alt

সম্পাদকীয়

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়

: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতির নামে যে নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছিল, তার বিচার প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছেছে। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিচারিক আদালতের দেয়া ২০ জনের মৃত্যুদ- ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় হাইকোর্টে বহাল রাখা হয়েছে। এই রায় নিঃসন্দেহে ন্যায়বিচারের একটি শক্ত বার্তা দিয়েছে। তবে এই রায়ের বাইরেও আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ও সংস্কৃতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে।

আবরার ফাহাদের হত্যাকা- ছিল শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির অন্ধকার দিকটি প্রকাশ করেছে। শিবির সন্দেহে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই ঘটনা সমগ্র জাতিকে নাড়া দিয়েছিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।

হাইকোর্টের রায়ে আবরারের পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে বলে যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, তা গোটা জাতির জন্যও একটি স্বস্তি। এই রায় সমাজে একটি বার্তা দিয়েছে যে অপরাধের শাস্তি অবধারিত, এবং আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।

তবে এই রায় শুধু শাস্তি প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে না। আবরার ফাহাদের বাবা-মা যে আকুতি জানিয়েছেনÑ যেন আর কোনো সন্তানকে এমন নৃশংস পরিণতি ভোগ করতে না হয়Ñ তা কেবল তাদের ব্যক্তিগত দুঃখ নয়, এটি আমাদের সবার প্রতি একটি জাগরণী ডাক।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহিংসতামুক্ত করতে হবে। ছাত্র রাজনীতির নামে দলীয় আধিপত্যের যে অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা উৎপাটন করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাব বা সহিংসতার কোনো স্থান থাকবে না।

এই রায়ের পরও কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত চারজন আসামি পলাতক, যার মধ্যে একজন গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়েছে। এই ঘটনা আমাদের কারা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতিকে প্রকাশ করে। এ ধরনের ঘটনা শুধু বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সন্দেহ জাগায় না, বরং ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে এটি তাদের অধিকার। তবে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতা না হয়ে দ্রুত সম্পন্ন হওয়া উচিত, যাতে ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত রূপটি দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। আবরারের পরিবার যে অপেক্ষায় আছে রায় কার্যকর হওয়ার জন্য, সেই অপেক্ষা যেন আরও দীর্ঘ না হয়।

আবরার ফাহাদের মৃত্যু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অন্ধকার অধ্যায়। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র রাজনীতি যদি সৃজনশীল ও গঠনমূলক না হয়, তবে তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এবং আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। আবরারের জীবন যেন শুধু একটি বিচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের একটি প্রেরণা হয়ে ওঠে। আমরা আর কোনো আবরারকে হারাতে চাই না।

বজ্রপাত মোকাবিলায় চাই বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন

মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিশ্রুতি অনেক, ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ

আর্সেনিক দূষণ : জনস্বাস্থ্যের নীরব সংকট

ধর্মীয় অবমাননার অজুহাতে ‘মব জাস্টিস’ : সমাধান কোথায়?

সরকারি গাছ কাটা কঠোরভাবে বন্ধ করুন

এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতি : বাল্যবিয়ে রোধে ব্যবস্থা নিন

জলাবদ্ধতা : প্রশ্নবিদ্ধ নগর ব্যবস্থাপনা

ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিন

সার বিতরণে অনিয়ম : কৃষকের দুর্ভোগের অবসান হোক

ভারতে বিমান দুর্ঘটনা

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত : যুদ্ধ নয়, শান্তিই টেকসই সমাধান

বাড়ছে করোনার সংক্রমণ : মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

ঈদুল আজহা : ত্যাগ, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির উৎসব

ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া : ব্যবস্থাপনার ফাঁকফোকর ও নজরদারির সীমাবদ্ধতা

নির্বাচন নিয়ে বাদানুবাদ শুভ লক্ষণ নয়

অপরাধের উদ্বেগজনক প্রবণতা ও আইনশৃঙ্খলার বাস্তবতা

রেলের জমি দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

বাসে ডাকাতি ও নারী নির্যাতন : সড়কে জনসাধারণের আতঙ্ক

স্মার্টকার্ড জটিলতায় টিসিবির পণ্য সরবরাহ ব্যাহত, ব্যবস্থা নিন

মামলার ন্যায্যতা ও আইনের শাসন: কিসের পরিবর্তন ঘটেছে?

