সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতির দাবিতে উত্তাল প্রতিবাদ সভা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ নামে একটি নাম-না-জানা সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী গ্রাফিতি অপসারণ করা হলো। শনিবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’র আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেন, “যদি সরকার এই ঘটনার পর দুঃখপ্রকাশ করতে পারে, তাহলে এই সংগঠনের দাবির প্রতি এত দ্রুত কেন সাড়া দেওয়া হলো? সরকারকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে হবে।”
এই সমাবেশটি আয়োজন করা হয় আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে এবং গত বুধবার মতিঝিলে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে।
‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ নামের সংগঠনটি ১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ঘেরাও করে পাঠ্যবইয়ের পেছনের মলাট থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি অপসারণসহ পাঁচ দফা দাবি তোলে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সেদিন রাতেই বইটির অনলাইন সংস্করণ থেকে গ্রাফিতি সরিয়ে নেওয়া হয়।
তবে আদিবাসী ছাত্র জনতার দাবি, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ এবং চাপের মুখে নেওয়া হয়েছে। গ্রাফিতি অপসারণের প্রতিবাদ জানাতে বুধবার পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র কর্মীরা সেখানে হামলা চালায়। এ হামলায় ২১ জনের বেশি আহত হন।
সমাবেশে জোবাইদা নাসরীন বলেন, “একটি সংগঠন যারা নিজেদের পরিচিতি দিয়ে আমাদের সামনে নতুন এসেছে, তাদের দাবিতে এভাবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন? এটি শুধু আদিবাসীদের উপর নিপীড়নের দৃষ্টান্ত নয়, বরং বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক আদর্শের বিপরীত। সংবিধান সংস্কারে বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এই নিপীড়ন তার বিপরীতে কাজ করছে।”
অন্যদিকে, আইনজীবী নিকোলাস চাকমা বলেন, “পাঠ্যপুস্তকে কী রাখা হবে তা এনসিটিবির যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। তাহলে চিন্তাভাবনা করেই গ্রাফিতিটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। হঠাৎ করে একটি সংগঠনের চাপে সেটি সরানো হলো কেন?”
১. পাঠ্যবই থেকে সরানো গ্রাফিতি পুনর্বহাল করতে হবে।
২. আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩. বুধবারের হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, “এই ঘটনা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না দিয়ে এভাবে তাদের ন্যায্য দাবিকে অবদমিত করার চেষ্টা চললে জনগণ তা মেনে নেবে না।”
আদিবাসী ছাত্র জনতার নেতা অলিক মৃ বলেন, “হামলাকারীদের নেতৃত্বদানকারী এখনও বিভিন্ন টক শোতে অংশ নিচ্ছেন, অথচ তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। সরকার কী কারণে তাকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হচ্ছে? তার কি এমন শক্তি রয়েছে যে রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পাচ্ছে?”
তিনি আরও দাবি করেন, “যতক্ষণ না এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এটা শুধু আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার লড়াই নয়, এটা ন্যায্যতার প্রশ্ন।”
সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না আসলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্রাফিতি সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল উগ্রবাদ এড়াতে। তবে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা এবং দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা একমত হন যে, সংবিধানের বহুত্ববাদী চেতনাকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্রকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। তারা জানান, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং পাঠ্যবইয়ে তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির যথাযথ স্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এই আন্দোলন এখন শুধু আদিবাসী ছাত্র জনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রম, সংস্কৃতি ও সংবিধানের অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করছে।
সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতির দাবিতে উত্তাল প্রতিবাদ সভা
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ নামে একটি নাম-না-জানা সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী গ্রাফিতি অপসারণ করা হলো। শনিবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’র আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেন, “যদি সরকার এই ঘটনার পর দুঃখপ্রকাশ করতে পারে, তাহলে এই সংগঠনের দাবির প্রতি এত দ্রুত কেন সাড়া দেওয়া হলো? সরকারকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে হবে।”
এই সমাবেশটি আয়োজন করা হয় আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে এবং গত বুধবার মতিঝিলে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে।
‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ নামের সংগঠনটি ১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ঘেরাও করে পাঠ্যবইয়ের পেছনের মলাট থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি অপসারণসহ পাঁচ দফা দাবি তোলে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সেদিন রাতেই বইটির অনলাইন সংস্করণ থেকে গ্রাফিতি সরিয়ে নেওয়া হয়।
তবে আদিবাসী ছাত্র জনতার দাবি, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ এবং চাপের মুখে নেওয়া হয়েছে। গ্রাফিতি অপসারণের প্রতিবাদ জানাতে বুধবার পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র কর্মীরা সেখানে হামলা চালায়। এ হামলায় ২১ জনের বেশি আহত হন।
সমাবেশে জোবাইদা নাসরীন বলেন, “একটি সংগঠন যারা নিজেদের পরিচিতি দিয়ে আমাদের সামনে নতুন এসেছে, তাদের দাবিতে এভাবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন? এটি শুধু আদিবাসীদের উপর নিপীড়নের দৃষ্টান্ত নয়, বরং বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক আদর্শের বিপরীত। সংবিধান সংস্কারে বহুত্ববাদের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এই নিপীড়ন তার বিপরীতে কাজ করছে।”
অন্যদিকে, আইনজীবী নিকোলাস চাকমা বলেন, “পাঠ্যপুস্তকে কী রাখা হবে তা এনসিটিবির যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। তাহলে চিন্তাভাবনা করেই গ্রাফিতিটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। হঠাৎ করে একটি সংগঠনের চাপে সেটি সরানো হলো কেন?”
১. পাঠ্যবই থেকে সরানো গ্রাফিতি পুনর্বহাল করতে হবে।
২. আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩. বুধবারের হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, “এই ঘটনা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না দিয়ে এভাবে তাদের ন্যায্য দাবিকে অবদমিত করার চেষ্টা চললে জনগণ তা মেনে নেবে না।”
আদিবাসী ছাত্র জনতার নেতা অলিক মৃ বলেন, “হামলাকারীদের নেতৃত্বদানকারী এখনও বিভিন্ন টক শোতে অংশ নিচ্ছেন, অথচ তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। সরকার কী কারণে তাকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হচ্ছে? তার কি এমন শক্তি রয়েছে যে রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পাচ্ছে?”
তিনি আরও দাবি করেন, “যতক্ষণ না এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এটা শুধু আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার লড়াই নয়, এটা ন্যায্যতার প্রশ্ন।”
সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না আসলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্রাফিতি সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল উগ্রবাদ এড়াতে। তবে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা এবং দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা একমত হন যে, সংবিধানের বহুত্ববাদী চেতনাকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্রকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। তারা জানান, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং পাঠ্যবইয়ে তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির যথাযথ স্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এই আন্দোলন এখন শুধু আদিবাসী ছাত্র জনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রম, সংস্কৃতি ও সংবিধানের অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করছে।