alt

গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই জুলাই সনদ সইয়ের তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট ‘ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিন হবে নাকি নির্বাচনের আগে হবে’, এ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষরের তারিখ ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদেও দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরিত হবে।

বিএনপিসহ কিছু দল চায় জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট

জামায়াতসহ কিছু দলের দাবি জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট

আগামী ১৫ অক্টোবরের জুলাই সনদ সই:

ঐকমত্য কমিশন

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূস সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যেও মধ্যেই বুধবার সংলাপ শেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সবশেষ বিএনপিসহ কিছু দল বলেছে, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন একসঙ্গে করতে হবে। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করতে হবে।

গতকাল বুধাবার রাতে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি গণভোট আয়োজন করতে হবে এবং সে বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে পৃথক ব্যালটে গণভোট দেয়ার প্রস্তাব এসেছে। আবার জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করার মতো এসেছে কয়েকটি দলের কাছ থেকে।

তিনি বলেন, ‘আমরা তৃতীয়পর্যায়ের এই আলোচনার প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে আমাদের যে মতামত দিয়েছেন, জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে সেটা হচ্ছে- একটি আদেশ জারি করতে হবে। ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে।’

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘দল এবং জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ মত দেয়া হয়েছে যে, দলগুলোর এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতকে বিবেচনা করে যেন ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সরকারকে সে বিষয়ে স্পষ্ট পরামর্শ দেয়।’

সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনড় অবস্থানের মুখে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে আগামী দু’-একদিনের মধ্যে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। আগামী ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে বলে আশা প্রকাশ করে কমিশন।

গতকাল বুধবার দুপুর তিনটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিনের আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা শেষ হয় রাত সোয়া ১১টায়। আলোচনা বিটিভি নিউজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

আলোচনায় দলগুলোকে মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। বিএনপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের পক্ষে অনড় থাকে। আর জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- এসব প্রশ্নেও সুরাহা হয়নি।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ। সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। এর পাশাপাশি কমিশন গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। এরমধ্যে গত রোববার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে গণভোট করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়।কিন্তু গণভোট কবে ও কিসের ভিত্তিতে হবে, ভিন্নমতের কী হবে- এগুলো নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ছিল। গতকাল বুধবার দুপুর তিনটার দিকে দলগুলোর সঙ্গে মুলতবি আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। শুরুতে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ দলগুলোকে গণভোটের সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দেয়ার আহ্বান জানান। তবে দীর্ঘ আলোচনায় দলগুলো কমবেশি আগের অবস্থানই তুলে ধরে। ফলে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হয়নি।

বিএনপির অবস্থান

জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেয়ার পক্ষে মত তুলে ধরে বিএনপি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বেশ কিছু দল সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেয়ার পক্ষে।

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের অল্প সময় বাকি আছে। এর আগে গণভোটের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজন করা সম্ভব নয়। এতে অতিরিক্ত অর্থও খরচ হবে।’ তারা মনে করেন, আগে গণভোট করার প্রস্তাব জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়াস হবে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ বা এ ধরনের কোনো আদেশ নয় বরং একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যায়। সেটার নাম আদেশ হতে পারে। তার ভিত্তিতে গণভোটের জন্য একটি নতুন আইন অধ্যাদেশ আকারে করা যায়। তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোট হলে আগামী সংসদকে আলাদা গাঠনিক ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করবে। গণভোটে জুলাই সনদ পাস হলে তা বাস্তবায়ন করা আগামী সংসদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।’

আগামী সংসদ জুলাই সনদের বাইরে সংস্কার করতে পারবে না তা নয় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রয়োজনে আরও সংশোধনী আনতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদে সব দলের ভিন্নমতে কে কী বলেছে, তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত থাকতে হবে। আর সনদের অঙ্গীকারে একটি বিষয় যুক্ত করতে হবে, যেসব দলের যে যে বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো তারা নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে সে দল তাদের ভিন্নমত অনুসারে প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে পারবে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে জুলাই সনদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের কথা বলেছে।’ কিন্তু তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘সেটা করতে হলে প্রথম অধিবেশন কত লম্বা হবে, যদি দুই বছর লাগে? তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সংসদকে সময় বেঁধে দেয়া ঠিক হবে না। সংসদের স্বাধীনতা থাকতে হবে, প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। এখানে যথা শিগগিরই সম্ভব আগামী সংসদ সনদ বাস্তবায়ন করবে, এভাবে এটি উল্লেখ করা যেতে পারে।’

