alt

রাজনীতি

‘ভাগের’ আসনের ২০টিতে বিপদে জাপা প্রার্থীরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল রোববার (৭ জানুয়ারি)। নানান নাটকীয়তা শেষে ২৬ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের পর নির্বাচনে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতেও রয়েছেন দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ফলে ‘ভাগের আসন’ পেয়েও পুরোপুরি নির্ভার নয় জাতীয় পার্টি (জাপা)। এমনকি অধিকাংশ আসনে ‘বেকায়দায়’ জাপা প্রার্থীরা।

নৌকার ছেড়ে দেওয়া আসনে জাপা প্রার্থীদের লড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির এসব প্রার্থী জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে প্রভাব, জনপ্রিয়তা, নিজস্ব ভোট ব্যাংক, ব্যক্তি ইমেজসহ নানান কারণে বেশিরভাগ আসনে জাপা প্রার্থীরা ছিটকে পড়তে পারেন বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটাররা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনের মধ্যে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ ২০ আসনের প্রার্থীরা রয়েছেন ‘বেকায়দায়’। বাকি ৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্ত প্রার্থী না থাকায় অনেকটা ‘চাপমুক্ত’ জাপার প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এ কে এম সেলিম ওসমান, পটুয়াখালী-১ আসনে রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফেনী-৩ আসনে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বিপরীতে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। এসব আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকটাই ‘নির্ভার’ লাঙলের প্রার্থীরা।

যদিও জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর মতো ‘সমঝোতার’ বিষয়টি মানতে নারাজ দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। রংপুরে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সাংবাদিকদের জি এম কাদের বলেন, ‘২৬টি আসনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, কিন্তু কোথায় সমঝোতা? দুই-একটি আসন ছাড়া বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাদের দলের বাঘা বাঘা নেতারা নির্বাচন করছেন।’

তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন করছেন তাদের বলে দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে (আওয়ামী লীগের) দলীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী তাদের পক্ষে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের ওইসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমাদের কঠিন লড়াই করতে হচ্ছে।’

বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও নানান নাটকীয়তা শেষ ঢাকার একটি আসনসহ ২৬ আসনে ‘ছাড়’ পায় জাপা। তবে নির্বাচনে বিএনপি না আসায় আওয়ামী লীগ তাদের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ‘উৎসাহিত’ করেছে। এর ফলে দলটির নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে, তেমনই মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার আসনগুলোতেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

বিপাকে চুন্নু, ঢেঁকিতে চাপা পড়তে পারেন পাটোয়ারী

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচন করছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এর আগে ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে আসনটিতে ছাড় পাওয়ায় বিগত তিনটি নির্বাচনেই সহজ জয় পান তিনি। তবে এবার চুন্নুর আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছেন কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিমুল হক।

বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নাতজামাই নাসিমুল হক। ওই পরিচয়ে তাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমর্থন জানিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজের পোস্টারে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ প্রার্থী দাবি করছেন চুন্নু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই পোস্টার নিয়ে হয় ব্যাপক সমালোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই পোস্টারেই বুঝতে পারা যায় জাপার প্রার্থী কতটা চাপে আছেন। যদিও চুন্নু বলেছেন, ছাপার ভুলের কারণে এই ধরনের পোস্টার হয়েছে। এটা লেখা দরকার ছিল না।

গাইনাবান্ধা-১ আসনে জাপার প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। দলীয় নির্দেশে ওই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন নৌকার প্রার্থী আফরুজা বারী। তবে আফরুজা বারীর কন্যা আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার ঢেঁকি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিগারের পক্ষে কাজ করেছেন। স্বতন্ত্র এই প্রার্থী জাপা প্রার্থীর সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ধরা হচ্ছে।

দুশ্চিন্তায় জি এম কাদেরের স্ত্রীও

ঢাকা-১৮ আসনে লাঙল প্রতীকে লড়ছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের। ওই আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ।

নৌকার প্রার্থী না থাকলেও শেরীফার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদের মধ্যে রয়েছেন কেটলি প্রতীক নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী, মোড়া প্রতীক নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও ট্রাক প্রতীক নিয়ে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন। আসনটিতে মোট ১০ প্রার্থী থাকলেও মূলত লাঙলকে লড়তে হবে কেটলি, মোড়া ও ট্রাকের সঙ্গে।

