রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আট মাসের সংলাপের পর রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর এই সনদে সই করার কথা রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের কারণে শেষ মুহূর্তে সনদ স্বাক্ষরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এর আগেও অন্তর্বর্তী সরকার ‘ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিল’: এনসিপির নাহিদ
সনদে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারান্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে: বামপন্থি ৪ দল
এই প্রেক্ষাপটেও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উৎসবমুখর করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মতৈক্যে পৌঁছানো ‘অসম্ভবকে সম্ভব করা’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে তিনিও উপস্থিত থাকবেন।
সিপিবি, এনসিপি, গণফোরামসহ বেশ কয়েকটি দলের আপত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা কাটাতে আলী রীয়াজ জানালেন, শুক্রবার (আজ) যেসব দল সনদে সই করবে না, তারা চাইলে পরেও সই করতে পারবেন।
জুলাই সনদের আইনিভিত্তির নিশ্চয়তা এবং সেই ভিত্তি দেয়ার ধরন সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না পেলে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ‘থাকবে না’ বলে জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল সকালে ঢাকার বাংলামটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর না করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে বাম ধারার চার দল। বিদ্যমান সংবিধানের চার মূল নীতিকে বাদ দেয়া, অঙ্গীকারনামায় মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ও স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেয়াসহ সাত কারণে তারা সনদে স্বাক্ষর না করার কথা বলেছে।
গতকাল পল্টনের মুক্তি ভবনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে কারণগুলো তুলে ধরেছে। দলগুলোর তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারান্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে এই সনদে। আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করে সনদে স্বাক্ষর করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
গণফোরাম জানিয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত টেলিগ্রাম এবং ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত থাকবে- এটি নিশ্চিত করা না হলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। ’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকার ‘ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিল’ অভিযোগ করে গতকাল বাংলামটরে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) যে অনুষ্ঠানটা হতে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে জুলাই সনদে স্বাক্ষর। যেই আইনি ভিত্তির কথা আমরা বলছি, সেই আদেশ জারির আগে এমন স্বাক্ষর কিন্তু একটি আনুষ্ঠানিকতা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চিয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করলে মূল্যহীন হবে। পরবর্তীতে সরকার কিসের ভিত্তিতে আদেশ দেবে সেই নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। এই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অংশীদার হব না।’
এনসিপির যেসব দাবি সেগুলোর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবস্থান পরিস্কার আহ্বান জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক বলেন, ‘বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট না করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর আয়োজনটা জনগণের সঙ্গে একটা ছলছাতুরীর মতো হবে। আমরা জনগণকে অন্ধকারে রাখতে চাইনা। একটা বিষয় অস্পষ্ট রেখে সবাই এক জায়গায় এসে একটা বিশাল সেলিব্রেশনের মাধ্যমে স্বাক্ষর করার আয়োজনের কোনো অর্থ নেই।’
*আলী রীয়াজ*
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এল ডি হলে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা অপেক্ষায় আছি আগামীকাল (আজ) সবাই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সনদে স্বাক্ষর করবেন। মতভিন্নতা সত্ত্বেও সবাই অংশ নেবেন বলে আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই কালকেই সবাই স্বাক্ষর করুন। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি পরে স্বাক্ষর করতে চায়, সেটাও করতে পারবে।’
জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দেয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কমিশন মনে করে এটি অবশ্য করণীয়। আমাদের সুপারিশে সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়ার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। কমিশনের মেয়াদের মধ্যেই সরকার সনদ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে গতকাল মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গত ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত হওয়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কমিশনের মেয়াদ বাড়ালো অন্তর্বর্তী সরকার।
এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রতিটি দল, রাজনৈতিক শক্তি ও নাগরিকদের আহ্বান জানাচ্ছি- আপনারা সবাই আসুন। আগামীকালের অনুষ্ঠান উৎসবমুখর হবে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অঙ্গীকারের পাতায় প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে, এরপর কমিশনের সদস্য এবং সবশেষে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করবেন।’
এনসিপি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সনদে সই করবে এবং বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ।
* বামপন্থিদের ৭ যুক্তি *
