alt

জাতীয়

বনের ক্ষতি ও পরিবেশ সংকট: সরকারি–বেসরকারি প্রকল্পের প্রভাব

সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা জরুরি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, সরকারি ও বেসরকারি মেগা প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশে বনাঞ্চল ব্যাপকভাবে ধ্বংস হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় জনগণের মতামত উপেক্ষা করে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা শুধু বনাঞ্চল ধ্বংস নয়, পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়ানোরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকারখানা, রিসোর্ট, আবাসনসহ নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে বনাঞ্চল সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে। এই অবস্থা মোকাবিলায়, একত্রিত প্রচেষ্টা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শনিবার ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে বন, পাহাড়, উপকূল এবং আদিবাসী অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে পরিবেশ রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা, কিন্তু সরকারি হিসাবে তা মাত্র ১৩ শতাংশ। বাস্তবে তা আরও কম।” তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৫ বছরে পাহাড়ের বনভূমি ৩০ শতাংশ কমে গেছে, এবং এই ক্ষতির জন্য শিল্পায়ন ও নগরায়ণের মতো কার্যক্রম দায়ী। এছাড়া, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলোও বনভূমিতে বিশাল প্রকল্প তৈরি করেছে, যা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, “লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সুন্দরবন বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিংড়ি চাষের প্রসারের কারণে উপকূলে লবণাক্ততার সমস্যা মারাত্মক হয়ে উঠেছে, এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে এই ঝুঁকি আরও বাড়ছে।” তিনি বলেন, উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বাড়ছে, এবং প্রতিবছর পাহাড়ধস ও বন্যার প্রকোপ বেড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, “অদূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে ভূপ্রকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভূমি দখল ও দূষণের কারণে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে স্থানীয় জনগণের মতামত নেওয়া জরুরি। বিশেষায়িত অঞ্চলের জন্য প্রকল্প গ্রহণে স্থানীয় জনগণের চিরায়ত জ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন মন্তব্য করেন, “আদিবাসীরা ৮৫ শতাংশ বন রক্ষা করে, কিন্তু তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বন ও ভূমি বিপর্যয় রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী উপকূলের পরিবেশ সংকট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “উপকূলের চারপাশে পানি থাকলেও সেখানে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। পানির অভাবে স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিচ্ছে, এবং নদী দূষণের কারণে নদীগুলো মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে।” তিনি উপকূল রক্ষায় অনিয়ম বন্ধ করার এবং নিষিদ্ধ জাল নির্মূল করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবনায় বলা হয়, “রাজনৈতিক দলগুলিকে পরিবেশ রক্ষার প্রতি মনোযোগী করতে বাপা প্রয়াস অব্যাহত রাখবে এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ দেবে।” এছাড়া, পরিবেশ সমস্যার সমাধানে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়।

পরিবেশের সংকট মোকাবিলা এবং বন, পাহাড়, উপকূলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়।

ছবি

সুন্দরবনে বেড়েছে হরিণ, তবে থেমে নেই শিকার

প্রশাসনের সব স্তরে ‘অনিয়ম ও অসমতা’ নিরসনের দাবি

বাংলাদেশকে নিয়ে ২০২৪ সালে ভারতীয় অপতথ্যের প্রবাহ: বিশ্লেষণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

ছবি

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের সংকট: আদিবাসী গ্রাফিতি বিতর্কে প্রতিবাদ

ছবি

উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটার সমালোচনা

ছবি

এক বছরে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, মেয়েদের সংখ্যা বেশি

ছবি

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরও ৪৭ বাংলাদেশি

ছবি

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

ছবি

সাড়ে পাঁচ মাসে ৪০ মাজারে হামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ : প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

পদ্ধতিগত সংস্কার ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন থামবে না: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্তে অভিমত নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

অবিবেচকভাবে ভ্যাট বাড়ানোয় আশ্চার্য হয়েছি : দেবপ্রিয়

ছবি

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ গ্রেপ্তার

ছবি

পুলিশের বহরে যুক্ত হচ্ছে রাশিয়ান হেলিকপ্টার

ছবি

প্রতিদিন ফ্যাসিবাদ পুনরুৎপাদিত হচ্ছে, সতর্ক থাকতে বললেন সলিমুল্লাহ খান

ছবি

‘আদিবাসী’ শব্দ সরানো কর্তৃত্ববাদের এজেন্ডা বহাল রাখার ঘৃণ্য প্রয়াস: টিআইবি

ছবি

বাংলাদেশের জন্য পাঁচ বড় ঝুঁকি, শীর্ষে মূল্যস্ফীতি: ডব্লিউইএফ

ছবি

মায়ানমার থেকে এলো ২২ হাজার মেট্রিক টন চাল

ছবি

পুলিশের গুলিতেই মুগ্ধের মৃত্যু হয়েছে: স্নিগ্ধ

জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় যা আছে

ছবি

ঘোষণাপত্র: আরও আলোচনা চান সবাই

ছবি

সুইজারল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন

ছবি

‘ঢাকা-দিল্লির চুক্তিগুলো ভারত প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ করে না’

সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও বিচার দাবিতে ‘মার্চ ফর ফেলানী’ শুরু

ছবি

‘সংখ্যালঘু’ শিক্ষার্থীদের সমাবেশে হামলা, নিন্দা জানিয়ে বিচারের আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের

ছবি

‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ, ছত্রভঙ্গ

ছবি

পুলিশ সংস্কারে বিশেষায়িত দলের সুপারিশ

ছবি

‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি বাদ: প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা

পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ চায় সংস্কার কমিশন

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে নির্বাচন বাতিলের সুপারিশ

ছবি

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন, তিন মূলনীতি বাদ, নতুন চার মূলনীতির সুপারিশ

এবার গণঅভ্যুত্থানের সনদ, তার ভিত্তিতেই নির্বাচন: ইউনূস

ছবি

‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ বদলে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ প্রস্তাব

ছবি

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ও প্রধানমন্ত্রীত্বের সীমা সংক্রান্ত সুপারিশ পেশ

ছবি

জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধরে রাখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা

tab

জাতীয়

বনের ক্ষতি ও পরিবেশ সংকট: সরকারি–বেসরকারি প্রকল্পের প্রভাব

সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা জরুরি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, সরকারি ও বেসরকারি মেগা প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশে বনাঞ্চল ব্যাপকভাবে ধ্বংস হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় জনগণের মতামত উপেক্ষা করে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা শুধু বনাঞ্চল ধ্বংস নয়, পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়ানোরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকারখানা, রিসোর্ট, আবাসনসহ নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে বনাঞ্চল সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে। এই অবস্থা মোকাবিলায়, একত্রিত প্রচেষ্টা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শনিবার ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে বন, পাহাড়, উপকূল এবং আদিবাসী অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে পরিবেশ রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা, কিন্তু সরকারি হিসাবে তা মাত্র ১৩ শতাংশ। বাস্তবে তা আরও কম।” তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৫ বছরে পাহাড়ের বনভূমি ৩০ শতাংশ কমে গেছে, এবং এই ক্ষতির জন্য শিল্পায়ন ও নগরায়ণের মতো কার্যক্রম দায়ী। এছাড়া, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলোও বনভূমিতে বিশাল প্রকল্প তৈরি করেছে, যা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, “লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সুন্দরবন বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিংড়ি চাষের প্রসারের কারণে উপকূলে লবণাক্ততার সমস্যা মারাত্মক হয়ে উঠেছে, এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে এই ঝুঁকি আরও বাড়ছে।” তিনি বলেন, উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বাড়ছে, এবং প্রতিবছর পাহাড়ধস ও বন্যার প্রকোপ বেড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, “অদূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে ভূপ্রকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভূমি দখল ও দূষণের কারণে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে স্থানীয় জনগণের মতামত নেওয়া জরুরি। বিশেষায়িত অঞ্চলের জন্য প্রকল্প গ্রহণে স্থানীয় জনগণের চিরায়ত জ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন মন্তব্য করেন, “আদিবাসীরা ৮৫ শতাংশ বন রক্ষা করে, কিন্তু তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বন ও ভূমি বিপর্যয় রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী উপকূলের পরিবেশ সংকট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “উপকূলের চারপাশে পানি থাকলেও সেখানে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। পানির অভাবে স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিচ্ছে, এবং নদী দূষণের কারণে নদীগুলো মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে।” তিনি উপকূল রক্ষায় অনিয়ম বন্ধ করার এবং নিষিদ্ধ জাল নির্মূল করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবনায় বলা হয়, “রাজনৈতিক দলগুলিকে পরিবেশ রক্ষার প্রতি মনোযোগী করতে বাপা প্রয়াস অব্যাহত রাখবে এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ দেবে।” এছাড়া, পরিবেশ সমস্যার সমাধানে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়।

পরিবেশের সংকট মোকাবিলা এবং বন, পাহাড়, উপকূলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়।

back to top