পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ব্রিটেনে। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মর্যাদায় ব্রিটিশ সরকারের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা নিয়ে প্রস্তুত মুক্ত বাংলার মাটিতে ফেরার জন্য।
ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেট জেটে করে দিল্লি হয়ে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি ঢাকা ফেরেন তিনি। দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুর যাত্রাবিরতি ছিল সংক্ষিপ্ত। রাষ্ট্রপতি ভবনে সৌজন্য কথাবার্তার পর ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানেই তিনি যাত্রা করেছিলেন ঢাকার উদ্দেশে। এ সময় বিমানে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহযাত্রী ছিলেন ফারুক আহমদ চৌধুরী।
দেশ দেশান্তর নামের একটি গ্রন্থে তিনি সেই যাত্রার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন এভাবে-
‘দশই জানুয়ারি ১৯৭২-এর সেই অবিশ্বাস্য সকাল। পালাম বিমানবন্দর। আটটা বেজে দশ মিনিট। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর রুপালি কমেট বিমান ধীরে ধীরে এসে সশব্দে সু-স্থির। তারপর শব্দহীন পিনপতন নীরবতা। সিঁড়ি লাগলো। খুলে গেল দ্বার। দাঁড়িয়ে আছেন সহাস্য, সুদর্শন, দীর্ঘকায়, ঋজু নবীন দেশের রাষ্ট্রপতি। আকস্মিক এক নির্বাক জনতার ভাষাহীন জোয়ারের মুখোমুখি। সুউচ্চ কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন তিনি আবেগের বাঁধভাঙা দুটি শব্দ জয় বাংলা। করতালি, উল্লাস, আলিঙ্গন-আবেগের অশ্রæতে ঝাপসা স্মৃতি।
(ভারতের) রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের মন্ত্রিসভার সদস্য, ক‚টনীতিবিদ, শত শত সাংবাদিক। ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, টেলিভিশন। অদূরে ক্যান্টনমেন্টের জনবহুল জনসভা। আন্তরিক অভ্যর্থনায় রাস্তার দু’পাশে লাখো জনতা। রাষ্ট্রপতি ভবন।
আশ্চর্য সেই প্রভাতে হঠাৎ ঢাকাগামী আমরা। প্লেনে বঙ্গবন্ধুর মুখোমুখি।
এ কে? হঠাৎ অপরিচিতকে দেখে অঙুলি নির্দেশে তার জিজ্ঞাসা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ বললেন, ‘আপনার বিমানবন্দরের ভাষণটি এ-ই লিখেছে।’
‘আমার মনের কথাগুলোই তো লিখেছে,’ বললেন বঙ্গবন্ধু।
আমার ইতিহাস-সচেতন মন হঠাৎ যেন নাড়া দিল। পকেটে রাখা তার ভাষণটি এগিয়ে দিলাম। স্মৃতি হিসেবে আপনার স্বাক্ষরিত ভাষণটি রাখতে চাই, সভয়ে বললাম।
নিশ্চয়ই। কলম দাও। বললেন তিনি।
প্লেনে বাঙালি সহযাত্রীরা ছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ, সপরিবারে কামাল হোসেন, ইন্স্যুরেন্স জগতে সুপরিচিত বর্তমানে প্রয়াত খোদা বকস মওলা, সাংবাদিক আতাউস সামাদ আর আমি। প্লেনে তার অনেক জিজ্ঞাসা। অনেক পরিচিতের সম্বন্ধে। নাম, পেশা, বয়স, স্থান, ঘটনা-কী আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি এই মানুষটির! তার কিছু কথা আমার মনে আছে, অনেক কথাই মনে নেই।
প্লেনে তার বেশিরভাগ সময়ই কেটেছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের সঙ্গে একান্ত আলাপ-আলোচনায়।
মনে পড়ে তার সুপরিচিত আতাউস সামাদ তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন সাংবাদিকের জড়তাহীনতায়। কামাল হোসেন ছিলেন আমার মতো, শ্রোতার দলে। মাওলাও...