‘কেন আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারছি না’, গতকাল পল্টনের মুক্তি ভবনে এ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সাতটি কারণ তুলে ধরে বাম ধারার চার দল। তারা বলেন-
১. জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনাকালেই তারা বারবার বলেছে, যেসব বিষয়ে সবার ঐকমত্য রয়েছে কেবলমাত্র সেসব বিষয়েই সবার স্বাক্ষর নেয়া যেতে পারে। ভিন্নমতগুলো অতিরিক্ত (এনেক্স) প্রতিবেদন হিসেবে সনদে সংযুক্ত থাকতে পারে। ২. সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। তারা বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি।
৩. শেষ অংশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করতে বলা হয়েছে। সেখানে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভিন্নমত থাকলে তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার কীভাবে সম্ভব তা চার দলের কাছে বোধগম্য নয়।
৪. অঙ্গীকারনামার ২ নম্বরে জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে বা যথোপযুক্ত স্থানে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তারাও সর্বসম্মত জুলাই সনদ সংবিধানে যুক্ত করার পক্ষে। কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে, তা চার দলের বোধগম্য নয়।
৫. অঙ্গীকারনামার ৩ নম্বরে ‘জুলাই সনদ নিয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না’ বলে যে অঙ্গীকার রয়েছে, এটি নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
৬. এছাড়াও সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ষষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেন্ডেন্স’ এবং সপ্তম তফসিলে থাকা ‘প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেন্ডেন্স’ বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, সেটা বাদ দিলে তো বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। অথচ জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে।
৭. জুলাই সনদের পটভূমিতে অভ্যুত্থান পরবর্তী সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের ‘রেফারেন্স’ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কথা আগে পাঠানো খসড়া সনদে উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত সনদে ১০৬ অনুচ্ছেদের কথা বাদ দেয়া হয়েছে।
এসব কারণ তুলে ধরে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘এই সাতটি বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়াতে আমাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে দীর্ঘদিন ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে অংশ নেয়া সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) যেটা বলেছেন, সবকিছু হয়েছে ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ অনুসারে। এখন এই সনদ তৈরির মাধ্যমে জাতি ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সনদের মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন ১৯৭১ সালকে ২০২৪ সাল দিয়ে মুছে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে, এখন তো মনে হয় একাত্তরকে মুছে দেয়ার জন্য এই সনদও ‘মেটিকুলাস ডিজাইনের’ অংশ কী না, সেটা দেশের জনগণকে ভেবে দেখতে হবে।’
*সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি*
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে গতকাল অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেগুলো হচ্ছে-
১. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ‘টেক্সট’ এবং গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।
২. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। যেহেতু তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে আদালতের মতামত নেয়া হলেও তার ক্ষমতার বৈধতার মূলে রয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান।
৩. জুলাই সনদের যে ৮৪টি বিষয় রয়েছে সেগুলো একত্রে গণভোটে যাবে। সেখানে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কী হবে আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে।
৪. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের ওপর প্রদত্ত গাঠনিক ক্ষমতা বলে সংবিধান সংস্কার করবে। সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে- বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের এই দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার পরই তবেই তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন।
*জুলাই সনদ*
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই সনদের চূড়ান্ত কপি পাঠিয়েছে, তাতে দেখা গেছে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অনেক বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো। তবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। জুলাই জাতীয় সনদে সেগুলো যুক্ত করা হয়েছে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সহ।
এই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেই বিষয়ে আলাদা করে কোনো সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়নি জুলাই সনদে। যদিও জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়েই বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংস্কারের ৮৪ সিদ্ধান্তকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে সেই ৪৭টি সিদ্ধান্ত, সেগুলো বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। পরের ভাগে রয়েছে ৩৭টি সিদ্ধান্ত, সেগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে।
তবে সব দল শেষ পর্যন্ত সনদে সই করবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে একমত হলেও ভোটের দিন ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে এখনও মতভিন্নতা আছে।
