পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা জাতিগত সংঘাতে রূপ নিল। সেই সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে গেলে রাঙামাটিতে। সংঘাতের জের ধরে হতাহতের ঘটনা ঘটল। জারি করতে হলো ১৪৪ ধারা।
পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের পেছনে কি শুধুই একটি মোটরসাইকেল চুরি বা গণপিটুনিতে একজনকে হত্যার ঘটনার দায় রয়েছেÑসেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, এই সংঘাত-সংঘর্ষের স্বরূপ বুঝতে হলে পাহাড়ি-বাঙালি সমস্যার মূলে তাকাতে হবে। এটা শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা নয়।
শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা নয় বলেই, পাহাড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর ওপর হামলা হয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে দুই সম্প্রদায়ের প্রার্থনালয়, বসতবাড়ি ও দোকানপাট। করা হয়েছে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। এক জেলায় শুরু হওয়া সংঘাত বিস্তৃত হয়েছে আরেক জেলায়।
পাহাড়ে সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসানের লক্ষ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তি করা হয়েছে ১৯৯৭ সালে। কিন্তু শান্তি অধরাই রয়ে গেছে। কেন শান্তির দেখা মিলছে না? বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হিসেবে পাহাড়িদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারছে না। কেন পারছে না?
শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ নানা সময় নানা ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। স্বার্থান্বেষী কোনো কোনো গোষ্ঠী অনেক সময় এর সুযোগ নেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর এই সুযোগ নেয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কি কোনো দায় নেই।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব পাহাড়েও পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গনপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরেও উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেখা গেছে। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হামলার মতো গর্হিত অপরাধে সম্পৃক্ত হতে দেখা গেছে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে। এর লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় গণপিটুনিতে এক ব্যক্তি মারা যান। এরপর সেখানকার পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। বর্তমান প্রশাসন শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করলে পাহাড়ে এই ঘটনা নাও ঘটতে পারত।
পাহাড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে সেটা যেন আরও খারাপ না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে শাস্তি দিতে হবে। সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করা জরুরি। সেখানে যেন আর জাতিগত সংঘাত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। পাহাড়ি-বাঙালি উভয়কেই শান্ত থাকতে হবে, সংযম দেখাতে হবে। কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যেন ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
তবে দীর্ঘমেয়াদে পার্বত্যাঞ্চলে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে পাহাড়িদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই দায়িত্ব প্রশাসনের, সরকারের। শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরি। পাহাড়ের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা ঠিক হবে না। আমরা চাই, পাহাড়ে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা পাক।
রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা জাতিগত সংঘাতে রূপ নিল। সেই সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে গেলে রাঙামাটিতে। সংঘাতের জের ধরে হতাহতের ঘটনা ঘটল। জারি করতে হলো ১৪৪ ধারা।
পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের পেছনে কি শুধুই একটি মোটরসাইকেল চুরি বা গণপিটুনিতে একজনকে হত্যার ঘটনার দায় রয়েছেÑসেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, এই সংঘাত-সংঘর্ষের স্বরূপ বুঝতে হলে পাহাড়ি-বাঙালি সমস্যার মূলে তাকাতে হবে। এটা শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা নয়।
শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা নয় বলেই, পাহাড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর ওপর হামলা হয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে দুই সম্প্রদায়ের প্রার্থনালয়, বসতবাড়ি ও দোকানপাট। করা হয়েছে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। এক জেলায় শুরু হওয়া সংঘাত বিস্তৃত হয়েছে আরেক জেলায়।
পাহাড়ে সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসানের লক্ষ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তি করা হয়েছে ১৯৯৭ সালে। কিন্তু শান্তি অধরাই রয়ে গেছে। কেন শান্তির দেখা মিলছে না? বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হিসেবে পাহাড়িদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারছে না। কেন পারছে না?
শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ নানা সময় নানা ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। স্বার্থান্বেষী কোনো কোনো গোষ্ঠী অনেক সময় এর সুযোগ নেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর এই সুযোগ নেয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কি কোনো দায় নেই।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব পাহাড়েও পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গনপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরেও উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেখা গেছে। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হামলার মতো গর্হিত অপরাধে সম্পৃক্ত হতে দেখা গেছে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে। এর লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় গণপিটুনিতে এক ব্যক্তি মারা যান। এরপর সেখানকার পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। বর্তমান প্রশাসন শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করলে পাহাড়ে এই ঘটনা নাও ঘটতে পারত।
পাহাড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে সেটা যেন আরও খারাপ না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে শাস্তি দিতে হবে। সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করা জরুরি। সেখানে যেন আর জাতিগত সংঘাত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। পাহাড়ি-বাঙালি উভয়কেই শান্ত থাকতে হবে, সংযম দেখাতে হবে। কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যেন ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
তবে দীর্ঘমেয়াদে পার্বত্যাঞ্চলে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে পাহাড়িদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই দায়িত্ব প্রশাসনের, সরকারের। শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরি। পাহাড়ের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা ঠিক হবে না। আমরা চাই, পাহাড়ে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা পাক।