প্রতিশ্রতি দেয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ যদি এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ না কেনার সিদ্ধান্ত নেয় তবে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে ‘প্রভাব পড়বে’ বলে জানালেন রাষ্ট্রদূত র্যুডিগার লোটৎস। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’-এ এ কথা বলেন জার্মান দূত।
রাষ্ট্রদূত র্যুডিগার লোটৎস বলেন, ইউরোপের বাজারে শুল্কছাড়ের আলোচনার আবহও এয়ারবাস নিয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কারণে বদলে যেতে পারে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে আসছে ফ্রান্সভিত্তিক ইউরোপিয়ান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। এর মধ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, বাংলাদেশ ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি বড় উড়োজাহাজ ‘কেনার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “এয়ারবাস বিষয়ক প্রশ্ন, এটা আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কি-না। অবশ্যই ফেলবে, অবশ্যই ফেলবে। “আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। এবং আমাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কটা যেমন, আমাদের মনে হয়, এটা এভাবেই চলতে দেওয়া উচিত। আমি মনে করি, বাণিজ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে নির্ভর করার মত পরিস্থিতি থাকা দরকার।”
এয়ারবাস থেকে আটটি যাত্রীবাহী ও দুটি পণ্যবাহী উড়োজাহাজ কেনার বিষয় ‘পর্যালোচনার’ মধ্যে আমেরিকান কোম্পানি বোয়িংও তৎপর হয়ে ওঠে। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে দুপক্ষের দেনদরবারের মধ্যে ২০২৪ সালের অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর ডনাল্ড ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ শুল্কের খড়গ থেকে বাঁচতে গত জুলাই মাসে অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এতে তাতে ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে বিমানের জন্য ১০টি বড় উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এরপর ইউরোপও নড়েচড়ে বসে। এয়ারবাস বিক্রির জন্য তারাও চাপ দিতে থাকে সরকারের ওপর।
গত জুন মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাউটার ভ্যান ভার্স। এর পর থেকে কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তবে এয়ারলাইন্স ব্যবসায় উড়োজাহাজের প্রয়োজন হলে সেই চাহিদা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তরফ থেকে আসার নিয়ম রয়েছে। এখানে যার জন্য উড়োজাহাজ কেনা হচ্ছে, সেই বিমানকেই রাখা হচ্ছে অন্ধকারে। চলতি মাসের শুরুতে ফ্রান্স দূতাবাসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা একযোগে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, উড়োজাহাজ কেনার আলোচনায় যেন এয়ারবাসকে ‘যৌক্তিকভাবে’ বিবেচনা করা হয়।
এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনার আলোচনা থেকে বাংলাদেশ সরে এলে তার প্রভাব কেমন হবে, তা আজ ডিক্যাব টকে জার্মান রাষ্ট্রদূত লোটৎসের কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক। উত্তরে তিনি বলেন, “এখানে সম্পূর্ণ একটা পটভূমি রয়েছে। জিএসপি প্লাসের প্রশ্ন যখন আসে, সেটা কাউকে হুমকি দেওয়া বা তেমন কিছু না, একেবারেই না। তবে, দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলো এ ধরনের (এয়ারবাস) সিদ্ধান্তের উপরও কিছুটা নির্ভর করে। সুতরাং জিএসপি প্লাসের সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত বা এমন বিষয়ের দরকষাকষি কীভাবে চলবে, এখানে নেওয়া এয়ারবাস বিষয়ক সিদ্ধান্ত তার আবহ কিছুটা পরিবর্তন করবে। সুতরাং এটাই আমি বলতে পারি।”
এমন প্রেক্ষাপটে এয়ারবাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘স্বাধীন’ বলে মন্তব্য করলেও তার একটি প্রভাব যে থাকবে, তা মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক জীবনে আমরা যে সিদ্ধান্তই নিই না কেন, যে কেনো আবহের স্বাভাবিক মেজাজের ক্ষেত্রে তার কিছু পরিণতি থাকে। পরস্পরের স্বার্থে আমরা নিবিড় ব্যবসায়িক সম্পর্ক চালিয়ে যাব। কিন্তু আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এর পরিণতি কী বা প্রভাব কী, তাহলে এটা খুব কঠিন শব্দ। যদি বলেন, এতে কি কোনো প্রভাব পড়বে? হ্যাঁ, পড়বে।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