প্যারাবন ধ্বংস ও দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে চাই প্রস্তুতি ও সচেতনতা

নারীর ডাকে ‘মৈত্রী যাত্রা’

খাদ্যে ভেজাল : আইন আছে, প্রয়োগ কোথায়?

চুয়াত্তর পেরিয়ে পঁচাত্তরে সংবাদ: প্রতিজ্ঞায় অবিচল পথচলা

দখলে অস্তিত্ব সংকটে বন

এই যুদ্ধবিরতি হোক স্থায়ী শান্তির সূচনা

তাপপ্রবাহে চাই সতর্কতা, সচেতনতা ও সুরক্ষা পরিকল্পনা

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

ধর্মীয় অপব্যাখ্যায় শতবর্ষী বটগাছ নিধন : এ কোন সভ্যতা?

বেইলি রোডে আবার আগুন : নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এখনই

লাউয়াছড়া বন : নিঃশব্দ বিপর্যয়ের মুখে

ডেঙ্গু পরিস্থিতি : অবহেলা নয়, দরকার জরুরি উদ্যোগ

ইকোপার্কের করুণ দশা : দায় কার

হাতি শাবকের মৃত্যু ও সাফারি পার্কের দায়ভার

tab

সম্পাদকীয়

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতির নামে যে নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছিল, তার বিচার প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছেছে। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিচারিক আদালতের দেয়া ২০ জনের মৃত্যুদ- ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় হাইকোর্টে বহাল রাখা হয়েছে। এই রায় নিঃসন্দেহে ন্যায়বিচারের একটি শক্ত বার্তা দিয়েছে। তবে এই রায়ের বাইরেও আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ও সংস্কৃতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে।

আবরার ফাহাদের হত্যাকা- ছিল শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির অন্ধকার দিকটি প্রকাশ করেছে। শিবির সন্দেহে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই ঘটনা সমগ্র জাতিকে নাড়া দিয়েছিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।

হাইকোর্টের রায়ে আবরারের পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে বলে যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, তা গোটা জাতির জন্যও একটি স্বস্তি। এই রায় সমাজে একটি বার্তা দিয়েছে যে অপরাধের শাস্তি অবধারিত, এবং আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।

তবে এই রায় শুধু শাস্তি প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে না। আবরার ফাহাদের বাবা-মা যে আকুতি জানিয়েছেনÑ যেন আর কোনো সন্তানকে এমন নৃশংস পরিণতি ভোগ করতে না হয়Ñ তা কেবল তাদের ব্যক্তিগত দুঃখ নয়, এটি আমাদের সবার প্রতি একটি জাগরণী ডাক।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহিংসতামুক্ত করতে হবে। ছাত্র রাজনীতির নামে দলীয় আধিপত্যের যে অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা উৎপাটন করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাব বা সহিংসতার কোনো স্থান থাকবে না।

এই রায়ের পরও কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত চারজন আসামি পলাতক, যার মধ্যে একজন গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়েছে। এই ঘটনা আমাদের কারা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতিকে প্রকাশ করে। এ ধরনের ঘটনা শুধু বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সন্দেহ জাগায় না, বরং ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে এটি তাদের অধিকার। তবে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতা না হয়ে দ্রুত সম্পন্ন হওয়া উচিত, যাতে ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত রূপটি দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। আবরারের পরিবার যে অপেক্ষায় আছে রায় কার্যকর হওয়ার জন্য, সেই অপেক্ষা যেন আরও দীর্ঘ না হয়।

আবরার ফাহাদের মৃত্যু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অন্ধকার অধ্যায়। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। ছাত্র রাজনীতি যদি সৃজনশীল ও গঠনমূলক না হয়, তবে তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এবং আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। আবরারের জীবন যেন শুধু একটি বিচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের একটি প্রেরণা হয়ে ওঠে। আমরা আর কোনো আবরারকে হারাতে চাই না।

back to top