দুই একটি কথা মনে আসে। ‘দেশের ম্যাপ সংবলিত জাতীয় পতাকা। বদলাই কি করে?’ তার জিজ্ঞাসা।
বলা হলো, অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন এই ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ হয়তো নিয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে তার নাকি এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
সব যাত্রার শেষ আছে। সব স্বপ্নের। কথাবার্তার মাঝেই প্লেনের ব্রিটিশ স্টুয়ার্ড এসে বললেন, আমরা তখন ঢাকার ওপরে।
বিমানে বঙ্গবন্ধুকে সঙ্গ দিয়েছিলেন দুইজন ভারতীয় ক‚টনীতিবিদ। তারা হলেন ভেদ মারওয়া ও শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি। এরমধ্যে ব্যানার্জি বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পরিচিত ছিলেন। মারোয়া লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারির পদমর্যাদার একজন অফিসার ছিলেন। এর আগে তিনি ছিলেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের পশ্চিম বাংলা ক্যাডারের অফিসার। ওই সফরে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
ভেদ মারওয়ার স্মৃতিচারণমূলক বর্ণনায় বলেন-
দিল্লিতে বিমান অবতরণের পর অভ‚তপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান। এর আগে বা পরে ভারতীয় রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান উভয়ে একত্রে উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরে কোন অতিথিকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তা আমার জানা নেই। বিশ্বের ইতিহাসেও এ জাতীয় ঘটনা বিরল। শুধু তাই না, বিমানবন্দরে ইন্দিরা গান্ধী তার পুরো ক্যাবিনেট নিয়ে উপস্থিত ছিলেন সেই শীতের সকালে।
বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে নামার পর এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। সেদিন যেন একটা পরিবারের মিলন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর একজন সফরসঙ্গী বলেছেন, ‘যেদিকে তাকাই সবার চোখে জল।’
চিফ অব প্রটোকল অফিসার ছিলেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির ক্যাপ্টেন মাহবুব আহমেদ খান। সব দেখে তিনি ড. কামালকে বলেছিলেন, ‘এখানে প্রটোকল অফিসারের কোন ভ‚মিকা আছে কি?’ তারপর তিনি বলেছিলেন, ‘পাশের মাঠেই হাজার হাজার লোক সমবেত হয়েছে। আপনার লিডারকে যদি একটু বলেন, তিনি যেন মঞ্চে সমবেত হয়ে কিছু বলেন। ইন্দিরা গান্ধীও সঙ্গে থাকবেন। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমরা ওনাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাবো। এককাপ চা খেয়ে উনি ঢাকায় রওনা হবেন।’
বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠে ইংরেজিতে বলতে শুরু করলে তাকে জনতার পক্ষ থেকে বাংলায় বক্তৃতার অনুরোধ করা হয়। তখন ইন্দিরা গান্ধীও বঙ্গবন্ধুকে বাংলায় বলতে অনুরোধ করেন।
একজন নেতা কতটা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলে বিদেশের মাটিতে মানুষ তাকে তার নিজের মাতৃভাষায় কথা বলার অনুরোধ করা হয়। অথচ দিল্লির মানুষের বাংলা বোঝার কথা না। তারপরও তারা ইংরেজিতে বক্তব্য না শুনে বাঙালির নেতার কাছ থেকে বাংলায় কিছু শুনতে চেয়েছেন। কী সম্মান তারা বঙ্গবন্ধুকে দেখিয়েছেন। আর বিশ্বের সবচেয়ে সুমিষ্ট ভাষা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির মুখে শুনে ধন্য হয়েছেন। যিনি ছিলেন কথার জাদুকর, মানুষের হৃদয় জয় করার জাদুকর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইসলামাবাদ থেকে লন্ডন ও লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরার আরেকটি বিবরণ পাওয়া যায় সুখরঞ্জন সেনগুপ্তের স্মৃতিকথামূলক ‘ভাঙা পথের রাঙা ধুলায়’ নামক গ্রন্থে।
