২০২৪ সালের ২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান দমন অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সোমবার (১২ মে) ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পরে ট্রাইব্যুনালে সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা ছয় মাস ২৮ দিন তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে ২৪ জুলাইয়ের ঘটনার পেছনে ‘মাস্টারমাইন্ড ও হুকুমদাতা’ হিসেবে শেখ হাসিনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি ছিলেন সুপিরিয়র কমান্ডার এবং প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা।”
তাজুল ইসলাম জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই এক প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আক্রমণ করেন। তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় বাহিনীকে উসকে দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে ব্যাপক সহিংসতা, হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে রূপ নেয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি নিরাপত্তা বাহিনীকে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, শেখ হাসিনার একাধিক টেলিফোন আলাপ তাদের হাতে রয়েছে, যেখানে তিনি হেলিকপ্টার, ড্রোন ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমন করতে বলেন। তিনি স্পষ্টভাবে নিরীহ নাগরিকদের ‘নির্মূল’ করার নির্দেশ দেন।
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অভিযোগ নির্দিষ্ট ঘটনায় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত হলেও, সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
তাজুল ইসলাম আরও জানান, প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা, ২৫ হাজারের বেশি আন্দোলনকারীকে গুলি করে আহত করা, নারীদের ওপর সহিংসতা, শিশুদের টার্গেট করে হত্যা, এমনকি লাশ ও জীবিত মানুষকে একত্র করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ কর্মকাণ্ড তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে।
তিনি বলেন, “আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ময়নাতদন্তেও বাধা দেওয়া হয়েছে। সরকারি স্থাপনায় আগুন দিয়ে সেটার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপাতে শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে বলে টেলিফোন আলাপের রেকর্ড তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে।”
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “যদিও ঘটনাগুলো গণহত্যার মতোই ভয়াবহ, তবুও আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামো অনুসারে এটিকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।”
২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করলেও, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই ট্রাইব্যুনালেই বিচারের উদ্যোগ নেয়।
এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রসিকিউশনের আবেদনের পর গত ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তখন থেকেই তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তর এখন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে।
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২০২৪ সালের ২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান দমন অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সোমবার (১২ মে) ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পরে ট্রাইব্যুনালে সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা ছয় মাস ২৮ দিন তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে ২৪ জুলাইয়ের ঘটনার পেছনে ‘মাস্টারমাইন্ড ও হুকুমদাতা’ হিসেবে শেখ হাসিনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি ছিলেন সুপিরিয়র কমান্ডার এবং প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা।”
তাজুল ইসলাম জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই এক প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আক্রমণ করেন। তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় বাহিনীকে উসকে দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে ব্যাপক সহিংসতা, হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে রূপ নেয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি নিরাপত্তা বাহিনীকে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, শেখ হাসিনার একাধিক টেলিফোন আলাপ তাদের হাতে রয়েছে, যেখানে তিনি হেলিকপ্টার, ড্রোন ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমন করতে বলেন। তিনি স্পষ্টভাবে নিরীহ নাগরিকদের ‘নির্মূল’ করার নির্দেশ দেন।
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অভিযোগ নির্দিষ্ট ঘটনায় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত হলেও, সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
তাজুল ইসলাম আরও জানান, প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা, ২৫ হাজারের বেশি আন্দোলনকারীকে গুলি করে আহত করা, নারীদের ওপর সহিংসতা, শিশুদের টার্গেট করে হত্যা, এমনকি লাশ ও জীবিত মানুষকে একত্র করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ কর্মকাণ্ড তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে।
তিনি বলেন, “আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ময়নাতদন্তেও বাধা দেওয়া হয়েছে। সরকারি স্থাপনায় আগুন দিয়ে সেটার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপাতে শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে বলে টেলিফোন আলাপের রেকর্ড তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে।”
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “যদিও ঘটনাগুলো গণহত্যার মতোই ভয়াবহ, তবুও আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামো অনুসারে এটিকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।”
২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করলেও, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই ট্রাইব্যুনালেই বিচারের উদ্যোগ নেয়।
এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রসিকিউশনের আবেদনের পর গত ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তখন থেকেই তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তর এখন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে।