ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মব ভায়োলেন্সের’ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, যে ‘ভয়াবহ পরিস্থিতিতে’ বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে, তাতে গতানুগতিক নির্বাচন করলে কী হবে তা ‘অনুমেয়’; তাই আগামীতে যে কোনো সময় মব সৃষ্টির শঙ্কায় সতর্ক থাকতে হবে।
পোস্টাল ভোটিংকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। অপতথ্য ছড়ানো ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রভাব রুখতেও সচেতন থাকার কথা বলেছেন তারা। এছাড়া কোনো চাপের মুখে শাপলা প্রতীক না দেওয়া এবং পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়া পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রতি অবস্থান না নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন প্রতিনিধিরা।
নির্বাচন কমিশনের সংলাপ
নির্বাচন সামনে রেখে রোববার প্রথমবারের মতো অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপে বসে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সংলাপ শেষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।
নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার—আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে আমন্ত্রিতদের মধ্যে ১২ জন আলোচনায় অংশ নেন।
তাদের মধ্যে ছিলেন—সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাহমুদ হাসানউজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মো. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল ওয়াজেদ, বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি, কবি মোহন রায়হান, পুলিশ রিফর্ম কমিশনের মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জারিফ রহমান, অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস এবং টিআইবি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
সিইসির বক্তব্য
স্বাগত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন উপস্থিতিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,
“আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এ সংলাপ ভূমিকা রাখবে আশা করি। বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনাদের মতামত ইসির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা শুনবো বেশি, বলব কম।”
তিনি আরও বলেন,
“ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আইনি সংস্কারসহ অনেক কাজ শেষ করেছি। সুষ্ঠুভাবে ভোট করার জন্য অনেক এগিয়েছি। এ সংলাপ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। কিছুটা গ্যাপ আছে, আপনারা সেটা পূরণ করবেন।”
প্রবাসীদের জন্য আইটি–সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও আইনে হেফাজতে থাকা লোকজনকেও এবার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
প্রতিনিধিদের মতামত ও পরামর্শ
হুমায়ুন কবীর: সিরাতুল মোস্তাকিমের পথে হাঁটতে হবে
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন,
“৭০–এর নির্বাচন যেমন টার্নিং পয়েন্ট ছিল, এবারের নির্বাচনও টার্নিং পয়েন্ট হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা একেবারেই ভিন্ন। আধুনিক ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার সঙ্গে তাদের মানিয়ে চলতে হবে।”
তিনি নির্বাচন কমিশনকে উচ্চ নৈতিক মানদণ্ডে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন,
“সোজা পথে বা সিরাতুল মোস্তাকিম ধরে হাঁটতে হবে। এবারের ক্যাম্পেইনের ৮০ শতাংশ সোশাল মিডিয়ায় হবে। মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, এআই–জেনারেটেড কনটেন্ট আসবে। ইসিকে কৌশল নিতে হবে।”
রুবায়েত ফেরদৌস: মেরুদণ্ড শক্ত স্বাধীন হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন,
“৫৪ বছরেও ক্ষমতার ট্রানজিশন কেমন হবে তা ঠিক করতে পারিনি। যদি সাহসী হতে পারেন, মেরুদণ্ড থাকে, তাহলে স্বাধীন হতে পারবেন। স্বাধীন হলে জাতিকে ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব।”
তিনি বিশ্বাসযোগ্য ভোটার তালিকা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও আচরণবিধি বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।
মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: গতানুগতিক ভোট নয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন,
“ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে। গতানুগতিক স্টাইলে নির্বাচন করলে কী হবে, তা জানা। এবারের ইসির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ নেই। এটা শক্তি।”
তিনি পোস্টাল ভোটিংকে নতুন চ্যালেঞ্জ আখ্যা দিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। পিআর ভোট পদ্ধতি এখন চালু না করার পরামর্শও দেন।
বদিউজ্জামান: সব আসনে ‘না ভোট’
টিআইবি পরিচালক বদিউজ্জামান বলেন,
“ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন সহজ করা হচ্ছে। এটা উৎসাহিত করবে। ‘না ভোটের’ বিধান শুধু একক প্রার্থীর আসনে নয়, সব আসনে চালু করতে হবে।”
আব্দুল ওয়াজেদ: মব ভায়োলেন্স যে কোনো সময়
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আব্দুল ওয়াজেদ বলেন,
“ইসি তারিখ ঘোষণা করলে পুরো প্রশাসন ইসির অধীনে থাকবে। মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে দেখেছি—মাগুরার সময় সিইসি ঢাকায় ছিলেন। এ রকম পরিস্থিতি যেন না হয়। মব তৈরি হয়ে যেতে পারে।”
রাশেদা কে চৌধুরী: নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
তিনি বলেন,
“অতীতে যারা জিততে পারেনি, নারী ও শিশুর প্রতি তাদের নির্যাতনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। নারী, শিশু, প্রান্তিক ও প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সব আসনে ‘না ভোট’ থাকতে হবে।”
হারুন চৌধুরী: মহিলা বুথে মহিলা পুলিশ
তিনি বলেন,
“নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে মহিলা বুথে মহিলা পুলিশ থাকতে হবে। মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম নিলে ভোটারদের আস্থা বাড়বে।”
অন্যান্য মতামত
সাবেক লেফট্যানেন্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান বাহিনীকে প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেন।
অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান বলেন, আস্থা অর্জনই প্রধান সমস্যা।
কবি মোহন রায়হান বলেন, “শাপলা প্রতীক না দেওয়ায় ইসির কঠোর অবস্থান প্রশংসনীয়।”
বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি বলেন, “আইনের প্রতিফলন ঘটাতে পারলে ইসি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জায়িফ রহমান নির্বিঘ্ন ভোট পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান।
সাংবাদিক সোহরার হোসেন বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হলে পদত্যাগ করা উচিত।”
সমাপনী বক্তব্যে সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন,
“আমরা নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাই। সবাই যাতে দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাই। সবার সহযোগিতা নিয়ে সুন্দর নির্বাচন করব।”
তিনি আরও জানান,
“অনেকের ফোন কল ধরি না। কল ফাঁসের ভয়ে ফোনে কথা বলি না। কিন্তু আমাদের দরজা খোলা। যেকোনো সময়ে সুপারিশ গ্রহণ করব।”
বিকালে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আরও একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মব ভায়োলেন্সের’ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, যে ‘ভয়াবহ পরিস্থিতিতে’ বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে, তাতে গতানুগতিক নির্বাচন করলে কী হবে তা ‘অনুমেয়’; তাই আগামীতে যে কোনো সময় মব সৃষ্টির শঙ্কায় সতর্ক থাকতে হবে।
পোস্টাল ভোটিংকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। অপতথ্য ছড়ানো ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রভাব রুখতেও সচেতন থাকার কথা বলেছেন তারা। এছাড়া কোনো চাপের মুখে শাপলা প্রতীক না দেওয়া এবং পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়া পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রতি অবস্থান না নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন প্রতিনিধিরা।
নির্বাচন কমিশনের সংলাপ
নির্বাচন সামনে রেখে রোববার প্রথমবারের মতো অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপে বসে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সংলাপ শেষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।
নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার—আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে আমন্ত্রিতদের মধ্যে ১২ জন আলোচনায় অংশ নেন।
তাদের মধ্যে ছিলেন—সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাহমুদ হাসানউজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মো. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল ওয়াজেদ, বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি, কবি মোহন রায়হান, পুলিশ রিফর্ম কমিশনের মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জারিফ রহমান, অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস এবং টিআইবি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
সিইসির বক্তব্য
স্বাগত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন উপস্থিতিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,
“আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এ সংলাপ ভূমিকা রাখবে আশা করি। বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনাদের মতামত ইসির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা শুনবো বেশি, বলব কম।”
তিনি আরও বলেন,
“ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আইনি সংস্কারসহ অনেক কাজ শেষ করেছি। সুষ্ঠুভাবে ভোট করার জন্য অনেক এগিয়েছি। এ সংলাপ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। কিছুটা গ্যাপ আছে, আপনারা সেটা পূরণ করবেন।”
প্রবাসীদের জন্য আইটি–সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও আইনে হেফাজতে থাকা লোকজনকেও এবার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
প্রতিনিধিদের মতামত ও পরামর্শ
হুমায়ুন কবীর: সিরাতুল মোস্তাকিমের পথে হাঁটতে হবে
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন,
“৭০–এর নির্বাচন যেমন টার্নিং পয়েন্ট ছিল, এবারের নির্বাচনও টার্নিং পয়েন্ট হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা একেবারেই ভিন্ন। আধুনিক ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার সঙ্গে তাদের মানিয়ে চলতে হবে।”
তিনি নির্বাচন কমিশনকে উচ্চ নৈতিক মানদণ্ডে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন,
“সোজা পথে বা সিরাতুল মোস্তাকিম ধরে হাঁটতে হবে। এবারের ক্যাম্পেইনের ৮০ শতাংশ সোশাল মিডিয়ায় হবে। মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, এআই–জেনারেটেড কনটেন্ট আসবে। ইসিকে কৌশল নিতে হবে।”
রুবায়েত ফেরদৌস: মেরুদণ্ড শক্ত স্বাধীন হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন,
“৫৪ বছরেও ক্ষমতার ট্রানজিশন কেমন হবে তা ঠিক করতে পারিনি। যদি সাহসী হতে পারেন, মেরুদণ্ড থাকে, তাহলে স্বাধীন হতে পারবেন। স্বাধীন হলে জাতিকে ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব।”
তিনি বিশ্বাসযোগ্য ভোটার তালিকা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও আচরণবিধি বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।
মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: গতানুগতিক ভোট নয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন,
“ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হচ্ছে। গতানুগতিক স্টাইলে নির্বাচন করলে কী হবে, তা জানা। এবারের ইসির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ নেই। এটা শক্তি।”
তিনি পোস্টাল ভোটিংকে নতুন চ্যালেঞ্জ আখ্যা দিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। পিআর ভোট পদ্ধতি এখন চালু না করার পরামর্শও দেন।
বদিউজ্জামান: সব আসনে ‘না ভোট’
টিআইবি পরিচালক বদিউজ্জামান বলেন,
“ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন সহজ করা হচ্ছে। এটা উৎসাহিত করবে। ‘না ভোটের’ বিধান শুধু একক প্রার্থীর আসনে নয়, সব আসনে চালু করতে হবে।”
আব্দুল ওয়াজেদ: মব ভায়োলেন্স যে কোনো সময়
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আব্দুল ওয়াজেদ বলেন,
“ইসি তারিখ ঘোষণা করলে পুরো প্রশাসন ইসির অধীনে থাকবে। মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে দেখেছি—মাগুরার সময় সিইসি ঢাকায় ছিলেন। এ রকম পরিস্থিতি যেন না হয়। মব তৈরি হয়ে যেতে পারে।”
রাশেদা কে চৌধুরী: নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
তিনি বলেন,
“অতীতে যারা জিততে পারেনি, নারী ও শিশুর প্রতি তাদের নির্যাতনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। নারী, শিশু, প্রান্তিক ও প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সব আসনে ‘না ভোট’ থাকতে হবে।”
হারুন চৌধুরী: মহিলা বুথে মহিলা পুলিশ
তিনি বলেন,
“নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে মহিলা বুথে মহিলা পুলিশ থাকতে হবে। মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম নিলে ভোটারদের আস্থা বাড়বে।”
অন্যান্য মতামত
সাবেক লেফট্যানেন্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান বাহিনীকে প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেন।
অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান বলেন, আস্থা অর্জনই প্রধান সমস্যা।
কবি মোহন রায়হান বলেন, “শাপলা প্রতীক না দেওয়ায় ইসির কঠোর অবস্থান প্রশংসনীয়।”
বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি বলেন, “আইনের প্রতিফলন ঘটাতে পারলে ইসি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জায়িফ রহমান নির্বিঘ্ন ভোট পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান।
সাংবাদিক সোহরার হোসেন বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হলে পদত্যাগ করা উচিত।”
সমাপনী বক্তব্যে সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন,
“আমরা নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাই। সবাই যাতে দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাই। সবার সহযোগিতা নিয়ে সুন্দর নির্বাচন করব।”
তিনি আরও জানান,
“অনেকের ফোন কল ধরি না। কল ফাঁসের ভয়ে ফোনে কথা বলি না। কিন্তু আমাদের দরজা খোলা। যেকোনো সময়ে সুপারিশ গ্রহণ করব।”
বিকালে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আরও একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।