তিনি বিবরণটি নিয়েছিলেন ভেদ মারোয়ার কাছ থেকে। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর লন্ডনে অবস্থানের কথা জানতে পেরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নির্দেশে দিলেন, লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে বাংলা জানা ও বাংলা বলতে পারা কোন পদস্থ অফিসার থাকলে তাকে শেখ মুজিবুর রহমানের হোটেলে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য।
এরপর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে ঢাকা ফ্লাইটের সঙ্গী হন ভেদ মারোয়।
সুখরঞ্জনের স্মৃতিচারণাটি কিছু অংশ এ রকম-
শেখ সাহেবের বিমান দিল্লি থেকে ঢাকার পথে পাড়ি দেয়া আরম্ভ করল। ভেদ মারোয়া শেখ সাহেবের ঠিক পিছনের সিটে বসে ছিলেন।
তিনি শুনতে পেলেন শেখ সাহেব আবৃত্তির সুরে গান গাইছেন। ‘...এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি.... সে যে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে স্মৃতি দিয়ে ঘেরা... ভায়ের মায়ের এমন স্নেহ...।’ পরমুহূর্তে শেখ সাহেব আবার গুন গুন করে আবৃত্তি করছেন, ‘আ মরি বাংলা ভাষা.... কী জাদু বাংলা গানে... গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে... গান গেয়ে ধান কাটে চাষা... আ মরি বাংলা ভাষা।’
ভেদ মারোয়া আর বসে থাকতে পারলেন না। তিনি শেখ সাহেবের সিটের কাছে এসে দাঁড়ালেন। গোয়েন্দা অফিসাররা যেভাবে রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান সেভাবে তিনি শেখ সাহেবকে অভিবাদন জানিয়ে বাংলায় বললেন, ‘স্যার, আমি বাংলা জানি স্যার, আমি চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে সাব ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ছিলাম। আমি বাংলা পড়তে পারি, বলতে পারি।’
শেখ সাহেব উৎফুল্ল হয়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন, ‘আরে এতক্ষণ সেই কথা বলেন নাই কেন?’ শেখ মুজিবুর রহমান ভেদ মারোয়াকে হাত ধরে পাশের সিটে বসিয়ে দিলেন। এ সময় বিমানের পাইলট শেখ সাহেবের কাছে এসে জানালেন যে, এই বিমান বাংলাদেশের আকাশসীমায় পৌঁছেছে। শেখ সাহেবের চোখ সজল হয়ে উঠলো।
তিনি জানালার কাচ দিয়ে বাংলাদেশের শ্যামল প্রান্তর দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়লেন। পাইলট যখন জানালেন যে, বিমানটি বিমানবন্দরের উপরে এসে পড়েছে। তখন শেখ সাহেব উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ালেন, ভারতীয় অফিসার ভেদ মারোয়া শেখ সাহেবকে বসিয়ে দিয়ে তার সিট বেল্ট বেঁধে দিলেন। যতদূর মনে পড়ে তখন প্রায় সাড়ে তিনটা হবে। শেখ সাহেব বিমানের গ্যাংওয়েতে দাঁড়ালেন। যতদূর চোখ যায় কেবল মানুষের মাথা।
দিল্লি থেকে ঢাকা পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বশেষ ভ্রমণের একমাত্র সংবাদদাতা সঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক আতাউস সামাদ।
একটি জাতীয় দৈনিকে তিনি এ বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন।
ঢাকার পথে বিমানে উঠেই তিনি (বঙ্গবন্ধু) আতাউস সামাদকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন এবং বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘তুমি কি এখনও বেঁচে আছো?’
