সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাকে উৎখাত করলে পরবর্তীতে কে আসবে? কারা আসবে, কে আসবে ক্ষমতায়। কে দেশের জন্য কাজ করবে, কাকে তারা আনতে চায়; সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়। আর সেটা স্পষ্ট নয় বলে তারা জনগণের সাড়া পাচ্ছে না।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে তার গণভবন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গত সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাম চলে গেছে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে। তারা ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আমার একটা প্রশ্ন, বিশেষ করে যারা অতি বাম, সবসময় মনে করি, তারা প্রোগ্রেসিভ দল, তারা খুবই গণমুখী দল ইত্যাদি। সেখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক আছে তারা আমাকে উৎখাত করবে। পরবর্তীতে কে আসবে তাহলে, সেটা কি ঠিক করতে পেরেছে? সেটাই তো আমার প্রশ্ন।’
এর আগে গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতি ডান অতি বাম এক হয়ে সরকার উৎখাত করতে চায়।’
পুলিশ আমেরিকার স্টাইলে আন্দোলন দমন করতে পারে
প্যালেস্টাইন ইস্যুতে আমেরিকায় ছাত্র বিক্ষোভ দমনের পুলিশের পদক্ষেপের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের পুলিশ আমেরিকার পুলিশের স্টাইল বা ধরন অনুসরণ করে আন্দোলন দমন করতে পারে। আমাদের পুলিশকে যদি বলে দিই যে আমেরিকার পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায়, সেটা অনুসরণ করতে পারো। সেটা করতে পারে। পুলিশ এখন আমেরিকার পুলিশদের অনুসরণ করতে পারে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকেরা এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন দেবেন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘কারণ, আমরা তো ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম। সেই ২৮ অক্টোবরের কথা মনে আছে, ২০২৩ সালে। আমি তো বলেছিলাম পুলিশকে ধৈর্য ধরতে। ধৈর্য ধরতে গিয়ে পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। কাজেই আমার মনে হয়, এখন আমাদের পুলিশ আমেরিকার স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থাটা নিতে পারে।’
‘বিদেশে বসে’ আন্দোলন করে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। প্রতিদিন অনলাইনে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে, নির্দেশ দিয়েই যাচ্ছে। যারা আন্দোলন করছে করুক, তাদের তো বাধা দিচ্ছি না।’
উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের স্বজনদের অংশ নেয়া
উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের স্বজনদের নির্বাচন অংশ না নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চেয়েছি নির্বাচন যাতে প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, এজন্য বলেছি।’
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা আগে নির্বাচন করেছেন। কেউ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের তো রাজনৈতিক জীবনী আছে। তাদেরকে মানা করি কী করে? তবে এটা ঠিক, এক জায়গায় বউকে দিলো, আরেক জায়গায় ছেলেকে দিলো, এগুলো ঠিক না। কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সেটাই নেতাকর্মীদের বলতে চেয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে মেয়ে স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছেন। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেব, আমার নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখব না, এটা হয় না।’
দেশের মোট ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে এবার ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে নির্বাচন এবার। মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকি উপজেলাগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলায় ভোট হচ্ছে ৮ মে।
নির্বাচন করার সক্ষমতা না থাকায় বর্জন
অন্য দলগুলোর নির্বাচন বর্জন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। বর্জন করে কেন? নির্বাচন করার মত সক্ষমতাই নাই। পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে হলে জাতিকে দেখাতে হবে যে পরবর্তী নেতৃত্ব কে আসবে, প্রধানমন্ত্রী কে হবে, নেতা কে হবে? একটা নেতা দেখাতে হবে।’
উপযুক্ত নেতা না থাকায় বিরোধীরা নির্বাচন বর্জন করছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনার কাছে উপযুক্ত নেতা না থাকলে তখন তো আপনাকে ছুতা খুঁজতে হয়। নির্বাচন করলাম না, বিরাট ব্যাপার দেখালাম। বাস্তবতা সেটাই। আমাদের দেশে সেটাই হচ্ছে। কারণ সাধারণত আসামিকে দেখালে পাবলিক তো সেটা নিবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অতীতের সব নির্বাচনের চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভোটের অধিকার রক্ষার নির্বাচন হয়েছে।