প্রতিশ্রতি দেয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ যদি এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ না কেনার সিদ্ধান্ত নেয় তবে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে ‘প্রভাব পড়বে’ বলে জানালেন রাষ্ট্রদূত র্যুডিগার লোটৎস। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’-এ এ কথা বলেন জার্মান দূত।
রাষ্ট্রদূত র্যুডিগার লোটৎস বলেন, ইউরোপের বাজারে শুল্কছাড়ের আলোচনার আবহও এয়ারবাস নিয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কারণে বদলে যেতে পারে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে আসছে ফ্রান্সভিত্তিক ইউরোপিয়ান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। এর মধ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, বাংলাদেশ ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি বড় উড়োজাহাজ ‘কেনার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “এয়ারবাস বিষয়ক প্রশ্ন, এটা আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কি-না। অবশ্যই ফেলবে, অবশ্যই ফেলবে। “আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। এবং আমাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কটা যেমন, আমাদের মনে হয়, এটা এভাবেই চলতে দেওয়া উচিত। আমি মনে করি, বাণিজ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে নির্ভর করার মত পরিস্থিতি থাকা দরকার।”
এয়ারবাস থেকে আটটি যাত্রীবাহী ও দুটি পণ্যবাহী উড়োজাহাজ কেনার বিষয় ‘পর্যালোচনার’ মধ্যে আমেরিকান কোম্পানি বোয়িংও তৎপর হয়ে ওঠে। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে দুপক্ষের দেনদরবারের মধ্যে ২০২৪ সালের অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর ডনাল্ড ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ শুল্কের খড়গ থেকে বাঁচতে গত জুলাই মাসে অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এতে তাতে ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে বিমানের জন্য ১০টি বড় উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এরপর ইউরোপও নড়েচড়ে বসে। এয়ারবাস বিক্রির জন্য তারাও চাপ দিতে থাকে সরকারের ওপর।
গত জুন মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাউটার ভ্যান ভার্স। এর পর থেকে কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তবে এয়ারলাইন্স ব্যবসায় উড়োজাহাজের প্রয়োজন হলে সেই চাহিদা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তরফ থেকে আসার নিয়ম রয়েছে। এখানে যার জন্য উড়োজাহাজ কেনা হচ্ছে, সেই বিমানকেই রাখা হচ্ছে অন্ধকারে। চলতি মাসের শুরুতে ফ্রান্স দূতাবাসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা একযোগে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, উড়োজাহাজ কেনার আলোচনায় যেন এয়ারবাসকে ‘যৌক্তিকভাবে’ বিবেচনা করা হয়।
এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনার আলোচনা থেকে বাংলাদেশ সরে এলে তার প্রভাব কেমন হবে, তা আজ ডিক্যাব টকে জার্মান রাষ্ট্রদূত লোটৎসের কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক। উত্তরে তিনি বলেন, “এখানে সম্পূর্ণ একটা পটভূমি রয়েছে। জিএসপি প্লাসের প্রশ্ন যখন আসে, সেটা কাউকে হুমকি দেওয়া বা তেমন কিছু না, একেবারেই না। তবে, দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলো এ ধরনের (এয়ারবাস) সিদ্ধান্তের উপরও কিছুটা নির্ভর করে। সুতরাং জিএসপি প্লাসের সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত বা এমন বিষয়ের দরকষাকষি কীভাবে চলবে, এখানে নেওয়া এয়ারবাস বিষয়ক সিদ্ধান্ত তার আবহ কিছুটা পরিবর্তন করবে। সুতরাং এটাই আমি বলতে পারি।”
এমন প্রেক্ষাপটে এয়ারবাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘স্বাধীন’ বলে মন্তব্য করলেও তার একটি প্রভাব যে থাকবে, তা মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক জীবনে আমরা যে সিদ্ধান্তই নিই না কেন, যে কেনো আবহের স্বাভাবিক মেজাজের ক্ষেত্রে তার কিছু পরিণতি থাকে। পরস্পরের স্বার্থে আমরা নিবিড় ব্যবসায়িক সম্পর্ক চালিয়ে যাব। কিন্তু আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এর পরিণতি কী বা প্রভাব কী, তাহলে এটা খুব কঠিন শব্দ। যদি বলেন, এতে কি কোনো প্রভাব পড়বে? হ্যাঁ, পড়বে।”