দিল্লি থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৬২ মিনিটকাল যাত্রাপথে বঙ্গবন্ধু আতাউস সামাদের কাছে তার সহকর্মী ও বন্ধুদের সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তিনি যশোরের জনাব মশিউর রহমানের হত্যার কথা শুনে একেবারে ভেঙে পড়েন। তিনি সাংবাদিক পেশায় নিয়োজিত সুপরিচিত ব্যক্তিদের অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। আতাউস সামাদ জবাবে শহীদুল্লা কায়সার, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ড. আবুল খায়ের, সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, নাজমুল হক, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বি, আহাদ, সায়েদুল হাসান, মামুন মাহমুদ, ডা. আলীম চৌধুরী এরা চিরদিনের মতো চলে গেছেন বলে জানালে বঙ্গবন্ধুর মুখ বিষন্ন ও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।
এর কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু আপন মনে ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলো’ কবিতা আওড়াতে থাকেন।
ইয়াহিয়ার সামরিক ট্রাইব্যুনাল বঙ্গবন্ধুকে কী বলেছিলেন সে কথাও হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি তাদের বলেছি যে, আমি তোমাদের কাছ থেকে বিচার চাই না। কারণ তোমরা একা নও। আমি সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদ চাই। আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি। আমার কোন ভয় নেই। আমি মরতে প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু আমি জানি যে, আমার বাংলাদেশ মুক্ত হবে।’
এছাড়া আলোচনার এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু আতাউস সামাদের কাছে তার ধানমন্ডি ও গ্রামের বাড়ির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।
আতাউস সামাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর প্রশ্ন ছিল, ‘তারা আমার বাড়িটির কী করেছে। তারা কি সেটি পুড়িয়ে দিয়েছে?’
গ্রামের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে শুনলে তিনি শান্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া মুক্তিবাহিনীতে বঙ্গবন্ধু তার ছেলের তৎপরতার কথা শুনে আনন্দিত হন। ঢাকা অবতরণের ১০ মিনিট আগে বিমানবালা মিলার এসে বললেন, ইচ্ছে করলে শেখ সাহেব ঢাকা দেখতে পারেন।
তিনি প্রথমে সাড়া না দিলেও পরে ঢাকা দেখতে লাগলেন। তিনি বিমানের সহযাত্রীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি ঢাকায়। আমি আমার জনগণের মধ্যে ফিরে এসেছি।’
বসে পড়ে আবার তিনি বলতে থাকেন, ‘আজ রাতে আমি আবার বাড়িতে বাস করব। আমি মেঝেতে ঘুমাবো। কিন্তু আর কোথাও যাব না। বলতে বলতে তার চোখ অশ্রসজল হয়ে পড়ে।’
মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ব্রিটেনে। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মর্যাদায় ব্রিটিশ সরকারের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা নিয়ে প্রস্তুত মুক্ত বাংলার মাটিতে ফেরার জন্য।
ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেট জেটে করে দিল্লি হয়ে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি ঢাকা ফেরেন তিনি। দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুর যাত্রাবিরতি ছিল সংক্ষিপ্ত। রাষ্ট্রপতি ভবনে সৌজন্য কথাবার্তার পর ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানেই তিনি যাত্রা করেছিলেন ঢাকার উদ্দেশে। এ সময় বিমানে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহযাত্রী ছিলেন ফারুক আহমদ চৌধুরী।
দেশ দেশান্তর নামের একটি গ্রন্থে তিনি সেই যাত্রার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন এভাবে-