মিয়ানমার ইস্যুতে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মায়ানমার থেকে আগতদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি দেখবেন বলে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। থাইল্যান্ড সরকার গভীরভাবে বিষয়টি দেখবে। মায়ানমারের বিষয়টি নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ দেশের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ
মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশসহ অন্যদের ‘সবক’ না দিয়ে আগে নিজ দেশের দিকে নজর দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্যালেস্টাইনের পক্ষের বিক্ষোভ দমনে শক্তি প্রয়োগ এবং গণহত্যা চালাতে ইসরায়েলকে অর্থ ও অস্ত্র যোগান দেয়ার সমালোচনা করেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে দুই বাংলাদেশির নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের দেশে যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুলি করে সাধারণ-নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে, এটাতো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘরকে আগে সামলানো উচিত।’
দুই বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদে জানানো হবে কিনা-এমন প্রশ্নের শেখ হাসিনা বলেন, ‘অলরেডি প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আমেরিকায় বসেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে, সেখানে আমাদের আওয়ামী লীগ খুব সোচ্চার আছে, আমাদের সহযোগী সংগঠন, এটার প্রতিবাদ তো আমরা সবসময় করেই যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকায়তো প্রতিনিয়ত মানুষ খুন হচ্ছে; একটা ঘরের ভেতরে একটা বাচ্চা ছেলেকে মা ধরে রেখেছে, তাকে গুলি করে মেরে ফেলে দিলো। তার অপরাধটা কী ছিল? তার হাতে একটা কাঁচি ছিল। সেই কাঁচির ভয়ে তাকে গুলি করে মারা হল। সেটা সে হয়ত খেলাধুলা বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন মাজুর (অপারগ) ব্যক্তি, যে পঙ্গু, হাঁটতে পারে না, চলতেও পারে না, সে নাকি প্রেসিডেন্টকে হুমকি দিয়েছে; ওই অবস্থায় তাকে গুলি করে হত্যা করল। আর স্কুল, বিভিন্ন শপিং মলে, রেস্তোরাঁয় অনবরত গুলি হচ্ছে, আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নাই বোধহয়, আমেরিকায় গুলি করে মানুষ না মারছে।’
প্যালেস্টাইনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রর দু’মুখো নীতি
বিভিন্ন জায়গায় মানবাধিকারের কথা বলে ফিলিস্তিনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ‘দু’মুখো’ নীতি দেখাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটাতো আমারও প্রশ্ন। এই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমরা করে আসছি। যে দু’মুখো নীতি কিসের জন্য? মানুষ খুন করলে, তারপর তাদেরকে টাকাও দেয়া হয়, অস্ত্রও দেয়া হয় মানুষ হত্যায়। অন্য জায়গায় দেখা গেল, মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার।’
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশেওতো মানবাধিকারের কত বিরাট প্রবক্তারা আছে, তারা এখন চুপ কেন? তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা চুপ কেন? কথা বলে না কেন? তারা ব্যবস্থা নেয় না কেন। সাংবাদিক থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশের বিষয়ে অনেক সোচ্চার, এখন কেন চুপ।’
সরকার ও মানবাধিকার সংস্থা চুপ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ মানুষ সোচ্চার হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী-শিশু হত্যা, হাসপাতালে বোমা হামলার প্রতিবাদে আজকে বিশ্ব জাগ্রত। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। আর তারা অ্যারেস্ট করছে। সেটাই নাকি তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সবসময় প্যালেস্টাইনিদের পক্ষে আছি। এবং আমি যেখানেই যাই, আমার কথা আমি বলবই। কারণ, সেখানে যেভাবে গণহত্যা চলছে, এটা অমানবিক।’