*জামায়াতের দাবি*

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোটই আগে হওয়া জরুরি। তিনি বলেছেন, আগামী নভেম্বরে গণভোট হলে এরপর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আগামী নভেম্বরের ১৫-১৮ তারিখের মধ্যে যদি আপনি গণভোট করে ফেলেন, দেড় মাস- এটা ভেরি এনাফ টাইম। নভেম্বরের শেষের দিকে বা ডিসেম্বরের ফার্স্ট উইকে যদি আপনি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন, তাহলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময় আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ যদি অ্যাকসেপ্ট করে, সেই গণভোটের ভিত্তিতেই পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো হবে, নির্বাচন হবে। আর জনগণ যদি রিজেক্ট করে দেয়, তাহলে তো সেটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং, বিষয়টি খুব স্পষ্ট- বিফোর ইলেকশন এবং ইলেকশন তার ভিত্তিতে হবে।’

জামায়াতের এ নেতা বলেন, “জামায়াতে ইসলামী ও আরও কিছু দল স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, গণভোটে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং নভেম্বরের ভেতরেই গণভোট আলাদাভাবে হয়ে যাওয়া দরকার। এটা সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ভোট। সবচেয়ে অল্প সময়ের ভোট। সবচেয়ে কম জটিল ভোট। আপনি শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ একটা বলে ফেলবেন। এটা যদি নভেম্বরে নিশ্চিত হয়ে যায়, তাহলে সেই ভিত্তিতেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা জাতীয় নির্বাচন করবো। একটার সঙ্গে আরেকটা ডিপেনডেন্ট থাকবে না।”

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আলোচনায় বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বা মধ্যভাগে গণভোট হতে পারে। তার মতে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন গণভোট হলে কিছু জটিলতা তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো সনদ থেকে বাদ দিয়ে গণভোট দিলে তা ঠিক হবে না। কোনো দলের মতামত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বিশেষ সংবিধান আদেশ বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রয়োজন আছে। এ আদেশে গণভোটের কথা বলা থাকবে। আদেশের তফসিলে জুলাই সনদ থাকবে। এ আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে।’

আগামী সংসদের দুটি ক্ষমতা থাকবে উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, ‘একটি সাধারণ সংসদের ক্ষমতা, অন্যটি কনস্টুয়েন্ট পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা। সংসদের প্রথম অধিবেশনে এ ক্ষমতা থাকবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে সাধারণ সংসদ কাজ করবে। এভাবে হলে সংস্কার টেকসই হবে। তিনি বলেন, যে কটি বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো না হলে সংস্কার মুখ থুবড়ে পড়বে।’

*এনসিপির অবস্থান পরিবর্তন*

এর আগে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যায়, এমন মত দিলেও নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে এনসিপি। গতকাল বুধবার দলটি বলে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। আর গণভোট করতে হলে তার আগে একটি আদেশ জারি করতে হবে। এছাড়া আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দিতে হবে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘এমন প্রক্রিয়ায় যাওয়া ঠিক হবে না, যাতে সংস্কারগুলো ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। সংস্কারকে টেকসই করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যে নামেই হোক, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ আগে জারি করতে হবে। এ আদেশের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে কিনা, এই প্রশ্নে গণভোট হবে এবং আগামী সংসদকে বিশেষ কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার (গাঠনিক ক্ষমতা) দিতে হবে। কারণ, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংস্কার করা হচ্ছে। এটি করতে হলে আগামী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে গণভোট গুরুত্ব হারাবে।’

*বিএনপি-জামায়াতকে বসার অনুরোধ*

আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আলাদাভাবে বসার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত বসেন। কথা বলে আপনারা ঠিক করেন। নিজেরা যদি ঠিক করে ফেলতে পারেন, তাহলে উই ক্যান গো ফর ইলেকশন।’

আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বাইরে দলগুলো নিজেরা বসে ভিন্নমত কমিয়ে আনা যায় কিনা, সে চেষ্টা করার পরামর্শ দেন।

এছাড়া আরও কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির পক্ষে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি প্রশ্নে ছাড় দেয়া সম্ভব কিনা, সেটা হলে দলগুলো বিশেষত জামায়াতের সঙ্গে নি¤œকক্ষে পিআরের দাবিতে ছাড় দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করা যায়।

তবে আলোচনায় বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়া ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’। এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে থাকাই ভালো হবে।’

*বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ*

গতকাল বুধবার আলোচনার সমাপনী ভাষণে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সুপারিশগুলো হলো- ১. একটি আদেশ জারি করতে হবে। ২. ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে। ৩. গণভোটে দুটি আলাদা প্রশ্ন থাকতে হবে, ঐকমত্য বা বৃহত্তর ঐকমত্য আছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়ে একটি, আর ভিন্ন মত বা নোট অব ডিসেন্ট আছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়ে আরেকটি। ৪. নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। ৫. এই আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটে অনুমোদন সাপেক্ষে জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্কারসমূহ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে।

এর আগে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বক্তব্য দেন।

*সংস্কার, ঐকমত্য কমিশন*

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেগুলো হলো- সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে এ কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। সেই কমিশনগুলোর সুপারিশমালা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অবশ্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কমিশনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে কমিশন দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বে আলোচনা করে। প্রথম পর্বে গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে কমিশন। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ২ জুন থেকে ৩০টি দলকে একসঙ্গে নিয়ে আলোচনা শুরু করে কমিশন। কমিশনের লক্ষ্য ছিল জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ সই করা; কিন্তু তা হয়নি। ৩১ জুলাই দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ হয়। ২০টি মৌলিক প্রস্তাবের মধ্যে অন্তত ৯টিতে কোনো কোনো দল ভিন্নমত দেয়।

দুই পর্বের আলোচনার ভিত্তিতে মোট ৮৪টি প্রস্তাব (ভিন্নমতসহ) নিয়ে জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করে ঐকমত্য কমিশন; কিন্তু সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দুই পর্বের আলোচনায় মতৈক্য হয়নি। পরে দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক-আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন। বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর লিখিত মতামতও নেয়া হয়।

ছবি

অবহেলায় এস এম সুলতানের স্মৃতিস্থান, দর্শণার্থীদের হতাশা

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস: মনোসামাজিক সাপোর্ট কর্নার ও কাউন্সিলর নিয়োগ জরুরি

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৭৮১ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪ জন

ছবি

গুমের মামলায় হাসিনাসহ ৩০ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ১২ দপ্তরে

ছবি

‘অবৈধ সম্পদ’: মামলার দুইদিনের মাথায় এনবিআর সদস্য বেলাল ওএসডি

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তারে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে: এইচআরডব্লিউ

ছবি

১৫ অক্টোবর ‘জুলাই জাতীয় সনদে’ স্বাক্ষর

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট প্রস্তাব অনুমোদন

ছবি

শরতের বিদায়ী বৃষ্টিতে ভিজবে আরও কয়েকদিন

ছবি

পলকসহ চারজনকে আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

ছবি

জামায়াতের ব্যাংক হিসাব নম্বর ও সংশোধিত গঠনতন্ত্র ইসিতে জমা

ছবি

রামপুরায় ২৮ হত্যা: বিজিবির সাবেক কর্মকর্তাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রত্যাখ্যানের জন্য ‘নিজেরাই দায়ী’বলে জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ঝটিকা মিছিল ‘কমেছে’, আস্তে আস্তে ‘নির্মূল’ হয়ে যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

রাজনীতিতে ডান-বামের বিভেদ মুছে যাচ্ছে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ‘সমর্থন দিয়ে যাবে’ তুরস্ক

ছবি

কারাগারে ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার, বন্দী ৭৮ হাজার

ছবি

গণভোট: প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭১৫ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ২

ছবি

আইসিটি: দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে তদন্ত শুরু

ছবি

আশুলিয়া থানার নির্দেশে নিহতদের লাশ ঢেকে দেওয়ার অভিযোগ, কনস্টেবল রাশেদুলের সাক্ষ্য

