* আলোচিত তৃণমূল বিএনপি নেতার ভরাডুবি, হারালেন জামানতও
* এখন নির্বাচনকে `সাজানো` বলছেন। আর বললেন, ‘মনে হচ্ছে দেশটা একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলছে।’
নারায়ণগঞ্জের প্রথম সারির নেতাদের একজন তৈমুর আলম খন্দকার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা তৈমুর পরবর্তীতে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও হন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বেশ আলোচিত হন। সর্বশেষ দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নাসিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় পদ হারান। শেষমেষ হতে হয় দল থেকে বহিষ্কারও। বহিষ্কৃত হওয়ার পরও দলের জন্য কাজ করার কথা বলেছিলেন তিনি।
গেল বছরের সেপ্টেম্বরে যোগ দেন তৃণমূল বিএনপিতে। বনে যান দলটির মহাসচিব। এরপর থেকে নারায়ণগঞ্জে তার অনুসারীদের একে একে তৃণমূলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে সাথেও পান। তবে বিএনপির কাছে পরিচিতি পান ‘বেঈমান’ হিসেবে। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, তৃণমূল বিএনপি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি দল।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর থেকে ফের আলোচনায় চলে আসেন তৈমুর। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রথম দিকে গুঞ্জন ছিল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করবেন তিনি। কিন্তু তৈমুর নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে নির্বাচনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকেন।
তৈমুরকে এই আসনে প্রার্থী না হওয়ার পরামর্শও এসেছিল বলে তাঁরই ঘনিষ্ঠ লোকজন জানিয়েছেন। তৈমুর আলমের এক ফোনালাপের ভিডিও প্রকাশের পর বিষয়টি অনেকটা খোলাসাও হয়। ওই ভিডিওতে মোবাইলের অপর প্রান্তের কথার জবাবে তৈমুরকে বলতে শোনা যায়, ‘৫-এ (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন) কিনবো না। প্রধানমন্ত্রীর সামনে যা বলার বলেছি। কথার পরিবর্তন করব না। ওনারা গাজীর (গোলাম দস্তগীর গাজী) কাছ থেকে বায়াসড (প্রভাবিত) হয়েছে। আমাদের দিয়ে যা খুশি করাবেন, তা হবে না।’
শেষমেষ নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে দলীয় ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীকের প্রার্থী হন তিনি। এই আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি টানা তিনবার ওই আসনের সংসদ সদস্য। আর তৈমুরের পৈত্রিক নিবাস রূপগঞ্জে হলেও সেখানে তার কোন ভোটব্যাংক নেই। কেননা জীবনভর তিনি রাজনীতি করেছেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। ভোটের মাঠে তার প্রতিফলনও দেখা গেছে। প্রচারণার সময় বিএনপির উল্লেখযোগ্য কাউকে সাথে পাননি, রূপগঞ্জে ছিল না তার নতুন দলের কোন সাংগঠনিক ভিত্তিও।
তবে প্রচারণার শুরু থেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে দেখা যায় তাকে।
রূপগঞ্জের ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসার ছড়াছাড়ি নিয়ে সরব ছিলেন প্রচারণার পুরোটা সময়। নির্বাচনী পরিবেশ নিরপেক্ষ নয় বলেও অভিযোগ করে একাধিকবার নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে লিখিত দিয়েছেন তিনি।
এর মাঝে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে ‘সরকারকে সহায়তা’ করায় আওয়ামী লীগ তৈমুর আলমকে ‘অটোপাসে’ সংসদ সদস্য বানাবে বলেও গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। কিন্তু ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল দেখিয়েছে ভিন্ন চিত্র।
গত সোমবার নারায়ণগঞ্জে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ঘোষিত নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী, বাজেভাবে হেরেছেন তৈমুর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ ভোটারের বিপরীতে নির্বাচনে ২ লাখ ১২ হাজার ৬২৪টি ভোট পড়ে। যা মোট ভোটের ৫৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবারের মত বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেটলি প্রতীকের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া পান ৪৫ হাজার ৭৫ ভোট। আর তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট। যা এই আসনে বাতিল হওয়া ভোটেরও কম।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত সাড়ে ৮ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থী জামানত হারান। এ হিসেব অনুযায়ী তৈমুর আলমের জামানত বাঁচাতে প্রয়োজন ছিল ২৬ হাজার ৫৭৮ ভোট। এই আসনে ৯ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে তৈমুরসহ সাতজন প্রার্থীই তাদের জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর থেকেই বন্ধ ছিল তৈমুর আলম খন্দকারের মুঠোফোন। সাক্ষাৎকারের বিষয়ে একাধিকবার যোগযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে বুধবার এক নারী কর্মীর বাসায় হামলার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এলে সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলেন তিনি।
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে `সাজানো` মন্তব্য করে এ সময় তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমরা এইরকম সাজানো নির্বাচনে আর যাবো না। এই নির্বাচন হইছে সরকার টু সরকার, নৌকাও সরকারের, স্বতন্ত্রও সরকারের। মনে হচ্ছে দেশটা একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলছে।’
নির্বাচনে নিজের পরাজয়ের কারণ কী তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘রূপগঞ্জে সব ভূমিদস্যু আমার বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। তারা মনে করছে, তৈমুর আলম খন্দকার আসলে তাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। কারণ শুরু থেকেই আমি ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অবস্থানে ছিলাম। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যাদের জমিজমা নিয়ে গেল তারাও তো ভয়ে-আতঙ্কে আর আগাইয়া আসলো না।’
বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪
* আলোচিত তৃণমূল বিএনপি নেতার ভরাডুবি, হারালেন জামানতও
* এখন নির্বাচনকে `সাজানো` বলছেন। আর বললেন, ‘মনে হচ্ছে দেশটা একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলছে।’
নারায়ণগঞ্জের প্রথম সারির নেতাদের একজন তৈমুর আলম খন্দকার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা তৈমুর পরবর্তীতে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও হন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বেশ আলোচিত হন। সর্বশেষ দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নাসিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় পদ হারান। শেষমেষ হতে হয় দল থেকে বহিষ্কারও। বহিষ্কৃত হওয়ার পরও দলের জন্য কাজ করার কথা বলেছিলেন তিনি।
গেল বছরের সেপ্টেম্বরে যোগ দেন তৃণমূল বিএনপিতে। বনে যান দলটির মহাসচিব। এরপর থেকে নারায়ণগঞ্জে তার অনুসারীদের একে একে তৃণমূলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে সাথেও পান। তবে বিএনপির কাছে পরিচিতি পান ‘বেঈমান’ হিসেবে। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, তৃণমূল বিএনপি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি দল।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর থেকে ফের আলোচনায় চলে আসেন তৈমুর। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রথম দিকে গুঞ্জন ছিল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করবেন তিনি। কিন্তু তৈমুর নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে নির্বাচনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকেন।
তৈমুরকে এই আসনে প্রার্থী না হওয়ার পরামর্শও এসেছিল বলে তাঁরই ঘনিষ্ঠ লোকজন জানিয়েছেন। তৈমুর আলমের এক ফোনালাপের ভিডিও প্রকাশের পর বিষয়টি অনেকটা খোলাসাও হয়। ওই ভিডিওতে মোবাইলের অপর প্রান্তের কথার জবাবে তৈমুরকে বলতে শোনা যায়, ‘৫-এ (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন) কিনবো না। প্রধানমন্ত্রীর সামনে যা বলার বলেছি। কথার পরিবর্তন করব না। ওনারা গাজীর (গোলাম দস্তগীর গাজী) কাছ থেকে বায়াসড (প্রভাবিত) হয়েছে। আমাদের দিয়ে যা খুশি করাবেন, তা হবে না।’
শেষমেষ নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে দলীয় ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীকের প্রার্থী হন তিনি। এই আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি টানা তিনবার ওই আসনের সংসদ সদস্য। আর তৈমুরের পৈত্রিক নিবাস রূপগঞ্জে হলেও সেখানে তার কোন ভোটব্যাংক নেই। কেননা জীবনভর তিনি রাজনীতি করেছেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। ভোটের মাঠে তার প্রতিফলনও দেখা গেছে। প্রচারণার সময় বিএনপির উল্লেখযোগ্য কাউকে সাথে পাননি, রূপগঞ্জে ছিল না তার নতুন দলের কোন সাংগঠনিক ভিত্তিও।
তবে প্রচারণার শুরু থেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে দেখা যায় তাকে।
রূপগঞ্জের ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসার ছড়াছাড়ি নিয়ে সরব ছিলেন প্রচারণার পুরোটা সময়। নির্বাচনী পরিবেশ নিরপেক্ষ নয় বলেও অভিযোগ করে একাধিকবার নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে লিখিত দিয়েছেন তিনি।
এর মাঝে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে ‘সরকারকে সহায়তা’ করায় আওয়ামী লীগ তৈমুর আলমকে ‘অটোপাসে’ সংসদ সদস্য বানাবে বলেও গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। কিন্তু ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল দেখিয়েছে ভিন্ন চিত্র।
গত সোমবার নারায়ণগঞ্জে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ঘোষিত নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী, বাজেভাবে হেরেছেন তৈমুর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ ভোটারের বিপরীতে নির্বাচনে ২ লাখ ১২ হাজার ৬২৪টি ভোট পড়ে। যা মোট ভোটের ৫৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবারের মত বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেটলি প্রতীকের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া পান ৪৫ হাজার ৭৫ ভোট। আর তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট। যা এই আসনে বাতিল হওয়া ভোটেরও কম।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত সাড়ে ৮ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থী জামানত হারান। এ হিসেব অনুযায়ী তৈমুর আলমের জামানত বাঁচাতে প্রয়োজন ছিল ২৬ হাজার ৫৭৮ ভোট। এই আসনে ৯ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে তৈমুরসহ সাতজন প্রার্থীই তাদের জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর থেকেই বন্ধ ছিল তৈমুর আলম খন্দকারের মুঠোফোন। সাক্ষাৎকারের বিষয়ে একাধিকবার যোগযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি। পরে বুধবার এক নারী কর্মীর বাসায় হামলার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এলে সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলেন তিনি।
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে `সাজানো` মন্তব্য করে এ সময় তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমরা এইরকম সাজানো নির্বাচনে আর যাবো না। এই নির্বাচন হইছে সরকার টু সরকার, নৌকাও সরকারের, স্বতন্ত্রও সরকারের। মনে হচ্ছে দেশটা একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলছে।’
নির্বাচনে নিজের পরাজয়ের কারণ কী তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘রূপগঞ্জে সব ভূমিদস্যু আমার বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। তারা মনে করছে, তৈমুর আলম খন্দকার আসলে তাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। কারণ শুরু থেকেই আমি ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অবস্থানে ছিলাম। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যাদের জমিজমা নিয়ে গেল তারাও তো ভয়ে-আতঙ্কে আর আগাইয়া আসলো না।’