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আট মাসের সংলাপের পর রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর এই সনদে সই করার কথা রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের কারণে শেষ মুহূর্তে সনদ স্বাক্ষরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এর আগেও অন্তর্বর্তী সরকার ‘ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিল’: এনসিপির নাহিদ
সনদে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারান্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে: বামপন্থি ৪ দল
এই প্রেক্ষাপটেও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উৎসবমুখর করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মতৈক্যে পৌঁছানো ‘অসম্ভবকে সম্ভব করা’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে তিনিও উপস্থিত থাকবেন।
সিপিবি, এনসিপি, গণফোরামসহ বেশ কয়েকটি দলের আপত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা কাটাতে আলী রীয়াজ জানালেন, শুক্রবার (আজ) যেসব দল সনদে সই করবে না, তারা চাইলে পরেও সই করতে পারবেন।
জুলাই সনদের আইনিভিত্তির নিশ্চয়তা এবং সেই ভিত্তি দেয়ার ধরন সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না পেলে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ‘থাকবে না’ বলে জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল সকালে ঢাকার বাংলামটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর না করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে বাম ধারার চার দল। বিদ্যমান সংবিধানের চার মূল নীতিকে বাদ দেয়া, অঙ্গীকারনামায় মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ও স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেয়াসহ সাত কারণে তারা সনদে স্বাক্ষর না করার কথা বলেছে।
গতকাল পল্টনের মুক্তি ভবনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে কারণগুলো তুলে ধরেছে। দলগুলোর তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিকে প্রকারান্তরে ‘অস্বীকার’ করা হচ্ছে এই সনদে। আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করে সনদে স্বাক্ষর করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
গণফোরাম জানিয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত টেলিগ্রাম এবং ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত থাকবে- এটি নিশ্চিত করা না হলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। ’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকার ‘ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিল’ অভিযোগ করে গতকাল বাংলামটরে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) যে অনুষ্ঠানটা হতে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে জুলাই সনদে স্বাক্ষর। যেই আইনি ভিত্তির কথা আমরা বলছি, সেই আদেশ জারির আগে এমন স্বাক্ষর কিন্তু একটি আনুষ্ঠানিকতা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চিয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করলে মূল্যহীন হবে। পরবর্তীতে সরকার কিসের ভিত্তিতে আদেশ দেবে সেই নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। এই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অংশীদার হব না।’
এনসিপির যেসব দাবি সেগুলোর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবস্থান পরিস্কার আহ্বান জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক বলেন, ‘বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট না করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর আয়োজনটা জনগণের সঙ্গে একটা ছলছাতুরীর মতো হবে। আমরা জনগণকে অন্ধকারে রাখতে চাইনা। একটা বিষয় অস্পষ্ট রেখে সবাই এক জায়গায় এসে একটা বিশাল সেলিব্রেশনের মাধ্যমে স্বাক্ষর করার আয়োজনের কোনো অর্থ নেই।’
*আলী রীয়াজ*
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের এল ডি হলে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা অপেক্ষায় আছি আগামীকাল (আজ) সবাই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সনদে স্বাক্ষর করবেন। মতভিন্নতা সত্ত্বেও সবাই অংশ নেবেন বলে আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই কালকেই সবাই স্বাক্ষর করুন। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি পরে স্বাক্ষর করতে চায়, সেটাও করতে পারবে।’
জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দেয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কমিশন মনে করে এটি অবশ্য করণীয়। আমাদের সুপারিশে সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়ার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। কমিশনের মেয়াদের মধ্যেই সরকার সনদ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে গতকাল মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গত ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত হওয়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কমিশনের মেয়াদ বাড়ালো অন্তর্বর্তী সরকার।
এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রতিটি দল, রাজনৈতিক শক্তি ও নাগরিকদের আহ্বান জানাচ্ছি- আপনারা সবাই আসুন। আগামীকালের অনুষ্ঠান উৎসবমুখর হবে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অঙ্গীকারের পাতায় প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে, এরপর কমিশনের সদস্য এবং সবশেষে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করবেন।’
এনসিপি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সনদে সই করবে এবং বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ।
* বামপন্থিদের ৭ যুক্তি *