ছবি

আশুলিয়া থানার নির্দেশে নিহতদের লাশ ঢেকে দেওয়ার অভিযোগ, কনস্টেবল রাশেদুলের সাক্ষ্য

আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে ও সরকারি চাকরি করতে পারবেন না

ছবি

প্রসিকিউশনের আপত্তি, হাসিনা–কামাল মামলায় পুলিশ হত্যার জেরা বন্ধ

ছবি

ডেঙ্গু: আক্রান্ত ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

রাজসাক্ষী মামুনকে ‘প্ররোচিত’ করার দাবি হাসিনার আইনজীবীর, অস্বীকার তদন্ত কর্মকর্তার

ছবি

নির্বাচন ‘ভালো না হওয়ার’ কোনো সুযোগ নেই: সিইসি

ছবি

কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ-সৌদি আরব চুক্তি স্বাক্ষর

প্রবাসীদের জন্য আগাম ১০ লাখ ব্যালট ছাপাবে ইসি

ছবি

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপক্ষীয় শ্রম চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

দেশে এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭৮২ জন, আরও তিনজনের মৃত্যু

ছবি

সেনাপ্রধানের বক্তব্য বিকৃত করে বিভ্রান্তিকর প্রচার: আইএসপিআর

ছবি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ‘সব দল’ অংশ নেবে, আশা গোয়েন লুইসের

ছবি

ভোলার গ্যাস: এলএনজি আকারে নিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম, পাইপলাইনে জোর দিচ্ছে সরকার

ছবি

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ‘লাইফ সাপোর্টে’

ছবি

বেসরকারি প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগে এনটিআরসিএকে দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ

tab

গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই জুলাই সনদ সইয়ের তারিখ ঘোষণা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট ‘ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিন হবে নাকি নির্বাচনের আগে হবে’, এ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষরের তারিখ ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদেও দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরিত হবে।

বিএনপিসহ কিছু দল চায় জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট

জামায়াতসহ কিছু দলের দাবি জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট

আগামী ১৫ অক্টোবরের জুলাই সনদ সই:

ঐকমত্য কমিশন

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূস সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যেও মধ্যেই বুধবার সংলাপ শেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সবশেষ বিএনপিসহ কিছু দল বলেছে, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন একসঙ্গে করতে হবে। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করতে হবে।

গতকাল বুধাবার রাতে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি গণভোট আয়োজন করতে হবে এবং সে বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে পৃথক ব্যালটে গণভোট দেয়ার প্রস্তাব এসেছে। আবার জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করার মতো এসেছে কয়েকটি দলের কাছ থেকে।

তিনি বলেন, ‘আমরা তৃতীয়পর্যায়ের এই আলোচনার প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে আমাদের যে মতামত দিয়েছেন, জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে সেটা হচ্ছে- একটি আদেশ জারি করতে হবে। ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে।’

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, ‘দল এবং জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ মত দেয়া হয়েছে যে, দলগুলোর এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতকে বিবেচনা করে যেন ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সরকারকে সে বিষয়ে স্পষ্ট পরামর্শ দেয়।’

সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনড় অবস্থানের মুখে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে আগামী দু’-একদিনের মধ্যে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। আগামী ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে বলে আশা প্রকাশ করে কমিশন।

গতকাল বুধবার দুপুর তিনটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিনের আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা শেষ হয় রাত সোয়া ১১টায়। আলোচনা বিটিভি নিউজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

আলোচনায় দলগুলোকে মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। বিএনপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের পক্ষে অনড় থাকে। আর জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে- এসব প্রশ্নেও সুরাহা হয়নি।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ। সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। এর পাশাপাশি কমিশন গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। এরমধ্যে গত রোববার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে গণভোট করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়।কিন্তু গণভোট কবে ও কিসের ভিত্তিতে হবে, ভিন্নমতের কী হবে- এগুলো নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ছিল। গতকাল বুধবার দুপুর তিনটার দিকে দলগুলোর সঙ্গে মুলতবি আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। শুরুতে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ দলগুলোকে গণভোটের সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দেয়ার আহ্বান জানান। তবে দীর্ঘ আলোচনায় দলগুলো কমবেশি আগের অবস্থানই তুলে ধরে। ফলে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হয়নি।

