alt

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তারে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে: এইচআরডব্লিউ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তারে সম্প্রতি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের মানবাধিকার দলের উচিত নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো এবং মানবাধিকার রক্ষা ও রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করা।

এইচআরডব্লিউ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা যায়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের ও শান্তিপূর্ণ অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তারে আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ওই বিক্ষোভে নিহত হয় প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ। সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী কঠোর আইন ব্যবহার করে নতুন কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) করে। দলটির সমর্থনে যে কোনো সভা, প্রকাশনা ও অনলাইনে দেয়া বক্তব্য এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পুরে দেয়া হোক কিংবা শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশে বাধা দেয়া হোকÑ অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা উচিত নয়, যা শেখ হাসিনার সরকারের সময় বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে করা হয়েছে।

মীনাক্ষী আরও বলেন, ‘সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাদের উচিত সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করা।’

এইচআরডব্লিউ’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অসংখ্য ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক রাখা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করাসহ পুলিশ হেফাজতে তাদের সঙ্গে অনেক দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ শেখ হাসিনার শাসনামলের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা উচিত। আইনটি রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সমার্থক হয়ে ওঠছে। এর পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগ দেয়া উচিত।’

গত ২৮ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদসহ মোট ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। ঢাকায় সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যালয়ে প্রকাশ্যে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। হঠাৎ একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি (মব) সেখানে গিয়ে সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ঘিওে ফেলে এবং তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। সভায় উপস্থিত ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের অনুগত বলেও অভিযোগ করে তারা।

সভায় অংশ নিয়েছিলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না। তিনি নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে ফোন করেন। কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে পুলিশ আলোচনা সভায় অংশ নেয়া ১৬ জনকে আটক করে। এর মধ্যে কয়েকজনের বয়স ছিল ৭০-৮০ বছর। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান এবং সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। যিনি এক সময় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।

শুরুতে পুলিশ কর্তৃপক্ষ আইনজীবীদের জানিয়েছিল, নিরাপত্তার খাতিরে তাদের আটক করা হয়েছে। পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরবর্তী সময়ে একই মামলায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের অভিযোগে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির সময় মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে হেলমেট, হাতকড়া এবং বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিয়ে আদালতে আনা হয়। সেসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা অন্য এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান।

গ্রেপ্তারকৃত এক ব্যক্তির পরিবারের একজন সদস্য এইচআরডব্লিউকে বলেন, ‘এমনকি এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানও ছিল না। এটি ছিল একটি আলোচনা সভা। তাহলে এটিকে কীভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা- হিসেবে গণ্য করা হবে?’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘এসব মানুষ কারাগারে আছেন। কিন্তু যারা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সরকারকে ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই মনে হচ্ছে।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করে। ক্ষমতায় থাকাকালে এই আইনের অপব্যবহারের জন্য আওয়ামী লীগের সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ২০২৫ সালের সংশোধনী দরকার ছিল বলে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ বক্তব্য ও সমাবেশের অধিকার দমন করা আন্তর্জাতিক মানদ-ের পরিপন্থি। বাংলাদেশ এডিটরস কাউন্সিল সতর্ক করেছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনগুলো মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে, যা উদ্বেগজনক। এটি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

একজন রাজনৈতিক কর্মী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, ‘হয়তো সন্ত্রাসী হিসেবে কারাগারে থাকা, নয়তো উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলার শিকার হওয়া, এছাড়া এখন আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। আমি বলছি না যে, দোষীদের শাস্তি হওয়ার দরকার নেই। তবে এটি হতে হবে একটি নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার অধীনে, যা দিতে ইউনূস সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকার রক্ষণশীল মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোষ্ঠীগুলো তাদের দাবি আদায় করতে গিয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের আইন সহায়তা ও মানবাধিকার সংস্থা ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতার (মব) হামলায় অন্তত ১৫২ জন নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ঢাকায় তাদের মিশন চালু করতে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তিন বছরের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ মিশনের উদ্দেশ্য মানবাধিকার রক্ষা ও এর প্রচার।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক বলেন, প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত সহায়তার পাশাপাশি এই মিশন মানবাধিকারের প্রতি দেশটির প্রতিশ্রুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে, যা পটপরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

