মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে মনোসামাজিক সাপোর্ট কর্নার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগের দাবি উঠেছে এক গোল টেবিল আলোচনায়।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দুর্যোগে প্রতি বছর প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মানসিক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হয়
রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটকালে মানসিক স্বাস্থ্যও সংকটে পড়ে
সরকারি হিসাবে দেশের ৪ কোটি মানসিক রোগীর বিপরীতে সাইকোলোজিস্ট মাত্র ৪৬৫ জন
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার, (০৯ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এডাব (অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ দাবি জানান।
‘দুর্যোগ ও সংকটকালে মানসিক স্বাস্থ্য’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দুর্যোগ ও সংকটে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন মানুষ। আশার কথা এই যে, ২০১৮ সালে মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করেছিল সরকার। যদিও এর সফল বাস্তবায়ন এখনও হয়নি।
মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদাসীন, সামাজিক ট্যাবু কাজ করে। তাই অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। তবে এখনর কিছুটা এই চিন্তার পরিবর্তনের দেখা যাচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, দেশের ৪ কোটি মানসিক রোগীর বিপরীতে মাত্র ৪৬৫ জন মনোরোগ চিকিৎসক রয়েছেন। তাতে দেখা যায়, প্রতি এক লাখে মাত্র একজনেরও কম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, শুধু চট্টগ্রামেই ১৬ লাখ মানসিক রোগী রয়েছে, যাদের জন্য মাত্র ১০ জন চিকিৎসক আছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চিকিৎসা সবারই দরকার। কেননা আমরা সবাই কোনো না কোনো সময় ছোট-বড় সংকটের মধ্য দিয়েই যাই। তাই শুধু দুর্যোগ নয়, সংকটকালেও আমাদের মানসিক সহায়তা দরকার।
মানসিক স্বাস্থ্য যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে একজন ব্যক্তির আবেগিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক সুস্থতাকে বোঝায়, যা তার চিন্তা, অনুভূতি, এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। এগুলো ঠিক না থাকলে আমাদের প্রতিদিনের কাজ-কর্মে, স্ট্রেস মোকাবিলায় এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এবং আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব কারণেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা জরুরি। শরীরের অসুখ হলে যেমন আমরা চিকিৎসার জন্য ব্যতিব্যস্ত হই, তেমনি মনের যে কোনো রোগেই দ্রুত সেবা নেয়া জরুরি। কারণ- ১. এটি আমাদের জীবনকে উপভোগ করতে এবং জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। ২. ভালো মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের পরিবার ও সমাজের মানুষের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। ৩. এটি মানুষকে আরও বেশি উৎপাদনশীল হতে এবং নিজের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে সক্ষম করে। ৪. শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই মানসিক স্বাস্থ্যও সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
কেননা মনোস্তাত্ত্বিকরা বলেন, ভালো মানসিক স্বাস্থ্য মানুষকে জীবনের চাপ সামলাতে, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে এবং সমাজে অবদান রাখতে সাহায্য করে। সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মননশীলতা অনুশীলন এবং অন্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে
যেসব সুপারিশ এসেছে
এডাবের গোল টেবিল আলোচনায় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো- মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮-এর সফল বাস্তবায়ন; ইউনিয়ন জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে সরকারিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা; আশ্রয় কেন্দ্র ও পুনর্বাসন ক্যাম্পে মনোসামাজিক সাপোর্ট কর্নার স্থাপন; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ; মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা; মনোসামাজিক সেবার জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবী টিম তৈরি; থেরাপিউটিক থিয়েটার, আর্ট, মিউজিক ও কমিউনিটি কাউন্সেলিংককে অন্তর্ভুক্ত করা; মিডিয়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা জোরদার করা; নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য চাহিদা আলাদা গুরুত্বে বিবেচনা করা; মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এডাব ও সদস্য সংগঠনের যৌথভাবে স্থানীয় ও জাতীয়পর্যায়ে সচেতনতা ও অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা।
এডাব ঢাকা মহানগর সভাপতি কাজী বেবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উৎসের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামাল যাত্রা। বৈঠকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের ৬০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন এডাব পরিচালক একেএম জসীম উদ্দিন। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন- এডাবের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দা শামীমা সুলতানা, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সদস্য নাসরীন গীতি।
বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে মনোসামাজিক সাপোর্ট কর্নার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগের দাবি উঠেছে এক গোল টেবিল আলোচনায়।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দুর্যোগে প্রতি বছর প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মানসিক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হয়
রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটকালে মানসিক স্বাস্থ্যও সংকটে পড়ে
সরকারি হিসাবে দেশের ৪ কোটি মানসিক রোগীর বিপরীতে সাইকোলোজিস্ট মাত্র ৪৬৫ জন
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার, (০৯ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এডাব (অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ দাবি জানান।
‘দুর্যোগ ও সংকটকালে মানসিক স্বাস্থ্য’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দুর্যোগ ও সংকটে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন মানুষ। আশার কথা এই যে, ২০১৮ সালে মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করেছিল সরকার। যদিও এর সফল বাস্তবায়ন এখনও হয়নি।
মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদাসীন, সামাজিক ট্যাবু কাজ করে। তাই অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। তবে এখনর কিছুটা এই চিন্তার পরিবর্তনের দেখা যাচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, দেশের ৪ কোটি মানসিক রোগীর বিপরীতে মাত্র ৪৬৫ জন মনোরোগ চিকিৎসক রয়েছেন। তাতে দেখা যায়, প্রতি এক লাখে মাত্র একজনেরও কম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, শুধু চট্টগ্রামেই ১৬ লাখ মানসিক রোগী রয়েছে, যাদের জন্য মাত্র ১০ জন চিকিৎসক আছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চিকিৎসা সবারই দরকার। কেননা আমরা সবাই কোনো না কোনো সময় ছোট-বড় সংকটের মধ্য দিয়েই যাই। তাই শুধু দুর্যোগ নয়, সংকটকালেও আমাদের মানসিক সহায়তা দরকার।
মানসিক স্বাস্থ্য যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে একজন ব্যক্তির আবেগিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক সুস্থতাকে বোঝায়, যা তার চিন্তা, অনুভূতি, এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। এগুলো ঠিক না থাকলে আমাদের প্রতিদিনের কাজ-কর্মে, স্ট্রেস মোকাবিলায় এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এবং আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব কারণেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা জরুরি। শরীরের অসুখ হলে যেমন আমরা চিকিৎসার জন্য ব্যতিব্যস্ত হই, তেমনি মনের যে কোনো রোগেই দ্রুত সেবা নেয়া জরুরি। কারণ- ১. এটি আমাদের জীবনকে উপভোগ করতে এবং জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। ২. ভালো মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের পরিবার ও সমাজের মানুষের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। ৩. এটি মানুষকে আরও বেশি উৎপাদনশীল হতে এবং নিজের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে সক্ষম করে। ৪. শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই মানসিক স্বাস্থ্যও সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
কেননা মনোস্তাত্ত্বিকরা বলেন, ভালো মানসিক স্বাস্থ্য মানুষকে জীবনের চাপ সামলাতে, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে এবং সমাজে অবদান রাখতে সাহায্য করে। সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মননশীলতা অনুশীলন এবং অন্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে
যেসব সুপারিশ এসেছে
এডাবের গোল টেবিল আলোচনায় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো- মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮-এর সফল বাস্তবায়ন; ইউনিয়ন জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে সরকারিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা; আশ্রয় কেন্দ্র ও পুনর্বাসন ক্যাম্পে মনোসামাজিক সাপোর্ট কর্নার স্থাপন; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ; মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা; মনোসামাজিক সেবার জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবী টিম তৈরি; থেরাপিউটিক থিয়েটার, আর্ট, মিউজিক ও কমিউনিটি কাউন্সেলিংককে অন্তর্ভুক্ত করা; মিডিয়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা জোরদার করা; নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য চাহিদা আলাদা গুরুত্বে বিবেচনা করা; মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এডাব ও সদস্য সংগঠনের যৌথভাবে স্থানীয় ও জাতীয়পর্যায়ে সচেতনতা ও অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা।
এডাব ঢাকা মহানগর সভাপতি কাজী বেবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উৎসের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামাল যাত্রা। বৈঠকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের ৬০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন এডাব পরিচালক একেএম জসীম উদ্দিন। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন- এডাবের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দা শামীমা সুলতানা, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সদস্য নাসরীন গীতি।