বিএনপির অবস্থান

জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেয়ার পক্ষে মত তুলে ধরে বিএনপি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বেশ কিছু দল সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেয়ার পক্ষে।

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের অল্প সময় বাকি আছে। এর আগে গণভোটের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজন করা সম্ভব নয়। এতে অতিরিক্ত অর্থও খরচ হবে।’ তারা মনে করেন, আগে গণভোট করার প্রস্তাব জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়াস হবে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ বা এ ধরনের কোনো আদেশ নয় বরং একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যায়। সেটার নাম আদেশ হতে পারে। তার ভিত্তিতে গণভোটের জন্য একটি নতুন আইন অধ্যাদেশ আকারে করা যায়। তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোট হলে আগামী সংসদকে আলাদা গাঠনিক ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করবে। গণভোটে জুলাই সনদ পাস হলে তা বাস্তবায়ন করা আগামী সংসদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।’

আগামী সংসদ জুলাই সনদের বাইরে সংস্কার করতে পারবে না তা নয় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রয়োজনে আরও সংশোধনী আনতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদে সব দলের ভিন্নমতে কে কী বলেছে, তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত থাকতে হবে। আর সনদের অঙ্গীকারে একটি বিষয় যুক্ত করতে হবে, যেসব দলের যে যে বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো তারা নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে সে দল তাদের ভিন্নমত অনুসারে প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে পারবে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে জুলাই সনদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের কথা বলেছে।’ কিন্তু তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘সেটা করতে হলে প্রথম অধিবেশন কত লম্বা হবে, যদি দুই বছর লাগে? তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সংসদকে সময় বেঁধে দেয়া ঠিক হবে না। সংসদের স্বাধীনতা থাকতে হবে, প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। এখানে যথা শিগগিরই সম্ভব আগামী সংসদ সনদ বাস্তবায়ন করবে, এভাবে এটি উল্লেখ করা যেতে পারে।’

*জামায়াতের দাবি*

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোটই আগে হওয়া জরুরি। তিনি বলেছেন, আগামী নভেম্বরে গণভোট হলে এরপর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আগামী নভেম্বরের ১৫-১৮ তারিখের মধ্যে যদি আপনি গণভোট করে ফেলেন, দেড় মাস- এটা ভেরি এনাফ টাইম। নভেম্বরের শেষের দিকে বা ডিসেম্বরের ফার্স্ট উইকে যদি আপনি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন, তাহলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময় আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ যদি অ্যাকসেপ্ট করে, সেই গণভোটের ভিত্তিতেই পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো হবে, নির্বাচন হবে। আর জনগণ যদি রিজেক্ট করে দেয়, তাহলে তো সেটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং, বিষয়টি খুব স্পষ্ট- বিফোর ইলেকশন এবং ইলেকশন তার ভিত্তিতে হবে।’

জামায়াতের এ নেতা বলেন, “জামায়াতে ইসলামী ও আরও কিছু দল স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, গণভোটে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং নভেম্বরের ভেতরেই গণভোট আলাদাভাবে হয়ে যাওয়া দরকার। এটা সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ভোট। সবচেয়ে অল্প সময়ের ভোট। সবচেয়ে কম জটিল ভোট। আপনি শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ একটা বলে ফেলবেন। এটা যদি নভেম্বরে নিশ্চিত হয়ে যায়, তাহলে সেই ভিত্তিতেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা জাতীয় নির্বাচন করবো। একটার সঙ্গে আরেকটা ডিপেনডেন্ট থাকবে না।”

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আলোচনায় বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বা মধ্যভাগে গণভোট হতে পারে। তার মতে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন গণভোট হলে কিছু জটিলতা তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো সনদ থেকে বাদ দিয়ে গণভোট দিলে তা ঠিক হবে না। কোনো দলের মতামত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বিশেষ সংবিধান আদেশ বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রয়োজন আছে। এ আদেশে গণভোটের কথা বলা থাকবে। আদেশের তফসিলে জুলাই সনদ থাকবে। এ আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে।’

