alt

ঐকমত্য ছাড়াই ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দিনব্যাপী সংলাপ ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয়েছে। সংলাপে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো কীভাবে কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশ এ চারটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে। এ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হলেও ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। এ নিয়ে আলাদা মতামত দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের চার পদ্ধতি প্রস্তাব

দলগুলোকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে অনুরোধ

আলোচনা ব্যর্থ হলেও দুটি বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সাধারণ সম্মতি তৈরি হয়েছে: আলী রীয়াজ

সংবিধানকে স্পর্শ করে না এমন সুপারিশগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব: সালাহউদ্দিন আহমদ

সাংবিধানিক আদেশ সম্ভব না হলে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেয়া যেতে পারে: মো. তাহের

প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে: আখতার হোসেন

বৃহস্পতিবার,(১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ সংলাপ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। বৈঠক শেষে আলী রীয়াজ জানান, সনদের চূড়ান্ত কপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং তাতে সবার মতামতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। দলগুলোকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে দুজন করে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

আলোচনা ব্যর্থ হলেও দুটি বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সাধারণ সম্মতি তৈরি হয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। প্রথমত, সনদের যে সব সুপারিশ সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, যেসব বিষয় সরকারি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোও অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই প্রক্রিয়াগুলো ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। মূল সংকট তৈরি হয়েছে সংবিধান সংশোধনের মতো প্রস্তাবগুলো নিয়ে।

বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের কথা তুলে ধরে, যা ঐকমত্যে পৌঁছানোর পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বিএনপি মনে করে, সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিষয়গুলো আগামী নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা উচিত। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানকে স্পর্শ করে না এমন সুপারিশগুলো নির্বাহী আদেশ ও অধ্যাদেশের মাধ্যমে এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং সরকার তা করতেও পারে। কিন্তু সাংবিধানিক বিষয়গুলো আগামী সংসদের হাতেই থাকা উচিত।’ তিনি প্রস্তাব করেন, দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেবে এবং নির্বাচিত হয়ে এসে তা পূরণ করবে। ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে এমন বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেন তিনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপির আন্তরিকতা নিয়ে সৃষ্ট সন্দেহকে ‘অমূলক’ বলে আখ্যা দেন সালাহউদ্দিন।

জামায়াতে ইসলামী চায় বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারই যেন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, এই আদেশকে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর হিসেবে দেখাতে হবে। যদি সাংবিধানিক আদেশ সম্ভব না হয়, তাহলে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেয়া যেতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আরও এক ধাপ এগিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সনদে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, যা শুধু সংশোধনীর মাধ্যমে টেকসই করা

সম্ভব নয়। তাই একটি গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু না করে ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর ছেড়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, সনদ বাস্তবায়ন আগামী সংসদেরই দায়িত্ব। তিনি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের ধারণাকে ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রস্তাব করেছেন, আগামী সংসদকে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে গঠন করা হোক, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি সংস্কারের কাজও করবে। আর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিশেষ সাংবিধানিক অধ্যাদেশের পক্ষে মত দিয়েছে।

সংলাপে অংশ না নিলেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তাদের পূর্বে পাঠানো লিখিত মতামতে জানিয়েছে, সংবিধান সংশোধনীর মতো বিষয়গুলো নির্বাচিত সংসদের জন্য রেখে দেয়া উচিত।

# চূড়ান্ত সনদে পরিবর্তন ও অঙ্গীকারনামা

ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। পূর্বেকার খসড়ায় সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেয়া, সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলায় নিষেধাজ্ঞা এবং সনদের ব্যাখ্যার ভার সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা নিয়ে বিএনপিসহ একাধিক দল আপত্তি জানায়।

চূড়ান্ত সনদে এ বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়েছে বা পরিবর্তন করা হয়েছে। পরবর্তীতে ৭-দফা অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো সনদটি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলবে না এবং এর বাস্তবায়নে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। আরও বলা হয়, জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে এ সনদকে সংবিধানের তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার অঙ্গীকারও এতে রয়েছে।

# কমিশনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ

অধ্যাপক আলী রীয়াজ স্পষ্ট করে বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষমতা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেই। তাদের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সরকারকে সুপারিশ করা। কমিশন সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেলও গঠন করেছিল, যেখানে সাবেক বিচারপতি এবং আইনজীবীরা ছিলেন।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৩৪টির জন্য সংবিধান সংশোধন, ২১টির জন্য অধ্যাদেশ এবং ৯টির জন্য নির্বাহী আদেশ প্রয়োজন। বাকি ২০টি প্রস্তাবের বাস্তবায়ন কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে সনদে স্বাক্ষর করতে হবে। কিন্তু সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে চলমান এ মতবিরোধ ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর ভবিষ্যতকে এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। সংলাপ কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন সবার দৃষ্টি সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গুরুত্ব আরোপ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের

ছবি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ধর্ম উপদেষ্টার

ছবি

বিদিশার গাড়ি চুরি মামলার আসামিকে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ পরিদর্শক কারাগারে

ছবি

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়লো

ছবি

৪৮তম বিশেষ বিসিএসের ফল: চিকিৎসক নিয়োগে সুপারিশ পেলেন ৩,১২০ জন

ছবি

নেপালে মারধর ও লুটের শিকার এক বাংলাদেশি পরিবার

ছবি

ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ‘ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে’ কমেছে ভোটকক্ষের সংখ্যা

ছবি

নেপালে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

হাই কোর্টের আদেশ: পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ স্থগিত

ছবি

কাতারে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানালো বাংলাদেশ

ছবি

জুলাই সনদ: দলগুলোর সঙ্গে ফের বসবে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

১৬ বছরেই মিলবে জাতীয় পরিচয়পত্র: ইসি

ছবি

২০ জনের হাত বা পা কাটতে হয়েছিল, ট্রাইব্যুনালে চিকিৎসকের ভাষ্য

ছবি

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রেস উইংয়ের বয়ান

ছবি

নেপাল পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখছে ঢাকা, বাংলাদেশীদের বাইরে না বেরুনোর নির্দেশনা

ছবি

‘মঞ্চ ৭১’: এবার গ্রেপ্তার সাবেক সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম

ছবি

দুর্গাপূজা: ৩৩ হাজার পূজা মণ্ডপে ‘পর্যাপ্ত’ নিরাপত্তা থাকবে, বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সাংবাদিকরা স্বাবলম্বী না হলে পাপেট হয়ে যায়: তথ্য উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই সনদ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক, ‘বিশেষ আদেশে’ বাস্তবায়নে মত

মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই: সেনাবাহিনী

মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই: সেনাবাহিনী

ছবি

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুজবের অভিযোগ অস্বীকার সেনাবাহিনীর

ছবি

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান গ্রেপ্তার

ছবি

বদরুদ্দীন উমরের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

ছবি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: ৫২ আসনের সীমানায় ব্যাপক রদবদল

ছবি

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, অবরোধ, সিদ্ধান্তে অনড় ইসি

ছবি

ভাদ্রের তালপাকা গরমে হাঁসফাঁস, আসছে বৃষ্টি

ছবি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার স্বীকারোক্তি: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি

ছবি

ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৫৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৩ জন

ছবি

ঝটিকা মিছিল ও বেআইনি সমাবেশে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ অন্তর্বর্তী সরকারের

ছবি

শহীদ মিনারে সোমবার বদরুদ্দীন উমরকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

ছবি

চলে গেলেন বদরুদ্দীন উমর

ছবি

নির্বাচন ভণ্ডুলের শঙ্কা, সহিংসতা রোধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৩৬৪

ছবি

নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছবি

ঈদে মিলাদুন্নবীতে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

tab

news » national

ঐকমত্য ছাড়াই ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দিনব্যাপী সংলাপ ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয়েছে। সংলাপে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো কীভাবে কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশ এ চারটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে। এ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হলেও ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। এ নিয়ে আলাদা মতামত দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের চার পদ্ধতি প্রস্তাব

দলগুলোকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে অনুরোধ

আলোচনা ব্যর্থ হলেও দুটি বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সাধারণ সম্মতি তৈরি হয়েছে: আলী রীয়াজ

সংবিধানকে স্পর্শ করে না এমন সুপারিশগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব: সালাহউদ্দিন আহমদ