রংপুর-নীলফামারিতেও অস্বস্তি

নীলফামারী-৩ আসনে জাপা প্রার্থী মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলকে ছাড় দিয়ে সরে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা। তবে গোলাম মোস্তফা সরে দাঁড়ালেও তার স্ত্রী মার্জিয়া সুলতানা ঈগল প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে আছেন। তাকে সমর্থন দিয়েছেন অন্য দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ শামিম এবং হুকুম আলী খান।

এছাড়া কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল ও কেটলি প্রতীকে জাপার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী কাজী ফারুক কাদেরও ভোটের লড়াইয়ে আছেন। ফলে এই আসনে লাঙলের প্রার্থী রানা সোহেল স্বস্থিতে নেই।

একই অবস্থা নীলফামারী- ৪ আসনে। জাপা প্রার্থী আহসান আদেলুর রহমান ভোটে জয়ের ক্ষেত্রে অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। আসনটিতে জাপার প্রার্থী নৌকার ‘ছাড়’ পেলেও আরেক আওয়ামী লীগ নেতা মুখছেদুল মুমিন ট্রাক প্রতীকে ভোটের মাঠে আছেন। সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। এছাড়া জাপার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিকও রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে।

জাপার অন্য প্রার্থীরাও অস্বস্তিতে

এছাড়া কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, রংপুর-১ আসনে জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার, গাইবান্ধা-২ আসনে আবদুর রশিদ সরকারও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন।

একইভাবে চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে সোলায়মান শেঠ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া- ৩ আসনে নুরুল ইসলাম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ আসনে নাসরিন জাহান রত্না, পিরোজপুর-৩ আসনে মাসরেকুল আজম, ময়মনসিংহ-৫ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম, সাতক্ষীরা-২ আসনে আশরাফুজ্জামান খান ও মানিকগঞ্জ-১ আসনে জহিরুল আলম রুবেলও ভালো অবস্থানে নেই।

দলের নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদনের ‘হিড়িক’

১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: একমত জামায়াত-এনসিপি, বিএনপিসহ ৩ দলের ভিন্নমত

নিবন্ধন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনে এনসিপির আবেদন

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ: ঐকমত্যে অধিকাংশ দল, ভিন্নমত বিএনপি-এনডিএম-বিএলডিপির

ছবি

‘নিবন্ধনের শর্ত কঠিন, তবু প্রত্যাশা করছি অনুমোদন’: আবেদন জমায় ব্যস্ত দলগুলো

ছবি

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বিএনপির আলোচনায় শুল্ক, বাণিজ্য, নির্বাচন

ছবি

সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নতুন দল ‘বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি’

ছবি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি বদলাবে— তবে কিভাবে, তাতে এখনো মতানৈক্য

ছবি

আচরণবিধি লঙ্ঘনে দেড় লাখ টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত

ছবি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নি‌য়ে আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন

ছবি

মোহাম্মদপুর থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গ্রেপ্তার

ছবি

‘মৌলিক সংস্কার’ বিষয়ে মতানৈক্য হলে গণভোটে যেতে হবে: ইসলামী আন্দোলন

ছবি

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

মেয়াদ শেষ, ইশরাকের আর শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা আসিফ

ছবি

গুরুত্ব হারানোর ভয়ে একটি দল নির্বাচনের সময় নিয়ে নারাজ: মির্জা ফখরুল

ছবি

ক্ষমতার ভারসাম্যে এনসিসির পক্ষে এনসিপি, প্রক্রিয়ায় দ্বিমত

ছবি

মশকনিধন কার্যক্রম উদ্বোধন, সেবা সচল রাখার প্রত্যয় ইশরাকের

ছবি

আলোচনার মাঝে হট্টগোল, কমিশনের হস্তক্ষেপে ফিরে এলেন দলীয় প্রতিনিধিরা

ছবি

ইউনূসের ‘নিরপেক্ষতা’ হারানোর অভিযোগে ঐকমত্য কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললো জামায়াত