‘দশই জানুয়ারি ১৯৭২-এর সেই অবিশ্বাস্য সকাল। পালাম বিমানবন্দর। আটটা বেজে দশ মিনিট। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর রুপালি কমেট বিমান ধীরে ধীরে এসে সশব্দে সু-স্থির। তারপর শব্দহীন পিনপতন নীরবতা। সিঁড়ি লাগলো। খুলে গেল দ্বার। দাঁড়িয়ে আছেন সহাস্য, সুদর্শন, দীর্ঘকায়, ঋজু নবীন দেশের রাষ্ট্রপতি। আকস্মিক এক নির্বাক জনতার ভাষাহীন জোয়ারের মুখোমুখি। সুউচ্চ কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন তিনি আবেগের বাঁধভাঙা দুটি শব্দ জয় বাংলা। করতালি, উল্লাস, আলিঙ্গন-আবেগের অশ্রæতে ঝাপসা স্মৃতি।
(ভারতের) রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের মন্ত্রিসভার সদস্য, ক‚টনীতিবিদ, শত শত সাংবাদিক। ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, টেলিভিশন। অদূরে ক্যান্টনমেন্টের জনবহুল জনসভা। আন্তরিক অভ্যর্থনায় রাস্তার দু’পাশে লাখো জনতা। রাষ্ট্রপতি ভবন।
আশ্চর্য সেই প্রভাতে হঠাৎ ঢাকাগামী আমরা। প্লেনে বঙ্গবন্ধুর মুখোমুখি।
এ কে? হঠাৎ অপরিচিতকে দেখে অঙুলি নির্দেশে তার জিজ্ঞাসা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ বললেন, ‘আপনার বিমানবন্দরের ভাষণটি এ-ই লিখেছে।’
‘আমার মনের কথাগুলোই তো লিখেছে,’ বললেন বঙ্গবন্ধু।
আমার ইতিহাস-সচেতন মন হঠাৎ যেন নাড়া দিল। পকেটে রাখা তার ভাষণটি এগিয়ে দিলাম। স্মৃতি হিসেবে আপনার স্বাক্ষরিত ভাষণটি রাখতে চাই, সভয়ে বললাম।
নিশ্চয়ই। কলম দাও। বললেন তিনি।
প্লেনে বাঙালি সহযাত্রীরা ছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ, সপরিবারে কামাল হোসেন, ইন্স্যুরেন্স জগতে সুপরিচিত বর্তমানে প্রয়াত খোদা বকস মওলা, সাংবাদিক আতাউস সামাদ আর আমি। প্লেনে তার অনেক জিজ্ঞাসা। অনেক পরিচিতের সম্বন্ধে। নাম, পেশা, বয়স, স্থান, ঘটনা-কী আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি এই মানুষটির! তার কিছু কথা আমার মনে আছে, অনেক কথাই মনে নেই।
প্লেনে তার বেশিরভাগ সময়ই কেটেছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের সঙ্গে একান্ত আলাপ-আলোচনায়।
মনে পড়ে তার সুপরিচিত আতাউস সামাদ তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন সাংবাদিকের জড়তাহীনতায়। কামাল হোসেন ছিলেন আমার মতো, শ্রোতার দলে। মাওলাও...
দুই একটি কথা মনে আসে। ‘দেশের ম্যাপ সংবলিত জাতীয় পতাকা। বদলাই কি করে?’ তার জিজ্ঞাসা।
বলা হলো, অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন এই ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ হয়তো নিয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে তার নাকি এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
সব যাত্রার শেষ আছে। সব স্বপ্নের। কথাবার্তার মাঝেই প্লেনের ব্রিটিশ স্টুয়ার্ড এসে বললেন, আমরা তখন ঢাকার ওপরে।
বিমানে বঙ্গবন্ধুকে সঙ্গ দিয়েছিলেন দুইজন ভারতীয় ক‚টনীতিবিদ। তারা হলেন ভেদ মারওয়া ও শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি। এরমধ্যে ব্যানার্জি বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পরিচিত ছিলেন। মারোয়া লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারির পদমর্যাদার একজন অফিসার ছিলেন। এর আগে তিনি ছিলেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের পশ্চিম বাংলা ক্যাডারের অফিসার। ওই সফরে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
ভেদ মারওয়ার স্মৃতিচারণমূলক বর্ণনায় বলেন-
দিল্লিতে বিমান অবতরণের পর অভ‚তপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান। এর আগে বা পরে ভারতীয় রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান উভয়ে একত্রে উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরে কোন অতিথিকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তা আমার জানা নেই। বিশ্বের ইতিহাসেও এ জাতীয় ঘটনা বিরল। শুধু তাই না, বিমানবন্দরে ইন্দিরা গান্ধী তার পুরো ক্যাবিনেট নিয়ে উপস্থিত ছিলেন সেই শীতের সকালে।
বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে নামার পর এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। সেদিন যেন একটা পরিবারের মিলন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর একজন সফরসঙ্গী বলেছেন, ‘যেদিকে তাকাই সবার চোখে জল।’
চিফ অব প্রটোকল অফিসার ছিলেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির ক্যাপ্টেন মাহবুব আহমেদ খান। সব দেখে তিনি ড. কামালকে বলেছিলেন, ‘এখানে প্রটোকল অফিসারের কোন ভ‚মিকা আছে কি?’ তারপর তিনি বলেছিলেন, ‘পাশের মাঠেই হাজার হাজার লোক সমবেত হয়েছে। আপনার লিডারকে যদি একটু বলেন, তিনি যেন মঞ্চে সমবেত হয়ে কিছু বলেন। ইন্দিরা গান্ধীও সঙ্গে থাকবেন। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমরা ওনাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাবো। এককাপ চা খেয়ে উনি ঢাকায় রওনা হবেন।’
বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠে ইংরেজিতে বলতে শুরু করলে তাকে জনতার পক্ষ থেকে বাংলায় বক্তৃতার অনুরোধ করা হয়। তখন ইন্দিরা গান্ধীও বঙ্গবন্ধুকে বাংলায় বলতে অনুরোধ করেন।
একজন নেতা কতটা ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলে বিদেশের মাটিতে মানুষ তাকে তার নিজের মাতৃভাষায় কথা বলার অনুরোধ করা হয়। অথচ দিল্লির মানুষের বাংলা বোঝার কথা না। তারপরও তারা ইংরেজিতে বক্তব্য না শুনে বাঙালির নেতার কাছ থেকে বাংলায় কিছু শুনতে চেয়েছেন। কী সম্মান তারা বঙ্গবন্ধুকে দেখিয়েছেন। আর বিশ্বের সবচেয়ে সুমিষ্ট ভাষা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির মুখে শুনে ধন্য হয়েছেন। যিনি ছিলেন কথার জাদুকর, মানুষের হৃদয় জয় করার জাদুকর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইসলামাবাদ থেকে লন্ডন ও লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরার আরেকটি বিবরণ পাওয়া যায় সুখরঞ্জন সেনগুপ্তের স্মৃতিকথামূলক ‘ভাঙা পথের রাঙা ধুলায়’ নামক গ্রন্থে।
তিনি বিবরণটি নিয়েছিলেন ভেদ মারোয়ার কাছ থেকে। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর লন্ডনে অবস্থানের কথা জানতে পেরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নির্দেশে দিলেন, লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে বাংলা জানা ও বাংলা বলতে পারা কোন পদস্থ অফিসার থাকলে তাকে শেখ মুজিবুর রহমানের হোটেলে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য।
এরপর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে ঢাকা ফ্লাইটের সঙ্গী হন ভেদ মারোয়।
সুখরঞ্জনের স্মৃতিচারণাটি কিছু অংশ এ রকম-
শেখ সাহেবের বিমান দিল্লি থেকে ঢাকার পথে পাড়ি দেয়া আরম্ভ করল। ভেদ মারোয়া শেখ সাহেবের ঠিক পিছনের সিটে বসে ছিলেন।
তিনি শুনতে পেলেন শেখ সাহেব আবৃত্তির সুরে গান গাইছেন। ‘...এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি.... সে যে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে স্মৃতি দিয়ে ঘেরা... ভায়ের মায়ের এমন স্নেহ...।’ পরমুহূর্তে শেখ সাহেব আবার গুন গুন করে আবৃত্তি করছেন, ‘আ মরি বাংলা ভাষা.... কী জাদু বাংলা গানে... গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে... গান গেয়ে ধান কাটে চাষা... আ মরি বাংলা ভাষা।’
ভেদ মারোয়া আর বসে থাকতে পারলেন না। তিনি শেখ সাহেবের সিটের কাছে এসে দাঁড়ালেন। গোয়েন্দা অফিসাররা যেভাবে রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান সেভাবে তিনি শেখ সাহেবকে অভিবাদন জানিয়ে বাংলায় বললেন, ‘স্যার, আমি বাংলা জানি স্যার, আমি চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে সাব ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ছিলাম। আমি বাংলা পড়তে পারি, বলতে পারি।’
শেখ সাহেব উৎফুল্ল হয়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন, ‘আরে এতক্ষণ সেই কথা বলেন নাই কেন?’ শেখ মুজিবুর রহমান ভেদ মারোয়াকে হাত ধরে পাশের সিটে বসিয়ে দিলেন। এ সময় বিমানের পাইলট শেখ সাহেবের কাছে এসে জানালেন যে, এই বিমান বাংলাদেশের আকাশসীমায় পৌঁছেছে। শেখ সাহেবের চোখ সজল হয়ে উঠলো।
