয়েছে। এমন পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে বৈষম্যের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। তারপরও আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাইনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল সহযোগিতা করে একটি সুন্দর সমাধানে পৌঁছানো।”
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, “৫৩ বছরে সিভিল সার্ভিস প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সব ক্যাডারে বৈষম্য চোখে পড়ছে। প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।”
কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল অভিযোগ করেন, “প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সুদমুক্ত গাড়ি ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যা অন্য ক্যাডারে নেই। এমনকি পদোন্নতিও হচ্ছে রাতের অন্ধকারে। ২৬ ক্যাডারের বদলে ছয়টি গুচ্ছ ক্যাডার করার যে পরিকল্পনা চলছে, সেটি ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করার ষড়যন্ত্র।”
সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, “ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার—এটা যৌক্তিক নয়।”
তিনি সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান মুহিত চৌধুরীর সমালোচনা করে বলেন, “আপনি ২৫ ক্যাডারের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি, যা বড় ভুল। এভাবে সবার মতামত উপেক্ষা করে সুষ্ঠু সংস্কার সম্ভব নয়।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা গুচ্ছ ক্যাডার ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, এটি কার্যকর হলে ক্ষমতা কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্যাডারের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হবে। এতে সেবার মান আরও নিম্নগামী হবে এবং অন্যান্য ক্যাডার আরও বঞ্চনার শিকার হবে।
সেমিনারে বক্তারা সিভিল সার্ভিসে সমতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা দাবি করেন, প্রশাসন ক্যাডারের কোটার কারণে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর। তাই সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য দূর করে একটি সমতাভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
‘অদক্ষতার কারণে সেবার বদলে ক্ষতির মুখে পড়ছে মানুষ’
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান। তার দাবি, এই কোটার ফলে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসছেন, যা দেশের সেবা কাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘জন-আকাঙ্খা পূরণে প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ এই আয়োজন করে, যারা দীর্ঘদিন ধরে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
মফিজুর রহমান বলেন, “উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদোন্নতির কারণে প্রথম নয় মাসে কোনো কাজ হয় না। কর্মকর্তারা শুধু ফাইল খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। এরপর শেষ তিন মাসে তড়িঘড়ি করে বাজেট খরচ করা হয়। এতে দেশের মানুষ সেবা পাওয়ার পরিবর্তে ক্ষতির মুখে পড়ছে।”
তিনি আরও জানান, সিভিল সার্ভিসে ২৬টি ক্যাডার আছে, যেগুলো নির্দিষ্ট দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করে। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ হওয়ার পরও অন্য ক্যাডারের ওপরে বসে কাজ পরিচালনা করছেন।
“এভাবে কোনো রাষ্ট্র সেবামূলক হতে পারে না,” মন্তব্য করেন তিনি।
মফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের সময় থেকেই পক্ষপাতিত্ব ছিল। “এই কমিশন প্রশাসন ক্যাডারের লোকজন দিয়ে গঠন করা হয়েছে। এমন পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে বৈষম্যের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। তারপরও আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাইনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল সহযোগিতা করে একটি সুন্দর সমাধানে পৌঁছানো।”
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, “৫৩ বছরে সিভিল সার্ভিস প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সব ক্যাডারে বৈষম্য চোখে পড়ছে। প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।”
কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল অভিযোগ করেন, “প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সুদমুক্ত গাড়ি ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যা অন্য ক্যাডারে নেই। এমনকি পদোন্নতিও হচ্ছে রাতের অন্ধকারে। ২৬ ক্যাডারের বদলে ছয়টি গুচ্ছ ক্যাডার করার যে পরিকল্পনা চলছে, সেটি ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করার ষড়যন্ত্র।”
সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, “ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার—এটা যৌক্তিক নয়।”
তিনি সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান মুহিত চৌধুরীর সমালোচনা করে বলেন, “আপনি ২৫ ক্যাডারের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি, যা বড় ভুল। এভাবে সবার মতামত উপেক্ষা করে সুষ্ঠু সংস্কার সম্ভব নয়।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা গুচ্ছ ক্যাডার ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, এটি কার্যকর হলে ক্ষমতা কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্যাডারের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হবে। এতে সেবার মান আরও নিম্নগামী হবে এবং অন্যান্য ক্যাডার আরও বঞ্চনার শিকার হবে।
সেমিনারে বক্তারা সিভিল সার্ভিসে সমতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা দাবি করেন, প্রশাসন ক্যাডারের কোটার কারণে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর। তাই সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য দূর করে একটি সমতাভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।