যুক্তরাষ্ট্রে প্যালেস্টাইনপন্থিদের বিক্ষোভ দমনের বলপ্রয়োগের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, আজকে ৯০০ ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক থেকে শুরু করে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে এই আন্দোলন করার জন্য একমাত্র আমেরিকায়। আর এটা নাকি গণতন্ত্রের একটা অংশ। সেটাও আমাদের শুনতে হয়। যেভাবে একজন অধ্যাপককে জাপটে ধরে, মাটিতে ফেলে হ্যান্ডকাফ পরানো হলো।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাকে উৎখাত করলে পরবর্তীতে কে আসবে? কারা আসবে, কে আসবে ক্ষমতায়। কে দেশের জন্য কাজ করবে, কাকে তারা আনতে চায়; সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়। আর সেটা স্পষ্ট নয় বলে তারা জনগণের সাড়া পাচ্ছে না।’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে তার গণভবন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গত সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাম চলে গেছে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে। তারা ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আমার একটা প্রশ্ন, বিশেষ করে যারা অতি বাম, সবসময় মনে করি, তারা প্রোগ্রেসিভ দল, তারা খুবই গণমুখী দল ইত্যাদি। সেখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক আছে তারা আমাকে উৎখাত করবে। পরবর্তীতে কে আসবে তাহলে, সেটা কি ঠিক করতে পেরেছে? সেটাই তো আমার প্রশ্ন।’
এর আগে গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতি ডান অতি বাম এক হয়ে সরকার উৎখাত করতে চায়।’
পুলিশ আমেরিকার স্টাইলে আন্দোলন দমন করতে পারে
প্যালেস্টাইন ইস্যুতে আমেরিকায় ছাত্র বিক্ষোভ দমনের পুলিশের পদক্ষেপের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের পুলিশ আমেরিকার পুলিশের স্টাইল বা ধরন অনুসরণ করে আন্দোলন দমন করতে পারে। আমাদের পুলিশকে যদি বলে দিই যে আমেরিকার পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায়, সেটা অনুসরণ করতে পারো। সেটা করতে পারে। পুলিশ এখন আমেরিকার পুলিশদের অনুসরণ করতে পারে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকেরা এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন দেবেন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘কারণ, আমরা তো ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম। সেই ২৮ অক্টোবরের কথা মনে আছে, ২০২৩ সালে। আমি তো বলেছিলাম পুলিশকে ধৈর্য ধরতে। ধৈর্য ধরতে গিয়ে পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। কাজেই আমার মনে হয়, এখন আমাদের পুলিশ আমেরিকার স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থাটা নিতে পারে।’
‘বিদেশে বসে’ আন্দোলন করে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। প্রতিদিন অনলাইনে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে, নির্দেশ দিয়েই যাচ্ছে। যারা আন্দোলন করছে করুক, তাদের তো বাধা দিচ্ছি না।’
উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের স্বজনদের অংশ নেয়া
উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের স্বজনদের নির্বাচন অংশ না নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চেয়েছি নির্বাচন যাতে প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, এজন্য বলেছি।’
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তারা আগে নির্বাচন করেছেন। কেউ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের তো রাজনৈতিক জীবনী আছে। তাদেরকে মানা করি কী করে? তবে এটা ঠিক, এক জায়গায় বউকে দিলো, আরেক জায়গায় ছেলেকে দিলো, এগুলো ঠিক না। কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সেটাই নেতাকর্মীদের বলতে চেয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে মেয়ে স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছেন। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেব, আমার নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখব না, এটা হয় না।’
দেশের মোট ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে এবার ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে নির্বাচন এবার। মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকি উপজেলাগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলায় ভোট হচ্ছে ৮ মে।
নির্বাচন করার সক্ষমতা না থাকায় বর্জন
অন্য দলগুলোর নির্বাচন বর্জন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। বর্জন করে কেন? নির্বাচন করার মত সক্ষমতাই নাই। পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে হলে জাতিকে দেখাতে হবে যে পরবর্তী নেতৃত্ব কে আসবে, প্রধানমন্ত্রী কে হবে, নেতা কে হবে? একটা নেতা দেখাতে হবে।’
উপযুক্ত নেতা না থাকায় বিরোধীরা নির্বাচন বর্জন করছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনার কাছে উপযুক্ত নেতা না থাকলে তখন তো আপনাকে ছুতা খুঁজতে হয়। নির্বাচন করলাম না, বিরাট ব্যাপার দেখালাম। বাস্তবতা সেটাই। আমাদের দেশে সেটাই হচ্ছে। কারণ সাধারণত আসামিকে দেখালে পাবলিক তো সেটা নিবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অতীতের সব নির্বাচনের চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভোটের অধিকার রক্ষার নির্বাচন হয়েছে।
