রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত একটি শিশু। শনিবারের ছবি -সংবাদ
ডেঙ্গুতে আরও ৬৫৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার,(২৫ অক্টোবর ২০২৫) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ৬৪ হাজার ২৯৭ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২৫৯ জন। জানুয়ারি মাস থেকে শনিবারপর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও কিশোর ও কর্মক্ষম যুবকদের সংখ্যাই বেশি।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১২৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৪ জন, ঢাকা বিভাগে ১৭০ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১২৪ জন,ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫৭জন, খুলনা বিভাগে ৩১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।
বয়সভেদে আক্রান্তদের মধ্যে ৫ বছরের শিশু ২৫ জন, ৬-১০ বছরের শিশু ২৯ জন, ১১-১৫ বছরের ৩৩ জন, ৮০ বছরের ৩ জন, ৭৬-৮০ বছরের ৩ জন আক্রান্তের তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পহেলা জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ৫ বছরের শিশু আক্রান্ত ৩,৮০০, ৬-১০ বছরের শিশু আক্রান্ত ৩,৪২৬ জন, ১১-১৫ বছরের শিশু আক্রান্ত ৩ হাজার ৮৯৮ জন। এতে গড়ে শিশু, কিশোর আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার ৯২৪ জন।
২১-২৫ বছরের আক্রান্ত ৮,৮৩০ জন, ২৬-৩০ বছরের আক্রান্ত ৮,৭০৭ জন, ৩১-৩৫ বছরের আক্রান্ত ৬,৩৪২ জন, ৩৬-৪০ বছর বয়সের আক্রান্ত ৫,৬৮১ জন। এ বছর শিশু, কিশোর ও কর্মক্ষম যুবকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
হাসপাতালের তথ্য মতে, আক্রান্তদের মধ্যে এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২৬ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৬ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আক্রান্ত ১৬ জন, সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫৬ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭৩ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯
হাসপাতালে ১৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে রাজধানীর ১৮টি হাসপাতালে এখনও ৭৭১ জন ভর্তি আছে। সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে এ সংখ্যা ২ হাজার ৬শ’ ৪৫জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাসার সংবাদকে জানিয়েছেন, পুরো বছরজুড়ে ডেঙ্গুর অবনতি থাকবে। আগামী বছর জানুয়ারি পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। ডেঙ্গু বর্ষা ও পরবর্তী সময়ে এর বিস্তার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
এখন সারাদেশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্ব ডেঙ্গু ছড়ানোর উপযোগী মাত্রায় রয়েছে। এ প্রবণতা থাকলে আগামী দিনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণকে আরও কঠিন করে তুলবে। সবচেয়ে উদ্বেগ জনক দিক হলো- ডেঙ্গু আক্রান্ত ও তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বাধিক।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার মূল কারণ হলো- মশকনিধন কার্যক্রম এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। মশা দমনে নানা কর্মসূচি নিলেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা সীমিত। অনেক এলাকায় এখনও সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ করা হয় না। দ্বিতীয়ত মশা দমনে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক পরিবার এখনও ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথেষ্ট সতর্ক নয়। ফুলের টব, পানি রাখার কলস, বালতি, নির্মাণাধীন ভবনে জমা পানি, ড্রামের মতো জায়গায় সহজেই এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। তৃতীয়ত, মশা দমনে সমন্বহীনতা বড় একটি সমস্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রয়োজনীয় সম্বনয়ের ঘাটতি রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাও বড় ভূমিকা রাখছে। সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন নতুন রোগীর চাপ বাড়ছে, কিন্তু শয্যা সংখ্যা সীমিত। অনেক হাসপাতালে এখনও পর্যাপ্ত সাপোর্টও নেই।
ডেঙ্গু শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকিই তৈরি করছে না বরং অর্থনৈতিক ক্ষতির বোঝাও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবারের একজন সদস্য অসুস্থ হলে পুরো পরিবার আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
প্রতিদিনের চিকিৎসা ব্যয়, ওষুধ, পরীক্ষার খরচ, কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন হওয়ার উৎপাদনশীলতারও ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বৃহত্তর অর্থনীতিতে এর প্রভাব অনিবার্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রথমেই দরকার জরুরিভিত্তিতে মশকনিধন কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত একটি শিশু। শনিবারের ছবি -সংবাদ