ছবি

একদিনের বিরতির পর সংলাপে জামায়াত, অন্য দলগুলোর সৌহার্দ্যপূর্ণ অভ্যর্থনা

ছবি

‘শপথ অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েছি, এখনও কার্ড পাই। আমি কীভাবে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিস্ট হলাম?’: রিমান্ডের পর পিপলস পার্টির বাবুল চাখারী

ছবি

‘বিএনপির প্রস্তাবের’ প্রতি প্রধান উপদেষ্টার ঝুঁকে পড়া নিয়ে অভিযোগ এনসিপির

ছবি

‘জামায়াত আলোচনা করবে বলে মনে করছি’—শফিকুল আলম

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য সংলাপ থেকে প্রতীকীভাবে সরে দাঁড়াল জামায়াতে ইসলামী

ছবি

‘ইগনোর’ করার প্রতিবাদে ঐকমত্য বৈঠকে অনুপস্থিত জামায়াত

ছবি

গেজেট প্রকাশের পরও শপথ নয়, দায়িত্ব চাইছেন ইশরাক

ছবি

সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে এনসিপির নির্দেশ সারোয়ার তুষারকে

ছবি

ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ফ্যাসিস্ট শাসনের বিদায় সম্ভব হয়েছে: বিএনপি নেতা

ছবি

ডিএসসিসিতে সেবা চালু রাখার ঘোষণা ইশরাকের, শপথ না হওয়াকে বললেন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত

ছবি

“সরকারি নয়, সইও নেই”—তারেক-ইউনূস বৈঠকের যৌথ ঘোষণার বিষয়ে সিইসি

ছবি

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় অনুরাগ নয়, মিল আছে—সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

নারায়নগঞ্জে জামায়াতের পথসভায় বিএনপির হামলা, আহত ৫

ছবি

তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক ও যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনায় জামায়াত

ছবি

বাজেটে বৈষম্য-লুটপাট-অস্বচ্ছতা: বিশ্লেষণে দেড় দশকের চিত্র

ছবি

“আন্দোলনের কর্মীরাই পাবে পদ”— বিএনপি নেতার বার্তা সভায়

tab

রাজনীতি

‘ভাগের’ আসনের ২০টিতে বিপদে জাপা প্রার্থীরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল রোববার (৭ জানুয়ারি)। নানান নাটকীয়তা শেষে ২৬ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের পর নির্বাচনে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতেও রয়েছেন দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ফলে ‘ভাগের আসন’ পেয়েও পুরোপুরি নির্ভার নয় জাতীয় পার্টি (জাপা)। এমনকি অধিকাংশ আসনে ‘বেকায়দায়’ জাপা প্রার্থীরা।

নৌকার ছেড়ে দেওয়া আসনে জাপা প্রার্থীদের লড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির এসব প্রার্থী জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে প্রভাব, জনপ্রিয়তা, নিজস্ব ভোট ব্যাংক, ব্যক্তি ইমেজসহ নানান কারণে বেশিরভাগ আসনে জাপা প্রার্থীরা ছিটকে পড়তে পারেন বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটাররা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনের মধ্যে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ ২০ আসনের প্রার্থীরা রয়েছেন ‘বেকায়দায়’। বাকি ৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্ত প্রার্থী না থাকায় অনেকটা ‘চাপমুক্ত’ জাপার প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এ কে এম সেলিম ওসমান, পটুয়াখালী-১ আসনে রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফেনী-৩ আসনে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বিপরীতে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। এসব আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকটাই ‘নির্ভার’ লাঙলের প্রার্থীরা।

যদিও জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর মতো ‘সমঝোতার’ বিষয়টি মানতে নারাজ দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। রংপুরে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সাংবাদিকদের জি এম কাদের বলেন, ‘২৬টি আসনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, কিন্তু কোথায় সমঝোতা? দুই-একটি আসন ছাড়া বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাদের দলের বাঘা বাঘা নেতারা নির্বাচন করছেন।’

তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন করছেন তাদের বলে দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে (আওয়ামী লীগের) দলীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী তাদের পক্ষে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের ওইসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমাদের কঠিন লড়াই করতে হচ্ছে।’

বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও নানান নাটকীয়তা শেষ ঢাকার একটি আসনসহ ২৬ আসনে ‘ছাড়’ পায় জাপা। তবে নির্বাচনে বিএনপি না আসায় আওয়ামী লীগ তাদের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ‘উৎসাহিত’ করেছে। এর ফলে দলটির নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে, তেমনই মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার আসনগুলোতেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

বিপাকে চুন্নু, ঢেঁকিতে চাপা পড়তে পারেন পাটোয়ারী

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচন করছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এর আগে ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে আসনটিতে ছাড় পাওয়ায় বিগত তিনটি নির্বাচনেই সহজ জয় পান তিনি। তবে এবার চুন্নুর আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছেন কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিমুল হক।

বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নাতজামাই নাসিমুল হক। ওই পরিচয়ে তাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমর্থন জানিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজের পোস্টারে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ প্রার্থী দাবি করছেন চুন্নু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই পোস্টার নিয়ে হয় ব্যাপক সমালোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই পোস্টারেই বুঝতে পারা যায় জাপার প্রার্থী কতটা চাপে আছেন। যদিও চুন্নু বলেছেন, ছাপার ভুলের কারণে এই ধরনের পোস্টার হয়েছে। এটা লেখা দরকার ছিল না।

গাইনাবান্ধা-১ আসনে জাপার প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। দলীয় নির্দেশে ওই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন নৌকার প্রার্থী আফরুজা বারী। তবে আফরুজা বারীর কন্যা আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার ঢেঁকি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিগারের পক্ষে কাজ করেছেন। স্বতন্ত্র এই প্রার্থী জাপা প্রার্থীর সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ধরা হচ্ছে।

দুশ্চিন্তায় জি এম কাদেরের স্ত্রীও

ঢাকা-১৮ আসনে লাঙল প্রতীকে লড়ছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের। ওই আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ।

নৌকার প্রার্থী না থাকলেও শেরীফার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদের মধ্যে রয়েছেন কেটলি প্রতীক নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী, মোড়া প্রতীক নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও ট্রাক প্রতীক নিয়ে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন। আসনটিতে মোট ১০ প্রার্থী থাকলেও মূলত লাঙলকে লড়তে হবে কেটলি, মোড়া ও ট্রাকের সঙ্গে।

রংপুর-নীলফামারিতেও অস্বস্তি

নীলফামারী-৩ আসনে জাপা প্রার্থী মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলকে ছাড় দিয়ে সরে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা। তবে গোলাম মোস্তফা সরে দাঁড়ালেও তার স্ত্রী মার্জিয়া সুলতানা ঈগল প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে আছেন। তাকে সমর্থন দিয়েছেন অন্য দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ শামিম এবং হুকুম আলী খান।

এছাড়া কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল ও কেটলি প্রতীকে জাপার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী কাজী ফারুক কাদেরও ভোটের লড়াইয়ে আছেন। ফলে এই আসনে লাঙলের প্রার্থী রানা সোহেল স্বস্থিতে নেই।

একই অবস্থা নীলফামারী- ৪ আসনে। জাপা প্রার্থী আহসান আদেলুর রহমান ভোটে জয়ের ক্ষেত্রে অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। আসনটিতে জাপার প্রার্থী নৌকার ‘ছাড়’ পেলেও আরেক আওয়ামী লীগ নেতা মুখছেদুল মুমিন ট্রাক প্রতীকে ভোটের মাঠে আছেন। সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। এছাড়া জাপার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিকও রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে।

জাপার অন্য প্রার্থীরাও অস্বস্তিতে

এছাড়া কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, রংপুর-১ আসনে জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার, গাইবান্ধা-২ আসনে আবদুর রশিদ সরকারও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন।

একইভাবে চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে সোলায়মান শেঠ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া- ৩ আসনে নুরুল ইসলাম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ আসনে নাসরিন জাহান রত্না, পিরোজপুর-৩ আসনে মাসরেকুল আজম, ময়মনসিংহ-৫ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম, সাতক্ষীরা-২ আসনে আশরাফুজ্জামান খান ও মানিকগঞ্জ-১ আসনে জহিরুল আলম রুবেলও ভালো অবস্থানে নেই।

back to top