আগামী সংসদের দুটি ক্ষমতা থাকবে উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, ‘একটি সাধারণ সংসদের ক্ষমতা, অন্যটি কনস্টুয়েন্ট পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা। সংসদের প্রথম অধিবেশনে এ ক্ষমতা থাকবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে সাধারণ সংসদ কাজ করবে। এভাবে হলে সংস্কার টেকসই হবে। তিনি বলেন, যে কটি বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো না হলে সংস্কার মুখ থুবড়ে পড়বে।’

*এনসিপির অবস্থান পরিবর্তন*

এর আগে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যায়, এমন মত দিলেও নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে এনসিপি। গতকাল বুধবার দলটি বলে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। আর গণভোট করতে হলে তার আগে একটি আদেশ জারি করতে হবে। এছাড়া আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দিতে হবে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘এমন প্রক্রিয়ায় যাওয়া ঠিক হবে না, যাতে সংস্কারগুলো ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। সংস্কারকে টেকসই করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যে নামেই হোক, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ আগে জারি করতে হবে। এ আদেশের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে কিনা, এই প্রশ্নে গণভোট হবে এবং আগামী সংসদকে বিশেষ কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার (গাঠনিক ক্ষমতা) দিতে হবে। কারণ, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংস্কার করা হচ্ছে। এটি করতে হলে আগামী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে গণভোট গুরুত্ব হারাবে।’

*বিএনপি-জামায়াতকে বসার অনুরোধ*

আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আলাদাভাবে বসার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত বসেন। কথা বলে আপনারা ঠিক করেন। নিজেরা যদি ঠিক করে ফেলতে পারেন, তাহলে উই ক্যান গো ফর ইলেকশন।’

আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বাইরে দলগুলো নিজেরা বসে ভিন্নমত কমিয়ে আনা যায় কিনা, সে চেষ্টা করার পরামর্শ দেন।

এছাড়া আরও কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির পক্ষে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি প্রশ্নে ছাড় দেয়া সম্ভব কিনা, সেটা হলে দলগুলো বিশেষত জামায়াতের সঙ্গে নি¤œকক্ষে পিআরের দাবিতে ছাড় দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করা যায়।

তবে আলোচনায় বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়া ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’। এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে থাকাই ভালো হবে।’

*বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ*

গতকাল বুধবার আলোচনার সমাপনী ভাষণে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সুপারিশগুলো হলো- ১. একটি আদেশ জারি করতে হবে। ২. ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে। ৩. গণভোটে দুটি আলাদা প্রশ্ন থাকতে হবে, ঐকমত্য বা বৃহত্তর ঐকমত্য আছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়ে একটি, আর ভিন্ন মত বা নোট অব ডিসেন্ট আছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়ে আরেকটি। ৪. নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। ৫. এই আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটে অনুমোদন সাপেক্ষে জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্কারসমূহ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে।

এর আগে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বক্তব্য দেন।

*সংস্কার, ঐকমত্য কমিশন*

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেগুলো হলো- সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে এ কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। সেই কমিশনগুলোর সুপারিশমালা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অবশ্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কমিশনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে কমিশন দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বে আলোচনা করে। প্রথম পর্বে গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে কমিশন। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ২ জুন থেকে ৩০টি দলকে একসঙ্গে নিয়ে আলোচনা শুরু করে কমিশন। কমিশনের লক্ষ্য ছিল জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ সই করা; কিন্তু তা হয়নি। ৩১ জুলাই দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ হয়। ২০টি মৌলিক প্রস্তাবের মধ্যে অন্তত ৯টিতে কোনো কোনো দল ভিন্নমত দেয়।

দুই পর্বের আলোচনার ভিত্তিতে মোট ৮৪টি প্রস্তাব (ভিন্নমতসহ) নিয়ে জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করে ঐকমত্য কমিশন; কিন্তু সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দুই পর্বের আলোচনায় মতৈক্য হয়নি। পরে দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক-আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন। বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর লিখিত মতামতও নেয়া হয়।

back to top