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ডেঙ্গুতে আরও ৬৫৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার,(২৫ অক্টোবর ২০২৫) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ৬৪ হাজার ২৯৭ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২৫৯ জন। জানুয়ারি মাস থেকে শনিবারপর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও কিশোর ও কর্মক্ষম যুবকদের সংখ্যাই বেশি।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১২৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৪ জন, ঢাকা বিভাগে ১৭০ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১২৪ জন,ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫৭জন, খুলনা বিভাগে ৩১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।
বয়সভেদে আক্রান্তদের মধ্যে ৫ বছরের শিশু ২৫ জন, ৬-১০ বছরের শিশু ২৯ জন, ১১-১৫ বছরের ৩৩ জন, ৮০ বছরের ৩ জন, ৭৬-৮০ বছরের ৩ জন আক্রান্তের তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পহেলা জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ৫ বছরের শিশু আক্রান্ত ৩,৮০০, ৬-১০ বছরের শিশু আক্রান্ত ৩,৪২৬ জন, ১১-১৫ বছরের শিশু আক্রান্ত ৩ হাজার ৮৯৮ জন। এতে গড়ে শিশু, কিশোর আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার ৯২৪ জন।
২১-২৫ বছরের আক্রান্ত ৮,৮৩০ জন, ২৬-৩০ বছরের আক্রান্ত ৮,৭০৭ জন, ৩১-৩৫ বছরের আক্রান্ত ৬,৩৪২ জন, ৩৬-৪০ বছর বয়সের আক্রান্ত ৫,৬৮১ জন। এ বছর শিশু, কিশোর ও কর্মক্ষম যুবকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
হাসপাতালের তথ্য মতে, আক্রান্তদের মধ্যে এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২৬ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৬ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আক্রান্ত ১৬ জন, সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫৬ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭৩ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯
হাসপাতালে ১৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে রাজধানীর ১৮টি হাসপাতালে এখনও ৭৭১ জন ভর্তি আছে। সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে এ সংখ্যা ২ হাজার ৬শ’ ৪৫জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাসার সংবাদকে জানিয়েছেন, পুরো বছরজুড়ে ডেঙ্গুর অবনতি থাকবে। আগামী বছর জানুয়ারি পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। ডেঙ্গু বর্ষা ও পরবর্তী সময়ে এর বিস্তার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
এখন সারাদেশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্ব ডেঙ্গু ছড়ানোর উপযোগী মাত্রায় রয়েছে। এ প্রবণতা থাকলে আগামী দিনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণকে আরও কঠিন করে তুলবে। সবচেয়ে উদ্বেগ জনক দিক হলো- ডেঙ্গু আক্রান্ত ও তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বাধিক।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার মূল কারণ হলো- মশকনিধন কার্যক্রম এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। মশা দমনে নানা কর্মসূচি নিলেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা সীমিত। অনেক এলাকায় এখনও সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ করা হয় না। দ্বিতীয়ত মশা দমনে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক পরিবার এখনও ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথেষ্ট সতর্ক নয়। ফুলের টব, পানি রাখার কলস, বালতি, নির্মাণাধীন ভবনে জমা পানি, ড্রামের মতো জায়গায় সহজেই এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। তৃতীয়ত, মশা দমনে সমন্বহীনতা বড় একটি সমস্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রয়োজনীয় সম্বনয়ের ঘাটতি রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাও বড় ভূমিকা রাখছে। সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন নতুন রোগীর চাপ বাড়ছে, কিন্তু শয্যা সংখ্যা সীমিত। অনেক হাসপাতালে এখনও পর্যাপ্ত সাপোর্টও নেই।
ডেঙ্গু শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকিই তৈরি করছে না বরং অর্থনৈতিক ক্ষতির বোঝাও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবারের একজন সদস্য অসুস্থ হলে পুরো পরিবার আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
প্রতিদিনের চিকিৎসা ব্যয়, ওষুধ, পরীক্ষার খরচ, কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন হওয়ার উৎপাদনশীলতারও ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বৃহত্তর অর্থনীতিতে এর প্রভাব অনিবার্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রথমেই দরকার জরুরিভিত্তিতে মশকনিধন কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া।