অযত্নে পড়ে আছে ‘শিল্পী এস এম সুলতান ঘাট’ -সংবাদ
চিত্রা নদীর পাড়ের প্রকৃতিতে এখনও ভেসে বেড়ায় শিল্পী এস এম সুলতানের সৃষ্টির ঘ্রাণ। কিন্তু বাস্তবে তার স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দিন দিন হারাচ্ছে রূপ। আগাছা আর জঙ্গলে ঢেকে গেছে ‘শিল্পী এস এম সুলতান ঘাট’। সাত বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালাকে পর্যটনবান্ধব করার উদ্যোগ।
দর্শনার্থী, শিল্পানুরাগী ও স্থানীয়রা বলছেন, ‘সুলতানের নামে বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটনবান্ধব সংগ্রহশালা ও নদীর পাড়ে নৌকাঘাট নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’
নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজির আলী বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের গুণীজনদের নামে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সুলতানের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হলে নড়াইলেও জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’
খুলনার ফুলতলা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও মেহরিন রিমু প্রথমবার সুলতান সংগ্রহশালায় এসেছেন। তারা বলেন, ‘সুলতান দাদুর আঁকা ছবিগুলো মুগ্ধ করেছে। তবে প্রবেশের রাস্তা সরু, পর্যটকদের জন্য আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।’
ঢাকার মিরপুরের আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুস সালাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মঈন জামিলের অভিমত, ‘চিত্রা নদী ও সবুজ প্রকৃতি মিলিয়ে জায়গাটা অসাধারণ। একটু যতœ পেলে এটি দেশের সেরা পর্যটন স্পট হতে পারে।’
চিত্রা নদীর পাড়ে শান্ত-স্বচ্ছ পরিবেশে গড়ে উঠেছিল এস এম সুলতানের শিশুস্বর্গ ও ‘শিল্পী এস এম সুলতান ঘাট’। ২০১৮ সালের জুনে ঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হলেও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা থেমে যায়। এখন আগাছা আর ঝোপে ঢেকে গেছে পুরো এলাকা।
শিক্ষক টিপু সুলতান ও বিএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘দ্বিতলা নৌকাঘাটটি ছিল শিশু ও পর্যটকদের আকর্ষণ। কিন্তু এখন তা অযত্নে পড়ে আছে।’
চিত্রশিল্পী নয়ন বৈদ্য জানান, ‘সংগ্রহশালায় সুলতান দাদুর আঁকা ২৩টি মূল ছবি ও ৫১টি রেপ্লিকা রয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থী আসেন। ছুটির দিনে ভিড় বাড়ে। তবে জায়গাটির উন্নয়ন না হলে সম্ভাবনা নষ্ট হবে।’
সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জি বলেন, ‘এখানে জনবল সংকট রয়েছে। আমরা বহুবার আবেদন করেছি। পর্যাপ্ত জনবল পেলে দর্শনার্থীদের সেবার মান আরও বাড়ানো সম্ভব।’
নড়াইলের জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান,
‘সংগ্রহশালাকে পর্যটনবান্ধব করতে প্রায় ছয় কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এর আগেও ২০১৮ সালে প্রায় ২০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও অনুমোদন মেলেনি।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্ম নেন এস এম সুলতান বাংলার কৃষিজীবন ও মানবশ্রমের শিল্পরূপকার। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। চিত্রা নদীর পাড়ে তার প্রিয় ভূমি কুড়িগ্রাম এলাকায় সমাহিত করা হয় তাকে।
বাংলা চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান তিনি।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, সুলতানের সৃষ্টির উত্তরাধিকার কি অবহেলায় হারিয়ে যাবে, নাকি নতুন করে জেগে উঠবে চিত্রা নদীর তীরে শিল্পীর স্বপ্নভূমি?
অযত্নে পড়ে আছে ‘শিল্পী এস এম সুলতান ঘাট’ -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
চিত্রা নদীর পাড়ের প্রকৃতিতে এখনও ভেসে বেড়ায় শিল্পী এস এম সুলতানের সৃষ্টির ঘ্রাণ। কিন্তু বাস্তবে তার স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দিন দিন হারাচ্ছে রূপ। আগাছা আর জঙ্গলে ঢেকে গেছে ‘শিল্পী এস এম সুলতান ঘাট’। সাত বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালাকে পর্যটনবান্ধব করার উদ্যোগ।
দর্শনার্থী, শিল্পানুরাগী ও স্থানীয়রা বলছেন, ‘সুলতানের নামে বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটনবান্ধব সংগ্রহশালা ও নদীর পাড়ে নৌকাঘাট নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’
নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজির আলী বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের গুণীজনদের নামে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সুলতানের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হলে নড়াইলেও জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’
খুলনার ফুলতলা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও মেহরিন রিমু প্রথমবার সুলতান সংগ্রহশালায় এসেছেন। তারা বলেন, ‘সুলতান দাদুর আঁকা ছবিগুলো মুগ্ধ করেছে। তবে প্রবেশের রাস্তা সরু, পর্যটকদের জন্য আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।’
ঢাকার মিরপুরের আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুস সালাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মঈন জামিলের অভিমত, ‘চিত্রা নদী ও সবুজ প্রকৃতি মিলিয়ে জায়গাটা অসাধারণ। একটু যতœ পেলে এটি দেশের সেরা পর্যটন স্পট হতে পারে।’
চিত্রা নদীর পাড়ে শান্ত-স্বচ্ছ পরিবেশে গড়ে উঠেছিল এস এম সুলতানের শিশুস্বর্গ ও ‘শিল্পী এস এম সুলতান ঘাট’। ২০১৮ সালের জুনে ঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হলেও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা থেমে যায়। এখন আগাছা আর ঝোপে ঢেকে গেছে পুরো এলাকা।
শিক্ষক টিপু সুলতান ও বিএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘দ্বিতলা নৌকাঘাটটি ছিল শিশু ও পর্যটকদের আকর্ষণ। কিন্তু এখন তা অযত্নে পড়ে আছে।’
চিত্রশিল্পী নয়ন বৈদ্য জানান, ‘সংগ্রহশালায় সুলতান দাদুর আঁকা ২৩টি মূল ছবি ও ৫১টি রেপ্লিকা রয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থী আসেন। ছুটির দিনে ভিড় বাড়ে। তবে জায়গাটির উন্নয়ন না হলে সম্ভাবনা নষ্ট হবে।’
সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জি বলেন, ‘এখানে জনবল সংকট রয়েছে। আমরা বহুবার আবেদন করেছি। পর্যাপ্ত জনবল পেলে দর্শনার্থীদের সেবার মান আরও বাড়ানো সম্ভব।’
নড়াইলের জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান,
‘সংগ্রহশালাকে পর্যটনবান্ধব করতে প্রায় ছয় কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এর আগেও ২০১৮ সালে প্রায় ২০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও অনুমোদন মেলেনি।
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্ম নেন এস এম সুলতান বাংলার কৃষিজীবন ও মানবশ্রমের শিল্পরূপকার। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। চিত্রা নদীর পাড়ে তার প্রিয় ভূমি কুড়িগ্রাম এলাকায় সমাহিত করা হয় তাকে।
বাংলা চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান তিনি।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, সুলতানের সৃষ্টির উত্তরাধিকার কি অবহেলায় হারিয়ে যাবে, নাকি নতুন করে জেগে উঠবে চিত্রা নদীর তীরে শিল্পীর স্বপ্নভূমি?