‘কেন আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারছি না’, গতকাল পল্টনের মুক্তি ভবনে এ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সাতটি কারণ তুলে ধরে বাম ধারার চার দল। তারা বলেন-
১. জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনাকালেই তারা বারবার বলেছে, যেসব বিষয়ে সবার ঐকমত্য রয়েছে কেবলমাত্র সেসব বিষয়েই সবার স্বাক্ষর নেয়া যেতে পারে। ভিন্নমতগুলো অতিরিক্ত (এনেক্স) প্রতিবেদন হিসেবে সনদে সংযুক্ত থাকতে পারে। ২. সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। তারা বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি।
৩. শেষ অংশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করতে বলা হয়েছে। সেখানে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভিন্নমত থাকলে তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার কীভাবে সম্ভব তা চার দলের কাছে বোধগম্য নয়।
৪. অঙ্গীকারনামার ২ নম্বরে জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে বা যথোপযুক্ত স্থানে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তারাও সর্বসম্মত জুলাই সনদ সংবিধানে যুক্ত করার পক্ষে। কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে, তা চার দলের বোধগম্য নয়।
৫. অঙ্গীকারনামার ৩ নম্বরে ‘জুলাই সনদ নিয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না’ বলে যে অঙ্গীকার রয়েছে, এটি নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
৬. এছাড়াও সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ষষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেন্ডেন্স’ এবং সপ্তম তফসিলে থাকা ‘প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেন্ডেন্স’ বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, সেটা বাদ দিলে তো বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। অথচ জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে।
৭. জুলাই সনদের পটভূমিতে অভ্যুত্থান পরবর্তী সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের ‘রেফারেন্স’ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কথা আগে পাঠানো খসড়া সনদে উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত সনদে ১০৬ অনুচ্ছেদের কথা বাদ দেয়া হয়েছে।
এসব কারণ তুলে ধরে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘এই সাতটি বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়াতে আমাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে দীর্ঘদিন ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে অংশ নেয়া সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) যেটা বলেছেন, সবকিছু হয়েছে ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ অনুসারে। এখন এই সনদ তৈরির মাধ্যমে জাতি ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সনদের মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন ১৯৭১ সালকে ২০২৪ সাল দিয়ে মুছে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে, এখন তো মনে হয় একাত্তরকে মুছে দেয়ার জন্য এই সনদও ‘মেটিকুলাস ডিজাইনের’ অংশ কী না, সেটা দেশের জনগণকে ভেবে দেখতে হবে।’
*সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি*
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে গতকাল অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেগুলো হচ্ছে-
১. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ‘টেক্সট’ এবং গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।
২. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। যেহেতু তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে আদালতের মতামত নেয়া হলেও তার ক্ষমতার বৈধতার মূলে রয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান।
৩. জুলাই সনদের যে ৮৪টি বিষয় রয়েছে সেগুলো একত্রে গণভোটে যাবে। সেখানে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কী হবে আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে।
৪. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের ওপর প্রদত্ত গাঠনিক ক্ষমতা বলে সংবিধান সংস্কার করবে। সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে- বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের এই দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার পরই তবেই তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন।
*জুলাই সনদ*
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই সনদের চূড়ান্ত কপি পাঠিয়েছে, তাতে দেখা গেছে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অনেক বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো। তবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। জুলাই জাতীয় সনদে সেগুলো যুক্ত করা হয়েছে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সহ।
এই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেই বিষয়ে আলাদা করে কোনো সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়নি জুলাই সনদে। যদিও জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়েই বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংস্কারের ৮৪ সিদ্ধান্তকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে সেই ৪৭টি সিদ্ধান্ত, সেগুলো বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। পরের ভাগে রয়েছে ৩৭টি সিদ্ধান্ত, সেগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে।
তবে সব দল শেষ পর্যন্ত সনদে সই করবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে একমত হলেও ভোটের দিন ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে এখনও মতভিন্নতা আছে।