তিনি জানালার কাচ দিয়ে বাংলাদেশের শ্যামল প্রান্তর দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়লেন। পাইলট যখন জানালেন যে, বিমানটি বিমানবন্দরের উপরে এসে পড়েছে। তখন শেখ সাহেব উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ালেন, ভারতীয় অফিসার ভেদ মারোয়া শেখ সাহেবকে বসিয়ে দিয়ে তার সিট বেল্ট বেঁধে দিলেন। যতদূর মনে পড়ে তখন প্রায় সাড়ে তিনটা হবে। শেখ সাহেব বিমানের গ্যাংওয়েতে দাঁড়ালেন। যতদূর চোখ যায় কেবল মানুষের মাথা।
দিল্লি থেকে ঢাকা পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বশেষ ভ্রমণের একমাত্র সংবাদদাতা সঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক আতাউস সামাদ।
একটি জাতীয় দৈনিকে তিনি এ বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন।
ঢাকার পথে বিমানে উঠেই তিনি (বঙ্গবন্ধু) আতাউস সামাদকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন এবং বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘তুমি কি এখনও বেঁচে আছো?’
দিল্লি থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৬২ মিনিটকাল যাত্রাপথে বঙ্গবন্ধু আতাউস সামাদের কাছে তার সহকর্মী ও বন্ধুদের সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তিনি যশোরের জনাব মশিউর রহমানের হত্যার কথা শুনে একেবারে ভেঙে পড়েন। তিনি সাংবাদিক পেশায় নিয়োজিত সুপরিচিত ব্যক্তিদের অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। আতাউস সামাদ জবাবে শহীদুল্লা কায়সার, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ড. আবুল খায়ের, সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, নাজমুল হক, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বি, আহাদ, সায়েদুল হাসান, মামুন মাহমুদ, ডা. আলীম চৌধুরী এরা চিরদিনের মতো চলে গেছেন বলে জানালে বঙ্গবন্ধুর মুখ বিষন্ন ও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।
এর কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু আপন মনে ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলো’ কবিতা আওড়াতে থাকেন।
ইয়াহিয়ার সামরিক ট্রাইব্যুনাল বঙ্গবন্ধুকে কী বলেছিলেন সে কথাও হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি তাদের বলেছি যে, আমি তোমাদের কাছ থেকে বিচার চাই না। কারণ তোমরা একা নও। আমি সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদ চাই। আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি। আমার কোন ভয় নেই। আমি মরতে প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু আমি জানি যে, আমার বাংলাদেশ মুক্ত হবে।’
এছাড়া আলোচনার এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু আতাউস সামাদের কাছে তার ধানমন্ডি ও গ্রামের বাড়ির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।
আতাউস সামাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর প্রশ্ন ছিল, ‘তারা আমার বাড়িটির কী করেছে। তারা কি সেটি পুড়িয়ে দিয়েছে?’
গ্রামের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে শুনলে তিনি শান্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া মুক্তিবাহিনীতে বঙ্গবন্ধু তার ছেলের তৎপরতার কথা শুনে আনন্দিত হন। ঢাকা অবতরণের ১০ মিনিট আগে বিমানবালা মিলার এসে বললেন, ইচ্ছে করলে শেখ সাহেব ঢাকা দেখতে পারেন।
তিনি প্রথমে সাড়া না দিলেও পরে ঢাকা দেখতে লাগলেন। তিনি বিমানের সহযাত্রীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি ঢাকায়। আমি আমার জনগণের মধ্যে ফিরে এসেছি।’
বসে পড়ে আবার তিনি বলতে থাকেন, ‘আজ রাতে আমি আবার বাড়িতে বাস করব। আমি মেঝেতে ঘুমাবো। কিন্তু আর কোথাও যাব না। বলতে বলতে তার চোখ অশ্রসজল হয়ে পড়ে।’