সাংবিধানিক আদেশ সম্ভব না হলে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেয়া যেতে পারে: মো. তাহের

প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে: আখতার হোসেন

বৃহস্পতিবার,(১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ সংলাপ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। বৈঠক শেষে আলী রীয়াজ জানান, সনদের চূড়ান্ত কপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং তাতে সবার মতামতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। দলগুলোকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে দুজন করে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

আলোচনা ব্যর্থ হলেও দুটি বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সাধারণ সম্মতি তৈরি হয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। প্রথমত, সনদের যে সব সুপারিশ সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, যেসব বিষয় সরকারি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোও অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই প্রক্রিয়াগুলো ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। মূল সংকট তৈরি হয়েছে সংবিধান সংশোধনের মতো প্রস্তাবগুলো নিয়ে।

বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের কথা তুলে ধরে, যা ঐকমত্যে পৌঁছানোর পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বিএনপি মনে করে, সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিষয়গুলো আগামী নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা উচিত। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানকে স্পর্শ করে না এমন সুপারিশগুলো নির্বাহী আদেশ ও অধ্যাদেশের মাধ্যমে এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং সরকার তা করতেও পারে। কিন্তু সাংবিধানিক বিষয়গুলো আগামী সংসদের হাতেই থাকা উচিত।’ তিনি প্রস্তাব করেন, দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেবে এবং নির্বাচিত হয়ে এসে তা পূরণ করবে। ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে এমন বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেন তিনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপির আন্তরিকতা নিয়ে সৃষ্ট সন্দেহকে ‘অমূলক’ বলে আখ্যা দেন সালাহউদ্দিন।

জামায়াতে ইসলামী চায় বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারই যেন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, এই আদেশকে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর হিসেবে দেখাতে হবে। যদি সাংবিধানিক আদেশ সম্ভব না হয়, তাহলে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেয়া যেতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আরও এক ধাপ এগিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সনদে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, যা শুধু সংশোধনীর মাধ্যমে টেকসই করা

সম্ভব নয়। তাই একটি গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু না করে ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর ছেড়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, সনদ বাস্তবায়ন আগামী সংসদেরই দায়িত্ব। তিনি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের ধারণাকে ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রস্তাব করেছেন, আগামী সংসদকে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে গঠন করা হোক, যারা রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি সংস্কারের কাজও করবে। আর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিশেষ সাংবিধানিক অধ্যাদেশের পক্ষে মত দিয়েছে।

সংলাপে অংশ না নিলেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তাদের পূর্বে পাঠানো লিখিত মতামতে জানিয়েছে, সংবিধান সংশোধনীর মতো বিষয়গুলো নির্বাচিত সংসদের জন্য রেখে দেয়া উচিত।

# চূড়ান্ত সনদে পরিবর্তন ও অঙ্গীকারনামা

ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। পূর্বেকার খসড়ায় সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেয়া, সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলায় নিষেধাজ্ঞা এবং সনদের ব্যাখ্যার ভার সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা নিয়ে বিএনপিসহ একাধিক দল আপত্তি জানায়।

চূড়ান্ত সনদে এ বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়েছে বা পরিবর্তন করা হয়েছে। পরবর্তীতে ৭-দফা অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো সনদটি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলবে না এবং এর বাস্তবায়নে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। আরও বলা হয়, জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে এ সনদকে সংবিধানের তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার অঙ্গীকারও এতে রয়েছে।

# কমিশনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ

অধ্যাপক আলী রীয়াজ স্পষ্ট করে বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষমতা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেই। তাদের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সরকারকে সুপারিশ করা। কমিশন সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেলও গঠন করেছিল, যেখানে সাবেক বিচারপতি এবং আইনজীবীরা ছিলেন।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৩৪টির জন্য সংবিধান সংশোধন, ২১টির জন্য অধ্যাদেশ এবং ৯টির জন্য নির্বাহী আদেশ প্রয়োজন। বাকি ২০টি প্রস্তাবের বাস্তবায়ন কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে সনদে স্বাক্ষর করতে হবে। কিন্তু সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে চলমান এ মতবিরোধ ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর ভবিষ্যতকে এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। সংলাপ কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন সবার দৃষ্টি সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

back to top