আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি বহাল আছে কি না—এই প্রশ্নে সেনাসদর বলছে, বিষয়টি একটি আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের পিএস পরিদপ্তরের এজি শাখার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে অভিযোগপত্রে নাম এলে চাকরি যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এটি স্পষ্টীকরণের অপেক্ষায় আছে সেনাসদর।”
তিনি আরও বলেন, “আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২ ও আইসিটি অ্যাক্ট ১৯৭২—দুটিই বিশেষ আইন। আমরা কখনোই এই দুই আইনকে মুখোমুখি দাঁড় করাবো না। বর্তমানে মামলাগুলো আইসিটি আইনের অধীনে চলছে এবং আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমরা চাই, সরকার যেন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার সম্পন্ন করে।”
ব্রিগেডিয়ার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল। একই সঙ্গে আটক অফিসারদের ‘রাইটস অ্যান্ড প্রিভিলেজেস’-এর বিষয়েও আমরা ওয়াকিবহাল আছি এবং সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”
তিনি জানান, সরকার যদি আর্মি অ্যাক্টের অধীনে বিচার করতে চায়, সে প্রস্তুতিও সেনাবাহিনী নিচ্ছে। “আমরা দুই আইনকে সামনা-সামনি দাঁড় করাবো না। সরকার যেভাবে এগোতে চায়, আমরা প্রস্তুত আছি।”
আটক কর্মকর্তাদের চাকরির স্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটিও একটি আইনি প্রক্রিয়া। আইসিটি অ্যাক্টের থার্ড অ্যামেন্ডমেন্টে ‘ডিসকোয়ালিফিকেশন টু হ্যাভ আ পাবলিক অফিস’—বিষয়টিতে ব্যাখ্যার সুযোগ আছে। বিষয়টি বিভিন্নভাবে ইন্টারপ্রিট করা যেতে পারে। আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং স্পষ্ট নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।”
তিনি আরও বলেন, “যদি ‘ডিসকোয়ালিফিকেশন’ বলতে ‘টার্মিনেশন’ বোঝানো হয়, সেটি কীভাবে কার্যকর হবে তা আইনেই পরিষ্কারভাবে বলা নেই। সেনা অফিসারদের ক্ষেত্রে তারা ‘পাবলিক অফিস হোল্ড’ করছে কি না, সেটিও ব্যাখ্যার অপেক্ষায়। আমরা আশা করি, সরকার ও সেনাবাহিনীর আলোচনায় একটি সুষ্ঠু সমাধান আসবে।”
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় ২৮ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে ১১ অক্টোবর সেনা সদর জানায়, ওই ২৮ জনের মধ্যে চাকরিতে থাকা এবং এলপিআরে যাওয়া ১৫ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এরপর সরকার ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা করে।
গত ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ১৫ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠায়।
এই ১৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১০ জন র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে নির্যাতনের মামলার আসামি—
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন
• কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন
• কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে)
• কর্নেল কে এম আজাদ
• কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) নির্যাতনের মামলার আসামি ৩ জন—
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিক
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজাহার সিদ্দিক
• মেজর জেনারেল শেখ মো. সারওয়ার হোসেন
অন্য দুইজন এক সময় বিজিবিতে কর্মরত ছিলেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে রামপুরা-বনশ্রী এলাকায় ২৮ জনকে হত্যার মামলার আসামি—
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম
• মেজর রাফাত বিন আলম মুন
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি বহাল আছে কি না—এই প্রশ্নে সেনাসদর বলছে, বিষয়টি একটি আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের পিএস পরিদপ্তরের এজি শাখার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে অভিযোগপত্রে নাম এলে চাকরি যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এটি স্পষ্টীকরণের অপেক্ষায় আছে সেনাসদর।”
তিনি আরও বলেন, “আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২ ও আইসিটি অ্যাক্ট ১৯৭২—দুটিই বিশেষ আইন। আমরা কখনোই এই দুই আইনকে মুখোমুখি দাঁড় করাবো না। বর্তমানে মামলাগুলো আইসিটি আইনের অধীনে চলছে এবং আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমরা চাই, সরকার যেন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার সম্পন্ন করে।”
ব্রিগেডিয়ার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল। একই সঙ্গে আটক অফিসারদের ‘রাইটস অ্যান্ড প্রিভিলেজেস’-এর বিষয়েও আমরা ওয়াকিবহাল আছি এবং সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”
তিনি জানান, সরকার যদি আর্মি অ্যাক্টের অধীনে বিচার করতে চায়, সে প্রস্তুতিও সেনাবাহিনী নিচ্ছে। “আমরা দুই আইনকে সামনা-সামনি দাঁড় করাবো না। সরকার যেভাবে এগোতে চায়, আমরা প্রস্তুত আছি।”
আটক কর্মকর্তাদের চাকরির স্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটিও একটি আইনি প্রক্রিয়া। আইসিটি অ্যাক্টের থার্ড অ্যামেন্ডমেন্টে ‘ডিসকোয়ালিফিকেশন টু হ্যাভ আ পাবলিক অফিস’—বিষয়টিতে ব্যাখ্যার সুযোগ আছে। বিষয়টি বিভিন্নভাবে ইন্টারপ্রিট করা যেতে পারে। আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং স্পষ্ট নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।”
তিনি আরও বলেন, “যদি ‘ডিসকোয়ালিফিকেশন’ বলতে ‘টার্মিনেশন’ বোঝানো হয়, সেটি কীভাবে কার্যকর হবে তা আইনেই পরিষ্কারভাবে বলা নেই। সেনা অফিসারদের ক্ষেত্রে তারা ‘পাবলিক অফিস হোল্ড’ করছে কি না, সেটিও ব্যাখ্যার অপেক্ষায়। আমরা আশা করি, সরকার ও সেনাবাহিনীর আলোচনায় একটি সুষ্ঠু সমাধান আসবে।”
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় ২৮ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে ১১ অক্টোবর সেনা সদর জানায়, ওই ২৮ জনের মধ্যে চাকরিতে থাকা এবং এলপিআরে যাওয়া ১৫ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এরপর সরকার ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা করে।
গত ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ১৫ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠায়।
এই ১৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১০ জন র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে নির্যাতনের মামলার আসামি—
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন
• কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন
• কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে)
• কর্নেল কে এম আজাদ
• কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) নির্যাতনের মামলার আসামি ৩ জন—
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিক
• ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজাহার সিদ্দিক
• মেজর জেনারেল শেখ মো. সারওয়ার হোসেন
অন্য দুইজন এক সময় বিজিবিতে কর্মরত ছিলেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে রামপুরা-বনশ্রী এলাকায় ২৮ জনকে হত্যার মামলার আসামি—
• লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম
• মেজর রাফাত বিন আলম মুন