ছবি

অবহেলায় এস এম সুলতানের স্মৃতিস্থান, দর্শণার্থীদের হতাশা

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস: মনোসামাজিক সাপোর্ট কর্নার ও কাউন্সিলর নিয়োগ জরুরি

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৭৮১ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪ জন

ছবি

গুমের মামলায় হাসিনাসহ ৩০ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ১২ দপ্তরে

ছবি

‘অবৈধ সম্পদ’: মামলার দুইদিনের মাথায় এনবিআর সদস্য বেলাল ওএসডি

গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই জুলাই সনদ সইয়ের তারিখ ঘোষণা

ছবি

১৫ অক্টোবর ‘জুলাই জাতীয় সনদে’ স্বাক্ষর

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট প্রস্তাব অনুমোদন

ছবি

শরতের বিদায়ী বৃষ্টিতে ভিজবে আরও কয়েকদিন

ছবি

পলকসহ চারজনকে আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

ছবি

জামায়াতের ব্যাংক হিসাব নম্বর ও সংশোধিত গঠনতন্ত্র ইসিতে জমা

ছবি

রামপুরায় ২৮ হত্যা: বিজিবির সাবেক কর্মকর্তাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রত্যাখ্যানের জন্য ‘নিজেরাই দায়ী’বলে জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ঝটিকা মিছিল ‘কমেছে’, আস্তে আস্তে ‘নির্মূল’ হয়ে যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

রাজনীতিতে ডান-বামের বিভেদ মুছে যাচ্ছে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ‘সমর্থন দিয়ে যাবে’ তুরস্ক

ছবি

কারাগারে ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার, বন্দী ৭৮ হাজার

ছবি

গণভোট: প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৭১৫ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ২

ছবি

আইসিটি: দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে তদন্ত শুরু

ছবি

আশুলিয়া থানার নির্দেশে নিহতদের লাশ ঢেকে দেওয়ার অভিযোগ, কনস্টেবল রাশেদুলের সাক্ষ্য

ছবি

আশুলিয়া থানার নির্দেশে নিহতদের লাশ ঢেকে দেওয়ার অভিযোগ, কনস্টেবল রাশেদুলের সাক্ষ্য

আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে ও সরকারি চাকরি করতে পারবেন না

ছবি

প্রসিকিউশনের আপত্তি, হাসিনা–কামাল মামলায় পুলিশ হত্যার জেরা বন্ধ

ছবি

ডেঙ্গু: আক্রান্ত ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

রাজসাক্ষী মামুনকে ‘প্ররোচিত’ করার দাবি হাসিনার আইনজীবীর, অস্বীকার তদন্ত কর্মকর্তার

ছবি

নির্বাচন ‘ভালো না হওয়ার’ কোনো সুযোগ নেই: সিইসি

ছবি

কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ-সৌদি আরব চুক্তি স্বাক্ষর

প্রবাসীদের জন্য আগাম ১০ লাখ ব্যালট ছাপাবে ইসি

ছবি

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপক্ষীয় শ্রম চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

দেশে এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭৮২ জন, আরও তিনজনের মৃত্যু

ছবি

সেনাপ্রধানের বক্তব্য বিকৃত করে বিভ্রান্তিকর প্রচার: আইএসপিআর

ছবি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ‘সব দল’ অংশ নেবে, আশা গোয়েন লুইসের

ছবি

ভোলার গ্যাস: এলএনজি আকারে নিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম, পাইপলাইনে জোর দিচ্ছে সরকার

ছবি

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ‘লাইফ সাপোর্টে’

ছবি

বেসরকারি প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগে এনটিআরসিএকে দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ

tab

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তারে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে: এইচআরডব্লিউ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তারে সম্প্রতি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের মানবাধিকার দলের উচিত নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো এবং মানবাধিকার রক্ষা ও রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করা।

এইচআরডব্লিউ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা যায়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের ও শান্তিপূর্ণ অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তারে আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ওই বিক্ষোভে নিহত হয় প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ। সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী কঠোর আইন ব্যবহার করে নতুন কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) করে। দলটির সমর্থনে যে কোনো সভা, প্রকাশনা ও অনলাইনে দেয়া বক্তব্য এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পুরে দেয়া হোক কিংবা শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশে বাধা দেয়া হোকÑ অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা উচিত নয়, যা শেখ হাসিনার সরকারের সময় বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে করা হয়েছে।

মীনাক্ষী আরও বলেন, ‘সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাদের উচিত সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করা।’

এইচআরডব্লিউ’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অসংখ্য ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক রাখা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করাসহ পুলিশ হেফাজতে তাদের সঙ্গে অনেক দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ শেখ হাসিনার শাসনামলের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা উচিত। আইনটি রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সমার্থক হয়ে ওঠছে। এর পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগ দেয়া উচিত।’

গত ২৮ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদসহ মোট ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। ঢাকায় সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যালয়ে প্রকাশ্যে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। হঠাৎ একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি (মব) সেখানে গিয়ে সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ঘিওে ফেলে এবং তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। সভায় উপস্থিত ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের অনুগত বলেও অভিযোগ করে তারা।

সভায় অংশ নিয়েছিলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না। তিনি নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে ফোন করেন। কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে পুলিশ আলোচনা সভায় অংশ নেয়া ১৬ জনকে আটক করে। এর মধ্যে কয়েকজনের বয়স ছিল ৭০-৮০ বছর। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান এবং সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। যিনি এক সময় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।

শুরুতে পুলিশ কর্তৃপক্ষ আইনজীবীদের জানিয়েছিল, নিরাপত্তার খাতিরে তাদের আটক করা হয়েছে। পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরবর্তী সময়ে একই মামলায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের অভিযোগে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির সময় মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে হেলমেট, হাতকড়া এবং বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিয়ে আদালতে আনা হয়। সেসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা অন্য এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান।

গ্রেপ্তারকৃত এক ব্যক্তির পরিবারের একজন সদস্য এইচআরডব্লিউকে বলেন, ‘এমনকি এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানও ছিল না। এটি ছিল একটি আলোচনা সভা। তাহলে এটিকে কীভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা- হিসেবে গণ্য করা হবে?’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘এসব মানুষ কারাগারে আছেন। কিন্তু যারা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সরকারকে ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই মনে হচ্ছে।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করে। ক্ষমতায় থাকাকালে এই আইনের অপব্যবহারের জন্য আওয়ামী লীগের সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ২০২৫ সালের সংশোধনী দরকার ছিল বলে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ বক্তব্য ও সমাবেশের অধিকার দমন করা আন্তর্জাতিক মানদ-ের পরিপন্থি। বাংলাদেশ এডিটরস কাউন্সিল সতর্ক করেছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনগুলো মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে, যা উদ্বেগজনক। এটি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

একজন রাজনৈতিক কর্মী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, ‘হয়তো সন্ত্রাসী হিসেবে কারাগারে থাকা, নয়তো উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলার শিকার হওয়া, এছাড়া এখন আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। আমি বলছি না যে, দোষীদের শাস্তি হওয়ার দরকার নেই। তবে এটি হতে হবে একটি নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার অধীনে, যা দিতে ইউনূস সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকার রক্ষণশীল মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোষ্ঠীগুলো তাদের দাবি আদায় করতে গিয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের আইন সহায়তা ও মানবাধিকার সংস্থা ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতার (মব) হামলায় অন্তত ১৫২ জন নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ঢাকায় তাদের মিশন চালু করতে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তিন বছরের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ মিশনের উদ্দেশ্য মানবাধিকার রক্ষা ও এর প্রচার।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক বলেন, প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত সহায়তার পাশাপাশি এই মিশন মানবাধিকারের প্রতি দেশটির প্রতিশ্রুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে, যা পটপরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

back to top