মিয়ানমার ইস্যুতে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মায়ানমার থেকে আগতদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি দেখবেন বলে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। থাইল্যান্ড সরকার গভীরভাবে বিষয়টি দেখবে। মায়ানমারের বিষয়টি নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ দেশের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ
মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশসহ অন্যদের ‘সবক’ না দিয়ে আগে নিজ দেশের দিকে নজর দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্যালেস্টাইনের পক্ষের বিক্ষোভ দমনে শক্তি প্রয়োগ এবং গণহত্যা চালাতে ইসরায়েলকে অর্থ ও অস্ত্র যোগান দেয়ার সমালোচনা করেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে দুই বাংলাদেশির নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের দেশে যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুলি করে সাধারণ-নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে, এটাতো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘরকে আগে সামলানো উচিত।’
দুই বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদে জানানো হবে কিনা-এমন প্রশ্নের শেখ হাসিনা বলেন, ‘অলরেডি প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আমেরিকায় বসেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে, সেখানে আমাদের আওয়ামী লীগ খুব সোচ্চার আছে, আমাদের সহযোগী সংগঠন, এটার প্রতিবাদ তো আমরা সবসময় করেই যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকায়তো প্রতিনিয়ত মানুষ খুন হচ্ছে; একটা ঘরের ভেতরে একটা বাচ্চা ছেলেকে মা ধরে রেখেছে, তাকে গুলি করে মেরে ফেলে দিলো। তার অপরাধটা কী ছিল? তার হাতে একটা কাঁচি ছিল। সেই কাঁচির ভয়ে তাকে গুলি করে মারা হল। সেটা সে হয়ত খেলাধুলা বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন মাজুর (অপারগ) ব্যক্তি, যে পঙ্গু, হাঁটতে পারে না, চলতেও পারে না, সে নাকি প্রেসিডেন্টকে হুমকি দিয়েছে; ওই অবস্থায় তাকে গুলি করে হত্যা করল। আর স্কুল, বিভিন্ন শপিং মলে, রেস্তোরাঁয় অনবরত গুলি হচ্ছে, আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নাই বোধহয়, আমেরিকায় গুলি করে মানুষ না মারছে।’
প্যালেস্টাইনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রর দু’মুখো নীতি
বিভিন্ন জায়গায় মানবাধিকারের কথা বলে ফিলিস্তিনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ‘দু’মুখো’ নীতি দেখাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটাতো আমারও প্রশ্ন। এই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমরা করে আসছি। যে দু’মুখো নীতি কিসের জন্য? মানুষ খুন করলে, তারপর তাদেরকে টাকাও দেয়া হয়, অস্ত্রও দেয়া হয় মানুষ হত্যায়। অন্য জায়গায় দেখা গেল, মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার।’
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশেওতো মানবাধিকারের কত বিরাট প্রবক্তারা আছে, তারা এখন চুপ কেন? তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা চুপ কেন? কথা বলে না কেন? তারা ব্যবস্থা নেয় না কেন। সাংবাদিক থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশের বিষয়ে অনেক সোচ্চার, এখন কেন চুপ।’
সরকার ও মানবাধিকার সংস্থা চুপ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ মানুষ সোচ্চার হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী-শিশু হত্যা, হাসপাতালে বোমা হামলার প্রতিবাদে আজকে বিশ্ব জাগ্রত। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। আর তারা অ্যারেস্ট করছে। সেটাই নাকি তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সবসময় প্যালেস্টাইনিদের পক্ষে আছি। এবং আমি যেখানেই যাই, আমার কথা আমি বলবই। কারণ, সেখানে যেভাবে গণহত্যা চলছে, এটা অমানবিক।’
যুক্তরাষ্ট্রে প্যালেস্টাইনপন্থিদের বিক্ষোভ দমনের বলপ্রয়োগের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, আজকে ৯০০ ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক থেকে শুরু করে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে এই আন্দোলন করার জন্য একমাত্র আমেরিকায়। আর এটা নাকি গণতন্ত্রের একটা অংশ। সেটাও আমাদের শুনতে হয়। যেভাবে একজন অধ্যাপককে জাপটে ধরে, মাটিতে ফেলে হ্যান্ডকাফ পরানো হলো।’