image

‘মধ্যবিত্ত দান চায় না, ত্রাণ চায় না, চায় পরিত্রাণ

যশোরে আইডিয়ার লসের বাজার!

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
যশোর অফিস

১২৮৭ টাকা বাজারমূল্যের পণ্য ৫৫০ টাকায় পেয়ে ৫৩৭টি নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার বেজায় খুশি। তারা চাল কিনেছে ২৫ টাকা কেজি, ৪০ টাকা কেজিতে ডাল, ৪৫ টাকায় চিনি, ১২০ টাকায় সয়াবিন তেল! এ যেন শায়েস্তা খাঁ’র আমল!

শুধু চাল, ডাল, তেল, চিনিই নয়; এমন দামে ৯টি পণ্যের বাজার বসিয়েছিল যশোরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া। গত বছরও রমজানে মাসজুড়ে লস করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল আইডিয়া। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে যশোর শহরের খড়কিতে আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার চত্বরে রমজান মাসব্যাপী ব্যবসায় লস করার উদ্দেশ্য নিয়ে ৯টি পণ্যের এই বাজার বসে।

‘মানবকল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’ কিংবা ‘ইহলৌকিক লস সমান পারলৌকিক লাভ’ এমন স্লোগানে বৃহস্পতিবার প্রথমদিনের বাজার বসে। একজন ক্রেতা পরিবারপ্রতি ৫৪ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায় ৫ কেজি, ২৫ টাকা কেজি দরের আলু ১০ টাকা করে ২ কেজি ও বাকি ৭টি পণ্য ১ কেজি করে ১৪০ টাকা দরের ডাল ৪০ টাকায়, ১২০ টাকা দরের চিনি ৪৫ টাকায়, ১৯০ টাকা লিটারের তেল ১২০ টাকায়, ৪৫ টাকা দরের পেঁয়াজ ২০ টাকায়, ৯৫ টাকা দরের ছোলা ৬০ টাকায়, ৬০ টাকা দরের চিড়া ২০ টাকায়, ৩২০ টাকা দরের খেজুর ১০০ টাকায় ক্র?য় করছেন। প্রতি পরিবার সপ্তাহে একবার করে রমজানে মোট চারবার এই বাজার করার সুযোগ পাবে। বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সমমানের এই ৯টি পণ্য একজনের ক্রয় করতে প্রয়োজন ১২৮৭ টাকা, যা তারা ৫৫০ টাকায় দিচ্ছে আইডিয়া লস প্রজেক্টের বাজারে।

যশোরের আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘মধ্যবিত্ত দান চায় না, ত্রাণ চায় না, চায় পরিত্রাণ। আমাদের সাধ্যের মধ্যে আমরা সেই চেষ্টাই করছি। আমরা কিছু মানুষ যোগ হলেই সম্ভব বহু মানুষের পরিত্রাণের ব্যবস্থা। আমার শিক্ষার্থীদের শেখাতে চাচ্ছি সব লস আসলে লস নয়, মানব সেবায় লস বরং লাভের চেয়েও বেশি কিছু।

হামিদুল হক শাহীন আরও বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব মুসলিম দেশেই রমজান মাস আসলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমে অথচ বাংলাদেশে বাড়ে। রমজানে সংযম ও আত্মশুদ্ধির সব শিক্ষাকে ভুলে গিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুতদারির মাধ্যমে সীমাহীন ‘লাভের লোভ’ই এর জন্য দায়ী। এ সংকটের নির্মম শিকার সমাজের মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তরা। নিম্নবিত্তের মানুষেরা সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন ‘ত্রাণ’ সুবিধার জন্যে মানুষের কাছে হাত পাততে পারলেও চক্ষু লজ্জার খাতিরে ‘মধ্যবিত্ত’ তাদের কান্না লুকিয়েই রাখে। ‘আইডিয়া লস প্রোজেক্ট’ পরোক্ষভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সহনশীলতার মধ্যে নিয়ে আসার একটি প্রকল্প।

বাজারে পণ্য কিনতে আসা খড়কি দক্ষিণপাড়ার হালিমা বেগম জানান, তিনি ফেরি করে জীবন চালান। রমজানে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। এখানে এত কম টাকায় এত জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে; এতে শান্তিতে রোজা রাখতে পারবেন।

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম জানান, ‘রমজান মাসে এ যেন আল্লার রহমত! বাজারের অর্ধেক দামে চাল, ডাল, তেল কিনে নিয়ে যাচ্ছি। রোজার কষ্ট বেশ খানিকটা লাঘব হবে।’

খড়কি হাজামপাড়ার বৃদ্ধা মঞ্জুরি বেগম, রেলগেটের ফাতেমা বেগমও ৯টি পণ্য ক্রয় করে ভীষণ খুশি। তারা বলেন, ‘যারা এই বাজার বসাইচে আল্লাহ তাগের ভালো করুক। আর রোজার মাসে যারা বেশি লোভ করে আল্লাহ তাগের হেদায়েত দিক। সারাদেশে এইরাম ছড়ায়ে গেলি আমাগের মতোন গরিব মানষির কষ্ট কোমবে।’

আইডিয়া লস প্রজেক্টের সমন্বয়ক হারুন অর রশিদ জানান, আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবীরা মাসব্যাপী জরিপ করে মধ্যবিত্ত ৫৩৭টি পরিবারকে এই প্রজেক্টের আওতায় নিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে কার্ড বিলি করে। এখন তারা মাসব্যাপী এই বাজার করতে পারবে।

লস প্রজেক্টে বাজার করতে আসা পরিবারগুলোকে ব্যতিক্রমী অভ্যর্থনাও জানানো হয়। প্রবেশপথেই স্বেচ্ছাসেবকরা গোলাপ ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়ে বসার ব্যবস্থা করেন। এরপর তাদের শরবত ও খেজুর পরিবেশন করা হয়। ধারাবাহিকভাবে বাজারের রশিদ কেটে টাকা নিয়ে পণ্য বুঝিয়ে দেয়া হয়।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

» কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার

সম্প্রতি